স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কুর ১৮ দফা ইশতেহার
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল দিনভর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। শেষ মুহূর্তে জয়-পরাজয়ের সংশয়ে মেয়র পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। এদিকে প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিনে আগে গতকাল দুপুরে সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
এছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রিজাইডিং অফিসারদের ট্রেনিং, ভোটারদের মক ভোটিংসহ আনুষ্ঠানিক সব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় জয়-পরাজয়ের হিসাব কষছে হেভিওয়েট ৩ প্রার্থী। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও জয়-পরাজয় নিয়ে সংশয় ও শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। তবে ভোটারদের কাছে টানতে শেষ মুহূর্তে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি কেন্দ্র অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আজ থেকে পুরো নগরীতে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনসহ ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে নগরীর অন্তত ২০০টি পয়েন্টে মোবাইল টিম ও চেকপোস্ট গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ঘিরে সোমবার থেকে ৫০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২ প্লাটুন বিজিবি, আনসারের ১০টি টিম ও র্যাবের ২৮টি টিম মাঠে কাজ করবে।
৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এসব টিমের তদারকি করবেন। তিনি জানান, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর ভোটকেন্দ্রগুলোতে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মক ভোটিং ও ইভিএম প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ এখনও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নগরবাসীকে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়া যাবে।
এদিকে আজ রাত ৮টা থেকে বন্ধ হবে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক ও সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটের মাঠে চলছে টানটান উত্তেজনা, চলছে বাকযুদ্ধও। বিশেষ করে মেয়র পদে হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তারা নানা কৌশলে একে অন্যের সমালোচনায় বেশ সরব। টানটান উত্তেজনার মধ্যে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারসহ তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জয়-পরাজয় নিয়ে সংশয় ও শঙ্কা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কুর ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিন আগে ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়ারদীঘির পাড়ে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই ইশতেহার ঘোষণা করেন। তবে সাক্কু তার এই ইশতেহারে নির্বাচিত হলে ৫ বছরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেয়ে বিগত বছরের উন্নয়ন চিত্র গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির আদর্শ কুমিল্লা গড়ার লড়াইয়ে তিনি নগরবাসীকে পাশে চেয়েছেন। এ সময় তিনি তার গত দুই মেয়াদের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
কুমিল্লা নগরীকে একটি আধুনিক নগরী গড়ে তোলার কথা জানিয়ে সাক্কু ১৮ দফা ইশতেহারের মধ্যে কুমিল্লা নগরের অবকাঠামো (সড়ক, জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন) উন্নয়ন, সড়কবাতি লাগানো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাজার, শপিং মল, ক্রীড়া ও খেলার মাঠ, বস্তিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, করোনার সময়ে ত্রাণ কার্যক্রম, নিরাপত্তা বিধান, মাদক-সন্ত্রাস ও ইভটিজিংমুক্ত সমাজ, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও গৃহকর গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণের কথা বলেছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে আবারও তিনি কুমিল্লাকে বিশ্বমানের শহরে পরিণত করার ঘোষণা দেন। দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প হাতে নেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
ইশতেহারে সাক্কু বলেন, কুমিল্লার উন্নয়ন সম্ভাবনা সীমাহীন। আজ আমরা যা কিছু করার কথা ভাবছি, হয়তো ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আরও বেশি কিছু করতে চাইব এবং পারব। গত ৫ বছরে ৭০ শতাংশ কাজ করেছি। বাকি ৩০ শতাংশ ও এবারের ১৮ দফা এবার যুক্ত হলো। নগরীর ভোটাররা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে আছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ী হব। কুমিল্লা নগরীকে দেশের মধ্যে আদর্শ মহানগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সাক্কু বলেন, এটা আমার আশা নয়, বিশ^াস। এ বিশ^াস বাস্তবায়নে তিনি নগরবাসীর সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেন।
এর আগে ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে তিনি ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দেন। এর ৭০ শতাংশ পূরণ করেছেন বলে মনিরুল হক দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মো. কাইমুল হক রিংকু, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, তারেক আবদুল্লাহ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য নজরুল হক ভূঞা প্রমুখ।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান সুজনের
সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলনে করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লা মহানগর ও জেলা শাখা। গতকাল সকালে নগরীর কুমিল্লা টাউন হলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন জেলা কমিটির সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান আকন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র, ভোটার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, মন্ত্রী ও এমপি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম, প্রার্থী-সমর্থক ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনসহ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
থানার ওসির সরকারি মোবাইল নম্বর ক্লোন কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমানের সরকারি মোবাইল নম্বর (০১৩২০-১১৩৯৯৬) ক্লোন করে একটি প্রতারক চক্র আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওসি একটি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছেন। ওসি জানান, তার সরকারি মোবাইল নম্বরটি ক্লোন করে ও ফান সফটওয়ারের মাধ্যমে একটি প্রতারক চক্র সিটি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত পদেক্ষপ নেয়া হবে।
প্রার্থীদের গণসংযোগ
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও তার স্ত্রী পৃথকভাবে নগরীর মনোহরপুর, সদর হাসপাতাল সড়ক, বাগিচাগাঁও, রেলস্টেশন, শাসনগাছা, অশোকতলা, স্কাউট মার্কেট ও স্টেডিয়াম মার্কেট, শাকতলা, সাহাপাড়া, দয়াপুর, বালধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী পৃথকভাবে নগরীর দারোগাবাড়ি, লইপুরা, ভল্লবপুর, ধনেশ^র, আশ্রাফপুর এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার তার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর অশোকতলা, দক্ষিণ চর্থা, চকবাজারসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন।
প্রসঙ্গত আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০৫ ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হবে।
সোমবার, ১৩ জুন ২০২২ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪৩
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কুর ১৮ দফা ইশতেহার
জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল দিনভর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। শেষ মুহূর্তে জয়-পরাজয়ের সংশয়ে মেয়র পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। এদিকে প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিনে আগে গতকাল দুপুরে সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
এছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রিজাইডিং অফিসারদের ট্রেনিং, ভোটারদের মক ভোটিংসহ আনুষ্ঠানিক সব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় জয়-পরাজয়ের হিসাব কষছে হেভিওয়েট ৩ প্রার্থী। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও জয়-পরাজয় নিয়ে সংশয় ও শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। তবে ভোটারদের কাছে টানতে শেষ মুহূর্তে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি কেন্দ্র অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আজ থেকে পুরো নগরীতে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনসহ ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে নগরীর অন্তত ২০০টি পয়েন্টে মোবাইল টিম ও চেকপোস্ট গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ঘিরে সোমবার থেকে ৫০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২ প্লাটুন বিজিবি, আনসারের ১০টি টিম ও র্যাবের ২৮টি টিম মাঠে কাজ করবে।
৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এসব টিমের তদারকি করবেন। তিনি জানান, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর ভোটকেন্দ্রগুলোতে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মক ভোটিং ও ইভিএম প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ এখনও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নগরবাসীকে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়া যাবে।
এদিকে আজ রাত ৮টা থেকে বন্ধ হবে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক ও সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটের মাঠে চলছে টানটান উত্তেজনা, চলছে বাকযুদ্ধও। বিশেষ করে মেয়র পদে হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তারা নানা কৌশলে একে অন্যের সমালোচনায় বেশ সরব। টানটান উত্তেজনার মধ্যে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারসহ তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জয়-পরাজয় নিয়ে সংশয় ও শঙ্কা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কুর ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিন আগে ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়ারদীঘির পাড়ে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই ইশতেহার ঘোষণা করেন। তবে সাক্কু তার এই ইশতেহারে নির্বাচিত হলে ৫ বছরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেয়ে বিগত বছরের উন্নয়ন চিত্র গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির আদর্শ কুমিল্লা গড়ার লড়াইয়ে তিনি নগরবাসীকে পাশে চেয়েছেন। এ সময় তিনি তার গত দুই মেয়াদের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
কুমিল্লা নগরীকে একটি আধুনিক নগরী গড়ে তোলার কথা জানিয়ে সাক্কু ১৮ দফা ইশতেহারের মধ্যে কুমিল্লা নগরের অবকাঠামো (সড়ক, জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন) উন্নয়ন, সড়কবাতি লাগানো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাজার, শপিং মল, ক্রীড়া ও খেলার মাঠ, বস্তিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, করোনার সময়ে ত্রাণ কার্যক্রম, নিরাপত্তা বিধান, মাদক-সন্ত্রাস ও ইভটিজিংমুক্ত সমাজ, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও গৃহকর গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণের কথা বলেছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে আবারও তিনি কুমিল্লাকে বিশ্বমানের শহরে পরিণত করার ঘোষণা দেন। দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প হাতে নেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
ইশতেহারে সাক্কু বলেন, কুমিল্লার উন্নয়ন সম্ভাবনা সীমাহীন। আজ আমরা যা কিছু করার কথা ভাবছি, হয়তো ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আরও বেশি কিছু করতে চাইব এবং পারব। গত ৫ বছরে ৭০ শতাংশ কাজ করেছি। বাকি ৩০ শতাংশ ও এবারের ১৮ দফা এবার যুক্ত হলো। নগরীর ভোটাররা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে আছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ী হব। কুমিল্লা নগরীকে দেশের মধ্যে আদর্শ মহানগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সাক্কু বলেন, এটা আমার আশা নয়, বিশ^াস। এ বিশ^াস বাস্তবায়নে তিনি নগরবাসীর সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেন।
এর আগে ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে তিনি ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দেন। এর ৭০ শতাংশ পূরণ করেছেন বলে মনিরুল হক দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মো. কাইমুল হক রিংকু, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, তারেক আবদুল্লাহ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য নজরুল হক ভূঞা প্রমুখ।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান সুজনের
সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলনে করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লা মহানগর ও জেলা শাখা। গতকাল সকালে নগরীর কুমিল্লা টাউন হলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন জেলা কমিটির সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান আকন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র, ভোটার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, মন্ত্রী ও এমপি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম, প্রার্থী-সমর্থক ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনসহ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
থানার ওসির সরকারি মোবাইল নম্বর ক্লোন কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমানের সরকারি মোবাইল নম্বর (০১৩২০-১১৩৯৯৬) ক্লোন করে একটি প্রতারক চক্র আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওসি একটি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছেন। ওসি জানান, তার সরকারি মোবাইল নম্বরটি ক্লোন করে ও ফান সফটওয়ারের মাধ্যমে একটি প্রতারক চক্র সিটি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত পদেক্ষপ নেয়া হবে।
প্রার্থীদের গণসংযোগ
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও তার স্ত্রী পৃথকভাবে নগরীর মনোহরপুর, সদর হাসপাতাল সড়ক, বাগিচাগাঁও, রেলস্টেশন, শাসনগাছা, অশোকতলা, স্কাউট মার্কেট ও স্টেডিয়াম মার্কেট, শাকতলা, সাহাপাড়া, দয়াপুর, বালধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী পৃথকভাবে নগরীর দারোগাবাড়ি, লইপুরা, ভল্লবপুর, ধনেশ^র, আশ্রাফপুর এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার তার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর অশোকতলা, দক্ষিণ চর্থা, চকবাজারসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন।
প্রসঙ্গত আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০৫ ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হবে।