ভোটযুদ্ধ আজ, কে হচ্ছেন নগর পিতা

১০৫ কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে

কে হচ্ছেন নগর পিতা, এই আলোচনাই এখন নগরজুড়ে। ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না সাধারণ মানুষের মাঝে এমন সংশয় থাকলেও নগরীতে উৎসবের আমেজ। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে টানা ৮ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলবে। এরপরই ফলাফল ঘোষণার পালা। নতুন ইসির জন্য এ নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাই দেশের সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি এখন এই নির্বাচনের দিকে। ফলে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের অধীনে প্রথম নির্বাচনের ইমেজ সৃষ্টির বিষয়ও বটে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কেন্দ্র দখল কিংবা পেশিশক্তির ব্যবহারসহ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ইসির নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ সহস্রাধিক সদস্যের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো নগরী।

এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন কুমিল্লাবাসী। এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে ভোটারসহ প্রার্র্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সব প্রার্থীই। তবে মেয়র হিসেবে যেই নির্বাচিত হোক না কেন নগরীর জলাবদ্ধতা, সন্ত্রাস, মাদক, যানজট অপরিকল্পিত আবাসন সমস্যার সমাধান করে কুমিল্লাকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা।

আজ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন

আজ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুইজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মেয়র পদে প্রার্থী যারা

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন পাঁচজন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুইবারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৬ জন প্রার্থী।

ইভিএমে ভোট

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন ব্যালটে ও দ্বিতীয় নির্বাচন আংশিক কেন্দ্র ইভিএমের মাধ্যমে হলেও এবার ১০৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ ও ইভিএম পদ্ধতির সঙ্গে ভোটারদের সম্যক ধারণা প্রদানের জন্য গত সোমবার সকল ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের এক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

মেয়র প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্রে ভোট দেবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত আজ সকাল ৯টার দিকে ভোট দিবেন নগরীর রানীর দিঘিরপাড়ের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে। দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সকাল ১০টার দিকে ভোট দিবেন নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার নবাব হোচ্ছাম হায়াদার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর রানীর দিঘিরপাড়ের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা কেন্দ্রে সকাল ৮টার দিকে ভোট দিবেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) সকাল ৯টার দিকে তারা নিজ নিজ এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিবেন।

কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম ও সরঞ্জামাদি প্রেরণ

নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সকালে কুমিল্লা জিলা স্কুলের অডিটরিয়াম থেকে ইভিএম ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নগরীর সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। প্রিজাইডিং অফিসাররা ইভিএম মেশিনসহ সরঞ্জামাদি বুঝে নিয়ে তা কেন্দ্রে নিয়ে যান। এসব সরঞ্জামাদি কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়।

নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা নগরী

আজ নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য গত সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ৪১০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৪০টি টিমে ৪০০ জন, ১০৫টি কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। এছাড়া থাকবে ৭৫টি চেকপোস্ট। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক।

ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানা অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন। সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোন সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ভোটের দিন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী। কুমিল্লার র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, এ নির্বাচনে ৪০০ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করবে।

কেউ ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে র‌্যাব কঠোর হস্তে দমন করবে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সিটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব-পুলিশের টহল ও গাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোট হবে শঙ্কামুক্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে। এতে কেউ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোটের মাঠে এতদিন ধরে বিরাজমান সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘেœ ভোট দেয়ারও আহ্বান জানান।

হেভিওয়েট তিন প্রার্থীই জয়লাভে আশাবাদী

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার এতদিন ভোটের মাঠে একে অন্যকে ঘায়েল করার জন্য নানামুখী বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে গতকাল তারা তিনজনই গণমাধ্যমসহ নেতাকর্মীদের ভোটযুদ্ধে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং

ভোটের আগের দিন গতকাল সকালে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা প্রায় ৪ হাজার সদস্য ব্রিফিং নেন। ব্রিফিং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানে সুচারুভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে প্রত্যেককে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ সময় তিনি তাদের নানা দিকনির্দেশনা দেন। তিনি আরও বলেন, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহীম, রাজন দাস, সোহান সরকারসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা।

ছুটি

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, ভোটের দিন সেসব প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা ভোটার তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আসছেন ৯ কর্মকর্তা নির্বাচন সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ের ৯ কর্মকর্তা কুমিল্লায় আসছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইতোমধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন।

যেখান থেকে ফলাফল

নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এখান থেকে বেসরকারিভাবে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

সিটি করপোরেশনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাদদেশে গোমতী নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠখ্যাত দেশের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে এ জেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল কুমিল্লা পৌরসভা। কালের ক্রমবিবর্তনে কুমিল্লা পৌরসভাকে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ সিটি করপোরেশনের আয়তন ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার। ইতিপূর্বে ২০১২ সালে ও ২০১৭ সালে এ সিটির দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই দুটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এবারও মেয়র পদে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কারো কারো পকেট ভারি হয়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু টেকসই ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা এখানে হয়নি। সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলছেন, তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারের ৭০ ভাগ পূরণ করেছেন। নির্বাচিত হলে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন।

বুধবার, ১৫ জুন ২০২২ , ১ আষাড় ১৪২৮ ১৫ জিলকদ ১৪৪৩

ভোটযুদ্ধ আজ, কে হচ্ছেন নগর পিতা

১০৫ কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

কে হচ্ছেন নগর পিতা, এই আলোচনাই এখন নগরজুড়ে। ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না সাধারণ মানুষের মাঝে এমন সংশয় থাকলেও নগরীতে উৎসবের আমেজ। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে টানা ৮ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলবে। এরপরই ফলাফল ঘোষণার পালা। নতুন ইসির জন্য এ নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাই দেশের সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি এখন এই নির্বাচনের দিকে। ফলে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের অধীনে প্রথম নির্বাচনের ইমেজ সৃষ্টির বিষয়ও বটে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কেন্দ্র দখল কিংবা পেশিশক্তির ব্যবহারসহ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ইসির নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ সহস্রাধিক সদস্যের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো নগরী।

এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন কুমিল্লাবাসী। এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে ভোটারসহ প্রার্র্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সব প্রার্থীই। তবে মেয়র হিসেবে যেই নির্বাচিত হোক না কেন নগরীর জলাবদ্ধতা, সন্ত্রাস, মাদক, যানজট অপরিকল্পিত আবাসন সমস্যার সমাধান করে কুমিল্লাকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা।

আজ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন

আজ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুইজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মেয়র পদে প্রার্থী যারা

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন পাঁচজন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুইবারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৬ জন প্রার্থী।

ইভিএমে ভোট

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন ব্যালটে ও দ্বিতীয় নির্বাচন আংশিক কেন্দ্র ইভিএমের মাধ্যমে হলেও এবার ১০৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ ও ইভিএম পদ্ধতির সঙ্গে ভোটারদের সম্যক ধারণা প্রদানের জন্য গত সোমবার সকল ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের এক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

মেয়র প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্রে ভোট দেবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত আজ সকাল ৯টার দিকে ভোট দিবেন নগরীর রানীর দিঘিরপাড়ের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে। দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সকাল ১০টার দিকে ভোট দিবেন নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার নবাব হোচ্ছাম হায়াদার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর রানীর দিঘিরপাড়ের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা কেন্দ্রে সকাল ৮টার দিকে ভোট দিবেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) সকাল ৯টার দিকে তারা নিজ নিজ এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিবেন।

কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম ও সরঞ্জামাদি প্রেরণ

নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সকালে কুমিল্লা জিলা স্কুলের অডিটরিয়াম থেকে ইভিএম ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নগরীর সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। প্রিজাইডিং অফিসাররা ইভিএম মেশিনসহ সরঞ্জামাদি বুঝে নিয়ে তা কেন্দ্রে নিয়ে যান। এসব সরঞ্জামাদি কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়।

নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা নগরী

আজ নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য গত সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ৪১০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৪০টি টিমে ৪০০ জন, ১০৫টি কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। এছাড়া থাকবে ৭৫টি চেকপোস্ট। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক।

ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানা অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন। সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোন সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ভোটের দিন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী। কুমিল্লার র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, এ নির্বাচনে ৪০০ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করবে।

কেউ ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে র‌্যাব কঠোর হস্তে দমন করবে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সিটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব-পুলিশের টহল ও গাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোট হবে শঙ্কামুক্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে। এতে কেউ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোটের মাঠে এতদিন ধরে বিরাজমান সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘেœ ভোট দেয়ারও আহ্বান জানান।

হেভিওয়েট তিন প্রার্থীই জয়লাভে আশাবাদী

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার এতদিন ভোটের মাঠে একে অন্যকে ঘায়েল করার জন্য নানামুখী বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে গতকাল তারা তিনজনই গণমাধ্যমসহ নেতাকর্মীদের ভোটযুদ্ধে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং

ভোটের আগের দিন গতকাল সকালে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা প্রায় ৪ হাজার সদস্য ব্রিফিং নেন। ব্রিফিং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানে সুচারুভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে প্রত্যেককে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ সময় তিনি তাদের নানা দিকনির্দেশনা দেন। তিনি আরও বলেন, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহীম, রাজন দাস, সোহান সরকারসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা।

ছুটি

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, ভোটের দিন সেসব প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা ভোটার তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আসছেন ৯ কর্মকর্তা নির্বাচন সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ের ৯ কর্মকর্তা কুমিল্লায় আসছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইতোমধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন।

যেখান থেকে ফলাফল

নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এখান থেকে বেসরকারিভাবে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

সিটি করপোরেশনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাদদেশে গোমতী নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠখ্যাত দেশের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে এ জেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল কুমিল্লা পৌরসভা। কালের ক্রমবিবর্তনে কুমিল্লা পৌরসভাকে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ সিটি করপোরেশনের আয়তন ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার। ইতিপূর্বে ২০১২ সালে ও ২০১৭ সালে এ সিটির দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই দুটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এবারও মেয়র পদে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কারো কারো পকেট ভারি হয়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু টেকসই ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা এখানে হয়নি। সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলছেন, তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারের ৭০ ভাগ পূরণ করেছেন। নির্বাচিত হলে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন।