ভূমিহীন না হয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেল ইউপি সদস্যের বোন ও ভাগ্নে

ভূমিহীন না হয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেল ইউপি সদস্যের বোন ও ভাগ্নে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য শিবলু আক্তারের কোটায় ৩০ নম্বর ঘর পেয়েছেন ইউপি সদস্যের ভাগ্নে মো. ফিবলু এবং একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শারমিন আক্তারের কোটায় ২৯ নম্বর ঘর পেয়েছেন তার মা ছালেহা বেগম। ইউপি সদস্য শারমিন আক্তারের দাবি, বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় মায়ের নামে উপহারের ঘর নিয়েছেন।

ভূমিহীন না হয়েও মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন এই দুটি পরিবার। যদিও ওই দুটি ঘরে কেউ বসবাস করে না। বর্তমানে ঘরে তালা ঝুলছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) গৃহহীন ও অসহায় পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে পুটিবিলা তাঁতিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৪টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে মোহাম্মদ ফিবলু ও ছালেহা বেগমের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে ঝুলছে তালা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা জানায়, বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে ঘর ২টিতে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন না। মাঝে মধ্যে এসে তালা খুলে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার চলে যান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শিবলু আক্তার বলেন, ‘আমার ভাগ্নে মোহাম্মদ ফিবলুর পৈত্রিক বাড়ি কলাউজান ইউনিয়নে। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে বড় হয়েছে। ভোটারও হয়েছে আমিরাবাদ ইউনিয়নে। পারিবারিক সমস্যার কারণে পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করতে পারছে না। তাই ভূমিহীন না হয়েও তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘর বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সহযোগিতা করেছেন। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বর্তমানে লোহাগাড়া সদরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে আমার ভাগ্নে। ফিবলু পেশায় একজন দিনমজুর।’ আরেক সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শারমিন আক্তার বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে এক ছেলের সঙ্গে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়। এজন্য ওই ছেলের পৈত্রিক ভিটায় আমার বোনকে ঠাঁই দিচ্ছে না তার পরিবার। এছাড়া জায়গা কিনে ঘর করার মতোও কোন সামর্থ্য নেই তাদের। আমার বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই। তাই মায়ের নামে বোনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ নিয়েছি।’ তবে মা ছালেহা বেগম ভূমিহীন নয় বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ইউনুছ বলেন, ‘ভূমিহীন কি-না যাচাই করার জন্য মাত্র দুইদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। মাত্র ২দিনে তো প্রতি ওয়ার্ডে গিয়ে ভূমিহীনদের চিহ্নিত করা সম্ভব না। এখন আমি খবর নিয়ে জানলাম প্রকৃতপক্ষে ওরা ভূমিহীন। কিন্তু তাদের এনআইডি কার্ড নেই। নিজেদের এনআইডি কার্ড না থাকায় আরেকজনের এনআইডি কার্ড নিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে। এরপরেও বিষয়টি জানার পর আমি ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি। তিনি তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবিব জিতু বলেন, ‘বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা মিটিংয়ে বসবো। মিটিংয়ে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের ঘরগুলো বাতিল করা হবে।’

শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২ , ৩০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪৩

ভূমিহীন না হয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেল ইউপি সদস্যের বোন ও ভাগ্নে

প্রতিনিধি, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

ভূমিহীন না হয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেল ইউপি সদস্যের বোন ও ভাগ্নে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য শিবলু আক্তারের কোটায় ৩০ নম্বর ঘর পেয়েছেন ইউপি সদস্যের ভাগ্নে মো. ফিবলু এবং একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শারমিন আক্তারের কোটায় ২৯ নম্বর ঘর পেয়েছেন তার মা ছালেহা বেগম। ইউপি সদস্য শারমিন আক্তারের দাবি, বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় মায়ের নামে উপহারের ঘর নিয়েছেন।

ভূমিহীন না হয়েও মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন এই দুটি পরিবার। যদিও ওই দুটি ঘরে কেউ বসবাস করে না। বর্তমানে ঘরে তালা ঝুলছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) গৃহহীন ও অসহায় পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে পুটিবিলা তাঁতিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৪টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে মোহাম্মদ ফিবলু ও ছালেহা বেগমের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে ঝুলছে তালা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা জানায়, বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে ঘর ২টিতে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন না। মাঝে মধ্যে এসে তালা খুলে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার চলে যান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শিবলু আক্তার বলেন, ‘আমার ভাগ্নে মোহাম্মদ ফিবলুর পৈত্রিক বাড়ি কলাউজান ইউনিয়নে। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের কাছে বড় হয়েছে। ভোটারও হয়েছে আমিরাবাদ ইউনিয়নে। পারিবারিক সমস্যার কারণে পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করতে পারছে না। তাই ভূমিহীন না হয়েও তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘর বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সহযোগিতা করেছেন। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বর্তমানে লোহাগাড়া সদরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে আমার ভাগ্নে। ফিবলু পেশায় একজন দিনমজুর।’ আরেক সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শারমিন আক্তার বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে এক ছেলের সঙ্গে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়। এজন্য ওই ছেলের পৈত্রিক ভিটায় আমার বোনকে ঠাঁই দিচ্ছে না তার পরিবার। এছাড়া জায়গা কিনে ঘর করার মতোও কোন সামর্থ্য নেই তাদের। আমার বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই। তাই মায়ের নামে বোনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ নিয়েছি।’ তবে মা ছালেহা বেগম ভূমিহীন নয় বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ইউনুছ বলেন, ‘ভূমিহীন কি-না যাচাই করার জন্য মাত্র দুইদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। মাত্র ২দিনে তো প্রতি ওয়ার্ডে গিয়ে ভূমিহীনদের চিহ্নিত করা সম্ভব না। এখন আমি খবর নিয়ে জানলাম প্রকৃতপক্ষে ওরা ভূমিহীন। কিন্তু তাদের এনআইডি কার্ড নেই। নিজেদের এনআইডি কার্ড না থাকায় আরেকজনের এনআইডি কার্ড নিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছে। এরপরেও বিষয়টি জানার পর আমি ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি। তিনি তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবিব জিতু বলেন, ‘বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা মিটিংয়ে বসবো। মিটিংয়ে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের ঘরগুলো বাতিল করা হবে।’