ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের ‘১২ লাখ টাকার’ অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর ‘১২ লাখ টাকার’ অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেতে দুদকের সময় লেগেছে ৮ বছর। এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে তার বিরদ্ধে মামলা দয়ের করেন দুদক উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদ।
সাবেক এ বিচারককে বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে তিনি কোন দেশে বর্তমানে অবস্থান করছেন তা জানা যায়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার বিচারক ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ২০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ ও দেশের বাইরে পাচার সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায়ের দিন তারেক রহমানকে ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেন। সে সময় তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওই রায়ের পর তিনি দেশের বাইরে চলে যান। পরে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের একজন কর্মকর্তা। দীর্ঘ ৮ বছর পর তিনি সাবেক বিচারকের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের জন্য কমিশনের কাছে অনুমোদন চান। কমিশন তদন্তে সন্তুষ্ট হয়ে মামলা দায়েরের অনুমতি দেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিচারক মো. মোতাহার হোসেনের তার নিজ নামে ও স্ত্রী তাসলিমা বেগম ওরফে আরজুমান্দ আরার (মৃত) নামে অর্জিত জমি বা স্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৯.৩২৯৯ একর বা ৯৩৪ শতক। যার দালিলিক মূল্য ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। স্থাবর সম্পদ ছাড়া মো. মোতাহার হোসেনের নিজ নামে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৬১ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৫ টাকা সম্পদসহ মোট ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। যার বিপরীতে ৪১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০ টাকার সম্পদের উৎসের প্রমাণ পাওয়া গেলেও ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কমিশন থেকে দুদক ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলাটি অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞাও জারি করে কমিশন। তবে কমিশন অনুসন্ধান শুরু করার আগেই তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। বিভিন্ন সময় বিদেশের সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেতে মালয়েশিয়া ও লন্ডন সরকারের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিন্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছিল দুদক। কিন্তু সেখান থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস ও মামুনকে অর্থদ-সহ সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। এই ঘটনায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট পবিত্র সরকার, দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর পেশকার আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩ এর পেশকার আরিফুল ইসলাম, বিশেষ জজ আদালত-৩ এর স্টেনোগ্রাফার মো. নুরুল ইসলাম ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর স্টেনোগ্রাফার মো. আবু হাসানসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
সোমবার, ১৩ জুন ২০২২ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের ‘১২ লাখ টাকার’ অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর ‘১২ লাখ টাকার’ অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেতে দুদকের সময় লেগেছে ৮ বছর। এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে তার বিরদ্ধে মামলা দয়ের করেন দুদক উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদ।
সাবেক এ বিচারককে বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে তিনি কোন দেশে বর্তমানে অবস্থান করছেন তা জানা যায়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার বিচারক ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ২০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ ও দেশের বাইরে পাচার সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায়ের দিন তারেক রহমানকে ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেন। সে সময় তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওই রায়ের পর তিনি দেশের বাইরে চলে যান। পরে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের একজন কর্মকর্তা। দীর্ঘ ৮ বছর পর তিনি সাবেক বিচারকের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের জন্য কমিশনের কাছে অনুমোদন চান। কমিশন তদন্তে সন্তুষ্ট হয়ে মামলা দায়েরের অনুমতি দেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিচারক মো. মোতাহার হোসেনের তার নিজ নামে ও স্ত্রী তাসলিমা বেগম ওরফে আরজুমান্দ আরার (মৃত) নামে অর্জিত জমি বা স্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৯.৩২৯৯ একর বা ৯৩৪ শতক। যার দালিলিক মূল্য ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। স্থাবর সম্পদ ছাড়া মো. মোতাহার হোসেনের নিজ নামে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৬১ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫৫ টাকা সম্পদসহ মোট ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। যার বিপরীতে ৪১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০ টাকার সম্পদের উৎসের প্রমাণ পাওয়া গেলেও ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কমিশন থেকে দুদক ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলাটি অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞাও জারি করে কমিশন। তবে কমিশন অনুসন্ধান শুরু করার আগেই তিনি মালয়েশিয়া চলে যান। বিভিন্ন সময় বিদেশের সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেতে মালয়েশিয়া ও লন্ডন সরকারের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিন্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছিল দুদক। কিন্তু সেখান থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস ও মামুনকে অর্থদ-সহ সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। এই ঘটনায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট পবিত্র সরকার, দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর পেশকার আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩ এর পেশকার আরিফুল ইসলাম, বিশেষ জজ আদালত-৩ এর স্টেনোগ্রাফার মো. নুরুল ইসলাম ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর স্টেনোগ্রাফার মো. আবু হাসানসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।