বিএম ডিপোর মালিক পক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ : স্কপ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বেসরকারি বিএম ডিপো কন্টেইনারে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) চট্টগ্রাম। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় তারা। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সব কন্টেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয়।

স্কপ’র নেতৃবৃন্দের দাবি, কনটেইনারে ক্যামিকেল রাখার বিষয়টি বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসকেও জানায়নি। তথ্য গোপন করে মালিকপক্ষ যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা, বরং তাদের বাঁচানোর নানা প্রক্রিয়া, ফন্দিফিকির আমরা অবলোকন করছি। ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে ডিপোর আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কপ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক তপন দত্ত বলেন, দেশে কোনোদিন কর্মক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনায় দায়ী মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেও প্রশাসন তাতে বাধা দেয়।

শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নিচ্ছেই না, প্রতিবাদ করতে চাইলে তাতে বাধা দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। রাষ্ট্রের অবস্থান যে ব্যবসায়ী-ধনী শ্রেণির পক্ষে তা পরিষ্কার হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর এবং আবাসিক এলাকা থেকে সকল কন্টেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে শ্রমিক নেতা সফর আলী বলেন, কন্টেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতি নিরুপণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। উক্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কন্টেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী কন্টেইনার ডিপোগুলো পরিচালনার উদ্যোগ নেয়ার লক্ষে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে উল্লেখ করে স্কপ নেতারা বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে শ্রমিক হতাহতের প্রতিবাদে আমরা গত ৮ জুন প্রেসক্লাবের সামনে শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চেয়ে পুলিশকে জানিয়ে চিঠি দিয়েও পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা করতে পারিনি। অথচ সংবিধানে শ্রমিক হতাহতসহ যেকোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধ প্রতিবাদ জানানো তথা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।

হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরণ করে কন্টেইনার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের চিকিৎসাকালীন বেতন ছুটিসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের মধ্যে কেউ যদি স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে আজীবন আয় এবং ভোগান্তি হিসাব করে সমপরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আংশিক পঙ্গু হলে তাদের পুনর্বাসনসহ অঙ্গহানি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক তপন দত্ত, যুগ্ম সমন্বয়ক নাজিম উদ্দীনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর
বাজেটেও ‘ম্রিয়মাণ’ মধ্যবিত্তের স্বপ্ন
১৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস
প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ভয়ংকর অপরাধ, জামিনের প্রশ্নই উঠে না : হাইকোর্ট
জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যেন জাদুর কাঠির সম্পর্ক রয়েছে : সুজন
সাংবাদিক প্রদীপ হত্যা, মূল অভিযুক্ত সোহাগ ঢাকায় গ্রেপ্তার
চিকিৎসককে অব্যাহতি, দুই নার্সকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন
সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-বিহারি সংঘর্ষ, গুলি
ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের তথ্য চেয়েছে মাউশি
ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলিতে কলেজছাত্র নিহত : ৫ জন গ্রেপ্তার
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশের হাড়গোড় উদ্ধার
কৃত্রিম পায়ে শিশু জান্নাত আবার হাঁটার স্বপ্ন দেখছে

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

বিএম ডিপোর মালিক পক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ : স্কপ

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বেসরকারি বিএম ডিপো কন্টেইনারে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) চট্টগ্রাম। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় তারা। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সব কন্টেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয়।

স্কপ’র নেতৃবৃন্দের দাবি, কনটেইনারে ক্যামিকেল রাখার বিষয়টি বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসকেও জানায়নি। তথ্য গোপন করে মালিকপক্ষ যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা, বরং তাদের বাঁচানোর নানা প্রক্রিয়া, ফন্দিফিকির আমরা অবলোকন করছি। ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে ডিপোর আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কপ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক তপন দত্ত বলেন, দেশে কোনোদিন কর্মক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনায় দায়ী মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেও প্রশাসন তাতে বাধা দেয়।

শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নিচ্ছেই না, প্রতিবাদ করতে চাইলে তাতে বাধা দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। রাষ্ট্রের অবস্থান যে ব্যবসায়ী-ধনী শ্রেণির পক্ষে তা পরিষ্কার হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর এবং আবাসিক এলাকা থেকে সকল কন্টেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে শ্রমিক নেতা সফর আলী বলেন, কন্টেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতি নিরুপণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। উক্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে কন্টেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী কন্টেইনার ডিপোগুলো পরিচালনার উদ্যোগ নেয়ার লক্ষে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে উল্লেখ করে স্কপ নেতারা বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে শ্রমিক হতাহতের প্রতিবাদে আমরা গত ৮ জুন প্রেসক্লাবের সামনে শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চেয়ে পুলিশকে জানিয়ে চিঠি দিয়েও পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা করতে পারিনি। অথচ সংবিধানে শ্রমিক হতাহতসহ যেকোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধ প্রতিবাদ জানানো তথা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।

হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরণ করে কন্টেইনার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের চিকিৎসাকালীন বেতন ছুটিসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের মধ্যে কেউ যদি স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে আজীবন আয় এবং ভোগান্তি হিসাব করে সমপরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আংশিক পঙ্গু হলে তাদের পুনর্বাসনসহ অঙ্গহানি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক তপন দত্ত, যুগ্ম সমন্বয়ক নাজিম উদ্দীনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।