একুশের গানের কবির চির প্রস্থান

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। গতকাল সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনেই বসবাস করছিলেন তিনি। পেশাগত কারণে জনপ্রিয় এই সাংবাদিক ও কলামিস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত গাফ্ফার চৌধুরীকে মাস দুই আগে লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই এপ্রিলে মারা যান তার মেয়ে বিনীতা চৌধুরী।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ ও সাধারণ মানুষ।

সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বরিশাল জেলার উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

১৯৪৬ সালে গ্রাম ছেড়ে বরিশাল শহরে চলে আসার পর থেকেই লেখালেখির শুরু তার। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। সওগাত পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমা আফরোজের সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বিয়ে হয়। ছেলে অনুপম আহমেদ রেজা চৌধুরী এবং চার মেয়ে তনিমা, চিন্ময়ী, বিনীতা ও ইন্দিরাকে রেখে গেছেন তারা।

পরে দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। দুই বছর পর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নতুন রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’-এর দায়িত্ব দেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। সামরিক শাসন জারি হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক জেহাদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় বিভিন্ন পদে কাজ করেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্যবসা করার চেষ্টায় অনুপম মুদ্রণ নামে একটি ছাপাখানা খোলেন। তবে দুই বছর পর আবার সাংবাদিকতায় ফিরে বের করেন ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র ‘দৈনিক আওয়াজ’। পরে আবার দৈনিক আজাদ হয়ে ফেরেন ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশে যোগ দেন গাফ্ফার চৌধুরী।

১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তার ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমায় তার গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ব্যবহার করেন। একুশের এই গান আজ আর কেবল বাংলাদেশের গান নয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কোর এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রে গাওয়া হয় এই গানটি। বর্তমানে এই গানটি ইংরেজি, হিন্দি, মালয়, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান সপরিবারে। মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লিখতে শুরু করেন। সে সময় আনন্দবাজার ও যুগান্তরেও নিয়মিত কলাম লিখতে থাকেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দৈনিক জনপদ বের হয় গাফ্ফার চৌধুরীর সম্পাদনায়। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যাওয়ার সুযোগ হয় তার।

লন্ডনে বসেই ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন গাফ্ফার চৌধুরী। সময়টা ১৯৭৬ সাল। ১৯৮৭ সালে বের করেন ‘নতুন দিন’। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’ বের করেন। এই পুরোটা সময় বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখে গেছেন। ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন তিনি।

তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড নিয়ে রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘দুর্গম পথের যাত্রী’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে ‘দ্য পোয়েট অব পলেটিক্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। কিন্তু পরে তা আর এগোয়নি।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘একজন তাহমিনা’ ‘রক্তাক্ত আগস্ট’ ও ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোক বার্তায় বলেছেন, ‘কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ‘তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারালো।’

প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার মেধা

কর্ম ও লেখনীতে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। তিনি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।’

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৩

একুশের গানের কবির চির প্রস্থান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। গতকাল সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনেই বসবাস করছিলেন তিনি। পেশাগত কারণে জনপ্রিয় এই সাংবাদিক ও কলামিস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত গাফ্ফার চৌধুরীকে মাস দুই আগে লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই এপ্রিলে মারা যান তার মেয়ে বিনীতা চৌধুরী।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ ও সাধারণ মানুষ।

সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বরিশাল জেলার উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

১৯৪৬ সালে গ্রাম ছেড়ে বরিশাল শহরে চলে আসার পর থেকেই লেখালেখির শুরু তার। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। সওগাত পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমা আফরোজের সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বিয়ে হয়। ছেলে অনুপম আহমেদ রেজা চৌধুরী এবং চার মেয়ে তনিমা, চিন্ময়ী, বিনীতা ও ইন্দিরাকে রেখে গেছেন তারা।

পরে দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। দুই বছর পর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নতুন রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’-এর দায়িত্ব দেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। সামরিক শাসন জারি হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক জেহাদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় বিভিন্ন পদে কাজ করেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্যবসা করার চেষ্টায় অনুপম মুদ্রণ নামে একটি ছাপাখানা খোলেন। তবে দুই বছর পর আবার সাংবাদিকতায় ফিরে বের করেন ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র ‘দৈনিক আওয়াজ’। পরে আবার দৈনিক আজাদ হয়ে ফেরেন ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশে যোগ দেন গাফ্ফার চৌধুরী।

১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তার ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমায় তার গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ব্যবহার করেন। একুশের এই গান আজ আর কেবল বাংলাদেশের গান নয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কোর এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রে গাওয়া হয় এই গানটি। বর্তমানে এই গানটি ইংরেজি, হিন্দি, মালয়, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান সপরিবারে। মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লিখতে শুরু করেন। সে সময় আনন্দবাজার ও যুগান্তরেও নিয়মিত কলাম লিখতে থাকেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দৈনিক জনপদ বের হয় গাফ্ফার চৌধুরীর সম্পাদনায়। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যাওয়ার সুযোগ হয় তার।

লন্ডনে বসেই ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন গাফ্ফার চৌধুরী। সময়টা ১৯৭৬ সাল। ১৯৮৭ সালে বের করেন ‘নতুন দিন’। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’ বের করেন। এই পুরোটা সময় বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখে গেছেন। ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন তিনি।

তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড নিয়ে রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘দুর্গম পথের যাত্রী’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে ‘দ্য পোয়েট অব পলেটিক্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। কিন্তু পরে তা আর এগোয়নি।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘একজন তাহমিনা’ ‘রক্তাক্ত আগস্ট’ ও ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোক বার্তায় বলেছেন, ‘কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ‘তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারালো।’

প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার মেধা

কর্ম ও লেখনীতে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। তিনি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।’