রাত পোহালেই ভোট, নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল প্রার্থীরা চালিয়েছেন তাদের শেষ দিনের প্রচারণা ও গণসংযোগ।

নির্বাচনের দিন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রসহ প্রতিটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে প্রায় ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য মাঠে নামছে। এদিকে গতকাল মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ হয়ে যাওয়ায় নগরীর বাসিন্দা, ভোটার কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি ছাড়া প্রার্থীদের পক্ষে বাইরে থেকে আসা কোন অতিথি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করলে বিধি মোতাবেক প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী চালিয়েছে পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া গতকাল রাত ১২টা থেকে আগামীকাল রাত ১২টা পর্যন্ত সব প্রকার যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মাঠে থাকবে। ভোটের দুদিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীতে আইনশৃঙ্খলার তদারকি করবেন। এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিতে পুলিশের ২৫০০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৪০টি টিমে ৪শ’ জন সদস্য, বিজিবির ১২ প্লাটুনে ২৪০ জন সদস্য এবং আনসারের ১২৬০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতয়ালি মডেল থানা এলাকায় ৭০টি ভোটকেন্দ্র এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকায় ১৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র‌্যাবের ৮ সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করবে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার ফোর্সের সদস্যদের পৃথক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। এদিকে ভোটকেন্দ্রে আসার পথে কোন ভোটার যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল টিম ওয়ার্ডগুলোতে টহলে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৪ ঘণ্টায় পেট্রোল টিম দায়িত্ব পালন করছে। একটি টিমে ৬ জন করে পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও ডিডিএলজি। ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে পলিটিক্যাল ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানান অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন।

সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোন সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্যে কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে।

সব মিলিয়ে ভোটের দিনে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী। এদিকে গতকাল নগরীর বাদুরতলা এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানা। এ সময় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

কুমিল্লার র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, র‌্যাবের ৪০ টিমে ৪শ’ জন সদস্য এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছে। যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে র‌্যাব কঠোর হস্তে দমন করবে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নগরী থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ঘিরে ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২ প্লাটুন বিজিবি, আনসারের ১০টি টিম ও র‌্যাবের ৪০টি টিম মাঠে কাজ করবে। এরমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা করার কেউ চেষ্টা করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।

আগামীকাল নগরীতে সাধারণ ছুটি :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আগামীকাল নগরীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মশিউর রহমান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ ছুটি ব্যতীত নির্বাচনী এলাকাধীন যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলো। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাধীন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অফিস/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হলো।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত ৩০ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন তফসিল অনুসারে ১৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণের জন্য নিধারিত দিবসের পূর্ববতী মধ্যরাত অর্থাৎ ১৪ জুন মধ্যরাত ১২টা হতে ১৫ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৩ জুন মধ্যরাত ১২টা হতে ১৬ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এতদীয় জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন

রাত পোহালেই ভোট, নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল প্রার্থীরা চালিয়েছেন তাদের শেষ দিনের প্রচারণা ও গণসংযোগ।

নির্বাচনের দিন নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রসহ প্রতিটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে প্রায় ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য মাঠে নামছে। এদিকে গতকাল মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ হয়ে যাওয়ায় নগরীর বাসিন্দা, ভোটার কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি ছাড়া প্রার্থীদের পক্ষে বাইরে থেকে আসা কোন অতিথি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করলে বিধি মোতাবেক প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী চালিয়েছে পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া গতকাল রাত ১২টা থেকে আগামীকাল রাত ১২টা পর্যন্ত সব প্রকার যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মাঠে থাকবে। ভোটের দুদিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীতে আইনশৃঙ্খলার তদারকি করবেন। এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিতে পুলিশের ২৫০০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৪০টি টিমে ৪শ’ জন সদস্য, বিজিবির ১২ প্লাটুনে ২৪০ জন সদস্য এবং আনসারের ১২৬০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতয়ালি মডেল থানা এলাকায় ৭০টি ভোটকেন্দ্র এবং সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকায় ১৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র‌্যাবের ৮ সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করবে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার ফোর্সের সদস্যদের পৃথক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। এদিকে ভোটকেন্দ্রে আসার পথে কোন ভোটার যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল টিম ওয়ার্ডগুলোতে টহলে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৪ ঘণ্টায় পেট্রোল টিম দায়িত্ব পালন করছে। একটি টিমে ৬ জন করে পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও ডিডিএলজি। ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে পলিটিক্যাল ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানান অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন।

সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোন সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্যে কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে।

সব মিলিয়ে ভোটের দিনে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী। এদিকে গতকাল নগরীর বাদুরতলা এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানা। এ সময় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

কুমিল্লার র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, র‌্যাবের ৪০ টিমে ৪শ’ জন সদস্য এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছে। যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে র‌্যাব কঠোর হস্তে দমন করবে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নগরী থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ঘিরে ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২ প্লাটুন বিজিবি, আনসারের ১০টি টিম ও র‌্যাবের ৪০টি টিম মাঠে কাজ করবে। এরমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা করার কেউ চেষ্টা করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।

আগামীকাল নগরীতে সাধারণ ছুটি :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আগামীকাল নগরীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মশিউর রহমান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ ছুটি ব্যতীত নির্বাচনী এলাকাধীন যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলো। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাধীন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অফিস/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হলো।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত ৩০ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন তফসিল অনুসারে ১৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণের জন্য নিধারিত দিবসের পূর্ববতী মধ্যরাত অর্থাৎ ১৪ জুন মধ্যরাত ১২টা হতে ১৫ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৩ জুন মধ্যরাত ১২টা হতে ১৬ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এতদীয় জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।