বখাটের যন্ত্রণায় সাড়ে চার বছরে ৬২ কিশোরী ও নারীর আত্মহত্যা

বিগত সাড়ে চার বছরে বখাটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ৬২ কিশোরী ও নারী আত্মহত্যা করেছেন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয় অন্তত ৮২১ জন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এসব তথ্যগুলো শুধু উদাহরণ মাত্র। প্রকৃত সংখ্যা আরও ভয়াবহ। যেগুলো গণমাধ্যমে বা বিভিন্ন সংস্থার জরীপে বা হিসাবে আসছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বখাটের উত্ত্যক্তের কারণে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক কিশোরী মেয়ে যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে বখাটের হাতে হয়রানির শিকার হয়ে ১৮ নারী, ২০২০ সালে ১৪ এবং ২০২১ সালে ১২ জন আত্মহত্যা করেন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৬৪ জন। আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বখাটের হয়রানির শিকার হয়ে ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা ১৭ এবং উত্ত্যক্ত হয়েছেন ৮৭ জন। আর ২০০৮ সালে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা ১৪ ও উত্ত্যক্ত হয়েছেন ১৫৭। মহিলা পরিষদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য পেয়েছে।

এদিকে বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক জরিপ বলছে, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী কখনো না কখনো উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি।

মানবাধিকারকর্মী ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নারীদের যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করতে হবে। ছেলেদের সুমানসিকতা গড়ায় মা-বাবাকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর আইনগতভাবে শাস্তির বিষয়টিও কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

আসকের পরিচালক ও মানবাধিকার আইনজীবী নীনা গোস্বামী বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নারীরা উত্ত্যক্তের শিকার হন। এগুলো খুব কমই সামনে আসে। আর মামলার বেশিরভাগেরই রায় আসে না। কারণ এগুলোর সাক্ষী পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে অবশ্যই সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বখাটেরা শাস্তির আওতায় এলে উত্ত্যক্তকরণের সংখ্যা কিছুটা কমবে।

স্কুলের ছাত্রীদের উত্যক্ত, শিক্ষিকাদের ওপর গোবরপানি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ জানান, করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রের নেতৃত্বে বখাটেরা একই স্কুুলের ছাত্রীদের উত্যক্ত করেছে। বাধা দেয়ার কারণে চার শিক্ষিকার গায়ে তারা গোবর পানি ছিটিয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় উত্তাল। শিক্ষার্থীরা সাময়িক পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে নেমেছে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সীমান্তসহ চার বখাটে একই বিদ্যালয়ের সহপাঠী দুই ছাত্রীকে প্রায়ই রাস্তায় উত্যক্ত করতো বলে জানা গেছে। গত রোববার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলাকালে সীমান্তসহ অন্য বখাটেরা বিদ্যালয়ে ঢুকে মোবাইল ফোনে ছাত্রীদের ছবি তুলতে থাকে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষিকা তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। এদিন বিকালে লাভলী রাণী পাল ও শাহনাজ পারভীনসহ চার শিক্ষিকা অটোরিকশা চড়ে বাসায় ফেরার পথে সীমান্তের নেতৃত্বে বখাটেরা বিদ্যালয়ের অদূরে তেলিয়াপাড়া এলাকায় তাদের গতিরোধ করে গায়ে গোবরপানি ছিটিয়ে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গতকাল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্ত তারই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তবে সে পরীক্ষা দিচ্ছে না। তার সঙ্গে অন্যরা বাইরের বখাটে। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। করিমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। তবে লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় এখনও কেউ আটক হয়নি।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

বখাটের যন্ত্রণায় সাড়ে চার বছরে ৬২ কিশোরী ও নারীর আত্মহত্যা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কিশোরগঞ্জ : শিক্ষকদের অপমান ও ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -সংবাদ

বিগত সাড়ে চার বছরে বখাটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ৬২ কিশোরী ও নারী আত্মহত্যা করেছেন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয় অন্তত ৮২১ জন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এসব তথ্যগুলো শুধু উদাহরণ মাত্র। প্রকৃত সংখ্যা আরও ভয়াবহ। যেগুলো গণমাধ্যমে বা বিভিন্ন সংস্থার জরীপে বা হিসাবে আসছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বখাটের উত্ত্যক্তের কারণে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক কিশোরী মেয়ে যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে বখাটের হাতে হয়রানির শিকার হয়ে ১৮ নারী, ২০২০ সালে ১৪ এবং ২০২১ সালে ১২ জন আত্মহত্যা করেন। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৬৪ জন। আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বখাটের হয়রানির শিকার হয়ে ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা ১৭ এবং উত্ত্যক্ত হয়েছেন ৮৭ জন। আর ২০০৮ সালে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা ১৪ ও উত্ত্যক্ত হয়েছেন ১৫৭। মহিলা পরিষদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য পেয়েছে।

এদিকে বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক জরিপ বলছে, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী কখনো না কখনো উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি।

মানবাধিকারকর্মী ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নারীদের যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করতে হবে। ছেলেদের সুমানসিকতা গড়ায় মা-বাবাকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর আইনগতভাবে শাস্তির বিষয়টিও কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

আসকের পরিচালক ও মানবাধিকার আইনজীবী নীনা গোস্বামী বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নারীরা উত্ত্যক্তের শিকার হন। এগুলো খুব কমই সামনে আসে। আর মামলার বেশিরভাগেরই রায় আসে না। কারণ এগুলোর সাক্ষী পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে অবশ্যই সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বখাটেরা শাস্তির আওতায় এলে উত্ত্যক্তকরণের সংখ্যা কিছুটা কমবে।

স্কুলের ছাত্রীদের উত্যক্ত, শিক্ষিকাদের ওপর গোবরপানি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ জানান, করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রের নেতৃত্বে বখাটেরা একই স্কুুলের ছাত্রীদের উত্যক্ত করেছে। বাধা দেয়ার কারণে চার শিক্ষিকার গায়ে তারা গোবর পানি ছিটিয়েছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় উত্তাল। শিক্ষার্থীরা সাময়িক পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে নেমেছে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সীমান্তসহ চার বখাটে একই বিদ্যালয়ের সহপাঠী দুই ছাত্রীকে প্রায়ই রাস্তায় উত্যক্ত করতো বলে জানা গেছে। গত রোববার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলাকালে সীমান্তসহ অন্য বখাটেরা বিদ্যালয়ে ঢুকে মোবাইল ফোনে ছাত্রীদের ছবি তুলতে থাকে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষিকা তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। এদিন বিকালে লাভলী রাণী পাল ও শাহনাজ পারভীনসহ চার শিক্ষিকা অটোরিকশা চড়ে বাসায় ফেরার পথে সীমান্তের নেতৃত্বে বখাটেরা বিদ্যালয়ের অদূরে তেলিয়াপাড়া এলাকায় তাদের গতিরোধ করে গায়ে গোবরপানি ছিটিয়ে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গতকাল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্ত তারই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তবে সে পরীক্ষা দিচ্ছে না। তার সঙ্গে অন্যরা বাইরের বখাটে। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। করিমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। তবে লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় এখনও কেউ আটক হয়নি।