কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

নৌকার রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা

সাক্কুর প্রত্যাখ্যান, শান্তিপূর্ণ ভোট, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা

দিনভর ইভিএমে শন্তিপূর্ণ ভোটের পর ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তার আগে হৈ চৈয়ের মধ্যে কারচুপির সন্দেহের কথা বলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ভোটে দুই মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডিা লড়াই হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১০৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। বিদায়ী মেয়র সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট। গতকাল দিনভর ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণা চলছিল। রাত ৯টা পর্যন্ত ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হয়। তাতে ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু।

সে সময় ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ১০১ কেন্দ্রে মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পান ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী রিফাত পান ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

ভোটের ফলে প্রধান দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

বিএনপি ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া গত দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু রাত পৌনে ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হলে প্রায় একই সময়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতে শ’খানেক সমর্থক। তবে রিফাত সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এই উত্তেজনার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা থমকে যায়। এক পর্যায়ে ফল ঘোষণা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেয়া বিপুল সংখ্যক পুলিশ ধাওয়া দিয়ে বেশ কিছু নৌকার সমর্থককে বের করে দেয়। এর কিছু পর রিটানিং কর্মকর্তা ১০৫টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন।

শুরুতে ‘মুষলধারে বৃষ্টি’ ভোটে কিছুটা বিঘœ ঘটালেও শান্তিপূর্ণভাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন শেষ হয়েছে। ইভিএমের এ নির্বাচনে শুধু কিছু কেন্দ্রে ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় দুর্ভোগের কথা এসেছে। তবে কোথাও বড় কোন গোলযোগ, মারামারি হয়নি বা সহিংসতা।

ভোটের আগে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে উত্তাপ ছড়ালেও গতকাল ভোটের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বড় ধরনের অভিযোগ ছিল না। ভোটের পরিবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেক বড় কোন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। ভোটার উপস্থিতি নিয়েও মোটামুটি সন্তুষ্ট কমিশন।

নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট প্রদান ও গোলযোগের চেষ্টায় ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনকে তিন মাসের সাজা দেয়া হয়। অন্য পাঁচজনকে তিন থেকে এক সপ্তাহের সাজা দেয়া হয়।

সংরাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে পাঁচ বহিরাগতকে সকাল সোয়া ১০টায় আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, বিজিবি ও র?্যাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার জন্য মাইকিং করতে দেখা গেছে।

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং পৌনে ৯টার দিকে একই কেন্দ্রে ভোট দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। অপরদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর হোচ্ছাম হায়দার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিন মেয়র প্রার্থীই নিজ নিজ বিজয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।

ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থী রিফাত সাংবাদিকদের বলেন, শান্তির কুমিল্লায় শান্তিপুর্ণভাবে ভোট চলছে। ফলাফলে তিনি দ্বিতীয় হওয়ার সুযোগ নাই, তিনি বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ কেমন- এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাত বলেন, আমি নালিশ পার্টির নেতা নই, তাই এ নিয়ে কোন নালিশ নেই।

একই কেন্দ্রে ভোট দেয়া শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে তিনিই বেশি কাজ করেছেন, তাই ভোটাররাও আসছেন। এতে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলেও জানান।

সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রে আসতে ভোটারদের বাধা দেয়ার খবর আসছে। তারপরও এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ যা আছে তা বহাল থাকলে তিনি বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী।

কিছু জায়গায় ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার।

এলাকা ছাড়তে ইসির চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাহার বলেন, ‘আমাকে ইসি কর্তৃক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী কেউ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমার পরিচয় হচ্ছে আমি জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য। আমাকে এই আইনের আওতায় আটকে রেখে ঘরবন্দী করে রাখা হয়েছে।’

নির্বাচনী পরিসংখ্যান

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ইভিএমে একটানা ভোট নেয়া হয়। ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন ২ জন।

নির্বাচনে মেয়র ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১০৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন- আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)।

কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকেরই আশঙ্কা ছিল এবারের ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করে শতভাগ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শেষ করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত হিসাবে ৬০ শতাংশের কম বেশি ভোট পড়েছে।’

ইভিএমে ভোট হওয়ায় গণনা শেষে সামান্য বিরতি দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করা হয়। পরে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে একীভূত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ , ২ আষাড় ১৪২৮ ১৬ জিলকদ ১৪৪৩

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

নৌকার রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা

সাক্কুর প্রত্যাখ্যান, শান্তিপূর্ণ ভোট, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কুমিল্লা নব-নির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত -সংবাদ

দিনভর ইভিএমে শন্তিপূর্ণ ভোটের পর ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তার আগে হৈ চৈয়ের মধ্যে কারচুপির সন্দেহের কথা বলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ভোটে দুই মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডিা লড়াই হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১০৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। বিদায়ী মেয়র সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট। গতকাল দিনভর ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণা চলছিল। রাত ৯টা পর্যন্ত ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হয়। তাতে ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু।

সে সময় ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ১০১ কেন্দ্রে মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পান ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী রিফাত পান ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

ভোটের ফলে প্রধান দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

বিএনপি ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া গত দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু রাত পৌনে ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হলে প্রায় একই সময়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতে শ’খানেক সমর্থক। তবে রিফাত সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এই উত্তেজনার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা থমকে যায়। এক পর্যায়ে ফল ঘোষণা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেয়া বিপুল সংখ্যক পুলিশ ধাওয়া দিয়ে বেশ কিছু নৌকার সমর্থককে বের করে দেয়। এর কিছু পর রিটানিং কর্মকর্তা ১০৫টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন।

শুরুতে ‘মুষলধারে বৃষ্টি’ ভোটে কিছুটা বিঘœ ঘটালেও শান্তিপূর্ণভাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন শেষ হয়েছে। ইভিএমের এ নির্বাচনে শুধু কিছু কেন্দ্রে ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় দুর্ভোগের কথা এসেছে। তবে কোথাও বড় কোন গোলযোগ, মারামারি হয়নি বা সহিংসতা।

ভোটের আগে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে উত্তাপ ছড়ালেও গতকাল ভোটের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বড় ধরনের অভিযোগ ছিল না। ভোটের পরিবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেক বড় কোন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। ভোটার উপস্থিতি নিয়েও মোটামুটি সন্তুষ্ট কমিশন।

নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট প্রদান ও গোলযোগের চেষ্টায় ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনকে তিন মাসের সাজা দেয়া হয়। অন্য পাঁচজনকে তিন থেকে এক সপ্তাহের সাজা দেয়া হয়।

সংরাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে পাঁচ বহিরাগতকে সকাল সোয়া ১০টায় আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, বিজিবি ও র?্যাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার জন্য মাইকিং করতে দেখা গেছে।

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং পৌনে ৯টার দিকে একই কেন্দ্রে ভোট দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। অপরদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর হোচ্ছাম হায়দার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিন মেয়র প্রার্থীই নিজ নিজ বিজয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।

ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থী রিফাত সাংবাদিকদের বলেন, শান্তির কুমিল্লায় শান্তিপুর্ণভাবে ভোট চলছে। ফলাফলে তিনি দ্বিতীয় হওয়ার সুযোগ নাই, তিনি বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ কেমন- এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাত বলেন, আমি নালিশ পার্টির নেতা নই, তাই এ নিয়ে কোন নালিশ নেই।

একই কেন্দ্রে ভোট দেয়া শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে তিনিই বেশি কাজ করেছেন, তাই ভোটাররাও আসছেন। এতে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলেও জানান।

সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রে আসতে ভোটারদের বাধা দেয়ার খবর আসছে। তারপরও এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ যা আছে তা বহাল থাকলে তিনি বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী।

কিছু জায়গায় ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার।

এলাকা ছাড়তে ইসির চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাহার বলেন, ‘আমাকে ইসি কর্তৃক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী কেউ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমার পরিচয় হচ্ছে আমি জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য। আমাকে এই আইনের আওতায় আটকে রেখে ঘরবন্দী করে রাখা হয়েছে।’

নির্বাচনী পরিসংখ্যান

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ইভিএমে একটানা ভোট নেয়া হয়। ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন ২ জন।

নির্বাচনে মেয়র ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১০৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন- আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)।

কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকেরই আশঙ্কা ছিল এবারের ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করে শতভাগ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শেষ করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত হিসাবে ৬০ শতাংশের কম বেশি ভোট পড়েছে।’

ইভিএমে ভোট হওয়ায় গণনা শেষে সামান্য বিরতি দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করা হয়। পরে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে একীভূত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।