চিকিৎসককে অব্যাহতি, দুই নার্সকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর পেটের ভেতরে গজ রেখে সেলাই করার ঘটনায় অপারেশনকারী চিকিৎসককে বাদ দিয়ে ওয়ার্ডের দুজন স্টাফ নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করে অতঃপর তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এই নার্স দুজনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মস্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যার পর তদন্ত কমিটি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে রোগীর অপারেশন কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় একজন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক তারেক অপারেশন করেছেন।

অপারেশনের পর অধিক রক্তক্ষরণের কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক অতি দ্রুততার সঙ্গে সেলাই করার কারণে গজ পেটের ভেতরে রয়ে গেছে। এজন্য তিনি তদন্ত কমিটির কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। এধরনের কাজের জন্য তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি এমবিবিএস পাশ করে ছয়মাস গাইনি বিভাগে প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন অপারেশনের পর গজ কাটার দায়িত্ব মূলত নার্সদের ওপর। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সিনিয়র স্টাফ নার্স মিঠু রানী দাস সুমি সরকারকে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তাদের জবাব মনপুত না হলে বিভাগিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসারত ও পূর্বে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলেন, অথচ এই প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভুলের জন্য বা সময়মত তাদের কাছ থেকে কোন প্রকারের সেবা না পেলে রোগীদের স্বজনরা যখনই কিছু বলেন তখনই তারা দলবদ্ধভাবে রোগীদেরকে জিম্মি করে হাসপাতালে তাণ্ডব শুরু করেন।

আর এই প্রতিবেদন জমা দেবার পর নার্সদের সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, অপারেশন করেন কে? চিকিৎসক না নার্স। সেলাই করেন কে? নার্সদের দায়িত্ব কি সেলাই করা না চিকিৎসকদের নির্দেশ পালন করা? গজ কাটার দায়িত্ব নার্সদের এ রকম কোন নির্দিষ্ট বিধান কি আছে? তারা মনে করেন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যেহেতু অব্যাহতি দিয়েছেন সেহেতু নার্সদের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, গত ১৬ এপ্রিল রাতে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শীলার সিজারিয়ান অপারেশনের পর কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে। পরে তার অপারেশনের স্থান ব্যান্ডেজ করে শীলাকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলা হলেও পেটে ব্যাথা হবার কারণে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে একটু ব্যথা কমলে হাসপাতাল থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে তার পেটে তীব্র ব্যাথা শুরু হয় এবং ২১ মে পেট ফুটো হয়ে পূঁজ বের হতে শুরু করলে তাকে আবার হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে পুনরায় অপারেশন করা হলে পেটের ভেতরে গজ পাওয়া যায়।

এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘদিন পর রোববার রাতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এদিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রীট দায়ের করা হলে বিচারপতিগণ শীলার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দু সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রায় একমাস পর তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

আরও খবর
বাজেটেও ‘ম্রিয়মাণ’ মধ্যবিত্তের স্বপ্ন
১৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস
বিএম ডিপোর মালিক পক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ : স্কপ
প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালিয়াতি ভয়ংকর অপরাধ, জামিনের প্রশ্নই উঠে না : হাইকোর্ট
জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যেন জাদুর কাঠির সম্পর্ক রয়েছে : সুজন
সাংবাদিক প্রদীপ হত্যা, মূল অভিযুক্ত সোহাগ ঢাকায় গ্রেপ্তার
সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-বিহারি সংঘর্ষ, গুলি
ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের তথ্য চেয়েছে মাউশি
ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলিতে কলেজছাত্র নিহত : ৫ জন গ্রেপ্তার
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশের হাড়গোড় উদ্ধার
কৃত্রিম পায়ে শিশু জান্নাত আবার হাঁটার স্বপ্ন দেখছে

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

বরিশাল মেডিকেলে রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

চিকিৎসককে অব্যাহতি, দুই নার্সকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর পেটের ভেতরে গজ রেখে সেলাই করার ঘটনায় অপারেশনকারী চিকিৎসককে বাদ দিয়ে ওয়ার্ডের দুজন স্টাফ নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করে অতঃপর তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এই নার্স দুজনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মস্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যার পর তদন্ত কমিটি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে রোগীর অপারেশন কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় একজন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক তারেক অপারেশন করেছেন।

অপারেশনের পর অধিক রক্তক্ষরণের কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক অতি দ্রুততার সঙ্গে সেলাই করার কারণে গজ পেটের ভেতরে রয়ে গেছে। এজন্য তিনি তদন্ত কমিটির কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। এধরনের কাজের জন্য তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি এমবিবিএস পাশ করে ছয়মাস গাইনি বিভাগে প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন অপারেশনের পর গজ কাটার দায়িত্ব মূলত নার্সদের ওপর। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সিনিয়র স্টাফ নার্স মিঠু রানী দাস সুমি সরকারকে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তাদের জবাব মনপুত না হলে বিভাগিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসারত ও পূর্বে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলেন, অথচ এই প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভুলের জন্য বা সময়মত তাদের কাছ থেকে কোন প্রকারের সেবা না পেলে রোগীদের স্বজনরা যখনই কিছু বলেন তখনই তারা দলবদ্ধভাবে রোগীদেরকে জিম্মি করে হাসপাতালে তাণ্ডব শুরু করেন।

আর এই প্রতিবেদন জমা দেবার পর নার্সদের সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, অপারেশন করেন কে? চিকিৎসক না নার্স। সেলাই করেন কে? নার্সদের দায়িত্ব কি সেলাই করা না চিকিৎসকদের নির্দেশ পালন করা? গজ কাটার দায়িত্ব নার্সদের এ রকম কোন নির্দিষ্ট বিধান কি আছে? তারা মনে করেন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যেহেতু অব্যাহতি দিয়েছেন সেহেতু নার্সদের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, গত ১৬ এপ্রিল রাতে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শীলার সিজারিয়ান অপারেশনের পর কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে। পরে তার অপারেশনের স্থান ব্যান্ডেজ করে শীলাকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলা হলেও পেটে ব্যাথা হবার কারণে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে একটু ব্যথা কমলে হাসপাতাল থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে তার পেটে তীব্র ব্যাথা শুরু হয় এবং ২১ মে পেট ফুটো হয়ে পূঁজ বের হতে শুরু করলে তাকে আবার হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে পুনরায় অপারেশন করা হলে পেটের ভেতরে গজ পাওয়া যায়।

এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘদিন পর রোববার রাতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এদিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রীট দায়ের করা হলে বিচারপতিগণ শীলার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দু সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রায় একমাস পর তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে।