২০২২-২৩ অর্থবছর খুবই চ্যালেঞ্জিং : আতিউর রহমান

২০২২-২৩ অর্থবছর খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী স্ট্যাগফ্লেশন (অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুগপৎ নি¤œ প্রবৃদ্ধি)-এর ফলে যে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়তে শুরু করেছে।

দেশবাসীকে এ বার্তাটি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যে, আগামী অর্থবছরটি খুব চ্যালেঞ্জিং। তাই সঙ্কট মোকাবিলার জন্য অর্থবছরের মাঝপথেও আমাদের নীতি-কৌশল বদলাতে হতে পারে। এমন পরিবর্তনের জন্য আমাদের সব অংশীজনকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ কেন্দ্রের আয়োজনে ‘কেমন হলো বাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আতিউর রহমান এসব কথা বলেন।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাজেট প্রস্তাবনাটি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের বাজেট প্রণেতারা সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো যথার্থভাবে চিহ্নিত করে এগুলোর বিষয়ে সচেতন থেকেই বাজেট প্রস্তুত করেছেন। এ সংবেদনশীলতার বড় উদাহরণ হতে পারে জ্বালানি, সার ইত্যাদি বাবদ ভর্তুকি ও প্রণোদনায় দেয়া বরাদ্দ বৃদ্ধি থেকে।

চলতি বছরে জিডিপির শতাংশ হিসেবে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ১.৭ শতাংশ। আসছে বছরে হচ্ছে ১.৯ শতাংশ। অথচ বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে জিডিপির শতাংশ হিসেবে চলতি বছর থেকে আসছে বছরে বাজেটের আকার ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দুটোই কিন্তু কমাতে হয়েছে। এর মধ্যেও ভর্তুকি ও প্রণোদনার অনুপাত বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাতেই হবে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন এ অনুপাত প্রয়োজনবোধে আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, আসন্ন অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলো মাথায় রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোরও সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয়। যেমন- অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় প্রস্তাবিত বাজেটে ৪ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি জিডিপির ৯ শতাংশ। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে বা উপখাতে মূলধন ব্যয় কমিয়ে এ অনুপাত কমানো যেত। একইভাবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে মোট বাজেটের ১২ শতাংশ যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানেও এখনই জরুরি নয় এমন প্রকল্পগুলোতে অর্থ কম দিয়ে বা একেবারেই না দিয়ে চাপ কমানো যেত।

সার্বিক বাজেট পর্যালোচনা করে এ সময় তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা সামনে আনেন। বাজেট চূড়ান্ত করার আগে আইন প্রণেতাদের এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রস্তাব দেন, বাজেট ঘাটতি আরও ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬.৪ শতাংশ করা যেতে পারে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার কথা ভাবা যায়। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ মোট বাজেটের ৫.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিয়ে আসার জন্য যে ‘ম্যাঙ্গো ট্রেন’ রয়েছে তার আদলে অন্যান্য কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণেও সহায়তার নতুন উদ্যোগ নেয়া গেলে সুফল পাওয়া সম্ভব। কী করে সহজে দেশে রেমিট্যান্স নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে নতুন উদ্যোগের কথা বাজেট প্রস্তাবে যুক্ত করা যায়। দেশিয় কোম্পানি জাহাজ তৈরি করলে বা কিনে এনে তা দিয়ে আমদানি-রপ্তানির কাজ করা গেলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরতা কমবে। একইসঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা বাতিল করাই শ্রেয় হবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে গোটা অর্থনীতিই নতুন গতি পাবে। দক্ষিণাঞ্চলের কানেক্টিভিটির যে নাটকীয় উন্নতি হবে তার সর্বোচ্চ সুফল ঘরে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য ওই অঞ্চলে বিনিয়োগে বাড়তি প্রণোদনা দেয়ার কথা ভাবা যায়। বিভিন্ন স্টার্টআপ তহবিলের একটি অংশ ওই অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বিবেচনা করা উচিত।

আরও খবর
জেল থেকে নেতাকর্মীদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিতাম : প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস পালিত
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের
পত্রিকার ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই সম্পাদক পরিষদ
বুয়েটের গবেষণা ঢাকা শহরের তুলনায় বস্তিগুলো মাত্র ১ শতাংশ জায়গায়
১৯ জনসহ অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের নামে মামলা
উন্মুক্ত গোসলখানায় ঝুঁকিতে নিম্ন আয়ের এলাকার নারীরা
‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের সঠিক ভিত্তি’
দুই গ্রুপের গোলাগুলি হতাহতের হিসাব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না
পরিকল্পিত হত্যা, নিজেরাই লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়
‘নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসতে মানা’

রবিবার, ১২ জুন ২০২২ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪৩

২০২২-২৩ অর্থবছর খুবই চ্যালেঞ্জিং : আতিউর রহমান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

২০২২-২৩ অর্থবছর খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী স্ট্যাগফ্লেশন (অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুগপৎ নি¤œ প্রবৃদ্ধি)-এর ফলে যে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়তে শুরু করেছে।

দেশবাসীকে এ বার্তাটি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যে, আগামী অর্থবছরটি খুব চ্যালেঞ্জিং। তাই সঙ্কট মোকাবিলার জন্য অর্থবছরের মাঝপথেও আমাদের নীতি-কৌশল বদলাতে হতে পারে। এমন পরিবর্তনের জন্য আমাদের সব অংশীজনকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ কেন্দ্রের আয়োজনে ‘কেমন হলো বাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আতিউর রহমান এসব কথা বলেন।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাজেট প্রস্তাবনাটি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের বাজেট প্রণেতারা সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো যথার্থভাবে চিহ্নিত করে এগুলোর বিষয়ে সচেতন থেকেই বাজেট প্রস্তুত করেছেন। এ সংবেদনশীলতার বড় উদাহরণ হতে পারে জ্বালানি, সার ইত্যাদি বাবদ ভর্তুকি ও প্রণোদনায় দেয়া বরাদ্দ বৃদ্ধি থেকে।

চলতি বছরে জিডিপির শতাংশ হিসেবে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ১.৭ শতাংশ। আসছে বছরে হচ্ছে ১.৯ শতাংশ। অথচ বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে জিডিপির শতাংশ হিসেবে চলতি বছর থেকে আসছে বছরে বাজেটের আকার ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দুটোই কিন্তু কমাতে হয়েছে। এর মধ্যেও ভর্তুকি ও প্রণোদনার অনুপাত বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাতেই হবে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন এ অনুপাত প্রয়োজনবোধে আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, আসন্ন অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলো মাথায় রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোরও সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয়। যেমন- অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় প্রস্তাবিত বাজেটে ৪ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি জিডিপির ৯ শতাংশ। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে বা উপখাতে মূলধন ব্যয় কমিয়ে এ অনুপাত কমানো যেত। একইভাবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে মোট বাজেটের ১২ শতাংশ যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানেও এখনই জরুরি নয় এমন প্রকল্পগুলোতে অর্থ কম দিয়ে বা একেবারেই না দিয়ে চাপ কমানো যেত।

সার্বিক বাজেট পর্যালোচনা করে এ সময় তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা সামনে আনেন। বাজেট চূড়ান্ত করার আগে আইন প্রণেতাদের এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রস্তাব দেন, বাজেট ঘাটতি আরও ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬.৪ শতাংশ করা যেতে পারে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার কথা ভাবা যায়। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ মোট বাজেটের ৫.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিয়ে আসার জন্য যে ‘ম্যাঙ্গো ট্রেন’ রয়েছে তার আদলে অন্যান্য কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণেও সহায়তার নতুন উদ্যোগ নেয়া গেলে সুফল পাওয়া সম্ভব। কী করে সহজে দেশে রেমিট্যান্স নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে নতুন উদ্যোগের কথা বাজেট প্রস্তাবে যুক্ত করা যায়। দেশিয় কোম্পানি জাহাজ তৈরি করলে বা কিনে এনে তা দিয়ে আমদানি-রপ্তানির কাজ করা গেলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরতা কমবে। একইসঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা বাতিল করাই শ্রেয় হবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে গোটা অর্থনীতিই নতুন গতি পাবে। দক্ষিণাঞ্চলের কানেক্টিভিটির যে নাটকীয় উন্নতি হবে তার সর্বোচ্চ সুফল ঘরে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য ওই অঞ্চলে বিনিয়োগে বাড়তি প্রণোদনা দেয়ার কথা ভাবা যায়। বিভিন্ন স্টার্টআপ তহবিলের একটি অংশ ওই অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বিবেচনা করা উচিত।