সড়ক দুর্ঘটনা কি নিয়ন্ত্রণে আসবে না

মাজহার মান্নান

বছরের ৩৬৫ দিনের এমন দিন খুঁজে পাওয়া খুব দরূহ যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে না। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনভাবেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিবারের মতো এবছরও ঈদে সড়কে ঝরে গেলো ৭৫টি তাজা প্রাণ। ঈদের পরের দিনই নিহত হয়েছে ২০ জন। তবে এ বছর বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বাইক চালক ও আরোহীরা। ঈদের ছুটিতে ৩১ জন বাইকচালক ও আরোহী প্রাণ হারিয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনার কারণটা যখন সবারই জানা তখন কেন সেটা সমাধান হয় না এটাই বড় প্রশ্ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। গলদ তাহলে কোথায়? এভাবেই কি চলতে থাকবে? সড়কে একজন মানুষের অপমৃত্যু তার পরিবােের জন্য কত বড় বিপদ ডেকে আনে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রকেও সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি বহন করতে হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম কম হয়নি। সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে যখন রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো। সেই সময় বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো কিন্তু সেটাতে তেমন কোন সুফল আসেনি। আসলে ক্ষতটা অনেক গভীরে। সড়ক ও পরিবহন অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, রাতারাতি সেটাকে দূর করার সাধ্য কারও নেই। সড়কে শৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে আছে তা যারা নিয়মিত সড়কে চলাচল করেন তারা জানেন। যাহোক চালকদের কত শতাংশ প্রকৃত এবং দক্ষ চালক সেটার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেটার বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ চালক থাকে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ, সনদবিহীন। বাসের হেলপার দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মহা সড়কে গাড়ি চালানো হয়। কে নেবে এর দায়ভার?

একটি প্রাণ চলে যাওয়ার পর যতই শোরগোল হোক তাতে কি যায় আসে। আমাদের দেশে সড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা যে খুবই দুর্বল তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়কে যদি সত্যিকারে শৃঙ্খলা থাকে তাহলে দুর্ঘটনা বহুগুণে কমানো সম্ভব। আমাদের দেশের সড়ক গুলিতে মিশ্রজাতের এবং ভিন্ন ভিন্নগতির গাড়ি চলাচল করে। সেগুলোর মধ্যে বাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, ভটভটি, নসিমন, করিমন, ইজিবাইকসহ নানা জাতের পরিবহন। বলতে গেলে রাস্তার মধ্যে একটি জগাখিচুরি অবস্থা এবং সবাই একটি অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

নিয়মের তোয়াক্কা করা যেন কারও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কে কার আগে যাবে তা নিয়ে চলে মরণ পাল্লা। আর এই মরণ পাল্লার নির্মম শিকার সাধারন মানুষ। কিন্তু সড়কে যে নৈরাজ্য তা কিভাবে সামাল দেয়া যাবে? বাস ট্রাকের চালকেরা রাস্তায় নিজেদেরকে রাজা মনে করে। অন্যান্য গাড়ি বা পথচারীর প্রতি তাদের খেয়াল করার যেন সময় নেই। সড়কে গাড়ি গুলি দীর্ঘ জ্যামে আটকা থাকে এবং এর ফলে চালকেরা খেই হারিয়ে ফেলে এবং অসহিষ্ণু হয়ে উঠে। একটু সুযোগ পেলেই বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে চালাতে থাকে গাড়ি আর যার পরিণাম কারও জীবন কেড়ে নেয়া।

সড়কে একজন চালকের উপরে অনেকগুলো মানুষের জীবন নির্ভর করে। একটি জরিপে দেখা গেছে যে সড়ক দুর্ঘটনার ৮০-৯০ শতাংশ ঘটে থাকে অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। একজন চালক হয়তো দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করে কিন্তু তার এই অপরিনামদর্শী চিন্তা মূল্যবান জীবন কেড়ে নেয়। দূরপাল্লার বাসগুলো রাস্তায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করে। এছাড়াও লোকাল বাস যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে। রাস্তার মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলে এবং এর ফলে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। কেউ যেন তা দেখার নেই। নিয়মগুলো যেন নিভৃতে কাঁদে। যাত্রী তোলার জন্য পাল্লাপাল্লি চলে বাসগুলোর মধ্যে। এর ফলে সড়কে নৈরাজ্য তৈরি হয়। সময় নষ্ট হয়। আর এই সময়কে কভার করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। প্রশ্ন হলো চালকেরা এত সাহস পায় কোথা থেকে? নিয়ম ভাঙ্গার অপরাধে যদি কঠোর ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেয়া যেত তবে কখনই এমনটি হত না। উন্নত দেশের সড়কগুলোতে গাড়ির চালকেরা শৃংঙ্খলা মেনে চলতে বাধ্য হয়। অনিয়ম করার কোন সুযোগ তাদের নেই। কিন্তু এখানে এক ভিন্ন চিত্র আমরা লক্ষ্য করি। সড়কে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেও চালকেরা কিভাবে যেন পার পেয়ে যান। বিচারহীনতার সংস্কৃতি সড়কে নৈরাজ্য যেন আরো তীব্রতর করে তুলেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু যে প্রাণহানি ঘটে তাই নয়, অনেকে আহত বা পঙ্গু হয়ে এক বেদনাময় জীবন কাটায়। বোঝা হয়ে উঠে পরিবারের জন্য। এছাড়ও আর্থিক ক্ষতি হয় প্রচুর। একটি জরিপ মতে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয় যা মোট জিডিপির ২-৩ শতাংশ।

কবে আমরা সড়ক শৃঙ্খলা সঠিকভাবে মেনে চলবো? আসলে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই। সড়কে টহল এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা আমাদের দেশে পর্যাপ্ত নয়। টহল এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা উচিত। সড়কের শৃঙ্খলা যে ভঙ্গ করবে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পর্যাপ্ত জরিমানার আওতায় আনতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ যেন না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর জানা যায় প্রকৃত চালক নয় অন্য কেউ গাড়িটি চালাচ্ছিলো। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগে এটা জানা যায় না কেন? চেকিং ব্যবস্থায় আমাদের দুর্বলতা আছে। আমাদের দেশের সড়ক পরিবহন আইনের তেমন কোন দুর্বলতা আছে বলে মনে করি না। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে দুর্বলতা এবং অব্যবস্থাপনা।

সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। আজ আমাদের সড়ক গুলি যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটাকে নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় যা যা উদ্যোগ প্রয়োজন সবই নিতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে কোন মতেই সড়ক পথ জিম্মি হতে পারে না। একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর সংস্কৃতি আমাদের অনেক পুরোনো। কিন্তু সড়কের এই হত্যার দায় তো কাউকে নিতেই হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ইচ্ছা করলেও এ দায় এড়াতে পারে না, কেননা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর মূল দায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে নিতে হবে কঠোর থেকে কঠোর পদক্ষেপ; যেখানে নমনীয়তার কোন সুযোগ থাকবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২ , ৩০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪৩

সড়ক দুর্ঘটনা কি নিয়ন্ত্রণে আসবে না

মাজহার মান্নান

বছরের ৩৬৫ দিনের এমন দিন খুঁজে পাওয়া খুব দরূহ যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে না। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনভাবেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিবারের মতো এবছরও ঈদে সড়কে ঝরে গেলো ৭৫টি তাজা প্রাণ। ঈদের পরের দিনই নিহত হয়েছে ২০ জন। তবে এ বছর বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বাইক চালক ও আরোহীরা। ঈদের ছুটিতে ৩১ জন বাইকচালক ও আরোহী প্রাণ হারিয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনার কারণটা যখন সবারই জানা তখন কেন সেটা সমাধান হয় না এটাই বড় প্রশ্ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। গলদ তাহলে কোথায়? এভাবেই কি চলতে থাকবে? সড়কে একজন মানুষের অপমৃত্যু তার পরিবােের জন্য কত বড় বিপদ ডেকে আনে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রকেও সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি বহন করতে হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম কম হয়নি। সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে যখন রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো। সেই সময় বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো কিন্তু সেটাতে তেমন কোন সুফল আসেনি। আসলে ক্ষতটা অনেক গভীরে। সড়ক ও পরিবহন অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, রাতারাতি সেটাকে দূর করার সাধ্য কারও নেই। সড়কে শৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে আছে তা যারা নিয়মিত সড়কে চলাচল করেন তারা জানেন। যাহোক চালকদের কত শতাংশ প্রকৃত এবং দক্ষ চালক সেটার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেটার বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ চালক থাকে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ, সনদবিহীন। বাসের হেলপার দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মহা সড়কে গাড়ি চালানো হয়। কে নেবে এর দায়ভার?

একটি প্রাণ চলে যাওয়ার পর যতই শোরগোল হোক তাতে কি যায় আসে। আমাদের দেশে সড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা যে খুবই দুর্বল তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়কে যদি সত্যিকারে শৃঙ্খলা থাকে তাহলে দুর্ঘটনা বহুগুণে কমানো সম্ভব। আমাদের দেশের সড়ক গুলিতে মিশ্রজাতের এবং ভিন্ন ভিন্নগতির গাড়ি চলাচল করে। সেগুলোর মধ্যে বাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, ভটভটি, নসিমন, করিমন, ইজিবাইকসহ নানা জাতের পরিবহন। বলতে গেলে রাস্তার মধ্যে একটি জগাখিচুরি অবস্থা এবং সবাই একটি অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

নিয়মের তোয়াক্কা করা যেন কারও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কে কার আগে যাবে তা নিয়ে চলে মরণ পাল্লা। আর এই মরণ পাল্লার নির্মম শিকার সাধারন মানুষ। কিন্তু সড়কে যে নৈরাজ্য তা কিভাবে সামাল দেয়া যাবে? বাস ট্রাকের চালকেরা রাস্তায় নিজেদেরকে রাজা মনে করে। অন্যান্য গাড়ি বা পথচারীর প্রতি তাদের খেয়াল করার যেন সময় নেই। সড়কে গাড়ি গুলি দীর্ঘ জ্যামে আটকা থাকে এবং এর ফলে চালকেরা খেই হারিয়ে ফেলে এবং অসহিষ্ণু হয়ে উঠে। একটু সুযোগ পেলেই বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে চালাতে থাকে গাড়ি আর যার পরিণাম কারও জীবন কেড়ে নেয়া।

সড়কে একজন চালকের উপরে অনেকগুলো মানুষের জীবন নির্ভর করে। একটি জরিপে দেখা গেছে যে সড়ক দুর্ঘটনার ৮০-৯০ শতাংশ ঘটে থাকে অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। একজন চালক হয়তো দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করে কিন্তু তার এই অপরিনামদর্শী চিন্তা মূল্যবান জীবন কেড়ে নেয়। দূরপাল্লার বাসগুলো রাস্তায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করে। এছাড়াও লোকাল বাস যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে। রাস্তার মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলে এবং এর ফলে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। কেউ যেন তা দেখার নেই। নিয়মগুলো যেন নিভৃতে কাঁদে। যাত্রী তোলার জন্য পাল্লাপাল্লি চলে বাসগুলোর মধ্যে। এর ফলে সড়কে নৈরাজ্য তৈরি হয়। সময় নষ্ট হয়। আর এই সময়কে কভার করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। প্রশ্ন হলো চালকেরা এত সাহস পায় কোথা থেকে? নিয়ম ভাঙ্গার অপরাধে যদি কঠোর ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেয়া যেত তবে কখনই এমনটি হত না। উন্নত দেশের সড়কগুলোতে গাড়ির চালকেরা শৃংঙ্খলা মেনে চলতে বাধ্য হয়। অনিয়ম করার কোন সুযোগ তাদের নেই। কিন্তু এখানে এক ভিন্ন চিত্র আমরা লক্ষ্য করি। সড়কে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেও চালকেরা কিভাবে যেন পার পেয়ে যান। বিচারহীনতার সংস্কৃতি সড়কে নৈরাজ্য যেন আরো তীব্রতর করে তুলেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু যে প্রাণহানি ঘটে তাই নয়, অনেকে আহত বা পঙ্গু হয়ে এক বেদনাময় জীবন কাটায়। বোঝা হয়ে উঠে পরিবারের জন্য। এছাড়ও আর্থিক ক্ষতি হয় প্রচুর। একটি জরিপ মতে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয় যা মোট জিডিপির ২-৩ শতাংশ।

কবে আমরা সড়ক শৃঙ্খলা সঠিকভাবে মেনে চলবো? আসলে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই। সড়কে টহল এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা আমাদের দেশে পর্যাপ্ত নয়। টহল এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা উচিত। সড়কের শৃঙ্খলা যে ভঙ্গ করবে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পর্যাপ্ত জরিমানার আওতায় আনতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ যেন না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর জানা যায় প্রকৃত চালক নয় অন্য কেউ গাড়িটি চালাচ্ছিলো। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগে এটা জানা যায় না কেন? চেকিং ব্যবস্থায় আমাদের দুর্বলতা আছে। আমাদের দেশের সড়ক পরিবহন আইনের তেমন কোন দুর্বলতা আছে বলে মনে করি না। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে দুর্বলতা এবং অব্যবস্থাপনা।

সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। আজ আমাদের সড়ক গুলি যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটাকে নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় যা যা উদ্যোগ প্রয়োজন সবই নিতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে কোন মতেই সড়ক পথ জিম্মি হতে পারে না। একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর সংস্কৃতি আমাদের অনেক পুরোনো। কিন্তু সড়কের এই হত্যার দায় তো কাউকে নিতেই হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ইচ্ছা করলেও এ দায় এড়াতে পারে না, কেননা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর মূল দায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে নিতে হবে কঠোর থেকে কঠোর পদক্ষেপ; যেখানে নমনীয়তার কোন সুযোগ থাকবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]