করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব শিপার্স কাউন্সিলের

প্রস্তাবিত বাজেট বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ খাতে বিনিয়োগে আশার সঞ্চার করবে এবং করপোরেট করহার হ্রাসে বিনিয়োগ উৎসাহিত, রপ্তানি বহুমূখীকরণ ও সম্প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেছে শিপার্স কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ। তবে সংগঠনটি ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে।

মূল্যস্ফীতির মতো চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা মনে করি, কঠিন হলেও এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং কিছু বিষয়ে কঠোর অবস্থান নীতিতে থাকতে হবে। করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই বাজেট সময়োপযোগী বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল উৎসাহিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়েছে। এতে এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগে আশার সঞ্চার হবে। করপোরেট করহার হ্রাসে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং রপ্তানি বহুমূখীকরণ সম্প্রসারিত হবে। তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়-সীমা বাড়ানো জরুরি। গত বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ কর্তৃক বহির্বিশ্বে সেবা প্রদানের বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় আনা আয়কে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। এসব প্রস্তাব গৃহীত হলে সেবা রপ্তানি খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।’ সরকারি সুবিধা বাড়ায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ২ বছরের ব্যবধানে ৩৩ থেকে ৮১টি উন্নীত হয়েছে।’

শিপার্স কাউন্সিল অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজেটে মোট ব্যয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, মোট আয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। ঘাটতি মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎসে কর ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্যান্য সব রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই হারে কর নির্ধারণের ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় পদক্ষেপ এবং একান্ত প্রচেষ্টায় নির্মাণকৃত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে স্থানীয় জনগনের জীবন মানোয়ন্নের পাশাপাশি শিল্প ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একইভাবে অন্যান্য প্রকল্প যেমন, মেট্রো রেল, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল পথসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং একটি পরিষেবা শিল্প ঘোষণা, শিপিং এজেন্ট সমূহের ওপর করপোরেট কর হার কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হিসেবে শিপিং এজেন্টদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান প্রয়োজন বলে মনে করি।’

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব শিপার্স কাউন্সিলের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

প্রস্তাবিত বাজেট বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ খাতে বিনিয়োগে আশার সঞ্চার করবে এবং করপোরেট করহার হ্রাসে বিনিয়োগ উৎসাহিত, রপ্তানি বহুমূখীকরণ ও সম্প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেছে শিপার্স কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ। তবে সংগঠনটি ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে।

মূল্যস্ফীতির মতো চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা মনে করি, কঠিন হলেও এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং কিছু বিষয়ে কঠোর অবস্থান নীতিতে থাকতে হবে। করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই বাজেট সময়োপযোগী বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল উৎসাহিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়েছে। এতে এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগে আশার সঞ্চার হবে। করপোরেট করহার হ্রাসে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং রপ্তানি বহুমূখীকরণ সম্প্রসারিত হবে। তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়-সীমা বাড়ানো জরুরি। গত বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ কর্তৃক বহির্বিশ্বে সেবা প্রদানের বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় আনা আয়কে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। এসব প্রস্তাব গৃহীত হলে সেবা রপ্তানি খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।’ সরকারি সুবিধা বাড়ায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ২ বছরের ব্যবধানে ৩৩ থেকে ৮১টি উন্নীত হয়েছে।’

শিপার্স কাউন্সিল অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজেটে মোট ব্যয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, মোট আয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। ঘাটতি মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎসে কর ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্যান্য সব রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই হারে কর নির্ধারণের ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় পদক্ষেপ এবং একান্ত প্রচেষ্টায় নির্মাণকৃত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে স্থানীয় জনগনের জীবন মানোয়ন্নের পাশাপাশি শিল্প ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একইভাবে অন্যান্য প্রকল্প যেমন, মেট্রো রেল, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল পথসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং একটি পরিষেবা শিল্প ঘোষণা, শিপিং এজেন্ট সমূহের ওপর করপোরেট কর হার কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হিসেবে শিপিং এজেন্টদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান প্রয়োজন বলে মনে করি।’