একুশের গানে বেঁচে থাকবেন গাফ্ফার চৌধুরী

মহান একুশের ভোরে গাফফার চৌধুরীর লেখা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো....’ যখন মিছিলের সহস্র মুখে উচ্চারিত হয় তখন সবার সামনে ভাষা আন্দোলনের আবেগ এবং অনুপ্রেরণা যেন আবার প্রাণময় হয়ে ওঠে। এটা গাফফার চৌধুরীর অভূতপূর্ব সৃজনশীলতার উদাহরণ। এই গান মায়ের ভাষা এবং দেশের মানুষের অধিকার সম্পর্কে তার অপরিমেয় ভালবাসাবোধই উজ্জ্বল করেছে। এজন্য তিনি স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, অনন্তকাল এভাবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন- এ বিশ্বাস ও বোধ আমরা অনুভব করি। এ প্রেক্ষাপটে তার চলে যাওয়া এক অতল শূন্যতার সৃষ্টি করলো।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় তিনি যে গানের বাণী রচনা করেছেন, যে আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তার মধ্যে তিনি জীবনের স্বপ্ন তুলে ধরেছেন। কথায়-গানে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলেছেন। সে গানের বাণী আমাদের আন্দোলনে-সংগ্রামে উদ্ভাসিত করে রেখেছেন।

আমাদের মধ্য থেকে তার বিদায় অপূরণীয় রক্তক্ষরণের মতোই, মেনে নেয়া কঠিন বলে অনুভব করছি। আমাদের সমাজে তার এ শূন্যতা পূরণ হওয়া অসম্ভব বিষয়। তিনি তার কর্ম দিয়ে আমাদের মধ্যে যেমন বেঁচে থাকবেন তেমনি সামজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হয়েও বেঁচে থাকবেন। তার চিন্তা-চেতনার আলোও আমাদের আরও অনেক দিন পথ দেখাবে সৃজনশীল কর্মকান্ডে। ইতিহাসও তার কথা বিস্মৃত হবে না। তার সৃষ্টি ইতিহাসের বিভিন্ন যেমন নির্মাণ করেছে তেমনি ইতিহাস তাকে আমাদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখবে।

গাফফার চৌধুরী শুধু ভাষা আন্দোলনের গান লিখেই স্মরণীয় হয়ে আছেন তা নয়, তার সাংবাদিকতা জীবনেও অত্যন্ত সৃজনশীল এবং অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও মেধার সমন্বয় ছিল। সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মকান্ডে চিন্তা-চেতনা এবং সম্পাদকীয় ভাষা আমাদের চলমান সমাজের দর্পণ হয়ে উঠেছিল। তিনি তার লেখায় আমাদের চলমান ব্যবস্থায় ব্যর্থতার দায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য তরুণ সাংবাদিককে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন সম্পাদনা এবং নিয়মিত কলাম লেখার মধ্য দিয়ে। আমরা তার সাংবাদিকতা জীবন থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। পাঠক ও সংবাদকর্মী জীবন উপলব্ধিও অনেক ক্ষেত্রে পাল্টে দিয়েছে।

গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ৭২ সাল থেকে। তিনি আমার লেখা পড়ে খুশি হয়েছিলেন। তিনি অন্যদের কাছে জানতে চেয়েছেন কে এই লেখিকা। পরে বাংলা একাডেমিতে গিয়ে আমার খোঁজ করেছিলেন। সেটা আমি তার কাছ থেকেই জেনেছি।

গাফফার ভাই আজ নেই। কিন্তু তার কর্মে তিনি আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন, তা-ই আমাদের অনুপ্রানিত করবে- এ বিশ্বাস আমরা মনে ধারণ করে রাখবো।

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৩

একুশের গানে বেঁচে থাকবেন গাফ্ফার চৌধুরী

সেলিনা হোসেন

মহান একুশের ভোরে গাফফার চৌধুরীর লেখা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো....’ যখন মিছিলের সহস্র মুখে উচ্চারিত হয় তখন সবার সামনে ভাষা আন্দোলনের আবেগ এবং অনুপ্রেরণা যেন আবার প্রাণময় হয়ে ওঠে। এটা গাফফার চৌধুরীর অভূতপূর্ব সৃজনশীলতার উদাহরণ। এই গান মায়ের ভাষা এবং দেশের মানুষের অধিকার সম্পর্কে তার অপরিমেয় ভালবাসাবোধই উজ্জ্বল করেছে। এজন্য তিনি স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, অনন্তকাল এভাবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন- এ বিশ্বাস ও বোধ আমরা অনুভব করি। এ প্রেক্ষাপটে তার চলে যাওয়া এক অতল শূন্যতার সৃষ্টি করলো।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় তিনি যে গানের বাণী রচনা করেছেন, যে আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তার মধ্যে তিনি জীবনের স্বপ্ন তুলে ধরেছেন। কথায়-গানে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলেছেন। সে গানের বাণী আমাদের আন্দোলনে-সংগ্রামে উদ্ভাসিত করে রেখেছেন।

আমাদের মধ্য থেকে তার বিদায় অপূরণীয় রক্তক্ষরণের মতোই, মেনে নেয়া কঠিন বলে অনুভব করছি। আমাদের সমাজে তার এ শূন্যতা পূরণ হওয়া অসম্ভব বিষয়। তিনি তার কর্ম দিয়ে আমাদের মধ্যে যেমন বেঁচে থাকবেন তেমনি সামজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হয়েও বেঁচে থাকবেন। তার চিন্তা-চেতনার আলোও আমাদের আরও অনেক দিন পথ দেখাবে সৃজনশীল কর্মকান্ডে। ইতিহাসও তার কথা বিস্মৃত হবে না। তার সৃষ্টি ইতিহাসের বিভিন্ন যেমন নির্মাণ করেছে তেমনি ইতিহাস তাকে আমাদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখবে।

গাফফার চৌধুরী শুধু ভাষা আন্দোলনের গান লিখেই স্মরণীয় হয়ে আছেন তা নয়, তার সাংবাদিকতা জীবনেও অত্যন্ত সৃজনশীল এবং অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও মেধার সমন্বয় ছিল। সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মকান্ডে চিন্তা-চেতনা এবং সম্পাদকীয় ভাষা আমাদের চলমান সমাজের দর্পণ হয়ে উঠেছিল। তিনি তার লেখায় আমাদের চলমান ব্যবস্থায় ব্যর্থতার দায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য তরুণ সাংবাদিককে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন সম্পাদনা এবং নিয়মিত কলাম লেখার মধ্য দিয়ে। আমরা তার সাংবাদিকতা জীবন থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। পাঠক ও সংবাদকর্মী জীবন উপলব্ধিও অনেক ক্ষেত্রে পাল্টে দিয়েছে।

গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ৭২ সাল থেকে। তিনি আমার লেখা পড়ে খুশি হয়েছিলেন। তিনি অন্যদের কাছে জানতে চেয়েছেন কে এই লেখিকা। পরে বাংলা একাডেমিতে গিয়ে আমার খোঁজ করেছিলেন। সেটা আমি তার কাছ থেকেই জেনেছি।

গাফফার ভাই আজ নেই। কিন্তু তার কর্মে তিনি আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন, তা-ই আমাদের অনুপ্রানিত করবে- এ বিশ্বাস আমরা মনে ধারণ করে রাখবো।