সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

আমদানি ব্যয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। অবশ্য গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে টান পড়েছে প্রবাসী আয়ে। চাহিদা বাড়ছে ডলারের। এসবের প্রভাব পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে। ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের রিজার্ভ দিয়ে আগামী পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

এই অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করা, কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে দেয়া, বিলাস পণ্যের আমদানিতে লাগাম টানার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি ছিল। আমরা মনে করি, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাম কমবে।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ হলে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় হবে। নানা অজুহাতে বিদেশ সফরের নামে একশ্রেণীর কর্মকর্তা জনগণের করের টাকা ধ্বংস করেন। তারা এমন সব উদ্ভট প্রকল্পের নামে বিদেশ সফর করেন যা তামাশার নামান্তর। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ড যাবে বাংলাদেশের ৪৩ জন প্রতিনিধির একটি দল। সরকার অবশ্য ২৫ জনের ব্যয় বহন করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় একটি দল শ্রম সম্মেলনে গিয়ে কী করবে। আমরা মনে করি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর সব সময়ের জন্যই বন্ধ করে দেয়া উচিত। তথাকথিত সফরের নামে রাষ্ট্রের অর্থের হরিলুট বন্ধ করতে হবে।

কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তও সময়োপোযোগী। রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করে এমন কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন না করাই ভালো। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেয়ার আগে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কোন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প যেন হাতে নেয়া না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা কী বিপদে পড়েছে সেটা সব সময়ের জন্য মনে রাখতে হবে।

যদিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়। তবে রিজার্ভ কমে আসায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এতে এখনি হয়তো শঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে সরকার উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলো না নিলে বা নিতে বিলম্ব করলে অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়তে পারত।

মহামারী আর যুদ্ধের প্রভাবে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা নাজুক। পাকিস্তানের অবস্থা ভালো নয়। অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে হবে। তাহলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল। মূলত আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ সফল হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে আশা করা যায়।

শনিবার, ১৪ মে ২০২২ , ৩১ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ শাওয়াল ১৪৪৩

সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

আমদানি ব্যয় গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। অবশ্য গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে টান পড়েছে প্রবাসী আয়ে। চাহিদা বাড়ছে ডলারের। এসবের প্রভাব পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে। ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের রিজার্ভ দিয়ে আগামী পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

এই অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করা, কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে দেয়া, বিলাস পণ্যের আমদানিতে লাগাম টানার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি ছিল। আমরা মনে করি, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাম কমবে।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ হলে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় হবে। নানা অজুহাতে বিদেশ সফরের নামে একশ্রেণীর কর্মকর্তা জনগণের করের টাকা ধ্বংস করেন। তারা এমন সব উদ্ভট প্রকল্পের নামে বিদেশ সফর করেন যা তামাশার নামান্তর। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ড যাবে বাংলাদেশের ৪৩ জন প্রতিনিধির একটি দল। সরকার অবশ্য ২৫ জনের ব্যয় বহন করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় একটি দল শ্রম সম্মেলনে গিয়ে কী করবে। আমরা মনে করি, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর সব সময়ের জন্যই বন্ধ করে দেয়া উচিত। তথাকথিত সফরের নামে রাষ্ট্রের অর্থের হরিলুট বন্ধ করতে হবে।

কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তও সময়োপোযোগী। রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করে এমন কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন না করাই ভালো। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেয়ার আগে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কোন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প যেন হাতে নেয়া না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা কী বিপদে পড়েছে সেটা সব সময়ের জন্য মনে রাখতে হবে।

যদিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়। তবে রিজার্ভ কমে আসায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এতে এখনি হয়তো শঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে সরকার উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলো না নিলে বা নিতে বিলম্ব করলে অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়তে পারত।

মহামারী আর যুদ্ধের প্রভাবে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা নাজুক। পাকিস্তানের অবস্থা ভালো নয়। অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে হবে। তাহলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল। মূলত আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ সফল হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে আশা করা যায়।