পরিকল্পিত হত্যা, নিজেরাই লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়

প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে বিলের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি খুন হয়। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত করেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। অবশেষে আদালত হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছে। পিবিআই সম্প্রতি অনুসন্ধান চালিয়ে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো ঘটনায় জড়িত আজিজুল হক, ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ইয়াছিন মিয়া ও শিশু আবির (১৬)। তারা আদালতে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারা হত্যার পরিকল্পনা থেকে লাশ উদ্ধার হাসপাতালে নেয়াসহ সবই করেছে। পিবিআইয়ের ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নিহত রিয়াজ উদ্দিন (৩৫) গাজীপুরে কালীগঞ্জে অ্যাগ্রোফার্মের কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেল চারটার দিকে রিয়াজ ফার্ম সংলগ্ন বিলের মধ্যে হাঁস আনতে গেলে সাঁতার কাটার সময় পানিতে ডুবে মারা যায়। তার সহকর্মীরা রিয়াজকে বিলের পানি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা (নং-২০) দায়ের করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তে চিকিৎসরা তার মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

এরপর রিয়াজের পিতা নাজিম উদ্দিন আবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। তিন মাস তদন্ত করে মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন।

আদালত স্বপ্রণেদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করার জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ দেন। পিবিআই উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৬ জুন গভীর রাতে কালীগঞ্জ ফুলদি এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত আজিজুল হককে (২০) গ্রেপ্তার করে। তাৎক্ষণিকভাবে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতে, ৭ জুন ভোর রাতে নরসিংদীর দক্ষিণ পুরানপাড়া এলাকা থেকে ঘটনার মূল আসামি ইয়াছিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত দুইজনের স্বীকারোক্তি মতে, ঘটনায় জড়িত আবির নামে ১৬ বছরের এক শিশুকেও আটক করে।

গত ৭ জুন ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদের পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে গ্রেপ্তারকৃতরা গাজীপুর ছাইফ অ্যাগ্রো ফার্মের রাখাল হিসেবে কাজ করত বলে স্বীকার করেছে। নিহত রিয়াজ তিন অভিযুক্তের সঙ্গে অ্যাগ্রো ফার্মের দুধ বিক্রি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করত। অভিযুক্ত আসামি ইয়াসিন প্রতিদিন ফুলদী বাজারে দুধ বিক্রি করত। আর দুধ বিক্রির টাকা থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আত্মসাৎ করত।

আসামি ইয়াসিন একদিন রিয়াজকে নিয়ে ফার্মের দুধ বিক্রি করতে গেলে রিয়াজ ইয়াসিনের চুরির ঘটনা জেনে যায়। এরপর সে চুরির টাকার ভাগ দাবি করে। আর টাকার ভাগ না দিলে রিয়াজ ফার্মের মালিককে সব জানিয়ে দেবে বলে ইয়াসিনকে হুমকি দেয়। এ নিয়ে ঘটনার আগে রিয়াজের সঙ্গে ইয়াসিনের ঝগড়া হয়। এরপর রিয়াজকে গোসল করার সময় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে, ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেলে ইয়াসিনসহ অন্য আসামিরা রিয়াজের সঙ্গে নিয়ে বিলের পানিতে হাঁস আনতে যায়। ওই সময় দুইজন আসামি বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর আসামি ইয়াসিনের হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে বিলের মধ্যে রিয়াজের মাথায় ৩ থেকে ৪টি আঘাত করে। মাথায় আঘাতের পর রিয়াজ পানিতে ডুবে যায়। এরপর অভিযুক্ত ইয়াসিন, আজিজুল ও আবির ফার্মে ফিরে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যদের কাছে প্রচার করে রিয়াজ পানিতে ডুবে গেছে। এরপর অভিযুক্তরা বিলের পানিতে গিয়ে রিয়াজকে পানির নিচ থেকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রিয়াজকে মৃত ঘোষণা করেন।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর রহস্য উদ্ঘাটনে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শুরু করেন। সম্প্রতি ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকারোক্তি দেয়। তারা আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবনবন্দি দিয়েছে।

আরও খবর
জেল থেকে নেতাকর্মীদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিতাম : প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস পালিত
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের
পত্রিকার ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই সম্পাদক পরিষদ
বুয়েটের গবেষণা ঢাকা শহরের তুলনায় বস্তিগুলো মাত্র ১ শতাংশ জায়গায়
২০২২-২৩ অর্থবছর খুবই চ্যালেঞ্জিং : আতিউর রহমান
১৯ জনসহ অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের নামে মামলা
উন্মুক্ত গোসলখানায় ঝুঁকিতে নিম্ন আয়ের এলাকার নারীরা
‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের সঠিক ভিত্তি’
দুই গ্রুপের গোলাগুলি হতাহতের হিসাব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না
‘নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসতে মানা’

রবিবার, ১২ জুন ২০২২ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ জিলকদ ১৪৪৩

দুই বছর আগে কালীগঞ্জ বিলে রিয়াজের লাশ

পরিকল্পিত হত্যা, নিজেরাই লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে বিলের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি খুন হয়। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত করেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। অবশেষে আদালত হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছে। পিবিআই সম্প্রতি অনুসন্ধান চালিয়ে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তরা হলো ঘটনায় জড়িত আজিজুল হক, ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ইয়াছিন মিয়া ও শিশু আবির (১৬)। তারা আদালতে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারা হত্যার পরিকল্পনা থেকে লাশ উদ্ধার হাসপাতালে নেয়াসহ সবই করেছে। পিবিআইয়ের ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নিহত রিয়াজ উদ্দিন (৩৫) গাজীপুরে কালীগঞ্জে অ্যাগ্রোফার্মের কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেল চারটার দিকে রিয়াজ ফার্ম সংলগ্ন বিলের মধ্যে হাঁস আনতে গেলে সাঁতার কাটার সময় পানিতে ডুবে মারা যায়। তার সহকর্মীরা রিয়াজকে বিলের পানি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা (নং-২০) দায়ের করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তে চিকিৎসরা তার মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

এরপর রিয়াজের পিতা নাজিম উদ্দিন আবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। তিন মাস তদন্ত করে মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন।

আদালত স্বপ্রণেদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করার জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ দেন। পিবিআই উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৬ জুন গভীর রাতে কালীগঞ্জ ফুলদি এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত আজিজুল হককে (২০) গ্রেপ্তার করে। তাৎক্ষণিকভাবে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতে, ৭ জুন ভোর রাতে নরসিংদীর দক্ষিণ পুরানপাড়া এলাকা থেকে ঘটনার মূল আসামি ইয়াছিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত দুইজনের স্বীকারোক্তি মতে, ঘটনায় জড়িত আবির নামে ১৬ বছরের এক শিশুকেও আটক করে।

গত ৭ জুন ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদের পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে গ্রেপ্তারকৃতরা গাজীপুর ছাইফ অ্যাগ্রো ফার্মের রাখাল হিসেবে কাজ করত বলে স্বীকার করেছে। নিহত রিয়াজ তিন অভিযুক্তের সঙ্গে অ্যাগ্রো ফার্মের দুধ বিক্রি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করত। অভিযুক্ত আসামি ইয়াসিন প্রতিদিন ফুলদী বাজারে দুধ বিক্রি করত। আর দুধ বিক্রির টাকা থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আত্মসাৎ করত।

আসামি ইয়াসিন একদিন রিয়াজকে নিয়ে ফার্মের দুধ বিক্রি করতে গেলে রিয়াজ ইয়াসিনের চুরির ঘটনা জেনে যায়। এরপর সে চুরির টাকার ভাগ দাবি করে। আর টাকার ভাগ না দিলে রিয়াজ ফার্মের মালিককে সব জানিয়ে দেবে বলে ইয়াসিনকে হুমকি দেয়। এ নিয়ে ঘটনার আগে রিয়াজের সঙ্গে ইয়াসিনের ঝগড়া হয়। এরপর রিয়াজকে গোসল করার সময় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে, ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেলে ইয়াসিনসহ অন্য আসামিরা রিয়াজের সঙ্গে নিয়ে বিলের পানিতে হাঁস আনতে যায়। ওই সময় দুইজন আসামি বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর আসামি ইয়াসিনের হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে বিলের মধ্যে রিয়াজের মাথায় ৩ থেকে ৪টি আঘাত করে। মাথায় আঘাতের পর রিয়াজ পানিতে ডুবে যায়। এরপর অভিযুক্ত ইয়াসিন, আজিজুল ও আবির ফার্মে ফিরে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যদের কাছে প্রচার করে রিয়াজ পানিতে ডুবে গেছে। এরপর অভিযুক্তরা বিলের পানিতে গিয়ে রিয়াজকে পানির নিচ থেকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রিয়াজকে মৃত ঘোষণা করেন।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর রহস্য উদ্ঘাটনে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শুরু করেন। সম্প্রতি ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকারোক্তি দেয়। তারা আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবনবন্দি দিয়েছে।