শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় একুশের গানের কবিকে

স্ত্রীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বরেণ্য সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও একুশের অমর গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরী। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ। চোখের জলে আর ভালোবাসার ফুলে ঢেকে গিয়েছিল বিশিষ্ট এই সাংবাদিক লেখকের কফিন।

গতকাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ২০২ ফ্লাইটে করে আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায় বেলা ১১টার দিকে। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান, শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম প্রমুখ। বেলা ১টার দিকে আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে।

দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার সময় তারই অমর সৃষ্টি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয়। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে শহীদ বেদিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তার মরদেহ।

প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জে. এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় গাফফার চৌধুরীর ছেলে অনুপম চৌধুরী বলেন, ‘আব্বা দেশের মানুষদের অনেক ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় দেশের গল্প করতেন, দেশের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবতেন।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আবারও কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গেয়ে তাকে শহীদ মিনার থেকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তার মরদেহ নেয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে। প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে আরেকবার জানাজা হয়।

এ সময় জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হাইমানুল করিম জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সব স্তরের সাংবাদিকরা।

জানাজা শেষে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিক নেতারা ও সাংবাদিক সংগঠনসমূহ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রখ্যাত এই সাংবাদিককে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এই বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে, ততদিন আমরা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে মনে রাখবো। বিভিন্ন পত্রিকায় তার কলাম প্রকাশ হতো। পাঠকরা অপেক্ষা করতেন, কখন তার কলাম প্রকাশ পাবে।

সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দেশের বাহিরে ছিলেন, কিন্তু তার মন পড়ে থাকতো দেশে। তিনি একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক ছিলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বাঙালির মণি কোঠায় থাকবেন তিনি। আমি তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামন নূর বলেন, ‘একটা ইতিহাসের অবসান হলো। একটা দীর্ঘ ইতিহাস নির্মাণের কারিগর, ইতিহাসের সাক্ষীও বটে। তার পথচলা ছিল সাহসী ও আপোষহীন। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক। সংকটে পথ দেখানো লোক খুব বেশি পাওয়া যায় না। সেই জায়গাটিতে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব্য নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘বাঙালির জাতিসত্তা বিনির্মাণে তার যে অবদান তার জন্য চিরদিন বাঙালি জাতি তাকে স্মরণ করবে। গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যু নেই, তিনি চিরঞ্জীব। যতদিন একজন বাঙালি বেঁচে থাকবে ততদিন গাফ্ফার চৌধুরীর নামটি তারা স্মরণ করবে।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ব্যাক্তগতভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে গেলাম। উনি একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, যতদিন পর্যন্ত এই দেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ না হবে ততদিন ওনার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে না।’

কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের আদর্শ। একজন সাংবাদিক, সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রফেশনাল। তিনি ছিলেন ওয়ার্কিং সাংবাদিক।’

প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ। বিকেল সাড়ে ৫টায় তার ইচ্ছানুযায়ী সমাহিত করা হয় তার স্ত্রীর পাশে।

গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

image

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

আরও খবর
দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করেন ১৬১ বাংলাদেশি
সব নির্বাচনকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি
পদ্মা সেতু, দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্বব্যাংক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয় : দাবি মসিউরের
বিশ্বের ৪০ শতাংশ দুগ্ধ উৎপাদন হয় এশিয়ায়
বর্ষার আগে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি
সরকার ছাত্রদের ধ্বংস করছে ফখরুল
কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ৩৬০ কোটি টাকার প্রকল্প, কাজ শেষ পর্যায়ে
খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি : কাদের
ক্ষমতার পরিবর্তন ২০২৩ সালের আগেই : নূর
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সুমন মিয়া হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট শীঘ্রই

রবিবার, ২৯ মে ২০২২ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪৩

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় একুশের গানের কবিকে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

স্ত্রীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বরেণ্য সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও একুশের অমর গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরী। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ। চোখের জলে আর ভালোবাসার ফুলে ঢেকে গিয়েছিল বিশিষ্ট এই সাংবাদিক লেখকের কফিন।

গতকাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ২০২ ফ্লাইটে করে আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায় বেলা ১১টার দিকে। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান, শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম প্রমুখ। বেলা ১টার দিকে আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে।

দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার সময় তারই অমর সৃষ্টি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয়। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে শহীদ বেদিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তার মরদেহ।

প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জে. এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় গাফফার চৌধুরীর ছেলে অনুপম চৌধুরী বলেন, ‘আব্বা দেশের মানুষদের অনেক ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় দেশের গল্প করতেন, দেশের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবতেন।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আবারও কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গেয়ে তাকে শহীদ মিনার থেকে শেষ বিদায় জানানো হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তার মরদেহ নেয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে। প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে আরেকবার জানাজা হয়।

এ সময় জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হাইমানুল করিম জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সব স্তরের সাংবাদিকরা।

জানাজা শেষে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিক নেতারা ও সাংবাদিক সংগঠনসমূহ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রখ্যাত এই সাংবাদিককে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এই বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে, ততদিন আমরা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে মনে রাখবো। বিভিন্ন পত্রিকায় তার কলাম প্রকাশ হতো। পাঠকরা অপেক্ষা করতেন, কখন তার কলাম প্রকাশ পাবে।

সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দেশের বাহিরে ছিলেন, কিন্তু তার মন পড়ে থাকতো দেশে। তিনি একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক ছিলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বাঙালির মণি কোঠায় থাকবেন তিনি। আমি তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামন নূর বলেন, ‘একটা ইতিহাসের অবসান হলো। একটা দীর্ঘ ইতিহাস নির্মাণের কারিগর, ইতিহাসের সাক্ষীও বটে। তার পথচলা ছিল সাহসী ও আপোষহীন। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক। সংকটে পথ দেখানো লোক খুব বেশি পাওয়া যায় না। সেই জায়গাটিতে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব্য নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘বাঙালির জাতিসত্তা বিনির্মাণে তার যে অবদান তার জন্য চিরদিন বাঙালি জাতি তাকে স্মরণ করবে। গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যু নেই, তিনি চিরঞ্জীব। যতদিন একজন বাঙালি বেঁচে থাকবে ততদিন গাফ্ফার চৌধুরীর নামটি তারা স্মরণ করবে।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ব্যাক্তগতভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে গেলাম। উনি একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, যতদিন পর্যন্ত এই দেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ না হবে ততদিন ওনার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে না।’

কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের আদর্শ। একজন সাংবাদিক, সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রফেশনাল। তিনি ছিলেন ওয়ার্কিং সাংবাদিক।’

প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ। বিকেল সাড়ে ৫টায় তার ইচ্ছানুযায়ী সমাহিত করা হয় তার স্ত্রীর পাশে।

গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।