একটি স্বর্গীয় পাতা

মূল : হানস ক্রিস্টিয়ান এন্ডারসন অনুবাদ : সানিয়া সুলতানা শিলা

এক দেবদূত স্বর্গীয় বাগান থেকে একটি ফুল তুলে নিয়ে নির্মল বাতাসে উড়ে যাচ্ছিলো। ফুলটিকে চুম্বন করার সময় সেখানে ছোট একটি পাতা পড়ে গিয়ে গাছের মাঝখানে নরম মাটিতে ডুবে গেল। এটি দ্রুত অঙ্কুরিত হয় এবং শিকড় ধরে অন্য গাছগুলির মধ্যে বীজ ছড়িয়ে দেয়।

একজন বলে “এটি একটি হাস্যকর ছোট বীজ”। এটি কাটা বা বিছুটি জাতের গাছ নয় তাই কেউ এটি চিনবে না।

আরেকজন বলল, “এটিকে অবশ্যই এক বিশেষ ধরনের বাগানের গাছ হতে হবে” এবং তাঁরা এটিকে বাগানের জিনিস বলে অবজ্ঞা করছিলো।

কণ্টকাবৃত এক লম্বা গাছ বললো “তুমি কোথায় এসেছো?” এখানে তোমার অঙ্কুরোদগমকে সমর্থন করা বোকামী এবং আমরা তোমাকে মেনে নেবো না।

শীতের আগমনে গাছটি তুষারে ঢেকে গেল, কিন্তু তার উপরে তুষার এভাবে চিকচিক করছিলো যেন উপর নিচ দুই পাশেই সূর্যের আলো রয়েছে।

বসন্তের আগমনে গাছটি সম্পূর্ণ রঙিন হয়ে নিজেকে মেলে ধরেছিল এবং বনের অন্যান্য গাছের চেয়েও সুন্দর লাগছিল। নিজের জ্ঞানকে সাদা কালোতে ব্যাখ্যা করতে পারা এক উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষক নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। তার পরীক্ষাকৃত উদ্ভিদটি কোনো সিস্টেম বা শ্রেণির অন্তর্গত ছিল না এবং তিনি সেটি খুঁজে বের করতে পারেন নি। তিনি বলেছিলেন, “এটি আমি জানিনা এবং কোনো পদ্ধতিতে এটিকে উল্লেখ করা যায় না।”

এবং “এটি অবশ্যই কিছু নীচু প্রজাতি হতে পারে।” কাঁটা ও বিছুটিগাছ বললো “কোনোভাবেই জানা যায় না!”

চারিদিকে বড় বড় গাছ ছোটো গাছটিকে দেখছিলো এবং ভালো বা খারাপ কিছু না বলে শুধুমাত্র মন্তব্য শুনছিল, যেটি মূর্খদের জন্যে সব থেকে জ্ঞানী পরিকল্পনা।

সেখানে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পবিত্র হৃদয়ের এক নিষ্পাপ মেয়ে যাচ্ছিলো এবং তার নিজের প্রতি ছিলো অগাধ বিশ্বাস। তার প্রধান সম্পত্তি ছিল পুরোনো বাইবেল যেটিকে সে সম্মানের সাথে পাঠ করতো। এটির মাধ্যমে সে তার কাছে ঈশ্বর প্রেরিত বাণী শুনতে পেত, এবং তাকে স্মরণ করাতো জোসেফের ভাইদের সম্পর্কে যারা তাকে আঘাত করতে চেয়েছিল। “তাদের হৃদয়ে খারাপ পরিকল্পনা থাকতেই পারে, কিন্তু ঈশ্বর সেটিকে ভালোতে রূপান্তর করেন।” আমরা যদি অন্যায়ভাবে কষ্ট পাই, যদি আমাদের তুচ্ছ ভাবা হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সেই পবিত্র মানুষের কথা ভাবতে হবে যিনি ক্রুশে পেরেক মারা মানুষের জন্যেও প্রার্থনা করেছিলেন, “ঈশ্বর তাদেরকে ক্ষমা করুন, তারা জানে না তারা কী করে।”

মেয়েটি বিস্ময়কর গাছের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, কারণ সবুজ পাতাগুলি থেকে মিষ্টি এবং সতেজ ঘ্রাণ আসছিলো, এবং ফুলগুলি রোদের শিখার মতো চকচক করছিলো। সেইসাথে একটি মিষ্টি শব্দ যেন তাদের চারদিকে স্থির হয়ে নিজের মাঝে লুকিয়ে আছে। হাজার বছর ধরে যেন এই সুরের ফোয়ারা নিঃশেষ হয়নি। নিষ্পাপ মেয়েটি ঈশ্বরের এই মহিমান্বিত কাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো এবং ফুলটি পরিক্ষা করে মিষ্টি সুগন্ধি নিতে একটি ডালের উপর নিচু হয়েছিলো। তারপর তার মন আনন্দে ছেয়ে যায়। খুশিতে সে একটি ফুল ছিঁড়তে চেয়েও ভেঙ্গে যাওয়ায় সে পারে না। সে জানতো ফুলটি খুব শীঘ্রই বিবর্ণ হয়ে যাবে। তাই সে একটি সবুজ পাতা বাড়িয়ে নিয়ে বাইবেলে রেখে দেয় যেখানে এটি চিরসবুজ ও তরতাজা ছিলো। কয়েক সপ্তাহ পর যখন সেই বাইবেলটি কফিনের ভেতর তরুণীর মাথার নিচে রাখা হয়েছিল, তখনও সেই পাতাটি বাইবেলের পাতায় অক্ষত ছিল। তার মুখে এক পবিত্র প্রশান্তি ছিলো যেন অবশেষে পৃথীবির সত্য সাথে নিয়ে ঈশ্বরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। বনের মাঝে বিস্ময়কর বীজটি প্রস্ফুটিত হতে হতে একসময় সেটি একটি গাছে পরিণত হয় এবং সমস্ত পাখি তাকে সম্মান করে।

কাটা গাছ এবং ভাটুই গাছ বললো, “নিঃসন্দেহে এটি একটি বিদেশী গাছ।”

কালো বনের শামুক এসে ফুলে থুথু দেয় এবং বলে, “আমরা নিজেদের দেশে এভাবে চলতে পারি না।” এরপর শুয়োরপাল এলো, সেগুলো ছাইয়ে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে কাটাগাছ ও ঝোপ সংগ্রহ করছিলো। সে বিস্ময়কর উদ্ভিদ, এর শিকড় সবকিছু টেনে এনে গোছাতে লাগলেন। তিনি বললেন, “যেকোনোভাবে এটি করতে হবে;” সেকারণে গাছটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কিছুক্ষণ পরেই দেশের রাজা গভীর বিষাদে ভুগলেন। যদিও তিনি পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী ছিলেন কিন্তু তার কাজ কোনো উপকারে আসেনি। তারা উদ্দেশ্যহীন ও ভগভীরভাবে খুঁজে পাওয়া বইগুলি পড়তে সবচেয়ে হালকা এবং তুচ্ছ জিনিস খুঁজে পায়। তারপর তারা এক জ্ঞানী ব্যাক্তির কাছে যায় এই সমস্যা সমাধানের জন্যে। তিনি বলেন স্বর্গীয় এক উদ্ভিদ যা বনে জন্মেছিল এটিই শুধুমাত্র এই সমস্যার প্রতিকার এবং নিরাময় করতে পারে, যেটির উপর রাজার আধিপত্য ছিলো।

এরপর শুয়োরপাল বলল, এটির ব্যাপারে সে জানতো না এবং “সে ভয় পাচ্ছে যে সে এই গাছটি বন থেকে তুলে নিয়েছে এবং পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে।”

“আপনি জানেন না ! এটি খুবই ভালো এবং প্রকৃতপক্ষে এটি চরম অজ্ঞতা!”

দরিদ্র শুয়োরপালক সম্বোধন করে বলা কথাগুলোয় তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন না সেখানে সবাই অজ্ঞ ছিলো। গাছের একটি পাতাও পাওয়া যায়নি কোথাও। একটি ছিলো যেটি মৃতদেহে কফিনের সাথে সমাধিস্থ ছিলো, যেটির সম্পর্কে কেউ জানতো না। তারপর রাজা বিষণœতায় হন্যে হয়ে এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। তিনি বলেছিলেন, “এখানে একটি গাছ দাঁড়িয়েছে” এবং “এটি একটি পবিত্র স্থান।” তারপর তিনি সে গাছকে সোনার পাত দিয়ে ঘিরে রাখতে এবং সেখানে এক প্রহরীকে রাখার আদেশ দিলেন।

সেই শিক্ষক স্বর্গীয় উদ্ভিদ সম্পর্কে একটি দীর্ঘ গ্রন্থ লিখেছিলেন এবং এর জন্যে তিনি প্রচুর অর্থ পেয়েছিলেন যা তাকে ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। এবং এই অংশটি সত্যি গল্পের সবথেকে মজার অংশ।

কারণ সেই গাছটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এবং রাজা বরাবরের মতো বিষণœতায় ডুবেছিলেন কিন্তু প্রহরী বলেছিল যে সবসময় সে এমনই ছিলো।

লেখক পরিচিতি

হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন ডেনীয় লেখক এবং কবি। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসাবে অধিক পরিচিত। রূপকথা লেখার জন্য তাকে রূপকথার জাদুকর নামে অভিহিত করা হয়।

এন্ডারসনের রূপকথা, যার সংখ্যা ৩৩৮১-এর কম নয়। ১২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এই রূপকথাসমূহ পশ্চিমের যৌথ চেতনায় সাংস্কৃতিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, শিশুরা সহজেই সেগুলো পাচ্ছে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথাসমূহ হল “দি এমপেরর্স নিউ ক্লদস”, “দ্য লিটল মারমেইড”, “দ্য নাইটিংগেল”, “দ্য স্নো কুইন”, “দি আগলি ডাকলিং”, “থাম্বেলিনা”। তার গল্পসমূহ বেলে, নাটক, এবং অ্যানিমেটেড এবং লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কোপেনহেগেনের সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সবচেয়ে ব্যস্ত বলেভার্ডের একটি হল “এইচসি এন্ডারসন্স বলেভার্ড”।

বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২ , ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৩

একটি স্বর্গীয় পাতা

মূল : হানস ক্রিস্টিয়ান এন্ডারসন অনুবাদ : সানিয়া সুলতানা শিলা

image

এক দেবদূত স্বর্গীয় বাগান থেকে একটি ফুল তুলে নিয়ে নির্মল বাতাসে উড়ে যাচ্ছিলো। ফুলটিকে চুম্বন করার সময় সেখানে ছোট একটি পাতা পড়ে গিয়ে গাছের মাঝখানে নরম মাটিতে ডুবে গেল। এটি দ্রুত অঙ্কুরিত হয় এবং শিকড় ধরে অন্য গাছগুলির মধ্যে বীজ ছড়িয়ে দেয়।

একজন বলে “এটি একটি হাস্যকর ছোট বীজ”। এটি কাটা বা বিছুটি জাতের গাছ নয় তাই কেউ এটি চিনবে না।

আরেকজন বলল, “এটিকে অবশ্যই এক বিশেষ ধরনের বাগানের গাছ হতে হবে” এবং তাঁরা এটিকে বাগানের জিনিস বলে অবজ্ঞা করছিলো।

কণ্টকাবৃত এক লম্বা গাছ বললো “তুমি কোথায় এসেছো?” এখানে তোমার অঙ্কুরোদগমকে সমর্থন করা বোকামী এবং আমরা তোমাকে মেনে নেবো না।

শীতের আগমনে গাছটি তুষারে ঢেকে গেল, কিন্তু তার উপরে তুষার এভাবে চিকচিক করছিলো যেন উপর নিচ দুই পাশেই সূর্যের আলো রয়েছে।

বসন্তের আগমনে গাছটি সম্পূর্ণ রঙিন হয়ে নিজেকে মেলে ধরেছিল এবং বনের অন্যান্য গাছের চেয়েও সুন্দর লাগছিল। নিজের জ্ঞানকে সাদা কালোতে ব্যাখ্যা করতে পারা এক উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষক নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। তার পরীক্ষাকৃত উদ্ভিদটি কোনো সিস্টেম বা শ্রেণির অন্তর্গত ছিল না এবং তিনি সেটি খুঁজে বের করতে পারেন নি। তিনি বলেছিলেন, “এটি আমি জানিনা এবং কোনো পদ্ধতিতে এটিকে উল্লেখ করা যায় না।”

এবং “এটি অবশ্যই কিছু নীচু প্রজাতি হতে পারে।” কাঁটা ও বিছুটিগাছ বললো “কোনোভাবেই জানা যায় না!”

চারিদিকে বড় বড় গাছ ছোটো গাছটিকে দেখছিলো এবং ভালো বা খারাপ কিছু না বলে শুধুমাত্র মন্তব্য শুনছিল, যেটি মূর্খদের জন্যে সব থেকে জ্ঞানী পরিকল্পনা।

সেখানে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পবিত্র হৃদয়ের এক নিষ্পাপ মেয়ে যাচ্ছিলো এবং তার নিজের প্রতি ছিলো অগাধ বিশ্বাস। তার প্রধান সম্পত্তি ছিল পুরোনো বাইবেল যেটিকে সে সম্মানের সাথে পাঠ করতো। এটির মাধ্যমে সে তার কাছে ঈশ্বর প্রেরিত বাণী শুনতে পেত, এবং তাকে স্মরণ করাতো জোসেফের ভাইদের সম্পর্কে যারা তাকে আঘাত করতে চেয়েছিল। “তাদের হৃদয়ে খারাপ পরিকল্পনা থাকতেই পারে, কিন্তু ঈশ্বর সেটিকে ভালোতে রূপান্তর করেন।” আমরা যদি অন্যায়ভাবে কষ্ট পাই, যদি আমাদের তুচ্ছ ভাবা হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সেই পবিত্র মানুষের কথা ভাবতে হবে যিনি ক্রুশে পেরেক মারা মানুষের জন্যেও প্রার্থনা করেছিলেন, “ঈশ্বর তাদেরকে ক্ষমা করুন, তারা জানে না তারা কী করে।”

মেয়েটি বিস্ময়কর গাছের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, কারণ সবুজ পাতাগুলি থেকে মিষ্টি এবং সতেজ ঘ্রাণ আসছিলো, এবং ফুলগুলি রোদের শিখার মতো চকচক করছিলো। সেইসাথে একটি মিষ্টি শব্দ যেন তাদের চারদিকে স্থির হয়ে নিজের মাঝে লুকিয়ে আছে। হাজার বছর ধরে যেন এই সুরের ফোয়ারা নিঃশেষ হয়নি। নিষ্পাপ মেয়েটি ঈশ্বরের এই মহিমান্বিত কাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো এবং ফুলটি পরিক্ষা করে মিষ্টি সুগন্ধি নিতে একটি ডালের উপর নিচু হয়েছিলো। তারপর তার মন আনন্দে ছেয়ে যায়। খুশিতে সে একটি ফুল ছিঁড়তে চেয়েও ভেঙ্গে যাওয়ায় সে পারে না। সে জানতো ফুলটি খুব শীঘ্রই বিবর্ণ হয়ে যাবে। তাই সে একটি সবুজ পাতা বাড়িয়ে নিয়ে বাইবেলে রেখে দেয় যেখানে এটি চিরসবুজ ও তরতাজা ছিলো। কয়েক সপ্তাহ পর যখন সেই বাইবেলটি কফিনের ভেতর তরুণীর মাথার নিচে রাখা হয়েছিল, তখনও সেই পাতাটি বাইবেলের পাতায় অক্ষত ছিল। তার মুখে এক পবিত্র প্রশান্তি ছিলো যেন অবশেষে পৃথীবির সত্য সাথে নিয়ে ঈশ্বরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। বনের মাঝে বিস্ময়কর বীজটি প্রস্ফুটিত হতে হতে একসময় সেটি একটি গাছে পরিণত হয় এবং সমস্ত পাখি তাকে সম্মান করে।

কাটা গাছ এবং ভাটুই গাছ বললো, “নিঃসন্দেহে এটি একটি বিদেশী গাছ।”

কালো বনের শামুক এসে ফুলে থুথু দেয় এবং বলে, “আমরা নিজেদের দেশে এভাবে চলতে পারি না।” এরপর শুয়োরপাল এলো, সেগুলো ছাইয়ে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে কাটাগাছ ও ঝোপ সংগ্রহ করছিলো। সে বিস্ময়কর উদ্ভিদ, এর শিকড় সবকিছু টেনে এনে গোছাতে লাগলেন। তিনি বললেন, “যেকোনোভাবে এটি করতে হবে;” সেকারণে গাছটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কিছুক্ষণ পরেই দেশের রাজা গভীর বিষাদে ভুগলেন। যদিও তিনি পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী ছিলেন কিন্তু তার কাজ কোনো উপকারে আসেনি। তারা উদ্দেশ্যহীন ও ভগভীরভাবে খুঁজে পাওয়া বইগুলি পড়তে সবচেয়ে হালকা এবং তুচ্ছ জিনিস খুঁজে পায়। তারপর তারা এক জ্ঞানী ব্যাক্তির কাছে যায় এই সমস্যা সমাধানের জন্যে। তিনি বলেন স্বর্গীয় এক উদ্ভিদ যা বনে জন্মেছিল এটিই শুধুমাত্র এই সমস্যার প্রতিকার এবং নিরাময় করতে পারে, যেটির উপর রাজার আধিপত্য ছিলো।

এরপর শুয়োরপাল বলল, এটির ব্যাপারে সে জানতো না এবং “সে ভয় পাচ্ছে যে সে এই গাছটি বন থেকে তুলে নিয়েছে এবং পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে।”

“আপনি জানেন না ! এটি খুবই ভালো এবং প্রকৃতপক্ষে এটি চরম অজ্ঞতা!”

দরিদ্র শুয়োরপালক সম্বোধন করে বলা কথাগুলোয় তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন না সেখানে সবাই অজ্ঞ ছিলো। গাছের একটি পাতাও পাওয়া যায়নি কোথাও। একটি ছিলো যেটি মৃতদেহে কফিনের সাথে সমাধিস্থ ছিলো, যেটির সম্পর্কে কেউ জানতো না। তারপর রাজা বিষণœতায় হন্যে হয়ে এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। তিনি বলেছিলেন, “এখানে একটি গাছ দাঁড়িয়েছে” এবং “এটি একটি পবিত্র স্থান।” তারপর তিনি সে গাছকে সোনার পাত দিয়ে ঘিরে রাখতে এবং সেখানে এক প্রহরীকে রাখার আদেশ দিলেন।

সেই শিক্ষক স্বর্গীয় উদ্ভিদ সম্পর্কে একটি দীর্ঘ গ্রন্থ লিখেছিলেন এবং এর জন্যে তিনি প্রচুর অর্থ পেয়েছিলেন যা তাকে ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। এবং এই অংশটি সত্যি গল্পের সবথেকে মজার অংশ।

কারণ সেই গাছটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এবং রাজা বরাবরের মতো বিষণœতায় ডুবেছিলেন কিন্তু প্রহরী বলেছিল যে সবসময় সে এমনই ছিলো।

লেখক পরিচিতি

হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন ডেনীয় লেখক এবং কবি। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসাবে অধিক পরিচিত। রূপকথা লেখার জন্য তাকে রূপকথার জাদুকর নামে অভিহিত করা হয়।

এন্ডারসনের রূপকথা, যার সংখ্যা ৩৩৮১-এর কম নয়। ১২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এই রূপকথাসমূহ পশ্চিমের যৌথ চেতনায় সাংস্কৃতিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, শিশুরা সহজেই সেগুলো পাচ্ছে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথাসমূহ হল “দি এমপেরর্স নিউ ক্লদস”, “দ্য লিটল মারমেইড”, “দ্য নাইটিংগেল”, “দ্য স্নো কুইন”, “দি আগলি ডাকলিং”, “থাম্বেলিনা”। তার গল্পসমূহ বেলে, নাটক, এবং অ্যানিমেটেড এবং লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কোপেনহেগেনের সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সবচেয়ে ব্যস্ত বলেভার্ডের একটি হল “এইচসি এন্ডারসন্স বলেভার্ড”।