সমান অধিকার-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য বিরোধী বিলে পরিবর্তনের আভাস

সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে উপস্থাপিত ‘বৈষম্যবিরোধী বিল’-এর বেশকিছু বিষয় স্পষ্ট করতে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। মনে হচ্ছে, কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।’

সভাপতি বলেন, ‘বিলটির কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা মনে করছি। আজকে দফাওয়ারি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও একটা বৈঠক করা লাগবে। ওই বৈঠকের পর বিলটির ওপর সুপারিশ চূড়ান্ত করব।’

বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সেলিম আলতাফ জর্জ, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও রুমিন ফারহানা।

সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। গত ৫ এপ্রিল বিলটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

কমিটির এক সদস্য জানান, বৈঠকে সদস্যরা বিলটি নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈষম্য হলে কোন আইনে বিচার হবে তা বিলে স্পষ্ট করা হয়নি। সর্বসাধারণের সংজ্ঞাও স্পষ্ট নয়।

দন্ড কী হবে সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট ধারণা দেয়া হয়নি। এছাড়া বৈষম্য প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মতামত দেন।

কমিটির সদস্য বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বৈষম্যের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষ্যমের কথা আসেনি। তাছাড়া কোন বৈষম্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।’ প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্য নিরোধে যে মনিটরিং কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে তা ‘আমলানির্ভর’ বলেও অভিযোগ করেন রুমিন। তিনি জানান, তিনি প্রস্তাবিত আইনের ওপর কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিলটি সংসদে ওঠার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, খসড়া আইনটিতে ঘাটতি রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সই-সিলবিহীন কাগজে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

মন্ত্রণালয় থেকে সই, সিল ও তারিখবিহীন কাগজপত্র উপস্থাপনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিদর্শন সংবলিত অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে সিনেমা তৈরি, এমভি ইকরাম সংরক্ষণ ও কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতির কারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংসদীয় কমিটিতে তলব করা হয়েছে।

বৈঠকে বিশেষায়িত ২২টি হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে বিনামূল্যে করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বুকলেটের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চলমান প্রকল্প দ্রুততম সময়ে শেষ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ এবং মাদারীপুরে বধ্যভূমি প্রকল্পে কাজের ধীরগতির ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে অনুমোদন গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৩

সমান অধিকার-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য বিরোধী বিলে পরিবর্তনের আভাস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে উপস্থাপিত ‘বৈষম্যবিরোধী বিল’-এর বেশকিছু বিষয় স্পষ্ট করতে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। মনে হচ্ছে, কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।’

সভাপতি বলেন, ‘বিলটির কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা মনে করছি। আজকে দফাওয়ারি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও একটা বৈঠক করা লাগবে। ওই বৈঠকের পর বিলটির ওপর সুপারিশ চূড়ান্ত করব।’

বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সেলিম আলতাফ জর্জ, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও রুমিন ফারহানা।

সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। গত ৫ এপ্রিল বিলটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

কমিটির এক সদস্য জানান, বৈঠকে সদস্যরা বিলটি নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈষম্য হলে কোন আইনে বিচার হবে তা বিলে স্পষ্ট করা হয়নি। সর্বসাধারণের সংজ্ঞাও স্পষ্ট নয়।

দন্ড কী হবে সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট ধারণা দেয়া হয়নি। এছাড়া বৈষম্য প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মতামত দেন।

কমিটির সদস্য বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বৈষম্যের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষ্যমের কথা আসেনি। তাছাড়া কোন বৈষম্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।’ প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্য নিরোধে যে মনিটরিং কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে তা ‘আমলানির্ভর’ বলেও অভিযোগ করেন রুমিন। তিনি জানান, তিনি প্রস্তাবিত আইনের ওপর কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিলটি সংসদে ওঠার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, খসড়া আইনটিতে ঘাটতি রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সই-সিলবিহীন কাগজে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

মন্ত্রণালয় থেকে সই, সিল ও তারিখবিহীন কাগজপত্র উপস্থাপনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিদর্শন সংবলিত অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে সিনেমা তৈরি, এমভি ইকরাম সংরক্ষণ ও কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতির কারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংসদীয় কমিটিতে তলব করা হয়েছে।

বৈঠকে বিশেষায়িত ২২টি হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে বিনামূল্যে করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বুকলেটের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চলমান প্রকল্প দ্রুততম সময়ে শেষ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ এবং মাদারীপুরে বধ্যভূমি প্রকল্পে কাজের ধীরগতির ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে অনুমোদন গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।