বৈশ্বিক এলএনজি আমদানি হু হু করে বাড়ছে, সবচেয়ে বেশি আমদানি চীনের

বিশ্বজুড়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের বছরের তুলনায় আমদানিতে এ প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখা যায়। করোনা পরবর্তী সময়ে শিল্প খাতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়ার ফলে এমনটা ঘটছে। এ সময় চীনে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হওয়ায় দেশটিতে এলএনজির চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব এলএনজি ইম্পোর্টার্সের (জিআইআইজিএনএল) দেয়া তথ্যে এমনটা জানা যায়। রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক আমদানির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ২৩ লাখ টন। ২০২০ সালের তুলনায় এটি ১ কোটি ৬২ লাখ টন বেশি। নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনটা জানায় জিআইআইজিএনএল। সংস্থাটির পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক এলএনজি শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে এ সময় শিল্প খাত স্থবির হয়ে যাওয়ায় এমনটা দেখা যায়। তবে ২০২১ সালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকালীন বৈশ্বিক এলএনজি শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ২০১৯ সালে ১৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ৩ শতাংশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।

জিআইআইজিএনএলের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ আবিতেবুল বলেন, ‘২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার ক্রমাগতভাবে সীমিত সরবরাহের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল। এ সময়ে দ্রুতগতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এলএনজি পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি বজায় রাখতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ফলে জ্বালানি পণ্যটির দামে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া বর্তমানে ইউরোপিয়ান জ্বালানি খাতে যে সংকট চলছে তা প্রমাণ করেছে যে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এলএনজির গুরুত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জিআইআইজিএনএল এ প্রতিবেদন তৈরিতে ২৭টি দেশে অবস্থিত ৮৪টি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এসব কোম্পানি বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যের মোট ৯০ শতাংশের বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এশিয়া অঞ্চলে চীন সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করে থাকে। বৈশ্বিক এলএনজি আমদানির পরিমাণে চীনের আমদানির অংশ ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশটির এলএনজি আমদানির পরিমাণ ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ২৫ লাখ টনে।

২০২১ সালের বেশির ভাগ সময় এলএনজির বাজার আদর্শ জাপান কোরিয়া মার্কার (জেকেএম) ও ডাচ টিটিএফ হাবে ইউরোপিয়ান গ্যাসের উচ্চমূল্যের পার্থক্য এশিয়ায় এলএনজির আমদানি আরও বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট করেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেশির ভাগই ইউরোপের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। নিজেদের মজুদ পূর্ণ করতে ও শীতকালে আবাসিক ও করপোরেট ভবনে উষ্ণ পরিবেশ তৈরিতে অধিক পরিমাণ এলএনজি আমদানি করেছিল মহাদেশটি।

আর্থিক বাজার ও অবকাঠামো তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ডাটার তথ্য মতে, গত মাসে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে ইউরোপীয় অঞ্চল। এ সময়ে ১ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি এলএনজি আমদানি করেছে ইউরোপের দেশগুলো। এর আগে জানুয়ারিতে অঞ্চলটিতে এলএনজি আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১ কোটি টন।

জিআইআইজিএনএলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকটের ঝুঁকি ও দামের অস্থিরতার কারণে গত বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বেশ ভালো রকম প্রত্যাবর্তন দেখা গেছে। এ সময়ে স্পট মার্কেটে এলএনজি বাণিজ্য চুক্তি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টনে, যা মোট বাণিজ্যের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সালে স্পট মার্কেটে এলএনজির বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ।

এছাড়া রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এখন আরও বেশি পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির প্রয়োজন। গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক পুনঃরপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এ সময় পুনঃরপ্তানীকৃত এলএনজির পরিমাণ ছিল ৩৫ লাখ টন, ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। এলএনজি পুনঃরপ্তানিতে শীর্ষস্থানে ছিল স্পেন। এরপরে পুনঃরপ্তানিতে ঊর্ধ্বসারিতে ছিল ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস।

শনিবার, ১৪ মে ২০২২ , ৩১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ শাওয়াল ১৪৪৩

বৈশ্বিক এলএনজি আমদানি হু হু করে বাড়ছে, সবচেয়ে বেশি আমদানি চীনের

সংবাদ ডেস্ক

image

বিশ্বজুড়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের বছরের তুলনায় আমদানিতে এ প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখা যায়। করোনা পরবর্তী সময়ে শিল্প খাতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বাড়ার ফলে এমনটা ঘটছে। এ সময় চীনে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হওয়ায় দেশটিতে এলএনজির চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব এলএনজি ইম্পোর্টার্সের (জিআইআইজিএনএল) দেয়া তথ্যে এমনটা জানা যায়। রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক আমদানির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ২৩ লাখ টন। ২০২০ সালের তুলনায় এটি ১ কোটি ৬২ লাখ টন বেশি। নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনটা জানায় জিআইআইজিএনএল। সংস্থাটির পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক এলএনজি শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে এ সময় শিল্প খাত স্থবির হয়ে যাওয়ায় এমনটা দেখা যায়। তবে ২০২১ সালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকালীন বৈশ্বিক এলএনজি শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ২০১৯ সালে ১৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ৩ শতাংশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।

জিআইআইজিএনএলের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ আবিতেবুল বলেন, ‘২০২১ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার ক্রমাগতভাবে সীমিত সরবরাহের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল। এ সময়ে দ্রুতগতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এলএনজি পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি বজায় রাখতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ফলে জ্বালানি পণ্যটির দামে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া বর্তমানে ইউরোপিয়ান জ্বালানি খাতে যে সংকট চলছে তা প্রমাণ করেছে যে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এলএনজির গুরুত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জিআইআইজিএনএল এ প্রতিবেদন তৈরিতে ২৭টি দেশে অবস্থিত ৮৪টি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এসব কোম্পানি বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যের মোট ৯০ শতাংশের বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এশিয়া অঞ্চলে চীন সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করে থাকে। বৈশ্বিক এলএনজি আমদানির পরিমাণে চীনের আমদানির অংশ ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশটির এলএনজি আমদানির পরিমাণ ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ২৫ লাখ টনে।

২০২১ সালের বেশির ভাগ সময় এলএনজির বাজার আদর্শ জাপান কোরিয়া মার্কার (জেকেএম) ও ডাচ টিটিএফ হাবে ইউরোপিয়ান গ্যাসের উচ্চমূল্যের পার্থক্য এশিয়ায় এলএনজির আমদানি আরও বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট করেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেশির ভাগই ইউরোপের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। নিজেদের মজুদ পূর্ণ করতে ও শীতকালে আবাসিক ও করপোরেট ভবনে উষ্ণ পরিবেশ তৈরিতে অধিক পরিমাণ এলএনজি আমদানি করেছিল মহাদেশটি।

আর্থিক বাজার ও অবকাঠামো তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ডাটার তথ্য মতে, গত মাসে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে ইউরোপীয় অঞ্চল। এ সময়ে ১ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি এলএনজি আমদানি করেছে ইউরোপের দেশগুলো। এর আগে জানুয়ারিতে অঞ্চলটিতে এলএনজি আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১ কোটি টন।

জিআইআইজিএনএলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকটের ঝুঁকি ও দামের অস্থিরতার কারণে গত বছর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বেশ ভালো রকম প্রত্যাবর্তন দেখা গেছে। এ সময়ে স্পট মার্কেটে এলএনজি বাণিজ্য চুক্তি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টনে, যা মোট বাণিজ্যের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সালে স্পট মার্কেটে এলএনজির বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ।

এছাড়া রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এখন আরও বেশি পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির প্রয়োজন। গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক পুনঃরপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এ সময় পুনঃরপ্তানীকৃত এলএনজির পরিমাণ ছিল ৩৫ লাখ টন, ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। এলএনজি পুনঃরপ্তানিতে শীর্ষস্থানে ছিল স্পেন। এরপরে পুনঃরপ্তানিতে ঊর্ধ্বসারিতে ছিল ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস।