প্রশ্ন ফাঁস : মাউশি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ

কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসের’ ঘটনায় মাউশি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি পুলিশের তদন্তে। আদৌ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না সেটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে কয়েকটি প্রশ্নের ‘উত্তর’ একজনের মোবাইল ফোনে পাওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।

গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে।

এই পরিস্থিতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা প্রশ্নোত্তর ফাঁসের ঘটনায় একে অন্যকে জড়াতে কাদা ছোঁড়াছুড়ি শুরু করে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে একে অন্যকে জড়িয়ে ইচ্ছেমতো বক্তব্য দিতে থাকে।

এরপর ২০ মে রাতে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১৩ মে বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনিবার্য কারণে বাতিল করা হলো।

শিক্ষা সমিতির অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারকে জড়িয়েও নানা বক্তব্য আসে। তার নেতৃত্বে ‘সাবেক ছাত্রলীগ’ নেতাদের একটি বড় অংশ ‘লাল সবুজ’ প্যানেলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে সমিতিতে বিরোধ চরমে পৌঁছে। এর আলোকেই চন্দ্র শেখরকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ফাঁসানোর প্রচার চালায় শিক্ষা সমিতির অন্য একটি পক্ষ।

মাউশির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগপ্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন গতকাল সংবাদকে জানান, তারা এ ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দারের মোবাইলে উত্তর লেখা পাওয়ার সূত্র ধরে অন্যদের আটক করা হয়েছে।

তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা মাউশি কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারের সংশ্লিষ্ট থাকার কোন তথ্য প্রমাণ পাইনি। একজন আটকের পর উত্তর কে দিয়েছে তার উত্তরে বলেছিল, উত্তর চন্দ্র শেখর দাদা মৌখিকভাবে তাকে বলেছেন। তার মৌখিক কথা ছাড়া ওই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার কোন তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।’

মোবাইলে উত্তর কার কোন মোবাইল থেকে এসেছে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হাতের লেখা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যে আসামি প্রথমে মৌখিকভাবে চন্দ্র শেখরের নাম বলেছিল। প্রমাণ না থাকলেও তাকে বলেছিলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নামসহ সবকিছু বলতে। কিন্তু আসামি তার জবানবন্দিতেও চন্দ্র শেখরের নাম বলেননি।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুমন জমাদ্দারের মোবাইলে প্রবেশপত্রের উল্টোপিঠে ছোট ছোট করে ৭০টি প্রশ্নেরই উত্তর লেখা ছিল। তার ফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে কেউ একজন তার ফোনে ৭০টি প্রশ্নেরই উত্তর পাঠিয়েছে।

সুমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা করেন ইডেন কলেজের প্রধান সহকারী আবদুল খালেক। ওই মামলায় পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১৩ মে মাউশির অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫১৩টি পদের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিলেন এক লাখ ৮৩ হাজার। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। পরীক্ষার দিন থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক সদস্য, মাউশির এক কর্মচারীসহ কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মাউশি।

রবিবার, ২৯ মে ২০২২ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪৩

প্রশ্ন ফাঁস : মাউশি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসের’ ঘটনায় মাউশি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি পুলিশের তদন্তে। আদৌ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না সেটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে কয়েকটি প্রশ্নের ‘উত্তর’ একজনের মোবাইল ফোনে পাওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।

গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে।

এই পরিস্থিতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা প্রশ্নোত্তর ফাঁসের ঘটনায় একে অন্যকে জড়াতে কাদা ছোঁড়াছুড়ি শুরু করে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে একে অন্যকে জড়িয়ে ইচ্ছেমতো বক্তব্য দিতে থাকে।

এরপর ২০ মে রাতে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১৩ মে বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনিবার্য কারণে বাতিল করা হলো।

শিক্ষা সমিতির অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারকে জড়িয়েও নানা বক্তব্য আসে। তার নেতৃত্বে ‘সাবেক ছাত্রলীগ’ নেতাদের একটি বড় অংশ ‘লাল সবুজ’ প্যানেলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে সমিতিতে বিরোধ চরমে পৌঁছে। এর আলোকেই চন্দ্র শেখরকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ফাঁসানোর প্রচার চালায় শিক্ষা সমিতির অন্য একটি পক্ষ।

মাউশির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগপ্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন গতকাল সংবাদকে জানান, তারা এ ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। পরীক্ষার্থী সুমন জমাদ্দারের মোবাইলে উত্তর লেখা পাওয়ার সূত্র ধরে অন্যদের আটক করা হয়েছে।

তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা মাউশি কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারের সংশ্লিষ্ট থাকার কোন তথ্য প্রমাণ পাইনি। একজন আটকের পর উত্তর কে দিয়েছে তার উত্তরে বলেছিল, উত্তর চন্দ্র শেখর দাদা মৌখিকভাবে তাকে বলেছেন। তার মৌখিক কথা ছাড়া ওই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার কোন তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।’

মোবাইলে উত্তর কার কোন মোবাইল থেকে এসেছে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হাতের লেখা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যে আসামি প্রথমে মৌখিকভাবে চন্দ্র শেখরের নাম বলেছিল। প্রমাণ না থাকলেও তাকে বলেছিলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নামসহ সবকিছু বলতে। কিন্তু আসামি তার জবানবন্দিতেও চন্দ্র শেখরের নাম বলেননি।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুমন জমাদ্দারের মোবাইলে প্রবেশপত্রের উল্টোপিঠে ছোট ছোট করে ৭০টি প্রশ্নেরই উত্তর লেখা ছিল। তার ফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে কেউ একজন তার ফোনে ৭০টি প্রশ্নেরই উত্তর পাঠিয়েছে।

সুমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা করেন ইডেন কলেজের প্রধান সহকারী আবদুল খালেক। ওই মামলায় পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১৩ মে মাউশির অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫১৩টি পদের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিলেন এক লাখ ৮৩ হাজার। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে। পরীক্ষার দিন থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক সদস্য, মাউশির এক কর্মচারীসহ কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মাউশি।