তালের চাহিদা বাড়লেও কমছে তালগাছ, বাড়ছে বজ্রপাত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর বাজারে জমে উঠেছে মৌসুমী ফল তালের শাস বিক্রি। নবীনগর শহরের নবীনগর-কোম্পানীগঞ্জ রোড, সরকারি কলেজ গেইট, সরকারি হাইস্কুল পাশে, বাজারের বিভিন্ন মোড়ে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি পিস তালের শাস (কাঁচা তাল) বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা, এক কুড়ি তালের শাঁস ২০০-৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক কুড়ি পাকা তাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ২১ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৫০০ টি তাল গাছ রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামগ্রাম, রছুল্লাবাদ, রতনপুর, সাতমোড়া, লাউর-ফতেহপুর, বিটঘর, শিবপুর, বড়িকান্দি, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে বেশি তাল গাছ রয়েছে।

নবীনগর বাসিন্দা আব্দুল রহিম জানান- এখন আর আগের মত তাল পাওয়া যায় না। আগে রাস্তার পাশে তালের রস নিয়ে বসত, সেটি এখন আর দেখা যায় না। এখন কাঁচা তালের শাঁস খাচ্ছি। কিছুদিন পর এটিও আর খেতে পারব কিনা জানি না। কেননা যে ভাবে তালের গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে বেশি দিন আর এ গুলো খাওয়া যাবে না। আগে এক হালি (৪টি) তাল কিনতে পারতাম ৫০-৮০ টাকায়, এখন ২০০ টাকায়ও মিলছে না। ক্রেতা মাজেদুল ইসলাম বলেন, তাল একটি মৌসুমি ফল, এটি অনেক সুস্বাদু ও উপকারী। তাল গাছ কমে যাওয়ায় আগের থেকে এখন দাম বেশি। তালের স্বাদ ধরে রাখা ও গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমি সবাইকে তাল গাছ লাগানোর অনুরোধ জানাই। নবীনগর উপজেলার পৌরসভার মাঝিকাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সুদন মিয়া - এখন সরকারি হাইস্কুল গেটের পাশে প্রতিদিন তাল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমি চার বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। গত দুই বছর করোনার কারণে ভাল ভাবে ব্যবসা করতে পারিনি। এ বছর তালের দাম বেশি, তাল এখন পাওয়া যাচ্ছে না। ১২ বছর ধরে তালের ব্যবসা করেন শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ, তিনি বলেন, তখন তালের কুড়ি ছিল ১৭০ টাকা। এরপর বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক কুড়ি তাল বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। আর শাঁসের কুড়ি ২০০-২৫০ টাকা। আমি প্রতিটা গাছ কিনেছি ২৫০০ টাকায়। সেই গাছের তাল বিক্রি করছি ৪৫০০-৪৭০০ টাকায়। প্রতিটা গাছে ২৮০০-৩০০০ টাকা লাভ হয়।

নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা জগলুল হায়দার বলেন, তালের শাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, তালের রসও অনেক উপকারী। তালের রস দিয়ে গুড়, মিছরি তৈরি হয়। বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে তাল গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাল গাছ বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। নবীনগর কৃষি অফিস জানায় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ মন্ত্রাণালয় একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বজ্রপাত সহনশলী এই তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দিন দিন তালগাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ তালগাছের গুরুত্ব না বুঝে কেটে ফেলছে। যেহেতু তালগাছে বছরে একবার ফলন হয়, লাভ কম, সে কারণে তালগাছ কেটে ফল বা কাঠের গাছ রোপণ করছে, সে কারণে তালগাছ কমে যাচ্ছে। তালগাছে ফলন কম হলেও দুর্যোগ (বজ্রপাত) থেকে মানুষকে রক্ষা করে।

রবিবার, ২৯ মে ২০২২ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪৩

তালের চাহিদা বাড়লেও কমছে তালগাছ, বাড়ছে বজ্রপাত

প্রতিনিধি, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

image

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : তালের শাস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী -সংবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর বাজারে জমে উঠেছে মৌসুমী ফল তালের শাস বিক্রি। নবীনগর শহরের নবীনগর-কোম্পানীগঞ্জ রোড, সরকারি কলেজ গেইট, সরকারি হাইস্কুল পাশে, বাজারের বিভিন্ন মোড়ে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি পিস তালের শাস (কাঁচা তাল) বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা, এক কুড়ি তালের শাঁস ২০০-৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক কুড়ি পাকা তাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ২১ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৫০০ টি তাল গাছ রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামগ্রাম, রছুল্লাবাদ, রতনপুর, সাতমোড়া, লাউর-ফতেহপুর, বিটঘর, শিবপুর, বড়িকান্দি, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে বেশি তাল গাছ রয়েছে।

নবীনগর বাসিন্দা আব্দুল রহিম জানান- এখন আর আগের মত তাল পাওয়া যায় না। আগে রাস্তার পাশে তালের রস নিয়ে বসত, সেটি এখন আর দেখা যায় না। এখন কাঁচা তালের শাঁস খাচ্ছি। কিছুদিন পর এটিও আর খেতে পারব কিনা জানি না। কেননা যে ভাবে তালের গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে বেশি দিন আর এ গুলো খাওয়া যাবে না। আগে এক হালি (৪টি) তাল কিনতে পারতাম ৫০-৮০ টাকায়, এখন ২০০ টাকায়ও মিলছে না। ক্রেতা মাজেদুল ইসলাম বলেন, তাল একটি মৌসুমি ফল, এটি অনেক সুস্বাদু ও উপকারী। তাল গাছ কমে যাওয়ায় আগের থেকে এখন দাম বেশি। তালের স্বাদ ধরে রাখা ও গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমি সবাইকে তাল গাছ লাগানোর অনুরোধ জানাই। নবীনগর উপজেলার পৌরসভার মাঝিকাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সুদন মিয়া - এখন সরকারি হাইস্কুল গেটের পাশে প্রতিদিন তাল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমি চার বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। গত দুই বছর করোনার কারণে ভাল ভাবে ব্যবসা করতে পারিনি। এ বছর তালের দাম বেশি, তাল এখন পাওয়া যাচ্ছে না। ১২ বছর ধরে তালের ব্যবসা করেন শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ, তিনি বলেন, তখন তালের কুড়ি ছিল ১৭০ টাকা। এরপর বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক কুড়ি তাল বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। আর শাঁসের কুড়ি ২০০-২৫০ টাকা। আমি প্রতিটা গাছ কিনেছি ২৫০০ টাকায়। সেই গাছের তাল বিক্রি করছি ৪৫০০-৪৭০০ টাকায়। প্রতিটা গাছে ২৮০০-৩০০০ টাকা লাভ হয়।

নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা জগলুল হায়দার বলেন, তালের শাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, তালের রসও অনেক উপকারী। তালের রস দিয়ে গুড়, মিছরি তৈরি হয়। বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে তাল গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাল গাছ বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। নবীনগর কৃষি অফিস জানায় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ মন্ত্রাণালয় একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বজ্রপাত সহনশলী এই তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দিন দিন তালগাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ তালগাছের গুরুত্ব না বুঝে কেটে ফেলছে। যেহেতু তালগাছে বছরে একবার ফলন হয়, লাভ কম, সে কারণে তালগাছ কেটে ফল বা কাঠের গাছ রোপণ করছে, সে কারণে তালগাছ কমে যাচ্ছে। তালগাছে ফলন কম হলেও দুর্যোগ (বজ্রপাত) থেকে মানুষকে রক্ষা করে।