নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ
যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
গত বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে সহিংসতার শিকার হন এক নারী গণমাধ্যমকর্মী। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বলেন, ‘বারবার আন্দোলনের পরও এই ধরনের ঘটনাগুলো থামছে না। কারণ এতসব ঘটনা ঘটার পরও বিচার হচ্ছে না। যদি আমরা এগুলোর সঠিক বিচার করতে পারতাম তাহলে এগুলো আর ঘটতো না। আজকে বাংলাদেশ নারী পরজীবী কোন শ্রেণী নয়, সে এখন স্বাবলম্বী। সুতরাং সরকারের এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।’
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে মহিলা পরিষদ সব সময় আন্দোলন করে আসছে। করোনার সময় থেকে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে আজ এ পর্যায়ে। করোনা থেকে আমরা মুক্তি পেলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। যারা নারী প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে পুরুষত্ব দেখান, তারা আসলে পুরুষত্বকে কলঙ্কিত করছেন, মানবিক আচরণ না করে মানবতাকে কলঙ্কিত করছেন। সব পুরুষ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেন না, নারীকে অসম্মানের, অমর্যাদার চোখে দেখেন না। কিন্তু যারা দেখেন, তাদের গোটা কয়েক পুরুষের জন্য সবাই অপরাধের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের চিহ্নিত করার যে সংগ্রাম, আইনের আওতায় আনার যে সংগ্রাম, এই সংগ্রাম শুধু নারীদের না, নারী-পুরুষ সবার।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরব উজ্জ্বলকেন্দ্র। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছি, তখন রাত ১২টা-১টার দিকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে একা ফিরেছি, কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমরা বাইরে থেকে যখন ক্যাম্পাসের চত্বরে ফিরেছি, তখন মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এ ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনার সম্মানের সঙ্গে জড়িত। এ সময় তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরকে সহিংসতাকারীদের হাত থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানান।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজ বাংলাদেশের নারীদের অবদান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। কোন ধরনের শিক্ষার ফলে ওই কাপুরুষ নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা দেখায়? আমরা বলছি পুরুষ নতুন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করুন, নতুন ধরনের মানুষ হন। একজন নারীকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করুন, সে আপনার অধীনস্থ না, পদানতও না- এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হোন। যদি তা না হয় তাহলে আপনার পরিবারেও একই ঘটনা ঘটবে। যেসব মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি নারীর সাজসজ্জা, পোশাকের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, করতে শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন সমাজকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।
এ সময় মহিলা পরিষদ ১১টি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের আন্দোলন উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বমী। তার পেশকৃত প্রস্তাবগুলো হলোÑ ১. এই সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। ২. নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করার দাবি। ৩. সমাবেশ উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জোর দাবি জানায়। ৪. নারীর স্বাধীন চলাচলে নিরাপত্তার দাবি। ৫. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অপরাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান। ৬. সমাবেশ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা এবং ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করার আহ্বান। ৭. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়ন করা। ৮. ধর্ষণসহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকারের ঘোষিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করা। ৯. কর্মক্ষেত্র ও রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১০. সমাবেশ নারীর প্রতি প্রচলিত নেতিবাচক প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানোর আহ্বান। ১১. সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা।
সোমবার, ১৩ জুন ২০২২ , ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪৩
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ
প্রতিনিধি, ঢাবি
যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
গত বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে সহিংসতার শিকার হন এক নারী গণমাধ্যমকর্মী। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বলেন, ‘বারবার আন্দোলনের পরও এই ধরনের ঘটনাগুলো থামছে না। কারণ এতসব ঘটনা ঘটার পরও বিচার হচ্ছে না। যদি আমরা এগুলোর সঠিক বিচার করতে পারতাম তাহলে এগুলো আর ঘটতো না। আজকে বাংলাদেশ নারী পরজীবী কোন শ্রেণী নয়, সে এখন স্বাবলম্বী। সুতরাং সরকারের এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।’
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে মহিলা পরিষদ সব সময় আন্দোলন করে আসছে। করোনার সময় থেকে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে আজ এ পর্যায়ে। করোনা থেকে আমরা মুক্তি পেলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। যারা নারী প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে পুরুষত্ব দেখান, তারা আসলে পুরুষত্বকে কলঙ্কিত করছেন, মানবিক আচরণ না করে মানবতাকে কলঙ্কিত করছেন। সব পুরুষ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেন না, নারীকে অসম্মানের, অমর্যাদার চোখে দেখেন না। কিন্তু যারা দেখেন, তাদের গোটা কয়েক পুরুষের জন্য সবাই অপরাধের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের চিহ্নিত করার যে সংগ্রাম, আইনের আওতায় আনার যে সংগ্রাম, এই সংগ্রাম শুধু নারীদের না, নারী-পুরুষ সবার।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরব উজ্জ্বলকেন্দ্র। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছি, তখন রাত ১২টা-১টার দিকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে একা ফিরেছি, কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমরা বাইরে থেকে যখন ক্যাম্পাসের চত্বরে ফিরেছি, তখন মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এ ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনার সম্মানের সঙ্গে জড়িত। এ সময় তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরকে সহিংসতাকারীদের হাত থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানান।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজ বাংলাদেশের নারীদের অবদান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। কোন ধরনের শিক্ষার ফলে ওই কাপুরুষ নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা দেখায়? আমরা বলছি পুরুষ নতুন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করুন, নতুন ধরনের মানুষ হন। একজন নারীকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করুন, সে আপনার অধীনস্থ না, পদানতও না- এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হোন। যদি তা না হয় তাহলে আপনার পরিবারেও একই ঘটনা ঘটবে। যেসব মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি নারীর সাজসজ্জা, পোশাকের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, করতে শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন সমাজকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।
এ সময় মহিলা পরিষদ ১১টি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের আন্দোলন উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বমী। তার পেশকৃত প্রস্তাবগুলো হলোÑ ১. এই সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। ২. নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করার দাবি। ৩. সমাবেশ উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জোর দাবি জানায়। ৪. নারীর স্বাধীন চলাচলে নিরাপত্তার দাবি। ৫. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অপরাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান। ৬. সমাবেশ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা এবং ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করার আহ্বান। ৭. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়ন করা। ৮. ধর্ষণসহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকারের ঘোষিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করা। ৯. কর্মক্ষেত্র ও রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১০. সমাবেশ নারীর প্রতি প্রচলিত নেতিবাচক প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানোর আহ্বান। ১১. সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা।