হজের নিবন্ধন ১৬ মে থেকে, তিন দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে

‘এবার আগের চেয়ে কম মানুষ যাচ্ছেন’

চলতি বছরে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের জন্য আগামী ১৬ মে থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। নিবন্ধন চলবে পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ ১৮ মে পর্যন্ত। এই তিন দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করে নিবন্ধন করতে হবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে এবার নিজেদের পছন্দের ৩ জন করে ৩০ জন প্রতিনিধিকে রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনে সৌদি আরবে পাঠাতে চান ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি। গত বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন মাদানী বলেন, ‘এ বছর আগের চেয়ে কম মানুষ হজে যাবেন। সংসদীয় কমিটির সদস্যরা দুজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। তবে কমিটির সদস্যরা তিনজন করে পাঠানোর সুযোগ দিতে বলেছেন। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’

রুহুল আমীন মাদানী বলেন, ‘এটি আগে থেকেই হয়ে আসছে। যারা এই ধর্ম সংসদীয় কমিটির সদস্য, তাদের ওপর নির্বাচনী এলাকার মানুষের দাবি থাকে হজে পাঠানোর।’

সংসদীয় কমিটির ১০ সদস্যের প্রত্যেকের ৩ জন করে প্রতিনিধি হজে পাঠাতে হলে মোট ৩০ জনকে পাঠাতে হবে বলে জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০২০ সালের নিবন্ধিত সব হজযাত্রী এবং প্রাক-নিবন্ধনের সবশেষ ক্রমিক নম্বর ২৫ হাজার ৯২৪ পর্যন্ত এ বছর হজের নিবন্ধনের আওতায় আসবে। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবার নিবন্ধনের আওতায় আসবেন ২০২০ সালের সব নিবন্ধিত ব্যক্তি।

হজযাত্রী নিবন্ধনের জন্য আবশ্যিকভাবে পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট স্ক্যান করে পূরণ করতে হবে নিবন্ধন তথ্য। পাসপোর্টের মেয়াদ হজের দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। হজযাত্রীর দাখিল করা পাসপোর্ট যাচাই করা হবে অনলাইনে। নিবন্ধনের পর কেউ যদি হজে যেতে না পারেন, তাহলে শুধু বিমান ভাড়া এবং খাবার বাবদ গ্রহণ করা টাকা ফেরত পাবেন। তবে বিমানের টিকেট নিশ্চিত হওয়ার পর হজযাত্রা বাতিল করলে সেই টিকেটের টাকা ফেরত পাবেন না।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল সৌদি আরব হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, দুই শর্তে হজে যেতে পারবেন বিভিন্ন দেশের হজ প্রত্যাশীরা। প্রথমত, হজ যাত্রীদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে হতে হবে এবং পূর্ণ ডোজ টিকা নেয়া থাকা লাগবে। দিত্বীয়ত, সৌদির উদ্দেশে রওনা হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্টের করোনার নেগেটিভ সনদ লাগবে।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত হজ কোটা অনুযায়ী, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ হজ করার সুযোগ পাবেন। এ দেশ থেকে ১ লাখ ৫১ জন হজে অংশ নিতে পারবেন। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮১ হাজার ১৩২ জন হজ করতে পারবেন পাকিস্তান থেকে। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের ৭৯ হাজার ২৩৭ জন হজের সুযোগ পাবেন। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা বাংলাদেশের ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ করতে পারবেন। ২৫ লাখ মানুষ হজের সুযোগ পাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন (২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, যদিও করোনাভাইরাসের কারণে কেউ যেতে পারেননি)। সে হিসাব অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ রাখার পর বিদেশিদের জন্য হজের সুযোগ করে দিলেও সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণায় শঙ্কায় পড়েছেন হজ পালনে নিবন্ধন করা দেশের আগ্রহী ব্যক্তিরা। এখনও সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি জানিয়ে সরকার বলছে, নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা সুযোগ পাবেন না, তারা পরের বছর যাবেন।

এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার। সরকারি খরচে হজ পালনে পাঠানোর সুযোগও এবার আগের তুলনায় কম।

শনিবার, ১৪ মে ২০২২ , ৩১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ শাওয়াল ১৪৪৩

হজের নিবন্ধন ১৬ মে থেকে, তিন দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে

‘এবার আগের চেয়ে কম মানুষ যাচ্ছেন’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চলতি বছরে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের জন্য আগামী ১৬ মে থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। নিবন্ধন চলবে পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ ১৮ মে পর্যন্ত। এই তিন দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করে নিবন্ধন করতে হবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে এবার নিজেদের পছন্দের ৩ জন করে ৩০ জন প্রতিনিধিকে রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনে সৌদি আরবে পাঠাতে চান ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি। গত বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন মাদানী বলেন, ‘এ বছর আগের চেয়ে কম মানুষ হজে যাবেন। সংসদীয় কমিটির সদস্যরা দুজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। তবে কমিটির সদস্যরা তিনজন করে পাঠানোর সুযোগ দিতে বলেছেন। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’

রুহুল আমীন মাদানী বলেন, ‘এটি আগে থেকেই হয়ে আসছে। যারা এই ধর্ম সংসদীয় কমিটির সদস্য, তাদের ওপর নির্বাচনী এলাকার মানুষের দাবি থাকে হজে পাঠানোর।’

সংসদীয় কমিটির ১০ সদস্যের প্রত্যেকের ৩ জন করে প্রতিনিধি হজে পাঠাতে হলে মোট ৩০ জনকে পাঠাতে হবে বলে জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০২০ সালের নিবন্ধিত সব হজযাত্রী এবং প্রাক-নিবন্ধনের সবশেষ ক্রমিক নম্বর ২৫ হাজার ৯২৪ পর্যন্ত এ বছর হজের নিবন্ধনের আওতায় আসবে। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবার নিবন্ধনের আওতায় আসবেন ২০২০ সালের সব নিবন্ধিত ব্যক্তি।

হজযাত্রী নিবন্ধনের জন্য আবশ্যিকভাবে পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট স্ক্যান করে পূরণ করতে হবে নিবন্ধন তথ্য। পাসপোর্টের মেয়াদ হজের দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। হজযাত্রীর দাখিল করা পাসপোর্ট যাচাই করা হবে অনলাইনে। নিবন্ধনের পর কেউ যদি হজে যেতে না পারেন, তাহলে শুধু বিমান ভাড়া এবং খাবার বাবদ গ্রহণ করা টাকা ফেরত পাবেন। তবে বিমানের টিকেট নিশ্চিত হওয়ার পর হজযাত্রা বাতিল করলে সেই টিকেটের টাকা ফেরত পাবেন না।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল সৌদি আরব হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, দুই শর্তে হজে যেতে পারবেন বিভিন্ন দেশের হজ প্রত্যাশীরা। প্রথমত, হজ যাত্রীদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে হতে হবে এবং পূর্ণ ডোজ টিকা নেয়া থাকা লাগবে। দিত্বীয়ত, সৌদির উদ্দেশে রওনা হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্টের করোনার নেগেটিভ সনদ লাগবে।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত হজ কোটা অনুযায়ী, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ হজ করার সুযোগ পাবেন। এ দেশ থেকে ১ লাখ ৫১ জন হজে অংশ নিতে পারবেন। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮১ হাজার ১৩২ জন হজ করতে পারবেন পাকিস্তান থেকে। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের ৭৯ হাজার ২৩৭ জন হজের সুযোগ পাবেন। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা বাংলাদেশের ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ করতে পারবেন। ২৫ লাখ মানুষ হজের সুযোগ পাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন (২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, যদিও করোনাভাইরাসের কারণে কেউ যেতে পারেননি)। সে হিসাব অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ রাখার পর বিদেশিদের জন্য হজের সুযোগ করে দিলেও সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণায় শঙ্কায় পড়েছেন হজ পালনে নিবন্ধন করা দেশের আগ্রহী ব্যক্তিরা। এখনও সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি জানিয়ে সরকার বলছে, নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা সুযোগ পাবেন না, তারা পরের বছর যাবেন।

এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার। সরকারি খরচে হজ পালনে পাঠানোর সুযোগও এবার আগের তুলনায় কম।