রাজশাহীতে মৌসুমের আম পাড়া উৎসব শুরু

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে গুটিজাতের আম নামানো শুরুর মধ্য দিয়ে আম পাড়ার (ক্রয়-বিক্রয়) মহা উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম নামানোর উৎসব। চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত।

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির আমবাগানে গাছে গাছে ঝুলছে পরিপক্ব আম। করোনা মহামারীর ভয় কাটিয়ে এবার ব্যবসায়ীরাও আটঘাট বেঁধেই প্রস্তুত নিয়েছেন আম ক্রয়-বিক্রয়ের। সেই সঙ্গে রাজশাহী জেলা প্রশাসনও গতকাল দুপুরে এক সভায় আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাসের কারণে আমচাষিরা ন্যায্যমূল্য পায়নি। সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। আর গেল মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিক টন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিক টন। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী তিন ধাপে গাছ থেকে আম নামাতে পারবেন চাষিরা। এর মধ্যে, ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষ্মণভোগ ও রানীপছন্দ, ২৮ মে খিরসাপাত/হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী ও সর্বশেষ ২০ আগস্ট ইলমতি আম নামাতে পারবেন চাষিরা।

গতকাল কাটাখালিতে গিয়ে দেখা যায় আলাল হোসেন নামে এক আমচাষি তারা নিজেদের বাগানের আম পাড়ার কাজ করছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের বাগানে ভালো জাতের পাশাপাশি কিছু গুটি জাতের আম আছে সেগুলো পেকে যাবে সেইসব আম নামিয়ে নিচ্ছি। এসব আম নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করবে বলে জানান।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান মালিক আরেজ আলী বলেন, এবার ১০ বিঘা জমির আমবাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। গত বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। তবে এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

এদিকে সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিক টন), পুঠিয়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন), গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিক টন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিক টন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিক টন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিক টন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আম বাজারজাতকরণ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারে আমের বাজারজাতকরণে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।

শনিবার, ১৪ মে ২০২২ , ৩১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ শাওয়াল ১৪৪৩

রাজশাহীতে মৌসুমের আম পাড়া উৎসব শুরু

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহীতে মৌসুমের আম পাড়া শুরু -সংবাদ

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে গুটিজাতের আম নামানো শুরুর মধ্য দিয়ে আম পাড়ার (ক্রয়-বিক্রয়) মহা উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম নামানোর উৎসব। চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত।

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির আমবাগানে গাছে গাছে ঝুলছে পরিপক্ব আম। করোনা মহামারীর ভয় কাটিয়ে এবার ব্যবসায়ীরাও আটঘাট বেঁধেই প্রস্তুত নিয়েছেন আম ক্রয়-বিক্রয়ের। সেই সঙ্গে রাজশাহী জেলা প্রশাসনও গতকাল দুপুরে এক সভায় আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাসের কারণে আমচাষিরা ন্যায্যমূল্য পায়নি। সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। আর গেল মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিক টন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিক টন। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী তিন ধাপে গাছ থেকে আম নামাতে পারবেন চাষিরা। এর মধ্যে, ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষ্মণভোগ ও রানীপছন্দ, ২৮ মে খিরসাপাত/হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী ও সর্বশেষ ২০ আগস্ট ইলমতি আম নামাতে পারবেন চাষিরা।

গতকাল কাটাখালিতে গিয়ে দেখা যায় আলাল হোসেন নামে এক আমচাষি তারা নিজেদের বাগানের আম পাড়ার কাজ করছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের বাগানে ভালো জাতের পাশাপাশি কিছু গুটি জাতের আম আছে সেগুলো পেকে যাবে সেইসব আম নামিয়ে নিচ্ছি। এসব আম নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করবে বলে জানান।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান মালিক আরেজ আলী বলেন, এবার ১০ বিঘা জমির আমবাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। গত বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। তবে এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

এদিকে সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিক টন), পুঠিয়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন), গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিক টন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিক টন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিক টন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিক টন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৬৪১ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিক টন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিক টন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিক টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আম বাজারজাতকরণ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারে আমের বাজারজাতকরণে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।