অটিজম ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ঠেকাতে জিনগত ত্রুটি নির্ণয়ে পরীক্ষা চলছে

দেশে প্রথমবারের মতো অটিজম ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ঠেকাতে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের ভ্রƒণের ক্রোমোজোমাল বা জিনগত ত্রুটি নির্ণয় পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগ, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, রেডিওলজি ইমেজিং বিভাগ এবং ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সমন্বয়ে এ পরীক্ষা চালু করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে মায়ের গর্ভে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহ অর্থাৎ বাচ্চার আকার যখন দেড় থেকে দুই ইঞ্চি তখনই মায়ের গর্ভে ভ্রƒণ ডাউন সিনড্রোম ও অন্য ক্রোমোজোম ত্রুটিতে আক্রান্ত কিনা তার ঝুঁকি নির্ণয়ে পরীক্ষা করা যাবে। পরীক্ষায় উচ্চ ঝুঁকি পাওয়া গেলে তা আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় আড়াই লাখ ডাউন শিশু আছে। ডাউন শিশু হলো এক ধরনের ক্রোমোজোমাল এবনরমালিটি। স্বাভাবিক ক্রোমোজোমালের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি ক্রোমোজোম চলে আসলে সেই জেনেটিক এবনরমালিটি হিসেবে জন্ম নেয়।

ভ্রƒণের জেনেটিক ত্রুটির মধ্যে ডাউন সিনড্রম অন্যতম। ডাউন সিনড্রম সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় দিন দিন দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।

বেশিরভাগ ডাউন শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকে বলে অনেক শিশু জন্মের পর মারা যায়। যা নবজাতকের মৃত্যুর হার বাড়ায়। আর যারা বেঁচে থাকে তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সংসার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। প্রসবজনিত জটিলতায় মাতৃ মৃত্যুরোধের বিষয়টি যেভাবে প্রধান্য পেয়েছে। অনাগত শিশুর ডাউন সিনড্রমের মতো জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটির বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় কখোনো আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে গর্ভবতী মায়ের সেবা দেয়ার সময় মাকে ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে ধারণা দেয়া চিকিৎসকদের মধ্যে বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশে তা উপেক্ষিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়। নারী যত অধিক বয়সে মা হবেন, তার সন্তান ডাউন শিশু হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি হবে।

যেমন ২৫ বছর বয়সের প্রতি ১২শ’ জন গর্ভবর্তী মায়ের মধ্যে একজনের। ৩০ বছর বয়সের প্রতি ৯০০ জন মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন গর্ভবর্তী মায়ের মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজন ডাউন শিশু হতে পারে।

আল্ট্রাসনোগ্রাফী করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের শিশুর ঘাড়ের পেছনে তরল মাত্রা, গর্ভবর্তী মায়ের শরীরে প্যাপ এ বিটাএইচসিজি নামক হরমোনের মাত্রা একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

গতকাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ ডা. মিলন হলে এই পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পালন, ব্যাসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিনির তপাদার ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজলসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন ও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭টি বিভাগ ও ১০৭টি কোর্স আছে। কোর্সগুলো আবার ইন্টার রিলেটেড। সব বিভাগ ও কোর্সের শিক্ষক চিকিৎসকরা সমন্বয় করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।

তার মতে, গর্ভবর্তী মায়েদের যদি আমরা আরলি স্ক্রেনিং করতে পারি। তাহলে দেশের বার্ডেন কমানো সম্ভব। বার্ডেনটা কী? অটিস্টিক শিশু বা ডাউন সিনড্রোম রোগী। এসব রোধে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন যে বেশি বয়সে বিয়ে করা ঠিক হবে না। উপযুক্ত বয়সে বিয়ে হওয়া দরকার। ৩০ বছর বয়সে বা পরে যদি বিয়ে হয় তাহলে ৯শ’ জন মায়ের মধ্যে একজন ডাউন শিশু জন্মগ্রহণ করবে।

ভিসি বলেন, ডাউন শিশু চেনার উপায় হলো শিশুর বুদ্ধি কম থাকে। নাক চ্যাপ্টা থাকে। কথা বলা দেরিতে শেখে, বসতে কষ্ট হয়। হাঁটতে দেরি হয়। তাদের জন্মের পর অভিভাবকদের যেমন কষ্ট সমাজেরও তেমন কষ্ট। কোন শিশুর যদি কনজেনিটাল ক্যাডল্যাক নিয়ে জন্ম হয়, তার যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে তার সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত কষ্ট হয়। শিশুর জন্মের আগেই যদি আমরা ডাউন শিশু স্ক্রিনিং করতে পারি তাহলে বাবা-মাসহ সমাজের কিছু মানুষকে কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব।

ভ্রƒণ জন্মের পর আমরা শিশুদের স্ক্রিনিং প্রকল্প শুরু করেছি। গবেষণার কাজে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭টি প্রজেক্ট জমা হয়েছে। ওয়ান থার্ড প্রজেক্ট ভার্সিটি পাবে বলে তিনি আশা করেন।

আরও খবর
নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে সাড়ে ৮ লাখ শিক্ষককে
ডাকাত দল মাস্টার বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৩০ জেলায়
সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের একক প্রচেষ্টায় স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়
নির্বাচনের সময় ঢাকা থেকে মন্ত্রী-এমপিদের চলে যেতে হবে, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর
স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা, পুলিশের এসআই গ্রেপ্তার
আপনি তো ফরিদপুরে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের মূল হোতা
জুরাইনের ঘটনায় যেই অপরাধ করুক, বিচার হবে আপিল বিভাগ
দুর্ধর্ষ আসামি রাসেল, জেল থেকে জামিনে বের হয়ে বন্ধুকে খুন
রাজধানীতে পৃথক স্থান থেকে নারীসহ ৩ জনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝি হত্যার মূল হোতাসহ ২ জন গ্রেপ্তার

বুধবার, ১৫ জুন ২০২২ , ১ আষাড় ১৪২৮ ১৫ জিলকদ ১৪৪৩

অটিজম ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ঠেকাতে জিনগত ত্রুটি নির্ণয়ে পরীক্ষা চলছে

বাকী বিল্লাহ

দেশে প্রথমবারের মতো অটিজম ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ঠেকাতে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের ভ্রƒণের ক্রোমোজোমাল বা জিনগত ত্রুটি নির্ণয় পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগ, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, রেডিওলজি ইমেজিং বিভাগ এবং ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সমন্বয়ে এ পরীক্ষা চালু করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে মায়ের গর্ভে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহ অর্থাৎ বাচ্চার আকার যখন দেড় থেকে দুই ইঞ্চি তখনই মায়ের গর্ভে ভ্রƒণ ডাউন সিনড্রোম ও অন্য ক্রোমোজোম ত্রুটিতে আক্রান্ত কিনা তার ঝুঁকি নির্ণয়ে পরীক্ষা করা যাবে। পরীক্ষায় উচ্চ ঝুঁকি পাওয়া গেলে তা আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় আড়াই লাখ ডাউন শিশু আছে। ডাউন শিশু হলো এক ধরনের ক্রোমোজোমাল এবনরমালিটি। স্বাভাবিক ক্রোমোজোমালের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি ক্রোমোজোম চলে আসলে সেই জেনেটিক এবনরমালিটি হিসেবে জন্ম নেয়।

ভ্রƒণের জেনেটিক ত্রুটির মধ্যে ডাউন সিনড্রম অন্যতম। ডাউন সিনড্রম সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় দিন দিন দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।

বেশিরভাগ ডাউন শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকে বলে অনেক শিশু জন্মের পর মারা যায়। যা নবজাতকের মৃত্যুর হার বাড়ায়। আর যারা বেঁচে থাকে তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সংসার ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। প্রসবজনিত জটিলতায় মাতৃ মৃত্যুরোধের বিষয়টি যেভাবে প্রধান্য পেয়েছে। অনাগত শিশুর ডাউন সিনড্রমের মতো জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটির বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় কখোনো আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে গর্ভবতী মায়ের সেবা দেয়ার সময় মাকে ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে ধারণা দেয়া চিকিৎসকদের মধ্যে বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশে তা উপেক্ষিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়। নারী যত অধিক বয়সে মা হবেন, তার সন্তান ডাউন শিশু হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি হবে।

যেমন ২৫ বছর বয়সের প্রতি ১২শ’ জন গর্ভবর্তী মায়ের মধ্যে একজনের। ৩০ বছর বয়সের প্রতি ৯০০ জন মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন গর্ভবর্তী মায়ের মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজন ডাউন শিশু হতে পারে।

আল্ট্রাসনোগ্রাফী করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের শিশুর ঘাড়ের পেছনে তরল মাত্রা, গর্ভবর্তী মায়ের শরীরে প্যাপ এ বিটাএইচসিজি নামক হরমোনের মাত্রা একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

গতকাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ ডা. মিলন হলে এই পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পালন, ব্যাসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিনির তপাদার ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজলসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন ও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭টি বিভাগ ও ১০৭টি কোর্স আছে। কোর্সগুলো আবার ইন্টার রিলেটেড। সব বিভাগ ও কোর্সের শিক্ষক চিকিৎসকরা সমন্বয় করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।

তার মতে, গর্ভবর্তী মায়েদের যদি আমরা আরলি স্ক্রেনিং করতে পারি। তাহলে দেশের বার্ডেন কমানো সম্ভব। বার্ডেনটা কী? অটিস্টিক শিশু বা ডাউন সিনড্রোম রোগী। এসব রোধে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন যে বেশি বয়সে বিয়ে করা ঠিক হবে না। উপযুক্ত বয়সে বিয়ে হওয়া দরকার। ৩০ বছর বয়সে বা পরে যদি বিয়ে হয় তাহলে ৯শ’ জন মায়ের মধ্যে একজন ডাউন শিশু জন্মগ্রহণ করবে।

ভিসি বলেন, ডাউন শিশু চেনার উপায় হলো শিশুর বুদ্ধি কম থাকে। নাক চ্যাপ্টা থাকে। কথা বলা দেরিতে শেখে, বসতে কষ্ট হয়। হাঁটতে দেরি হয়। তাদের জন্মের পর অভিভাবকদের যেমন কষ্ট সমাজেরও তেমন কষ্ট। কোন শিশুর যদি কনজেনিটাল ক্যাডল্যাক নিয়ে জন্ম হয়, তার যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে তার সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত কষ্ট হয়। শিশুর জন্মের আগেই যদি আমরা ডাউন শিশু স্ক্রিনিং করতে পারি তাহলে বাবা-মাসহ সমাজের কিছু মানুষকে কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব।

ভ্রƒণ জন্মের পর আমরা শিশুদের স্ক্রিনিং প্রকল্প শুরু করেছি। গবেষণার কাজে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭টি প্রজেক্ট জমা হয়েছে। ওয়ান থার্ড প্রজেক্ট ভার্সিটি পাবে বলে তিনি আশা করেন।