আত্মঘাতী বন্ধুদের সাফল্যকে দেখে
কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়
যদি বলি, এসব বৃথাই! আড়াল, শুধু আড়াল!
অন্তরালে তোমার মগজ সারাক্ষণ ছুটি চায়,
সয়না ধকল তার এলোমেলো পৃথিবীর।
অন্যথায়, এই স-ব অসঙ্গতি, কদর্যতা, জোচ্চুরি, ডাকাতি
সর্বদাই পূবর্বৎ রবে, বড় জোর ওজন পাল্টাবে, রূপ;
আর, তাই, নসিহৎ-চিৎকারে তুমি চিরদিনই-
না, ঠিক তুমি নও, তোমাদের নাজুক মস্তক
নেবে বারবার ছুটি।
যদি বলি, নীতির কথারা তার কিছু অজুহাত বৈ নয়?
যদি বলি, চায় যারা সম্বৎসর বসন্ত-বাতাস;
কাজে-কর্মে অচিরেই ক্লান্ত, কিংবা ক্লান্ত হতে চায়,
তারা, শুধু তারাই নেতির দৃষ্টিতে খুঁজে চলে ত্রুটি,
ছুটি নিতে তুলে ধরে প্রতিবাদ-মহত্ত্বকে?
নাজুক দেহের বুকে কৃষ্ণকায় মানস-গড়ন
ছুটির যুক্তিতে প্রতিবাদ উচ্চারণ করে,
আর সে-কণ্ঠের ভিত্তি গড়ে নৈতিক ভাষণে, সুউচ্চ দর্শনে-
যদি বলি, নেতি সেটা, তারও সব ঝুটা হ্যায়!
যদি বলি, “যে পারে, সে পারে;
নির্বিকারে স্নায়ুগুলো কাড়ে,
শুধু ব্যর্থতার অংশ জুড়ে নানা কথা বাড়ে”,
যদি বলি? আত্মঘাতী বন্ধুদের সাফল্যকে দেখে?
সুলতানপুর ও সারি সারি মেহগনি গাছ
মোহাম্মদ হোসাইন
সারি সারি মেহগনি গাছ
সারি সারি বৃক্ষ নিবাস, যেন বিশুদ্ধ
অক্সিজেনের প্রাকৃতিক সিলিন্ডার, কবির দেশে, কবিতার দেশে... বাংলাদেশের সুলতানপুরে...!
যেখানে ধোঁয়া নেই, কার্বন নেই, নেই শীসাাযুক্ত বাতাসের অত্যাচার...
যেখানে একদার রাজা নেই, রাজবাড়ি আছে
যেখানে একদার সুলতান নেই, কিন্তু, কবিতার সুলতান আছে...
সেই সুলতানপুর গ্রামের কবির হাতে রোপে দেওয়া সারি সারি মেহগনি গাছ,
আহা! বড়ো মুগ্ধতা আনে, মায়া বাড়ায়!
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের আজ বিশুদ্ধ বাতাসের বড়ো প্রয়োজন
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর আজ বিশুদ্ধ অক্সিজেনের বড়ো প্রয়োজন
কী নগরের কী গ্রামের প্রত্যেক জনপদের ফুসফুস আজ মুমূর্ষু, কর্কটাক্রান্ত
আমাদের নির্মল শিশুরা, সময়ের সাহসী সন্তানেরা আজ মুখোমুখি
অবিবেচনাপ্রসূত ধ্বংসযজ্ঞের, মারণাস্ত্রের, এমনকি
নিষ্পেষিত পুঁজির হিংস্র থাবার
আমাদের গ্রহগুলো, নক্ষত্রগুলো, নদী সাগর পর্বতমালাগুলোও আজ বিলুপ্তির সম্মুখীন...!?
আমরা কি তাহলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলব?
আমরা কি তাহলে নিজেরাই রচে নেব নিজেদের
অপ্রাকৃত কবর? কিংবা, জলপিপিদের কান্না বুকে নিয়ে আত্মাহুতি দেব?
আমাদের প্রিয় মেহগনি গাছগুলো ঋজু ও নিরেট দাঁড়িয়ে থেকে সেই জিজ্ঞাসাই
রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে সমগ্র পৃথিবীর কাছে
সীমাহীন আকাশজুড়ে, অমোঘ সৃজনশীলতায়...!?
নিয়তির রঙ
আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
হুট করে একদিন নাই হয়ে যাব
কৃষ্ণচূডা আরও আগুনলাল হবে
ছোটবেলায় নারিকেল গাছের লম্বা বড় কচি ডালে
সমস্ত বিকেল খেলা চলতো
এখন এসব নেই
ঢেউ লাগতো উঠানে
কেঁপে উঠতো শনের ঘর
টেউ এখন মুঠোফোনে
আচমকা কেউ কেউ থেমে যায়
সরল অঙ্কের শেষে আটকে যাবার মতো
চাপা পড়ে গেছে জমা ছিল যা চুলের বেণীতে
নিয়তির রঙ অমলিন।
অপাঠ্য অনন্ত
এমরান হাসান
জন্মাতে দাও। ধানগন্ধী রোদ্দুর চুলের সিঁথিতে এঁকে ফেলা ভুলে
ঘোলাটে জরায়ু ছিঁড়ে আকাশগঙ্গায়।
ছেড়ে যাচ্ছো আলতা-পথের ছোপ ছোপ ছায়াটে মাদুরে হাতের আয়ুরেখা!
জলবিন্দুতে নারীশস্যের সিনান শেষে
ভালো থাকা ভাবতে ভাবতে কতকাল ভালো থাকেনি খুচরো সন্ত্রাসের বাঁক
মৃত মাছেদের কাতারে শুয়ে শুয়ে মরে গেছে ভোরের সুবর্ণতা
নিজস্ব নিয়মে আয়ুরেখা উধাও।
নাৎসি বাতাসে-
এরকম কোন কিছু প্রজাপতির ডানার মতন
এরকম কোন কিছু নীল অশ্বারোহীর মতন
প্রিয়হীন অপ্রিয় রেখাগুচ্ছ জুড়ে
লেপ্টে থাকা ধানের মগ্নতায়
নির্বিকার মুছে দিয়ে মগজের কারুরেখা
ছায়ায় হতে চাওয়া মাতৃজন্মদেহের আলো... অন্তর্লীন
রাতের কবিতা
রূপসা সাহা
কালো ধোঁয়া পাশে ওরে কাশফুল,
ফটোকপি চোখেদের বাদামি।
ঠোঁটে ঠোঁট কাটাকুটি কি ব?্যাকুল!
পাল্টাবে রোজ রোজ আগামী।
রুমালেতে বেঁচে থাকা অভিমান,
বালাপোশ ঢেকে রাখে গল্প,
স্পর্শরা করে যায় অভিযান।
আদরেতে প্রেম খুঁজো অল্প।
কালো সাদা ফ্রেমে প্রেম পিছুটান,
অগোছালো চুল আঁকি সোহাগে,
কথাগুলো আলাপের অভিমান।
বেঁচে থাক স্মৃতিগুলো বেহাগে।
কবিতারা বসন্তে পরিযায়ী,
কলতানে প্রজাপতি খেলে যায়।
গল্পতে মুক্তিরা উদ্বায়ী,
চোখেদের ভাষা বোঝা বড়ো দায়।
স্বপ্নের মেনরোডে খুব ভিড়,
জলপট্টির বুকে ভিজে চোখ,
চুমুদের ঠিকানারা অস্থির।
শূন্যের বুকে বাজে গাঢ় শোক।
বাজেয়াপ্ত এপিটাফ
সিদ্ধার্থ অভিজিৎ
জ্যোৎস্নার ফর্দ ভেদ করে প্রথমত হাওয়ারা হাঁটছে-
দ্রুত হাঁটছে, কার্যত দৌড়াচ্ছে। স্থবির বাসনার মতো স্মৃতি
গুলিয়ে উঠলে খেয়াল হয় পানের বরজে
লেগেছে ঢেউ।
আরশির আবডালে ফ্রিজের শীতলতায়
তোমাদের মতো কেউ কেউ সাঁতার কাটছে।
বিশ্বাসী চোখ বন্ধ হয়ে আসে। যুধ্যমান হাওয়ায়
পালের গোদার হাতে নড়ে ওঠে সংরক্ষিত ঘণ্টি।
কবিতার স্নিগ্ধতায় এপিটাফ আঁকতে গিয়ে দেখি
বড্ড দেরি হয়ে গেছে। শ্যাওলার সংসার
আকিঁবুকিঁতে এঁকে গেছে কদম সুষমায়।
কার্যত, জপের মালার মতো সুনির্দিষ্টতায়
ঘড়ি বাড়ে, স্ক্রীনে লেখা ওঠে- ‘স্টোরেজ ফুল’।
ফিরতেই হবে
মুস্তফা হাবীব
কী আনন্দঘন যাত্রা তোমার!
পৃথিবীর রূপে, সুর ও ছন্দে উদ্বেলিত তুমি
বেপরোয়া চলার গতি, সমুদ্রের জল ছিটকে পড়ে।
তুমি একা ছিলে না কখনও
যখন শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল অধরার খোঁজে
তখনও তুমি একা ছিলে না
সূর্য ছিল, দিনের আলোয় স্বপ্নের সভা ছিল
ছিল চাঁদের রোশনাই এবং রমণীয় পরশ।
কত রঙ বেরঙের পথ পেরিয়ে যাচ্ছিলে
সঙ্গে ছিল জলতরঙ্গ, শরতের শিশির,
দারুচিনি দ্বীপের শোভা, পাহাড়ী ঝর্নার সুখ।
দৌড়ের ঘোড়া, দুগ্ধ গাভী এবং হাইব্রিড ভালোবাসা।
যেতে যেতে বেলাশেষে দাঁড়ালে নিকুঞ্জ পথে একলা
সন্ধ্যার আবীর মেখে তাকালে
নিজ সংকুচিত শরীর সাম্পানে
ঠিক তখনই বুঝতে পেরেছো, ফিরতে হবে
আর নয় আর নয় সম্মুখে পথ চলা
আর নয় আর নয় মাধবীর সঙ্গে কথা বলা!
যেখানে ছিল না কেউ, ছিল না ফুল পাখি
ছিল না আতপ চালের ঘ্রাণ কিংবা দুধসাদা পরী
তুমি একা ছিলে, শুধু একাই ছিলে শাশ্বত
এবার ফিরতেই হবে মূলে, সেই অচিন অপার দেশে।
বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২ , ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৩
আত্মঘাতী বন্ধুদের সাফল্যকে দেখে
কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়
যদি বলি, এসব বৃথাই! আড়াল, শুধু আড়াল!
অন্তরালে তোমার মগজ সারাক্ষণ ছুটি চায়,
সয়না ধকল তার এলোমেলো পৃথিবীর।
অন্যথায়, এই স-ব অসঙ্গতি, কদর্যতা, জোচ্চুরি, ডাকাতি
সর্বদাই পূবর্বৎ রবে, বড় জোর ওজন পাল্টাবে, রূপ;
আর, তাই, নসিহৎ-চিৎকারে তুমি চিরদিনই-
না, ঠিক তুমি নও, তোমাদের নাজুক মস্তক
নেবে বারবার ছুটি।
যদি বলি, নীতির কথারা তার কিছু অজুহাত বৈ নয়?
যদি বলি, চায় যারা সম্বৎসর বসন্ত-বাতাস;
কাজে-কর্মে অচিরেই ক্লান্ত, কিংবা ক্লান্ত হতে চায়,
তারা, শুধু তারাই নেতির দৃষ্টিতে খুঁজে চলে ত্রুটি,
ছুটি নিতে তুলে ধরে প্রতিবাদ-মহত্ত্বকে?
নাজুক দেহের বুকে কৃষ্ণকায় মানস-গড়ন
ছুটির যুক্তিতে প্রতিবাদ উচ্চারণ করে,
আর সে-কণ্ঠের ভিত্তি গড়ে নৈতিক ভাষণে, সুউচ্চ দর্শনে-
যদি বলি, নেতি সেটা, তারও সব ঝুটা হ্যায়!
যদি বলি, “যে পারে, সে পারে;
নির্বিকারে স্নায়ুগুলো কাড়ে,
শুধু ব্যর্থতার অংশ জুড়ে নানা কথা বাড়ে”,
যদি বলি? আত্মঘাতী বন্ধুদের সাফল্যকে দেখে?
সুলতানপুর ও সারি সারি মেহগনি গাছ
মোহাম্মদ হোসাইন
সারি সারি মেহগনি গাছ
সারি সারি বৃক্ষ নিবাস, যেন বিশুদ্ধ
অক্সিজেনের প্রাকৃতিক সিলিন্ডার, কবির দেশে, কবিতার দেশে... বাংলাদেশের সুলতানপুরে...!
যেখানে ধোঁয়া নেই, কার্বন নেই, নেই শীসাাযুক্ত বাতাসের অত্যাচার...
যেখানে একদার রাজা নেই, রাজবাড়ি আছে
যেখানে একদার সুলতান নেই, কিন্তু, কবিতার সুলতান আছে...
সেই সুলতানপুর গ্রামের কবির হাতে রোপে দেওয়া সারি সারি মেহগনি গাছ,
আহা! বড়ো মুগ্ধতা আনে, মায়া বাড়ায়!
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের আজ বিশুদ্ধ বাতাসের বড়ো প্রয়োজন
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর আজ বিশুদ্ধ অক্সিজেনের বড়ো প্রয়োজন
কী নগরের কী গ্রামের প্রত্যেক জনপদের ফুসফুস আজ মুমূর্ষু, কর্কটাক্রান্ত
আমাদের নির্মল শিশুরা, সময়ের সাহসী সন্তানেরা আজ মুখোমুখি
অবিবেচনাপ্রসূত ধ্বংসযজ্ঞের, মারণাস্ত্রের, এমনকি
নিষ্পেষিত পুঁজির হিংস্র থাবার
আমাদের গ্রহগুলো, নক্ষত্রগুলো, নদী সাগর পর্বতমালাগুলোও আজ বিলুপ্তির সম্মুখীন...!?
আমরা কি তাহলে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলব?
আমরা কি তাহলে নিজেরাই রচে নেব নিজেদের
অপ্রাকৃত কবর? কিংবা, জলপিপিদের কান্না বুকে নিয়ে আত্মাহুতি দেব?
আমাদের প্রিয় মেহগনি গাছগুলো ঋজু ও নিরেট দাঁড়িয়ে থেকে সেই জিজ্ঞাসাই
রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে সমগ্র পৃথিবীর কাছে
সীমাহীন আকাশজুড়ে, অমোঘ সৃজনশীলতায়...!?
নিয়তির রঙ
আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
হুট করে একদিন নাই হয়ে যাব
কৃষ্ণচূডা আরও আগুনলাল হবে
ছোটবেলায় নারিকেল গাছের লম্বা বড় কচি ডালে
সমস্ত বিকেল খেলা চলতো
এখন এসব নেই
ঢেউ লাগতো উঠানে
কেঁপে উঠতো শনের ঘর
টেউ এখন মুঠোফোনে
আচমকা কেউ কেউ থেমে যায়
সরল অঙ্কের শেষে আটকে যাবার মতো
চাপা পড়ে গেছে জমা ছিল যা চুলের বেণীতে
নিয়তির রঙ অমলিন।
অপাঠ্য অনন্ত
এমরান হাসান
জন্মাতে দাও। ধানগন্ধী রোদ্দুর চুলের সিঁথিতে এঁকে ফেলা ভুলে
ঘোলাটে জরায়ু ছিঁড়ে আকাশগঙ্গায়।
ছেড়ে যাচ্ছো আলতা-পথের ছোপ ছোপ ছায়াটে মাদুরে হাতের আয়ুরেখা!
জলবিন্দুতে নারীশস্যের সিনান শেষে
ভালো থাকা ভাবতে ভাবতে কতকাল ভালো থাকেনি খুচরো সন্ত্রাসের বাঁক
মৃত মাছেদের কাতারে শুয়ে শুয়ে মরে গেছে ভোরের সুবর্ণতা
নিজস্ব নিয়মে আয়ুরেখা উধাও।
নাৎসি বাতাসে-
এরকম কোন কিছু প্রজাপতির ডানার মতন
এরকম কোন কিছু নীল অশ্বারোহীর মতন
প্রিয়হীন অপ্রিয় রেখাগুচ্ছ জুড়ে
লেপ্টে থাকা ধানের মগ্নতায়
নির্বিকার মুছে দিয়ে মগজের কারুরেখা
ছায়ায় হতে চাওয়া মাতৃজন্মদেহের আলো... অন্তর্লীন
রাতের কবিতা
রূপসা সাহা
কালো ধোঁয়া পাশে ওরে কাশফুল,
ফটোকপি চোখেদের বাদামি।
ঠোঁটে ঠোঁট কাটাকুটি কি ব?্যাকুল!
পাল্টাবে রোজ রোজ আগামী।
রুমালেতে বেঁচে থাকা অভিমান,
বালাপোশ ঢেকে রাখে গল্প,
স্পর্শরা করে যায় অভিযান।
আদরেতে প্রেম খুঁজো অল্প।
কালো সাদা ফ্রেমে প্রেম পিছুটান,
অগোছালো চুল আঁকি সোহাগে,
কথাগুলো আলাপের অভিমান।
বেঁচে থাক স্মৃতিগুলো বেহাগে।
কবিতারা বসন্তে পরিযায়ী,
কলতানে প্রজাপতি খেলে যায়।
গল্পতে মুক্তিরা উদ্বায়ী,
চোখেদের ভাষা বোঝা বড়ো দায়।
স্বপ্নের মেনরোডে খুব ভিড়,
জলপট্টির বুকে ভিজে চোখ,
চুমুদের ঠিকানারা অস্থির।
শূন্যের বুকে বাজে গাঢ় শোক।
বাজেয়াপ্ত এপিটাফ
সিদ্ধার্থ অভিজিৎ
জ্যোৎস্নার ফর্দ ভেদ করে প্রথমত হাওয়ারা হাঁটছে-
দ্রুত হাঁটছে, কার্যত দৌড়াচ্ছে। স্থবির বাসনার মতো স্মৃতি
গুলিয়ে উঠলে খেয়াল হয় পানের বরজে
লেগেছে ঢেউ।
আরশির আবডালে ফ্রিজের শীতলতায়
তোমাদের মতো কেউ কেউ সাঁতার কাটছে।
বিশ্বাসী চোখ বন্ধ হয়ে আসে। যুধ্যমান হাওয়ায়
পালের গোদার হাতে নড়ে ওঠে সংরক্ষিত ঘণ্টি।
কবিতার স্নিগ্ধতায় এপিটাফ আঁকতে গিয়ে দেখি
বড্ড দেরি হয়ে গেছে। শ্যাওলার সংসার
আকিঁবুকিঁতে এঁকে গেছে কদম সুষমায়।
কার্যত, জপের মালার মতো সুনির্দিষ্টতায়
ঘড়ি বাড়ে, স্ক্রীনে লেখা ওঠে- ‘স্টোরেজ ফুল’।
ফিরতেই হবে
মুস্তফা হাবীব
কী আনন্দঘন যাত্রা তোমার!
পৃথিবীর রূপে, সুর ও ছন্দে উদ্বেলিত তুমি
বেপরোয়া চলার গতি, সমুদ্রের জল ছিটকে পড়ে।
তুমি একা ছিলে না কখনও
যখন শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল অধরার খোঁজে
তখনও তুমি একা ছিলে না
সূর্য ছিল, দিনের আলোয় স্বপ্নের সভা ছিল
ছিল চাঁদের রোশনাই এবং রমণীয় পরশ।
কত রঙ বেরঙের পথ পেরিয়ে যাচ্ছিলে
সঙ্গে ছিল জলতরঙ্গ, শরতের শিশির,
দারুচিনি দ্বীপের শোভা, পাহাড়ী ঝর্নার সুখ।
দৌড়ের ঘোড়া, দুগ্ধ গাভী এবং হাইব্রিড ভালোবাসা।
যেতে যেতে বেলাশেষে দাঁড়ালে নিকুঞ্জ পথে একলা
সন্ধ্যার আবীর মেখে তাকালে
নিজ সংকুচিত শরীর সাম্পানে
ঠিক তখনই বুঝতে পেরেছো, ফিরতে হবে
আর নয় আর নয় সম্মুখে পথ চলা
আর নয় আর নয় মাধবীর সঙ্গে কথা বলা!
যেখানে ছিল না কেউ, ছিল না ফুল পাখি
ছিল না আতপ চালের ঘ্রাণ কিংবা দুধসাদা পরী
তুমি একা ছিলে, শুধু একাই ছিলে শাশ্বত
এবার ফিরতেই হবে মূলে, সেই অচিন অপার দেশে।