আহমেদ সাইদুল একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গত ১০ বছরে তার বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু তারপরও সংসারে আসেনি সচ্ছলতা। সব সময় ভাবতেন বেতন বাড়লে আর টানাটানি থাকবে না। সন্তানদের অনেক আবদার পূরণ করতে পারবেন। নিজের কিছু স্বপ্নকে পূরণ করবেন। কিন্তু দশক পেরিয়ে গেলেও সাইদুলের স্বপ্ন আর বাস্তবের মুখ দেখে না।
নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার বেতন সেভাবে না বাড়ায় বরাবর ঘাটতিতেই রয়ে গেছে সাইদুলের পরিবার। তার পরিবারের সদস্যরা কেউই অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনার কথা ভাবতেও পারেন না। শুধু প্রয়োজনটুকু পূরণ করতেই যেখানে ‘হিমশিম’ খেতে হয়, তখন অন্য পণ্য কেনা তাদের জন্য ‘বিলাসিতা’ বলে জানান সাইদুল।
আহমেদ সাইদুল বলেন, ‘মধ্যবিত্ত বলে কিছু আর থাকবে না। মধ্যবিত্ত দরিদ্র হয়ে যাবে। দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়া, বাসা ভাড়া আর খাওয়া দাওয়া এই নিয়ে আমাদের বাজেট। প্রতি বছর বাজেট ফেইল। সঞ্চয় বলে কিছু নেই। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি কেউ অসুস্থ হলে, তার চিকিৎসা করাতে পারবো তো!’
আবদুর রহমান, সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসরে। লেখাপড়া শেষ করার আগেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরই পরিচিত এক ছেলের সঙ্গে। ছেলে জীবন রহমান একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে লেখাপড়া করছে। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ, বাসা ভাড়া, তাদের ওষুধ আর খাওয়া খরচ জোগাতে তিনি প্রতি মাসেই ধার করেন। তাকে সাহায্য করতে ছেলে জীবন একটা চেইন শপে পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে। মেয়ের ঘরের নাতনিকে দেখতে যাবেন কয়েকদিন ধরে ভাবছেন, কিন্তু কী নিয়ে যাবেন, জিনিসপত্রের দাম ‘এত বেড়ে গেছে’ সাহসই করতে পারছেন না, বললেন আবদুর রহমান।
আহমেদ সাইদুল ও আবদুর রহমান দু’জনই বেশ সচেতন বাজার ব্যবস্থা নিয়ে। কেমন বাজেট হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে টিভিতে দেখেছেন একটা মুদি দোকানে বসে। পুরো বাজেট ঘোষণার আগেই অনলাইন পোর্টালের সুবাদে তারা জেনে যান কিসের দাম বাড়লো আর কিসের কমলো।
আহমেদ সাইদুল বলেন, ‘কতদিন থেকে বাচ্চাদের একটা ল্যাপটপ কিনে দেব ভাবছিলাম। বেড়ে গেলো দাম। ল্যাপটপ তো এখন লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
‘আমাদের যা দরকার সেসব কিছুরই দেখি দাম বেড়ে যাচ্ছে,’ ক্ষোভ আবদুর রহমানের। ‘এক সন্তান নিয়ে সংসার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেই না। এত জিনিষের দাম। কেউ কিছু বলার নেই, দেখার নেই। যাদের টাকা আছে তাদের সমস্যা নেই, যাদের টাকা কম তাদেরও সমস্যা নেই, সব সমস্যা আমাদের মধ্যবিত্তদের।’
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই বাজেট মধ্যবিত্তদের জন্য কতটা সুখবর দিল এ প্রশ্নে রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলছেন ‘অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহ না ফিরলে মধ্যবিত্তরা টিকতে পারবে না।’ তার মতে ভোক্তা হিসেবে মধ্যবিত্তের ওপর ‘একটু চাপ থাকবে’, তবে কৃষি এবং মাঝারি ও দেশীয় শিল্পে যেসব ছাড় দেয়া হয়েছে তার ‘কিছু ফল’ মধ্যবিত্তরাও পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ সংবাদকে বলেন, ‘মধ্যবিত্তদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কারণ মধ্যবিত্ত চাকরীজীবী যারা তাদের ইনকাম হলো ফিক্সড। কিন্তু বাজারে সব কিছু ২০% হারে বেড়ে গেছে। কেউ কম খেয়ে অন্য খাতে কম ব্যয় করে জীবন নির্বাহ করছে। মধ্যবিত্তদের নিয়ে বাজেটে আরও ভাবার অবকাশ ছিল।’
বিনায়ক সেন সংবাদকে বলেন, ‘মধ্যবিত্ত বলতে তো শুধু চাকরীজীবী মানুষকে বোঝায় না। মধ্যবিত্ত বলতে মাঝারি আয়ের কৃষকও বোঝায়, এসএমই’র (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) মালিককেও বুঝায়, আপনার-আমার মতোন যারা তাদেরকেও বোঝায়। মধ্যবিত্ত তো শুধু কনজ্যুমার না প্রডিউসারও। কনজ্যুমার হিসেবে এই বাজেটে একরকম চাপ থাকবে, প্রডিউসার হিসেবে অন্য রকম। কনজ্যুমারদের একটু চাপ থাকলেও প্রডিউসাররা কিন্তু ভালো দাম পাবে। যেমন কৃষকরা এবার ভালো দাম পাবে। মাঝারি শিল্পের জন্য অনেক প্রণোদনা আছে। দেশীয় শিল্পে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে যার প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্তদের ওপর।’
তিনি বলছেন, ‘এ বছর ম্যাক্রো ইকনোমিক স্ট্যাবিলিটি অর্জন করতে হবে। আগের মতো বিলাসী পণ্য আর ব্যবহার করতে পারবেন না ঠিকই। অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল পণ্য ভোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মধ্যবিত্তকে আরও উৎসাহ দেয়ার জন্য ট্যাক্সে উৎসাহ দেয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
বিনায়কের ব্যাখ্যা : ‘যেমন ধরুন ৭৬ লাখ টিআইএনধারী কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দেন না। এরা তো মধ্যবিত্তই। এদের অন্যান্য সেবার সঙ্গে লিংক করা হলে মধ্যবিত্তরা একটু যতœবান হবেন ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রে। ট্যাক্স না দেয়ার কারণে আপামর জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা বাড়ানো যাচ্ছে না। নগর দরিদ্রদের জন্য রেশনিং চালু করা যাচ্ছে না, স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাচ্ছে না। মধ্যবিত্তরা হচ্ছে আমাদের জাতীয় বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। এই জায়গায় তারা তাদের উৎপাদনমুখী ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারে, নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।’
‘মধ্যবিত্তদের আরেকটু উৎপাদনমুখী, ডিসিপ্লিনিড, ঘরমুখী, বিনিয়োগমুখী হতে হবে, শুধুমাত্র ভোগ বিলাসী হবে না এই বাজেটে। এই বাজেটে মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক ভূমিকা আরও বাড়াবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ আছে। সেটা এই দুর্দশার বছরে কিছুটা ভোগাবে, তাই সবাইকেই কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে।’
এমএম আকাশ বলছেন, ‘মধ্যবিত্তকে অব্যাহতি দিতে হলে পরে এই মধ্যবিত্তের ব্যবহৃত ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমাতে হবে। সেটা কমানোর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই। কিছু কিছু উচ্চ মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এমন কিছু দ্রব্যের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
‘মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের সুযোগ দিতে হলে বাজারটাকে মুক্ত-বাজারের রীতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে রেশনিং করা, ন্যায্যমূল্যের দোকানের ব্যবস্থা করা অথবা ওপেন মার্কেট খোলা জরুরি,’ বললেন অর্থনীতির এই শিক্ষক, যিনি কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির একজন নেতা।
আকাশের ব্যাখ্যা, ‘তৃতীয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের এক তৃতীয়াংশ নিজের কাছে এনে যখন দাম বাড়বে তখন সরকার নিজে ওইটা বিক্রি করবে আর যখন দাম কমবে তখন কিনে নেবে উৎপাদনকারীদের বাছ থেকে। যাতে উৎপাদক-ভোক্তা উভয়ই রক্ষা পায়। আর দরিদ্র লোকদের জন্য তো সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য সেটা অন্য বিষয়। অন্য পদ্ধতিতে করতে হবে। বড়লোকদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে গরিবদের দিতে হবে।
মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩
জাহিদা পারভেজ ছন্দা
আহমেদ সাইদুল একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গত ১০ বছরে তার বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু তারপরও সংসারে আসেনি সচ্ছলতা। সব সময় ভাবতেন বেতন বাড়লে আর টানাটানি থাকবে না। সন্তানদের অনেক আবদার পূরণ করতে পারবেন। নিজের কিছু স্বপ্নকে পূরণ করবেন। কিন্তু দশক পেরিয়ে গেলেও সাইদুলের স্বপ্ন আর বাস্তবের মুখ দেখে না।
নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার বেতন সেভাবে না বাড়ায় বরাবর ঘাটতিতেই রয়ে গেছে সাইদুলের পরিবার। তার পরিবারের সদস্যরা কেউই অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনার কথা ভাবতেও পারেন না। শুধু প্রয়োজনটুকু পূরণ করতেই যেখানে ‘হিমশিম’ খেতে হয়, তখন অন্য পণ্য কেনা তাদের জন্য ‘বিলাসিতা’ বলে জানান সাইদুল।
আহমেদ সাইদুল বলেন, ‘মধ্যবিত্ত বলে কিছু আর থাকবে না। মধ্যবিত্ত দরিদ্র হয়ে যাবে। দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়া, বাসা ভাড়া আর খাওয়া দাওয়া এই নিয়ে আমাদের বাজেট। প্রতি বছর বাজেট ফেইল। সঞ্চয় বলে কিছু নেই। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি কেউ অসুস্থ হলে, তার চিকিৎসা করাতে পারবো তো!’
আবদুর রহমান, সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসরে। লেখাপড়া শেষ করার আগেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরই পরিচিত এক ছেলের সঙ্গে। ছেলে জীবন রহমান একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে লেখাপড়া করছে। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ, বাসা ভাড়া, তাদের ওষুধ আর খাওয়া খরচ জোগাতে তিনি প্রতি মাসেই ধার করেন। তাকে সাহায্য করতে ছেলে জীবন একটা চেইন শপে পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে। মেয়ের ঘরের নাতনিকে দেখতে যাবেন কয়েকদিন ধরে ভাবছেন, কিন্তু কী নিয়ে যাবেন, জিনিসপত্রের দাম ‘এত বেড়ে গেছে’ সাহসই করতে পারছেন না, বললেন আবদুর রহমান।
আহমেদ সাইদুল ও আবদুর রহমান দু’জনই বেশ সচেতন বাজার ব্যবস্থা নিয়ে। কেমন বাজেট হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে টিভিতে দেখেছেন একটা মুদি দোকানে বসে। পুরো বাজেট ঘোষণার আগেই অনলাইন পোর্টালের সুবাদে তারা জেনে যান কিসের দাম বাড়লো আর কিসের কমলো।
আহমেদ সাইদুল বলেন, ‘কতদিন থেকে বাচ্চাদের একটা ল্যাপটপ কিনে দেব ভাবছিলাম। বেড়ে গেলো দাম। ল্যাপটপ তো এখন লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
‘আমাদের যা দরকার সেসব কিছুরই দেখি দাম বেড়ে যাচ্ছে,’ ক্ষোভ আবদুর রহমানের। ‘এক সন্তান নিয়ে সংসার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেই না। এত জিনিষের দাম। কেউ কিছু বলার নেই, দেখার নেই। যাদের টাকা আছে তাদের সমস্যা নেই, যাদের টাকা কম তাদেরও সমস্যা নেই, সব সমস্যা আমাদের মধ্যবিত্তদের।’
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই বাজেট মধ্যবিত্তদের জন্য কতটা সুখবর দিল এ প্রশ্নে রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলছেন ‘অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহ না ফিরলে মধ্যবিত্তরা টিকতে পারবে না।’ তার মতে ভোক্তা হিসেবে মধ্যবিত্তের ওপর ‘একটু চাপ থাকবে’, তবে কৃষি এবং মাঝারি ও দেশীয় শিল্পে যেসব ছাড় দেয়া হয়েছে তার ‘কিছু ফল’ মধ্যবিত্তরাও পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ সংবাদকে বলেন, ‘মধ্যবিত্তদের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কারণ মধ্যবিত্ত চাকরীজীবী যারা তাদের ইনকাম হলো ফিক্সড। কিন্তু বাজারে সব কিছু ২০% হারে বেড়ে গেছে। কেউ কম খেয়ে অন্য খাতে কম ব্যয় করে জীবন নির্বাহ করছে। মধ্যবিত্তদের নিয়ে বাজেটে আরও ভাবার অবকাশ ছিল।’
বিনায়ক সেন সংবাদকে বলেন, ‘মধ্যবিত্ত বলতে তো শুধু চাকরীজীবী মানুষকে বোঝায় না। মধ্যবিত্ত বলতে মাঝারি আয়ের কৃষকও বোঝায়, এসএমই’র (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) মালিককেও বুঝায়, আপনার-আমার মতোন যারা তাদেরকেও বোঝায়। মধ্যবিত্ত তো শুধু কনজ্যুমার না প্রডিউসারও। কনজ্যুমার হিসেবে এই বাজেটে একরকম চাপ থাকবে, প্রডিউসার হিসেবে অন্য রকম। কনজ্যুমারদের একটু চাপ থাকলেও প্রডিউসাররা কিন্তু ভালো দাম পাবে। যেমন কৃষকরা এবার ভালো দাম পাবে। মাঝারি শিল্পের জন্য অনেক প্রণোদনা আছে। দেশীয় শিল্পে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে যার প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্তদের ওপর।’
তিনি বলছেন, ‘এ বছর ম্যাক্রো ইকনোমিক স্ট্যাবিলিটি অর্জন করতে হবে। আগের মতো বিলাসী পণ্য আর ব্যবহার করতে পারবেন না ঠিকই। অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল পণ্য ভোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মধ্যবিত্তকে আরও উৎসাহ দেয়ার জন্য ট্যাক্সে উৎসাহ দেয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
বিনায়কের ব্যাখ্যা : ‘যেমন ধরুন ৭৬ লাখ টিআইএনধারী কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দেন না। এরা তো মধ্যবিত্তই। এদের অন্যান্য সেবার সঙ্গে লিংক করা হলে মধ্যবিত্তরা একটু যতœবান হবেন ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রে। ট্যাক্স না দেয়ার কারণে আপামর জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা বাড়ানো যাচ্ছে না। নগর দরিদ্রদের জন্য রেশনিং চালু করা যাচ্ছে না, স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাচ্ছে না। মধ্যবিত্তরা হচ্ছে আমাদের জাতীয় বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। এই জায়গায় তারা তাদের উৎপাদনমুখী ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারে, নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।’
‘মধ্যবিত্তদের আরেকটু উৎপাদনমুখী, ডিসিপ্লিনিড, ঘরমুখী, বিনিয়োগমুখী হতে হবে, শুধুমাত্র ভোগ বিলাসী হবে না এই বাজেটে। এই বাজেটে মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক ভূমিকা আরও বাড়াবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ আছে। সেটা এই দুর্দশার বছরে কিছুটা ভোগাবে, তাই সবাইকেই কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে।’
এমএম আকাশ বলছেন, ‘মধ্যবিত্তকে অব্যাহতি দিতে হলে পরে এই মধ্যবিত্তের ব্যবহৃত ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমাতে হবে। সেটা কমানোর কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই। কিছু কিছু উচ্চ মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এমন কিছু দ্রব্যের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
‘মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের সুযোগ দিতে হলে বাজারটাকে মুক্ত-বাজারের রীতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে রেশনিং করা, ন্যায্যমূল্যের দোকানের ব্যবস্থা করা অথবা ওপেন মার্কেট খোলা জরুরি,’ বললেন অর্থনীতির এই শিক্ষক, যিনি কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির একজন নেতা।
আকাশের ব্যাখ্যা, ‘তৃতীয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের এক তৃতীয়াংশ নিজের কাছে এনে যখন দাম বাড়বে তখন সরকার নিজে ওইটা বিক্রি করবে আর যখন দাম কমবে তখন কিনে নেবে উৎপাদনকারীদের বাছ থেকে। যাতে উৎপাদক-ভোক্তা উভয়ই রক্ষা পায়। আর দরিদ্র লোকদের জন্য তো সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য সেটা অন্য বিষয়। অন্য পদ্ধতিতে করতে হবে। বড়লোকদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে গরিবদের দিতে হবে।