সুনামগঞ্জে ভাটিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বুধবার পানি কমলেও গতকাল নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। থেমে থেমে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ইছামতি, চেলা, খাসিয়ামারা ও পিয়াইন নদীর পানি ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলার বানভাসী মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। ঘরে কোমর পানি, কাজ নেই, খাবার নেই। অনাহারে অর্ধাহারে আছেন অনেকেই।
উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের চাকলপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী আবদুল মতিনের স্ত্রী বলেন, তাদের ঘরে গত তিন দিন যাবত কোমর পানি। কোন কাজ নেই, টাকাও নেই, তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন। কোন সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ কোন খোঁজ নেয়নি। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই, ইসলামপুর, চর মহল্লা, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমাসহ পৌর এলাকার সড়ক, বসত-বাড়ি, দোকান পানিতে রয়েছে।
শুধু ছাতক উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ছাতক উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, বিভিন্ন জায়গাতেই ত্রাণ ও শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। অনেক জায়গাতেই এখনও যেতে পারিনি, তবে চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলে দিয়েছি।
জেলার তাহিরপুরে উপজেলায় খেত থেকে বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে তিন শিশু নিহত ও ৮ শিশুসহ ৯ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ইরি ধান, বাদাম ও সবজি খেত। এখনও পানির নিচে রয়েছে ছাতক-সিলেট ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের অনেক অংশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৭৭৭ হেক্টর জমির ইরি ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ৭৫ বাদাম ও ৭৪ হেক্টর জমির আউশ বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা
সিলেট : সিলেটে বন্যার মাঝে ছোবল দিয়েছে কালবৈশাখী। উজানের ঢল থেকে সৃষ্ট আগাম বন্যার সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকালও সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে নগরসহ জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবেই সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সংকটও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর এমন সংকটে সরকারিভাবে নানা প্রস্তুতি নেয়া হলেও নগর পিতা ছিলেন লন্ডন সফরে। অবশেষে গতকাল সকালে সিলেট ফিরে তিনি কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে জানান, সুরমা নদী খনন ছাড়া এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের কোন সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাতিল করা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। সংশ্লিষ্টরা স্থগিত করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। পানির নিচে তলিয়ে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে অনেকে তাদের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে যাচ্ছেন।
প্লাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন।
সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় এসব উপজেলায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। জেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। সিলেটে বরইকান্দি সাবস্টেশন ও শাহজালাল উপশহরে একটি ফিডার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব স্টেশন পুরো চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত মাসে ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়েছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন। দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপণ করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপণের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুঁড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।
নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?
কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আউশও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাবে চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ৩০১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, এক হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধান এবং এক হাজার ৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট ফিরেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মহানগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। সিলেট সিটি করপোরশেন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, আজ ছিল দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। তবে সারাদেশে তা অনুষ্ঠিত হলেও বন্যার কারণে সিলেট জেলার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া এ পরীক্ষা আগামী ৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৩
লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে ভাটিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বুধবার পানি কমলেও গতকাল নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। থেমে থেমে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ইছামতি, চেলা, খাসিয়ামারা ও পিয়াইন নদীর পানি ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলার বানভাসী মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। ঘরে কোমর পানি, কাজ নেই, খাবার নেই। অনাহারে অর্ধাহারে আছেন অনেকেই।
উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের চাকলপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী আবদুল মতিনের স্ত্রী বলেন, তাদের ঘরে গত তিন দিন যাবত কোমর পানি। কোন কাজ নেই, টাকাও নেই, তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন। কোন সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ কোন খোঁজ নেয়নি। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই, ইসলামপুর, চর মহল্লা, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমাসহ পৌর এলাকার সড়ক, বসত-বাড়ি, দোকান পানিতে রয়েছে।
শুধু ছাতক উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ছাতক উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, বিভিন্ন জায়গাতেই ত্রাণ ও শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। অনেক জায়গাতেই এখনও যেতে পারিনি, তবে চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলে দিয়েছি।
জেলার তাহিরপুরে উপজেলায় খেত থেকে বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে তিন শিশু নিহত ও ৮ শিশুসহ ৯ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ইরি ধান, বাদাম ও সবজি খেত। এখনও পানির নিচে রয়েছে ছাতক-সিলেট ও তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের অনেক অংশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৭৭৭ হেক্টর জমির ইরি ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ৭৫ বাদাম ও ৭৪ হেক্টর জমির আউশ বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা
সিলেট : সিলেটে বন্যার মাঝে ছোবল দিয়েছে কালবৈশাখী। উজানের ঢল থেকে সৃষ্ট আগাম বন্যার সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকালও সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে নগরসহ জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবেই সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সংকটও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর এমন সংকটে সরকারিভাবে নানা প্রস্তুতি নেয়া হলেও নগর পিতা ছিলেন লন্ডন সফরে। অবশেষে গতকাল সকালে সিলেট ফিরে তিনি কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে জানান, সুরমা নদী খনন ছাড়া এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের কোন সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাতিল করা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। সংশ্লিষ্টরা স্থগিত করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। পানির নিচে তলিয়ে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে অনেকে তাদের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে যাচ্ছেন।
প্লাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন।
সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় এসব উপজেলায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। জেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। সিলেটে বরইকান্দি সাবস্টেশন ও শাহজালাল উপশহরে একটি ফিডার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব স্টেশন পুরো চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত মাসে ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়েছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন। দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপণ করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপণের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুঁড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।
নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?
কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আউশও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাবে চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ৩০১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, এক হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধান এবং এক হাজার ৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট ফিরেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মহানগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। সিলেট সিটি করপোরশেন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, আজ ছিল দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। তবে সারাদেশে তা অনুষ্ঠিত হলেও বন্যার কারণে সিলেট জেলার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া এ পরীক্ষা আগামী ৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।