ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দিত রেলওয়ের ডিসিও নাসির

মন্ত্রী বা মন্ত্রীর পিএসর আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্সে কোন রকম অবৈধ সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার জন্য গত রোববার একটি নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা ফাইলের নিচে চাপাপড়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এর আগে যশোর ও সিঙ্গিয়া স্টেশনে ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দিয়েছে ডিসিও নাসির উদ্দিন। যা আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্সের মাধ্যমে হয়েছিল বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এর আগে চার দফা নির্দেশনা দিলেও কোন কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার রেফারেন্সে এক বন্ধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে একটি টিকেট সংগ্রহ করেছিল। এ কথা আমার বন্ধু নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। পরে আমি ওই স্টেশন মাস্টারকে এ রকম রেফারেন্সে টিকেট দিতে নিষেধ করি। স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এটা ব্যক্তি পর্যায় বলে করতে পেরেছি।’

গত রোববার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সব স্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার ও ট্রেনের পরিচালককের কাছে পাঠানো হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে রেলের পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন।’ ‘এসব বিষয় জানার পর তা রেলপথমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা যারা চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং যেসব মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঠিক পরিচয় জানার নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। এই ধরনের ক্ষেত্রে রেল কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অসুসরণ ছাড়া কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দেয় ডিসিও নাসির

ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্টেশনে লেবার সর্দার নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে পাকশীর রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য একজন লেবার সর্দার নিয়োগ দিয়েছেন বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান। তার বিরুদ্ধে এ রকম আরও অভিযোগ রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সূত্র জানায়, ওই অঞ্চলে প্রতিটি বাণিজ্যিক স্টেশনের ভারতীয় পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। সেজন্য প্রতিটি স্টেশনে একজন লেবার সর্দার ও তার অধীনে ২০-৫০ জন লেবার থাকে।

জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা সিঙ্গিয়া স্টেশনে গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোর্ডিং ও আনলোর্ডিংয়ের জন্য মোদাচ্ছের আলী নামের এক ব্যক্তিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে লেবার সর্দার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য সিঙ্গিয়া স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশ দিয়েছেন ডিসিও পাকশী নাসির উদ্দিন। অথচ তিনি এই নির্দেশ দিতে পারেন না। যেকোন স্টেশনের লেবার সর্দার নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারের। ‘মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষিয়ে বিনিময়ে’ তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

ডিসিও পাকশী নাসির উদ্দিনের নির্দেশ পাওয়ার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য মোদাচ্ছের আলীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন সিঙ্গিয়া স্টেশনের মাস্টার মো. শরীফুজ্জামান। যা মোদাচ্ছের আলীকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কিন্তু কত দিনের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে ডিসিও পাকশী মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও গত রোববার থেকে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও কোন উত্তর দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবার সর্দার নিয়োগের জন্য এক আবেদনকারী সংবাদকে বলেন, ‘আমি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে যশোর ও সিঙ্গিয়া স্টেশনে লেবার সর্দার পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করি। রেলমন্ত্রীর পক্ষে থেকে আমাকে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আমি যখন নিয়োগের জন্য ডিসিও পাকশীর দপ্তরে যোগাযোগ করি। তখন ডিসিওর পিএস আমার কাছে ৫-৬ লাখ টাকা ঘুষ চান। ঘুষ দিতে অস্বীকায় করায় আমাকে বাদ দেয়া হয়।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে চিফ কমার্শিয়াল অফিস (সিসিএম) ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার জানা মতে, লেবার সর্দার নিয়োগ স্থায়ীভাবে হয়। অস্থায়ীভাবে নিয়োগের কোন সিস্টেম আছে কি-না আমার জানা নেই। এছাড়া সিঙ্গিয়ার মতো ছোট স্টেশনে লেবার সর্দার নিয়োগ দরকার হয় না।’ তবে এগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রভার খাটিয়ে করে থাকে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২ , ২৯ বৈশাখ ১৪২৮ ০৯ শাওয়াল ১৪৪৩

সুবিধা না দেয়ার নির্দেশনা থাকে ফাইল চাপায়

ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দিত রেলওয়ের ডিসিও নাসির

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

মন্ত্রী বা মন্ত্রীর পিএসর আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্সে কোন রকম অবৈধ সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার জন্য গত রোববার একটি নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা ফাইলের নিচে চাপাপড়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এর আগে যশোর ও সিঙ্গিয়া স্টেশনে ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দিয়েছে ডিসিও নাসির উদ্দিন। যা আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্সের মাধ্যমে হয়েছিল বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এর আগে চার দফা নির্দেশনা দিলেও কোন কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমার রেফারেন্সে এক বন্ধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে একটি টিকেট সংগ্রহ করেছিল। এ কথা আমার বন্ধু নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। পরে আমি ওই স্টেশন মাস্টারকে এ রকম রেফারেন্সে টিকেট দিতে নিষেধ করি। স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এটা ব্যক্তি পর্যায় বলে করতে পেরেছি।’

গত রোববার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সব স্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার ও ট্রেনের পরিচালককের কাছে পাঠানো হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে রেলের পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন।’ ‘এসব বিষয় জানার পর তা রেলপথমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা যারা চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং যেসব মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঠিক পরিচয় জানার নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। এই ধরনের ক্ষেত্রে রেল কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অসুসরণ ছাড়া কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

ঘুষ নিয়ে লেবার সর্দার নিয়োগ দেয় ডিসিও নাসির

ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্টেশনে লেবার সর্দার নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে পাকশীর রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য একজন লেবার সর্দার নিয়োগ দিয়েছেন বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান। তার বিরুদ্ধে এ রকম আরও অভিযোগ রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সূত্র জানায়, ওই অঞ্চলে প্রতিটি বাণিজ্যিক স্টেশনের ভারতীয় পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। সেজন্য প্রতিটি স্টেশনে একজন লেবার সর্দার ও তার অধীনে ২০-৫০ জন লেবার থাকে।

জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা সিঙ্গিয়া স্টেশনে গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোর্ডিং ও আনলোর্ডিংয়ের জন্য মোদাচ্ছের আলী নামের এক ব্যক্তিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে লেবার সর্দার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য সিঙ্গিয়া স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশ দিয়েছেন ডিসিও পাকশী নাসির উদ্দিন। অথচ তিনি এই নির্দেশ দিতে পারেন না। যেকোন স্টেশনের লেবার সর্দার নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারের। ‘মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষিয়ে বিনিময়ে’ তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

ডিসিও পাকশী নাসির উদ্দিনের নির্দেশ পাওয়ার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনের গুডস ইয়ার্ডের মালামাল লোডিং ও আনলোডিংয়ের জন্য মোদাচ্ছের আলীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন সিঙ্গিয়া স্টেশনের মাস্টার মো. শরীফুজ্জামান। যা মোদাচ্ছের আলীকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কিন্তু কত দিনের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে ডিসিও পাকশী মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও গত রোববার থেকে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও কোন উত্তর দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবার সর্দার নিয়োগের জন্য এক আবেদনকারী সংবাদকে বলেন, ‘আমি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে যশোর ও সিঙ্গিয়া স্টেশনে লেবার সর্দার পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করি। রেলমন্ত্রীর পক্ষে থেকে আমাকে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আমি যখন নিয়োগের জন্য ডিসিও পাকশীর দপ্তরে যোগাযোগ করি। তখন ডিসিওর পিএস আমার কাছে ৫-৬ লাখ টাকা ঘুষ চান। ঘুষ দিতে অস্বীকায় করায় আমাকে বাদ দেয়া হয়।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে চিফ কমার্শিয়াল অফিস (সিসিএম) ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার জানা মতে, লেবার সর্দার নিয়োগ স্থায়ীভাবে হয়। অস্থায়ীভাবে নিয়োগের কোন সিস্টেম আছে কি-না আমার জানা নেই। এছাড়া সিঙ্গিয়ার মতো ছোট স্টেশনে লেবার সর্দার নিয়োগ দরকার হয় না।’ তবে এগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রভার খাটিয়ে করে থাকে বলে জানান তিনি।