মেয়র পদে ৬, কাউন্সিলরে ১৪৮ প্রার্থী বৈধ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জনসহ ১৫৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটির ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট ১৪৮ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ৩টি পদে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

এদিকে দুপুরে মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর বাদুরতলা এলাকার ধর্মসাগর পাড় এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ১৭ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ৬ জন প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২ জন দলীয় ও ৪ জন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, নিজাম উদ্দিন কায়সার ও কামরুল আহসান বাবুল। মেয়র পদে স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থীর মধ্যে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য-সাবেক কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজল খানের বড় ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল। মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১২০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকাসহ নানা কারণে কাউন্সিলর পদে ১০ জনের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ৯ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে একজন রয়েছেন। তিনটি পদে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে মেয়র পদে ৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১১ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৭ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়।

যেসব কারণে বাতিল হলো ১০ কাউন্সিলরের মনোনয়নপত্র

মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকায় বাতিল হয়েছে সংরক্ষিত ৭ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার, ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ২নং ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৮নং ওয়ার্ডের একরামুল হক বাবু, ১৪নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বাতিল হয়েছে ৪নং ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ১৭নং ওয়াডের্র সৈয়দ রোমন আহমেদ, ২১নং ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল, ২৩নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ এবং শিক্ষাগত সনদ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯নং ওয়ার্ডের জুয়েলের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

এদিকে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সব পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করার দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনি নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের বাসভবনে এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবরে ওই দুটি পদ থেকে তার পদত্যাগের পত্র ডাকযোগে ও ই-মেইলে প্রেরণ করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে এই অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির এ সিদ্ধান্ত আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি। কিন্তু কুমিল্লার হামলা-মামলার শিকার নির্যাতিত বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কোন হুমকি ও ষড়যন্ত্র তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। এ সময় দলটির কায়সারের অনুসারী নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য-বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও যেকোন সময় দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। এর আগে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হলে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করবেন- এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, অনেক আগে দলের সম্মেলন হয়েছে, আমি এখন দলের কোন পদে আছি কি-না তাও জানি না। তবে দলের জেলা সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার (আজ) তার বাসায় যাব। দল থেকে পদত্যাগের প্রক্রিয়া কি হবে, এ বিষয়ে রাবেয়া আপা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুসারে পদক্ষেপ নেব। তিনি আরও বলেন, নগরীর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২০-২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৩-২৫ মে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২৬ মে। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা হবে এবং ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হবে। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ১১ হাজার ৬০০ ও নারী এক লাখ ১৬ হাজার ১৯১ জন। ১০৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে আগামী ১৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সাক্কুকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মনিরুল হক সাক্কুকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সাক্কুর পাশাপাশি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিরুদ্ধেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।

গতকাল আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আর কারণ দেখানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকা। সাক্কুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ না রাখার অনুরোধ জানানোর কথাও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) অংশগ্রহণ করায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও জেলা শাখার সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠনের সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে সংগঠনের নেতাকর্মীদের কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।

এদিকে, ভোটে অংশ নেয়া সাক্কু কুমিল্লায় গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। অন্যদিকে নিজাম উদ্দিন কায়সারও বলেন, ভোটে অংশ নিতে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ , ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৩

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

মেয়র পদে ৬, কাউন্সিলরে ১৪৮ প্রার্থী বৈধ

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জনসহ ১৫৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটির ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট ১৪৮ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ৩টি পদে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

এদিকে দুপুরে মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর বাদুরতলা এলাকার ধর্মসাগর পাড় এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ১৭ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ৬ জন প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২ জন দলীয় ও ৪ জন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, নিজাম উদ্দিন কায়সার ও কামরুল আহসান বাবুল। মেয়র পদে স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থীর মধ্যে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য-সাবেক কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজল খানের বড় ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল। মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১২০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকাসহ নানা কারণে কাউন্সিলর পদে ১০ জনের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ৯ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে একজন রয়েছেন। তিনটি পদে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে মেয়র পদে ৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১১ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৭ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়।

যেসব কারণে বাতিল হলো ১০ কাউন্সিলরের মনোনয়নপত্র

মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকায় বাতিল হয়েছে সংরক্ষিত ৭ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার, ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ২নং ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৮নং ওয়ার্ডের একরামুল হক বাবু, ১৪নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বাতিল হয়েছে ৪নং ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ১৭নং ওয়াডের্র সৈয়দ রোমন আহমেদ, ২১নং ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল, ২৩নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ এবং শিক্ষাগত সনদ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯নং ওয়ার্ডের জুয়েলের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

এদিকে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সব পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করার দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনি নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের বাসভবনে এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবরে ওই দুটি পদ থেকে তার পদত্যাগের পত্র ডাকযোগে ও ই-মেইলে প্রেরণ করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে এই অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির এ সিদ্ধান্ত আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি। কিন্তু কুমিল্লার হামলা-মামলার শিকার নির্যাতিত বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কোন হুমকি ও ষড়যন্ত্র তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। এ সময় দলটির কায়সারের অনুসারী নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য-বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও যেকোন সময় দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে। এর আগে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হলে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করবেন- এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, অনেক আগে দলের সম্মেলন হয়েছে, আমি এখন দলের কোন পদে আছি কি-না তাও জানি না। তবে দলের জেলা সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার (আজ) তার বাসায় যাব। দল থেকে পদত্যাগের প্রক্রিয়া কি হবে, এ বিষয়ে রাবেয়া আপা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুসারে পদক্ষেপ নেব। তিনি আরও বলেন, নগরীর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ২০-২২ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২৩-২৫ মে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২৬ মে। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা হবে এবং ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হবে। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ১১ হাজার ৬০০ ও নারী এক লাখ ১৬ হাজার ১৯১ জন। ১০৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে আগামী ১৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সাক্কুকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মনিরুল হক সাক্কুকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সাক্কুর পাশাপাশি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিরুদ্ধেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।

গতকাল আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আর কারণ দেখানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকা। সাক্কুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ না রাখার অনুরোধ জানানোর কথাও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) অংশগ্রহণ করায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও জেলা শাখার সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠনের সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে সংগঠনের নেতাকর্মীদের কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।

এদিকে, ভোটে অংশ নেয়া সাক্কু কুমিল্লায় গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। অন্যদিকে নিজাম উদ্দিন কায়সারও বলেন, ভোটে অংশ নিতে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।