রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গতকাল কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (উখিয়া) আখতার জাবেদের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাহউদ্দিন অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম। তবে অভিযোগপত্রের বিস্তারিত তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ দেশে-বিদেশে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে সরব ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে মাস্টার মুহিবুল্লাহ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে সময় মুহিবুল্লাহর পরিবার দাবি করেছিল, এ হত্যাকা-ে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করার কারণে তাকে হত্যা করা হয়।
মামলা তদন্ত সূত্রে জানিয়েছে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ে ৩৬ জন বিভিন্নভাবে জড়িত ছিল। এর মধ্যে ৭জন আসামির পরিচয় ও ঠিকানা চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর পুলিশ ২৯ জনকে অভিযুক্ত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আসামিদের মধ্যে ১৫ জন কারাগারে এবং ১৪ জন পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় ১৫ আসামির মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাহউদ্দিন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, অভিযোগপত্রটি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গ্রহণ করার পর জেলা জজ আদালত বিচারের জন্য স্থানান্তর করবে। তারপর বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে হত্যাকা-ের পর মুহিবুল্লাহর পরিবার নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করলে তাদের উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। পরে গত ৩১ মার্চ ৯ সন্তানসহ মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন কানাডা চলে যান।
উল্লেখ্য, মুহিবুল্লাহর সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করত। শরণার্থী শিবিরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রচেষ্টায় কাজ করত মুহিবুল্লাহর সংগঠন।
শুধু তাই নয় ২০১৯ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হোয়াইট হাউজেও আমন্ত্রিত ছিলেন।
মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩
জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গতকাল কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (উখিয়া) আখতার জাবেদের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাহউদ্দিন অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম। তবে অভিযোগপত্রের বিস্তারিত তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ দেশে-বিদেশে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে সরব ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে মাস্টার মুহিবুল্লাহ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে সময় মুহিবুল্লাহর পরিবার দাবি করেছিল, এ হত্যাকা-ে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করার কারণে তাকে হত্যা করা হয়।
মামলা তদন্ত সূত্রে জানিয়েছে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ে ৩৬ জন বিভিন্নভাবে জড়িত ছিল। এর মধ্যে ৭জন আসামির পরিচয় ও ঠিকানা চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর পুলিশ ২৯ জনকে অভিযুক্ত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আসামিদের মধ্যে ১৫ জন কারাগারে এবং ১৪ জন পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় ১৫ আসামির মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী সালাহউদ্দিন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, অভিযোগপত্রটি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গ্রহণ করার পর জেলা জজ আদালত বিচারের জন্য স্থানান্তর করবে। তারপর বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে হত্যাকা-ের পর মুহিবুল্লাহর পরিবার নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করলে তাদের উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। পরে গত ৩১ মার্চ ৯ সন্তানসহ মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন কানাডা চলে যান।
উল্লেখ্য, মুহিবুল্লাহর সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করত। শরণার্থী শিবিরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রচেষ্টায় কাজ করত মুহিবুল্লাহর সংগঠন।
শুধু তাই নয় ২০১৯ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হোয়াইট হাউজেও আমন্ত্রিত ছিলেন।