প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ভয়ংকর অপরাধ, জামিনের প্রশ্নই উঠে না : হাইকোর্ট

প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ‘ভয়ংকর, গুরুতর ও জঘন্য’ অপরাধ মন্তব্য করে উচ্চ আদালত বলেছে, যারা এই কাজে জড়িত তাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় ফাতেমা খাতুনের জামিন বিষয়ে রুল খারিজ করে গতকাল রায় দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে ফাতেমার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

এ সময় আদালত বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি জঘন্য অপরাধ, যারা এই কাজে জড়িত তাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’ আদালত আরও বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের জামিন দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তাদের জেলে থাকতে হবে।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের পুরঃকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রউফ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানো হয়। সেই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন।

পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে গেলে তিনি ফোনে ছাত্রলীগের নেতা তরিকুলকে জানান যে এম আবদুস সালাম আজাদ কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অনুমোদন পাননি।

এরপর তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের করে ফরহাদ নামে একজনের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। সেই নথিতে ড. এম এনামুল হকের নামে পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন তরিকুল। একইভাবে অধ্যাপক মো. আবদুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামে পাশে টিক চিহ্ন দেন তিনি। পরে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

ওই নথি হস্তান্তরের আগে ফাতেমা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন এবং আরেক দফায় তার ছেলের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেন বলে মামলায় বলা হয়।

তবে এক পর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। জালিয়াতির ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদি হয়ে গত ৫ মে মামলা করেন।

মামলায় আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ।

আসামিদের মধ্যে তরিকুলসহ চার জন অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন, তবে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডোর এম আবদুস সালাম আজাদ পলাতক।

এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডেসপাস রাইটার মো. রুবেলের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে দুদককে মামলাটির তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি দেশের বাইরে থাকলে, তাকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করতে বলে আদালত।

পরবর্তী সময়ে একই ঘটনায় করা দুই মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারি ফাতেমা খাতুন। পরে আদালত তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ভয়ংকর অপরাধ, জামিনের প্রশ্নই উঠে না : হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ‘ভয়ংকর, গুরুতর ও জঘন্য’ অপরাধ মন্তব্য করে উচ্চ আদালত বলেছে, যারা এই কাজে জড়িত তাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় ফাতেমা খাতুনের জামিন বিষয়ে রুল খারিজ করে গতকাল রায় দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে ফাতেমার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

এ সময় আদালত বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি জঘন্য অপরাধ, যারা এই কাজে জড়িত তাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’ আদালত আরও বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের জামিন দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তাদের জেলে থাকতে হবে।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের পুরঃকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রউফ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানো হয়। সেই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন।

পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে গেলে তিনি ফোনে ছাত্রলীগের নেতা তরিকুলকে জানান যে এম আবদুস সালাম আজাদ কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অনুমোদন পাননি।

এরপর তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের করে ফরহাদ নামে একজনের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। সেই নথিতে ড. এম এনামুল হকের নামে পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন তরিকুল। একইভাবে অধ্যাপক মো. আবদুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামে পাশে টিক চিহ্ন দেন তিনি। পরে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

ওই নথি হস্তান্তরের আগে ফাতেমা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন এবং আরেক দফায় তার ছেলের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেন বলে মামলায় বলা হয়।

তবে এক পর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। জালিয়াতির ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদি হয়ে গত ৫ মে মামলা করেন।

মামলায় আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ।

আসামিদের মধ্যে তরিকুলসহ চার জন অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন, তবে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডোর এম আবদুস সালাম আজাদ পলাতক।

এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডেসপাস রাইটার মো. রুবেলের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে দুদককে মামলাটির তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি দেশের বাইরে থাকলে, তাকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করতে বলে আদালত।

পরবর্তী সময়ে একই ঘটনায় করা দুই মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারি ফাতেমা খাতুন। পরে আদালত তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।