কে বড়?

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

কয় দিন আগে রেলপথে ইশ্বরদী স্টেশনে একটি ঘটনা ঘটে। প্রথমে জানা যায়, যাত্রীর সঙ্গে অসদাচারণের জন্য টিকিট চেকার টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চারিদিকে সাধু সাধু রব, কারণ সরকারি রেল বিভাগের কর্মীদের আচরণে সংক্ষুব্ধ নন এমন যাত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে রেল যাত্রীর ৯৯ শতাংশই টিকিট কেটে রেল ভ্রমণ করে থাকেন।

রেল ভ্রমনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে গন্তব্য পৌঁছাতে পর্যন্ত নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভ্রমণকারীকে। ফলে ঈশ্বরদীর ঘটনায় সাধারণ যাত্রীরা আনন্দিত হয়েছিল। পরে জানা গেল স্বয়ং রেলমন্ত্রীর আত্মীয়রা বিনা টিকিটে প্রথম শ্রেণীতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই টিকিট চেকার তাদের জরিমানা করে। জরিমানা করায় মন্ত্রীর আত্মীয়রা ক্ষুব্ধ হন, তাদের ক্ষুব্ধতায় ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি ফোনে একটি নোটিসে সাময়িক বরখাস্ত হন টিটিই।

বেরসিক গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি জনসম্মুখে তুলে ধরেন তারপর আবার দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়ে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ টিটিই এর বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করেন। রেলওয়ের যেই কর্মকর্তা টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন তাকেই উল্টো শোকজ করা হয়। বায়স্কোপের মতো একটি তেলেসমাতি ঘটনা ঘটে গেল রেল বিভাগে।

সারাদেশে ভোজ্যতেল নিয়ে ঘটছে নানা ধরনের ঘটনা, রোজায় অর্থাৎ ঈদের আগে দেশব্যাপী ভোজ্যতেলের মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। ঈদের আগের দিন অসংখ্য ক্রেতা সোয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। সারাদেশে সোয়াবিন তেল নাই তার কারণ হিসাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আমদানিকারকরা তেল আমদানি করছেন না। সরকার এক লাফে বেড়ে যাওয়া সোয়াবিন তেলের সঙ্গে আরও ৩৮ টাকা করে লিটার প্রতি সোয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিল।

বিভিন্ন জায়গায় চলছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান। এই অভিযানে দেখা যাচ্ছে যে, লক্ষ লক্ষ লিটার সোয়াবিন তেল বিভিন্ন গোডাউনে মজুদ পড়ে আছে। আর এইভাবে মজুদ করে সোয়াবিন তেলের সংকট সৃষ্টি করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কথায় সরকার বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন “ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ভুল ছিল। সংকট সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ীদের কারাসাজিতে।”

মন্ত্রীর কথায় এবং বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ কী বুঝবে? সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারছে না, দেশে কে কাকে নিয়ন্ত্রন করছে বা কার ক্ষমতা বেশি বা কে বড়। প্রশ্নটির উত্তর একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে যাচ্ছে কারণ কে বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাকি সরকারি কর্মচারী, না রাজনৈতিক নেতা? এর সদুত্তর কেউ কি দিবেন।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিভিন্ন মহল ক্ষমতাটাকে নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েছে বিভিন্ন সময়। অনেক সময় দেখা যায়, শাসক রাজনৈতিক দলটিও ওদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে বা এদের নির্দেশনায়ই পরিচালিত হয়। আবার অনেকেই এই কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলে থাকেন, শাসকদলই এদের প্রশয় দেয়।

কে বড়, এই বিষয়টা জানার ইচ্ছে থেকে একটি গল্পের কথা মনে পড়ে যায়। গল্পটির নাম ছিল হু ইজ দ্য বিগেস্ট। ছোটবেলায় ইংরেজি এই গল্পটা পড়েছিলাম। গল্পটা হলো, এক গ্রামে দুই বলবান বীর বাস করতেন। একজন সকাল বেলা দাঁত মেছওয়াক করতেন বিরাট বট গাছ দিয়ে, অপরজন খাওয়ার পর টুথ পিক হিসেবে ব্যবহার করতেন তাল গাছকে। এক দিন এই দুই বীর হাতির পিঠে চড়ে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সেই সময় একটি বাজপাখি আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, নিচে হাতিটিকে মৃত ভেবে ছো মেড়ে নিজের পায়ে নখের সঙ্গে আটকে নেয়, ওই সময় রাজকন্যা বারান্দায় বসে আকাশে পাখি উড়া দেখছিলেন।

হঠাৎ বাজপাখির নখ থেকে হাতিসহ মল্লযুদ্ধে রত দুই বীর রাজকন্যার চোখে পড়ে যায়। হাতি চোখে পড়ায় শুরু হয় রাজকন্যার চোখে যন্ত্রণা। খবর যায় রাজপ্রসাদে। রাজা বিচলিত হন। তারপর রাজা সভাসদের পরামর্শে জেলে ডেকে এনে রাজকন্যার চোখে জাল ফেলেন। দেখা গেল জেলেদের জালে ধরা পড়লো একটি হাতিতে মল্লযুদ্ধে রত দুটি মানুষ। এই গল্পটায় প্রশ্ন ছিল কে বড়, দুই বীর, রাজকন্যা না ঈগল পাখি।

উপরের দুই ঘটনা থেকে কী বোঝা যায়। এই দুই ঘটনায় কে বেশি প্রভাবশালী তা বের করা কঠিন কাজ। এই গল্পটার মতো অনেকটা বাস্তবতাহীন। বাংলাদেশে দেখা যায়, একজন অফিস পিওন কোটি কোটি টাকার মালিক। ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও হয়ে যায় আইনপ্রণেতা। শোনা যায়, একজন এসপির দাপটে সংসদ সদস্য এলাকায় নিরুপায়। এক আমলার দাপটে এমপি ভীত। সাহেদ কা-সহ বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফুটপাতে যারা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটিয়েছে তারা চলে আসে রাজপ্রসাদে। সাহেদ, শামীমসহ কিছু অপরাধী ধরা পড়ায় সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো জানতে পারে। এমন অসংখ্য সাহেদ শামীম এখনো আছে যারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

সুতরাং কে বড়, এ দেশে তা জানারও কোন উপায় নেই। সরকারি অফিসের একজন অফিস সহকারী এমপিওভুক্ত কলেজের ম্যানেজিং কমিটির প্রধান হয়ে যান। এমপিওভুক্ত কলেজসমুহের শিক্ষকরা প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদ মর্যাদার, এরা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন স্কেল পেয়ে থাকেন। অথচ এই শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মী নিয়ন্ত্রণ করে। এতে প্রমাণ হয়, কার ভেতরে কি এলেম মানে ক্ষমতা আছে, তা বুঝা মুশকিল। ফলে দেখা যায়, অফিস-আদালতের পিওন, চাপড়াশিকে অনেক সময় অফিসের বড় কর্তারাও ভয় পান। আর এদের প্রভাবেই দেশের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ অসামাজিক কর্মকা- বেড়ে যায়।

তাছাড়া মামলা নিরসনে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। তাই মানুষের মনে আইনের প্রতি আস্থাটা গেছে কমে। একজন রাজনৈতিক নেতা তার নিজ দলের কর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। টাকা না পাওয়ার শোকে ওই কর্মীর হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। তারপর ওই কর্মীর স্ত্রী রাজনৈতিক নেতার নামে মামলা করেন সম্ভবত ২০১৭ সালের দিকে। ওই মামলাটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই প্রশ্নের মীমাংসার আদালতে যুক্তিতর্ক চলার পর আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। রায়ে দিনটি ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে। কিন্তু নানা কারণে ওই দিন আদালত রায় দিতে পারেননি তারপর পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয় ১৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে। অর্থাৎ সাত মাস পর। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণেও সাধারণ মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে সাহস করে না।

উপরোল্লিখিত পরিস্থিতির কারণে নানা অনিয়ম এবং অসৎ ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট বেড়ে যাচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকারি কর্মীদের দায়দায়িত্ব এবং প্রটোকলটা সুনির্দিষ্ট করা এবং সেইভাবে রাষ্ট্রীয় সব কার্যপরিচালনা করাটাই পারে সব অনিয়ম দূর করতে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]

বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২ , ২৯ বৈশাখ ১৪২৮ ০৯ শাওয়াল ১৪৪৩

কে বড়?

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

কয় দিন আগে রেলপথে ইশ্বরদী স্টেশনে একটি ঘটনা ঘটে। প্রথমে জানা যায়, যাত্রীর সঙ্গে অসদাচারণের জন্য টিকিট চেকার টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চারিদিকে সাধু সাধু রব, কারণ সরকারি রেল বিভাগের কর্মীদের আচরণে সংক্ষুব্ধ নন এমন যাত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে রেল যাত্রীর ৯৯ শতাংশই টিকিট কেটে রেল ভ্রমণ করে থাকেন।

রেল ভ্রমনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে গন্তব্য পৌঁছাতে পর্যন্ত নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভ্রমণকারীকে। ফলে ঈশ্বরদীর ঘটনায় সাধারণ যাত্রীরা আনন্দিত হয়েছিল। পরে জানা গেল স্বয়ং রেলমন্ত্রীর আত্মীয়রা বিনা টিকিটে প্রথম শ্রেণীতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই টিকিট চেকার তাদের জরিমানা করে। জরিমানা করায় মন্ত্রীর আত্মীয়রা ক্ষুব্ধ হন, তাদের ক্ষুব্ধতায় ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি ফোনে একটি নোটিসে সাময়িক বরখাস্ত হন টিটিই।

বেরসিক গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি জনসম্মুখে তুলে ধরেন তারপর আবার দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়ে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ টিটিই এর বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করেন। রেলওয়ের যেই কর্মকর্তা টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন তাকেই উল্টো শোকজ করা হয়। বায়স্কোপের মতো একটি তেলেসমাতি ঘটনা ঘটে গেল রেল বিভাগে।

সারাদেশে ভোজ্যতেল নিয়ে ঘটছে নানা ধরনের ঘটনা, রোজায় অর্থাৎ ঈদের আগে দেশব্যাপী ভোজ্যতেলের মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। ঈদের আগের দিন অসংখ্য ক্রেতা সোয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। সারাদেশে সোয়াবিন তেল নাই তার কারণ হিসাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আমদানিকারকরা তেল আমদানি করছেন না। সরকার এক লাফে বেড়ে যাওয়া সোয়াবিন তেলের সঙ্গে আরও ৩৮ টাকা করে লিটার প্রতি সোয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিল।

বিভিন্ন জায়গায় চলছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযান। এই অভিযানে দেখা যাচ্ছে যে, লক্ষ লক্ষ লিটার সোয়াবিন তেল বিভিন্ন গোডাউনে মজুদ পড়ে আছে। আর এইভাবে মজুদ করে সোয়াবিন তেলের সংকট সৃষ্টি করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কথায় সরকার বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়ায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন “ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ভুল ছিল। সংকট সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ীদের কারাসাজিতে।”

মন্ত্রীর কথায় এবং বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ কী বুঝবে? সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারছে না, দেশে কে কাকে নিয়ন্ত্রন করছে বা কার ক্ষমতা বেশি বা কে বড়। প্রশ্নটির উত্তর একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে যাচ্ছে কারণ কে বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাকি সরকারি কর্মচারী, না রাজনৈতিক নেতা? এর সদুত্তর কেউ কি দিবেন।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিভিন্ন মহল ক্ষমতাটাকে নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েছে বিভিন্ন সময়। অনেক সময় দেখা যায়, শাসক রাজনৈতিক দলটিও ওদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে বা এদের নির্দেশনায়ই পরিচালিত হয়। আবার অনেকেই এই কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলে থাকেন, শাসকদলই এদের প্রশয় দেয়।

কে বড়, এই বিষয়টা জানার ইচ্ছে থেকে একটি গল্পের কথা মনে পড়ে যায়। গল্পটির নাম ছিল হু ইজ দ্য বিগেস্ট। ছোটবেলায় ইংরেজি এই গল্পটা পড়েছিলাম। গল্পটা হলো, এক গ্রামে দুই বলবান বীর বাস করতেন। একজন সকাল বেলা দাঁত মেছওয়াক করতেন বিরাট বট গাছ দিয়ে, অপরজন খাওয়ার পর টুথ পিক হিসেবে ব্যবহার করতেন তাল গাছকে। এক দিন এই দুই বীর হাতির পিঠে চড়ে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সেই সময় একটি বাজপাখি আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, নিচে হাতিটিকে মৃত ভেবে ছো মেড়ে নিজের পায়ে নখের সঙ্গে আটকে নেয়, ওই সময় রাজকন্যা বারান্দায় বসে আকাশে পাখি উড়া দেখছিলেন।

হঠাৎ বাজপাখির নখ থেকে হাতিসহ মল্লযুদ্ধে রত দুই বীর রাজকন্যার চোখে পড়ে যায়। হাতি চোখে পড়ায় শুরু হয় রাজকন্যার চোখে যন্ত্রণা। খবর যায় রাজপ্রসাদে। রাজা বিচলিত হন। তারপর রাজা সভাসদের পরামর্শে জেলে ডেকে এনে রাজকন্যার চোখে জাল ফেলেন। দেখা গেল জেলেদের জালে ধরা পড়লো একটি হাতিতে মল্লযুদ্ধে রত দুটি মানুষ। এই গল্পটায় প্রশ্ন ছিল কে বড়, দুই বীর, রাজকন্যা না ঈগল পাখি।

উপরের দুই ঘটনা থেকে কী বোঝা যায়। এই দুই ঘটনায় কে বেশি প্রভাবশালী তা বের করা কঠিন কাজ। এই গল্পটার মতো অনেকটা বাস্তবতাহীন। বাংলাদেশে দেখা যায়, একজন অফিস পিওন কোটি কোটি টাকার মালিক। ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও হয়ে যায় আইনপ্রণেতা। শোনা যায়, একজন এসপির দাপটে সংসদ সদস্য এলাকায় নিরুপায়। এক আমলার দাপটে এমপি ভীত। সাহেদ কা-সহ বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফুটপাতে যারা অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটিয়েছে তারা চলে আসে রাজপ্রসাদে। সাহেদ, শামীমসহ কিছু অপরাধী ধরা পড়ায় সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো জানতে পারে। এমন অসংখ্য সাহেদ শামীম এখনো আছে যারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

সুতরাং কে বড়, এ দেশে তা জানারও কোন উপায় নেই। সরকারি অফিসের একজন অফিস সহকারী এমপিওভুক্ত কলেজের ম্যানেজিং কমিটির প্রধান হয়ে যান। এমপিওভুক্ত কলেজসমুহের শিক্ষকরা প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদ মর্যাদার, এরা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার বেতন স্কেল পেয়ে থাকেন। অথচ এই শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মী নিয়ন্ত্রণ করে। এতে প্রমাণ হয়, কার ভেতরে কি এলেম মানে ক্ষমতা আছে, তা বুঝা মুশকিল। ফলে দেখা যায়, অফিস-আদালতের পিওন, চাপড়াশিকে অনেক সময় অফিসের বড় কর্তারাও ভয় পান। আর এদের প্রভাবেই দেশের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ অসামাজিক কর্মকা- বেড়ে যায়।

তাছাড়া মামলা নিরসনে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। তাই মানুষের মনে আইনের প্রতি আস্থাটা গেছে কমে। একজন রাজনৈতিক নেতা তার নিজ দলের কর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। টাকা না পাওয়ার শোকে ওই কর্মীর হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। তারপর ওই কর্মীর স্ত্রী রাজনৈতিক নেতার নামে মামলা করেন সম্ভবত ২০১৭ সালের দিকে। ওই মামলাটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই প্রশ্নের মীমাংসার আদালতে যুক্তিতর্ক চলার পর আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। রায়ে দিনটি ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে। কিন্তু নানা কারণে ওই দিন আদালত রায় দিতে পারেননি তারপর পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয় ১৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে। অর্থাৎ সাত মাস পর। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণেও সাধারণ মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে সাহস করে না।

উপরোল্লিখিত পরিস্থিতির কারণে নানা অনিয়ম এবং অসৎ ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট বেড়ে যাচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকারি কর্মীদের দায়দায়িত্ব এবং প্রটোকলটা সুনির্দিষ্ট করা এবং সেইভাবে রাষ্ট্রীয় সব কার্যপরিচালনা করাটাই পারে সব অনিয়ম দূর করতে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]