রঙের লাইসেন্সে আবাসিক এলাকায় ৫ শতাধিক রাসায়নিক দোকান

নির্দেশনার ৩ বছরেও দোকান সরেনি, বরং বেড়েছে!

কেমিক্যাল থেকে কোথাও বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তারপর আবার পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আগের মতোই সবকিছু চলতে থাকে। এদিকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আমরা বোমার উপরে বসবাস করছি। যেকোন সময় এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ম্যাসাকার হয়ে যেতে পারে।

কথাগুলো বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকুরিজীবী। তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টানবাজার এলাকায় অবস্থিত পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এর বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনের একটি ফ্ল্যাটে। ভবনটির নিচতলায় প্রায় ৪০টি দোকানে বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। এই ভবন ছাড়াও নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক ও জনাকীর্ন টানবাজার এলাকার এসএম মালেহ রোড, লয়েল ট্যাংক রোড, এমএম রায় রোডসহ আশেপাশের এলাকার নতুন-পুরাতন ভবনে অন্তত ৫ শতাধিক দোকান ও গুদামে কেমিক্যাল বিক্রি ও মজুত করা হয়।

গত সোমাবার সরেজমিনে ঘুরে টানবাজারের এসএম মালেহ রোড, লয়েল ট্যাংক রোড, এমএম রায় রোডসহ আশেপাশের এলাকার নতুন-পুরাতন বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ভূগর্ভ ও নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম পাওয়া যায়। এসএম মালেহ রোডের পশ্চিম পাশে পুলিশ ক্লাব মার্কেটের নিচতলায় পারভেজ কালার হাউজ, সৌরভ কালার হাউজ নামে দু’টি কেমিক্যালের দোকান দেখা যায়। দোকান দু’টি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিপরীত পাশে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন বহুতল ভবন পদ্ম সিটি প্লাজা-৪ এর নিচতলায় তালুকদার কেমিক্যালস্, আরবী কালার, নেক্সটজেন কর্পোরেশন, পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এ বিসমিল্লাহ বিউটি কালার, আরিফ ব্রাদার্স ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস্, নিউ মা ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস্, পদ্ম সিটি প্লাজা-২ এ মেসার্স মেহের এন্টারপ্রাইজ, কালার কোড বিডি, সড়কের পূর্ব পাশের খালেক প্লাজার নিচে এমবিএন কালার, আবুল হাসনাত শান্ত মার্কেটে শাহানাজ কালার, জনতা ডাইস অ্যান্ড কালার, মেসার্স মুনলাইট কালার হাউজসহ শতাধিক দোকান দেখা যায়। এছাড়াও লয়েল ট্যাংক রোড ও এমএম রায় রোডে বেশ কয়েকটি কেমিক্যালের গুদাম দেখা গেছে। এসব গুদামের সামনে কেমিক্যালের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব দোকান ও গুদামে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক এসিড, পাওয়ার সিলিকন, হাইড্রোজেন হাইড্রোক্সাইড (কস্টিক সোডা), হাইড্রোজ, অক্সালিক এসিড, সোডিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রিক এসিড, থিনারের মতো দাহ্য কেমিক্যাল বিক্রি ও মজুত করা হয়। এসব কেমিক্যালের দোকান ও গুদামের আশেপাশেই কয়েকশ’ হোসিয়ারি, সুতার কারখানা, গুদাম ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি অধিকাংশ বহুতল ভবনের নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান এবং উপরের তলাগুলোর আবাসিক ফ্ল্যাটে বাস করছেন হাজারো মানুষ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার হিসেব অনুযায়ী, রঙ বিক্রির নামে টানবাজারের এমন ৪ শতাধিক দোকানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। দোকান মালিকরা কোন ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুত ও বিক্রি না করার শর্তে এই লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও বিক্রির সময় তা মানেন না।

লাইসেন্স পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন সুমন সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি ডিপোতে কেমিক্যাল থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তারা টানবাজারের বিভিন্ন দোকান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। একটি দোকানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মজুতও তারা পেয়েছিলেন। এছাড়া সাধারণ রঙের বাইরে আরও কিছু কেমিক্যাল তারা পেয়েছিলেন। পরে ওই দোকানিসহ অন্যদের দাহ্য পদার্থ না রাখার বিষয়ে সতর্ক করেন। তবে অধিকাংশ দোকানির দাবি, তারা কোন দাহ্য কেমিক্যাল রাখেন না। পোশাক কারখানায় ব্যবহৃত সাধারণ রঙ তারা বিক্রি করেন। পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এর কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসের প্রিন্টিং কাজে ব্যবহার করা হয় এমন কেমিক্যাল রাখি। এগুলো দাহ্য না। ডাইং সেকশন নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এসিড, পারঅক্সাইড এসব রাখেন।’

একই দাবি বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড ডাইস কেমিক্যাল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল হকের। তিনি বলেন, দাহ্য কোন কেমিক্যাল টানবাজারে প্রবেশ নিষেধ। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেমিক্যাল বিক্রয়ের দোকানে প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করেন এমন এক কর্মচারী বলেন, ‘টানবাজারের এসব দোকানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে শুরু করে এসিড, পাওয়ার সিলিকন, থিনারের মতো সবধরনের পাওয়ার কেমিক্যালই বিক্রি হয়। কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করলে অস্বীকার করবে। কিনতে গেলে আবার ঠিকই পাবেন। টানবাজারের গলিগুলোতে ঢুকলেই আপনার নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ পাবেন। অর্থ্যাৎ আশেপাশেই পাওয়ার কেমিক্যালের গুদাম আছে।’

সদর উপজেলার ডাইং কারখানার মালিক মো. শাহীন বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তিনি বরাবরই টানবাজার এলাকা থেকে কেনেন। এছাড়া স্পিরিট, থিনারও টানবাজারে পাওয়া যায়।

দাহ্য নয় এমন রঙ বিক্রির কথা বলে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া দাহ্য মজুত রাখার খবর রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাছেও। প্রতিষ্ঠানে দাহ্য পদার্থ আছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করেন সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম। এদিকে দাহ্য পদার্থ মজুত রাখলেও সেই বিষয়ে ব্যবসায়ীরা তথ্য গোপন করায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে, বলছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন। তিনি আরও বলেন, ‘টানবাজার এলাকাটি খুবই জনাকীর্ন। একটির সাথে আরেকটি ভবন লাগোয়া। আর রাস্তাগুলো ততোটা প্রশস্ত নয়। কোথাও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতেও সমস্যা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চুরিহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। ওই সময় ১০ দিন সময় চেয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। এই নির্দেশনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও দোকান সরেনি, বরং দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সংবাদকে বলেন, ‘এসব দোকানের জন্য কিছু লাইসেন্স বিস্ফোরক অধিদপ্তর দেয়, কিছু আমরাও দেই। সিটি করপোরেশনেরও লাইসেন্স কারও কারও রয়েছে। আমরা এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবো। আসলে কী কী ধরনের কেমিক্যাল আছে সেটাও জানা প্রয়োজন। অনেক কিছুই থাকতে পারে। সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে আলোচনা সাপেক্ষে শীঘ্রই কেমিক্যাল কেনা-বেচার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ , ২ আষাড় ১৪২৮ ১৬ জিলকদ ১৪৪৩

রঙের লাইসেন্সে আবাসিক এলাকায় ৫ শতাধিক রাসায়নিক দোকান

নির্দেশনার ৩ বছরেও দোকান সরেনি, বরং বেড়েছে!

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

image

নারায়ণগঞ্জ : আবাসিক এলাকায় দোকানে রাখা রাসায়নিক ভর্তি ড্রাম -সংবাদ

কেমিক্যাল থেকে কোথাও বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তারপর আবার পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আগের মতোই সবকিছু চলতে থাকে। এদিকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আমরা বোমার উপরে বসবাস করছি। যেকোন সময় এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ম্যাসাকার হয়ে যেতে পারে।

কথাগুলো বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকুরিজীবী। তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টানবাজার এলাকায় অবস্থিত পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এর বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনের একটি ফ্ল্যাটে। ভবনটির নিচতলায় প্রায় ৪০টি দোকানে বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। এই ভবন ছাড়াও নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক ও জনাকীর্ন টানবাজার এলাকার এসএম মালেহ রোড, লয়েল ট্যাংক রোড, এমএম রায় রোডসহ আশেপাশের এলাকার নতুন-পুরাতন ভবনে অন্তত ৫ শতাধিক দোকান ও গুদামে কেমিক্যাল বিক্রি ও মজুত করা হয়।

গত সোমাবার সরেজমিনে ঘুরে টানবাজারের এসএম মালেহ রোড, লয়েল ট্যাংক রোড, এমএম রায় রোডসহ আশেপাশের এলাকার নতুন-পুরাতন বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ভূগর্ভ ও নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম পাওয়া যায়। এসএম মালেহ রোডের পশ্চিম পাশে পুলিশ ক্লাব মার্কেটের নিচতলায় পারভেজ কালার হাউজ, সৌরভ কালার হাউজ নামে দু’টি কেমিক্যালের দোকান দেখা যায়। দোকান দু’টি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিপরীত পাশে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন বহুতল ভবন পদ্ম সিটি প্লাজা-৪ এর নিচতলায় তালুকদার কেমিক্যালস্, আরবী কালার, নেক্সটজেন কর্পোরেশন, পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এ বিসমিল্লাহ বিউটি কালার, আরিফ ব্রাদার্স ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস্, নিউ মা ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস্, পদ্ম সিটি প্লাজা-২ এ মেসার্স মেহের এন্টারপ্রাইজ, কালার কোড বিডি, সড়কের পূর্ব পাশের খালেক প্লাজার নিচে এমবিএন কালার, আবুল হাসনাত শান্ত মার্কেটে শাহানাজ কালার, জনতা ডাইস অ্যান্ড কালার, মেসার্স মুনলাইট কালার হাউজসহ শতাধিক দোকান দেখা যায়। এছাড়াও লয়েল ট্যাংক রোড ও এমএম রায় রোডে বেশ কয়েকটি কেমিক্যালের গুদাম দেখা গেছে। এসব গুদামের সামনে কেমিক্যালের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব দোকান ও গুদামে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক এসিড, পাওয়ার সিলিকন, হাইড্রোজেন হাইড্রোক্সাইড (কস্টিক সোডা), হাইড্রোজ, অক্সালিক এসিড, সোডিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রিক এসিড, থিনারের মতো দাহ্য কেমিক্যাল বিক্রি ও মজুত করা হয়। এসব কেমিক্যালের দোকান ও গুদামের আশেপাশেই কয়েকশ’ হোসিয়ারি, সুতার কারখানা, গুদাম ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি অধিকাংশ বহুতল ভবনের নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান এবং উপরের তলাগুলোর আবাসিক ফ্ল্যাটে বাস করছেন হাজারো মানুষ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার হিসেব অনুযায়ী, রঙ বিক্রির নামে টানবাজারের এমন ৪ শতাধিক দোকানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। দোকান মালিকরা কোন ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুত ও বিক্রি না করার শর্তে এই লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও বিক্রির সময় তা মানেন না।

লাইসেন্স পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন সুমন সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি ডিপোতে কেমিক্যাল থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তারা টানবাজারের বিভিন্ন দোকান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। একটি দোকানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মজুতও তারা পেয়েছিলেন। এছাড়া সাধারণ রঙের বাইরে আরও কিছু কেমিক্যাল তারা পেয়েছিলেন। পরে ওই দোকানিসহ অন্যদের দাহ্য পদার্থ না রাখার বিষয়ে সতর্ক করেন। তবে অধিকাংশ দোকানির দাবি, তারা কোন দাহ্য কেমিক্যাল রাখেন না। পোশাক কারখানায় ব্যবহৃত সাধারণ রঙ তারা বিক্রি করেন। পদ্ম সিটি প্লাজা-১ এর কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসের প্রিন্টিং কাজে ব্যবহার করা হয় এমন কেমিক্যাল রাখি। এগুলো দাহ্য না। ডাইং সেকশন নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এসিড, পারঅক্সাইড এসব রাখেন।’

একই দাবি বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড ডাইস কেমিক্যাল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল হকের। তিনি বলেন, দাহ্য কোন কেমিক্যাল টানবাজারে প্রবেশ নিষেধ। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেমিক্যাল বিক্রয়ের দোকানে প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করেন এমন এক কর্মচারী বলেন, ‘টানবাজারের এসব দোকানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে শুরু করে এসিড, পাওয়ার সিলিকন, থিনারের মতো সবধরনের পাওয়ার কেমিক্যালই বিক্রি হয়। কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করলে অস্বীকার করবে। কিনতে গেলে আবার ঠিকই পাবেন। টানবাজারের গলিগুলোতে ঢুকলেই আপনার নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ পাবেন। অর্থ্যাৎ আশেপাশেই পাওয়ার কেমিক্যালের গুদাম আছে।’

সদর উপজেলার ডাইং কারখানার মালিক মো. শাহীন বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তিনি বরাবরই টানবাজার এলাকা থেকে কেনেন। এছাড়া স্পিরিট, থিনারও টানবাজারে পাওয়া যায়।

দাহ্য নয় এমন রঙ বিক্রির কথা বলে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া দাহ্য মজুত রাখার খবর রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাছেও। প্রতিষ্ঠানে দাহ্য পদার্থ আছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করেন সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম। এদিকে দাহ্য পদার্থ মজুত রাখলেও সেই বিষয়ে ব্যবসায়ীরা তথ্য গোপন করায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে, বলছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন। তিনি আরও বলেন, ‘টানবাজার এলাকাটি খুবই জনাকীর্ন। একটির সাথে আরেকটি ভবন লাগোয়া। আর রাস্তাগুলো ততোটা প্রশস্ত নয়। কোথাও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতেও সমস্যা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চুরিহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। ওই সময় ১০ দিন সময় চেয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। এই নির্দেশনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও দোকান সরেনি, বরং দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ সংবাদকে বলেন, ‘এসব দোকানের জন্য কিছু লাইসেন্স বিস্ফোরক অধিদপ্তর দেয়, কিছু আমরাও দেই। সিটি করপোরেশনেরও লাইসেন্স কারও কারও রয়েছে। আমরা এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবো। আসলে কী কী ধরনের কেমিক্যাল আছে সেটাও জানা প্রয়োজন। অনেক কিছুই থাকতে পারে। সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে আলোচনা সাপেক্ষে শীঘ্রই কেমিক্যাল কেনা-বেচার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’