বিমানের টিকেট জালিয়াত চক্র : মূল হোতা গ্রেপ্তার

বিমানের টিকেট জালিয়াত চক্রের সন্ধান পেয়েছে ডিবি। ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে এ চক্র যাত্রীদের টাকা হাতিয়ে নিত। হজ মৌসুমকে টার্গেট করে এ চক্র বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে টিকেট জালিয়াত চক্রের হোতা মাহবুবুর উর-রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত বুধবার রাজধানীর কলাবাগানের গ্রিন রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযানের সময় প্রতারকের আস্তানা থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮১টি ভুয়া টিকেট, প্রতারণার কাজে ব্যবহ্নত ২টি মোবাইল ফোন, ২টি কম্পিউটার, একটি কালো রংয়ের জিপ গাড়ি, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও একটি ডাচবাংলা এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, বেশকিছু ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সি যারা ব্যক্তি বিশেষ বা সাব-এজেন্টের মাঝে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করে। নির্দিষ্ট ফি দেয়ার পর তারা যাত্রীদের ই-টিকেট দেয়। যেখানে যাত্রীর নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি দেয়া থাকে।

যাত্রীরা ই-টিকেটটি বুঝে নিয়ে নিশ্চিন্তে পাসপোর্টের ভেতর রেখে দেন। এরপর নির্দিষ্ট দিনে যাত্রীরা ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হন। ই-টিকেট ও পাসপোর্ট দেয়ার পর এয়ারলাইন্সের স্টাফরা জানান, ই-টিকেটের বুকিংটা ঠিক ছিল কিন্তু বুকিং দেয়ার এক বা দুইদিন পরে পেমেন্টকৃত টাকা রিফান্ড তুলে নেয়া হয়েছে বিধায় টিকেট আর বৈধ নেই এবং বাতিল হয়ে গেছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাহবুবুর উর রশিদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করে নির্দিষ্ট ফি দেয়ার পর যাত্রীদের ই-টিকেটের পূর্ণ ভ্রমণবৃত্তান্ত দেয়। ই-টিকেটের বুকিংটা ঠিক ছিল কিন্তু বুকিং দেয়ার টাকা আবার কৌশলে ফেরত (রিফান্ড) নিয়ে যায়।

সাধারণ মানুষের মধ্যে কেউ বিদেশে চিকিৎসার জন্য যায়, কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে যায়। আবার অনেকেই হজ ও ওমরা পালন করতে যায়। কেউ তার নিয়মিত চাকরিতে যোগদান করতে যায়। যাওয়ার আগ মুহূতে যাত্রীরা যখন দেখে তাদের টিকেট বাতিল হয়ে গেছে, অগ্রিম দেয়া টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, তখন যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। পরবর্তীতে যাত্রীরা ওই ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করলে বিদেশ যাত্রী আবার ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে টিকেট দেয়। অধিকাংশ সময় প্রমাণিত হয়েছে টিকেটটি ভুয়া। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্র তার এজেন্সির লোকজন মোবাইল ফোন বন্ধ করে এবং অফিস বদল করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক মাহবুবুর উর রশিদ এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেলে কনসালটেন্সির প্রধান নির্বাহী (সিইও) বলে দাবি করে। তার সহযোগী প্রতারক জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ক্লায়েন্ট সংগ্রহ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসাৎকৃত টাকা গ্রহণ ও নিজের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করত। এ কাজে তাতে আরও সহযোগিতা করত দুবাইতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিক সাদ। সে দুবাই ও পাকিস্তানের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে টিকেট সংগ্রহ করে প্রতারক মাহবুবকে পাঠাত। পরে প্রতারণার টাকা সাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিত।

শুধু এয়ারলাইন্সের টিকেট বিক্রি নয়। কানাডায় লোক পাঠানো, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চালের বড় চালান সরবরাহ, এমনকি নদী ড্রেজিংয়ের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করত। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া আর কারা জড়িত আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২ , ৩০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪৩

বিমানের টিকেট জালিয়াত চক্র : মূল হোতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিমানের টিকেট জালিয়াত চক্রের সন্ধান পেয়েছে ডিবি। ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে এ চক্র যাত্রীদের টাকা হাতিয়ে নিত। হজ মৌসুমকে টার্গেট করে এ চক্র বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে টিকেট জালিয়াত চক্রের হোতা মাহবুবুর উর-রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত বুধবার রাজধানীর কলাবাগানের গ্রিন রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযানের সময় প্রতারকের আস্তানা থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮১টি ভুয়া টিকেট, প্রতারণার কাজে ব্যবহ্নত ২টি মোবাইল ফোন, ২টি কম্পিউটার, একটি কালো রংয়ের জিপ গাড়ি, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও একটি ডাচবাংলা এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, বেশকিছু ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সি যারা ব্যক্তি বিশেষ বা সাব-এজেন্টের মাঝে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করে। নির্দিষ্ট ফি দেয়ার পর তারা যাত্রীদের ই-টিকেট দেয়। যেখানে যাত্রীর নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি দেয়া থাকে।

যাত্রীরা ই-টিকেটটি বুঝে নিয়ে নিশ্চিন্তে পাসপোর্টের ভেতর রেখে দেন। এরপর নির্দিষ্ট দিনে যাত্রীরা ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হন। ই-টিকেট ও পাসপোর্ট দেয়ার পর এয়ারলাইন্সের স্টাফরা জানান, ই-টিকেটের বুকিংটা ঠিক ছিল কিন্তু বুকিং দেয়ার এক বা দুইদিন পরে পেমেন্টকৃত টাকা রিফান্ড তুলে নেয়া হয়েছে বিধায় টিকেট আর বৈধ নেই এবং বাতিল হয়ে গেছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাহবুবুর উর রশিদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করে নির্দিষ্ট ফি দেয়ার পর যাত্রীদের ই-টিকেটের পূর্ণ ভ্রমণবৃত্তান্ত দেয়। ই-টিকেটের বুকিংটা ঠিক ছিল কিন্তু বুকিং দেয়ার টাকা আবার কৌশলে ফেরত (রিফান্ড) নিয়ে যায়।

সাধারণ মানুষের মধ্যে কেউ বিদেশে চিকিৎসার জন্য যায়, কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে যায়। আবার অনেকেই হজ ও ওমরা পালন করতে যায়। কেউ তার নিয়মিত চাকরিতে যোগদান করতে যায়। যাওয়ার আগ মুহূতে যাত্রীরা যখন দেখে তাদের টিকেট বাতিল হয়ে গেছে, অগ্রিম দেয়া টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, তখন যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। পরবর্তীতে যাত্রীরা ওই ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করলে বিদেশ যাত্রী আবার ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে টিকেট দেয়। অধিকাংশ সময় প্রমাণিত হয়েছে টিকেটটি ভুয়া। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্র তার এজেন্সির লোকজন মোবাইল ফোন বন্ধ করে এবং অফিস বদল করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক মাহবুবুর উর রশিদ এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেলে কনসালটেন্সির প্রধান নির্বাহী (সিইও) বলে দাবি করে। তার সহযোগী প্রতারক জাহাঙ্গীর বিভিন্ন ক্লায়েন্ট সংগ্রহ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসাৎকৃত টাকা গ্রহণ ও নিজের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করত। এ কাজে তাতে আরও সহযোগিতা করত দুবাইতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিক সাদ। সে দুবাই ও পাকিস্তানের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে টিকেট সংগ্রহ করে প্রতারক মাহবুবকে পাঠাত। পরে প্রতারণার টাকা সাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিত।

শুধু এয়ারলাইন্সের টিকেট বিক্রি নয়। কানাডায় লোক পাঠানো, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চালের বড় চালান সরবরাহ, এমনকি নদী ড্রেজিংয়ের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করত। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া আর কারা জড়িত আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।