পদ্মা সেতু চালুর পর পথে সৃষ্টি হবে জটিলতা

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সাথেই রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথে দেশের বেসরকারি মানসম্মত সড়ক পরিবহন সংস্থাগুলো বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। এসব সংস্থা পদ্মা সেতু চালুর পর নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে এসি বাস চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

২৫ জুলাই পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই ঢাকার সঙ্গে বরিশাল ছাড়াও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত দেশের নামকরা বিভিন্ন বেসরকারি সড়ক পরিবহন কোম্পানির অন্তত ৫০টি নতুন এসি বাস চালুর প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এসব পরিবহন সংস্থাগুলো বরিশালকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের আরও কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস পরিচালনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইতোমধ্যে।

তবে ঢাকা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাংগা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের পরে দক্ষিণে বরিশাল ও কুয়াকাটা ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় সংযুক্ত সব সড়কই এখনও মাত্র ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ফলে আগামী ২৬ জুন থেকে যানজট বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্ঘটনার মাত্রা কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শঙ্কিত সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

এ অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কগুলো ৬ লেন দূরের কথা ৪ লেনে উন্নীত করার প্রকল্পগুলো এখন পর্যন্ত বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তারপরেও জাতীয় এই মহাসড়কটি বরিশাল,পটুয়াখালি ও বরগুনার জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা সদর, পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে নির্মিত হওয়ায় এসব এলাকায় এই বাসের বহরের সঙ্গে একই সড়ক দিয়ে চলবে রিকশা, ভ্যান, টেম্পুসহ ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহন। তারপরে রয়েছে এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ রুটের ধীরগতি সম্পন্ন বাস, ট্রাক।

অনেকেই মনে করছেন রাজধানী থেকে আসা দ্রুতগতির বাসকে চলতে হবে এসব ধীরগতি যানবাহনকে রক্ষা করে। তাই এসব সড়কপথে যে সমস্যা দেখা দেবে তা যতদিন না বিদ্যমান সড়কগুলোর প্রশস্ততা না বাড়ানো পর্যন্ত বা বাইপাস সড়ক নির্মিত হবার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পক্ষে পদ্মা সেতুর উপকারীতা বোঝা সহজ হবে না। অন্যদিকে কুয়াকাটায় কোন বাস টার্মিনাল নেই। এখনই বাস, মাইক্রো, কারসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়ায় সেখানে সৃষ্টি হবে অচলাবস্থার।

তবে এরপরেও ২৬ জুন থেকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাতানুকুল বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে গ্রীন লাইন পরিবহন। এর পরপরই সোহাগ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিরবহনসহ আরও কয়েকটি নামকরা বেসরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বরিশালে আসছে। ইতোমধ্যে গ্রীন লাইন ২৬ জুন থেকে বাস সার্ভিস চালুর সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।

ইতোপূর্বে সাকুরা পরিবহনসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সীমিত কিছু এসি বাস বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করলেও সেসব কোম্পানির গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও মানসম্মত সার্ভিস প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ অন্য রুটে যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ নির্বিকার রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। বরিশালে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির একমাত্র বাস ডিপোটির ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে ৪০টি চালু থাকলেও এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো। নতুন ও পুরনো এসব বাসের সাহায্যেই দক্ষিণে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরে রংপুর পর্যন্ত সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোযাত্রী পরিবহন করছে।

এমনকি প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা মুনাফার এ ডিপোটিতে দীর্ঘদিন ধরেই আরও এসি বাস দেয়ার দাবি থাকলেও সদর দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরিশালে এ ডিপোটির মাত্র ১৪টি এসি বাসের মধ্যে ১২টির সাহায্যে এতদিন বরিশাল থেকে মাওয়ায় পদ্মার পশ্চিম পাড়ের কাঠালবাড়ী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে এসব বাসেই ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে। ফলে বর্তমানে বরিশাল থেকে প্রতি আধঘণ্টা অন্তর বিআরটিসির যে বাস ছাড়ছে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণে তা এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে ছাড়বে বলে সংস্থাটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

এতে করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির যাত্রীসেবা আরও সংকুচিত হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। নতুন এসি বাস বরাদ্দ না পেলে বরিশালÑঢাকা রুটে যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে না বলে সব মহল মনে করলেও এ ব্যাপারে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের কোন মন্তব্য পাওয়া যয়নি।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ , ২ আষাড় ১৪২৮ ১৬ জিলকদ ১৪৪৩

দক্ষিণাঞ্চলের সড়কগুলোর প্রশস্ততা কম

পদ্মা সেতু চালুর পর পথে সৃষ্টি হবে জটিলতা

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সাথেই রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথে দেশের বেসরকারি মানসম্মত সড়ক পরিবহন সংস্থাগুলো বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। এসব সংস্থা পদ্মা সেতু চালুর পর নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে এসি বাস চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

২৫ জুলাই পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই ঢাকার সঙ্গে বরিশাল ছাড়াও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত দেশের নামকরা বিভিন্ন বেসরকারি সড়ক পরিবহন কোম্পানির অন্তত ৫০টি নতুন এসি বাস চালুর প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এসব পরিবহন সংস্থাগুলো বরিশালকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের আরও কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস পরিচালনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইতোমধ্যে।

তবে ঢাকা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাংগা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের পরে দক্ষিণে বরিশাল ও কুয়াকাটা ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় সংযুক্ত সব সড়কই এখনও মাত্র ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ফলে আগামী ২৬ জুন থেকে যানজট বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্ঘটনার মাত্রা কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শঙ্কিত সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

এ অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কগুলো ৬ লেন দূরের কথা ৪ লেনে উন্নীত করার প্রকল্পগুলো এখন পর্যন্ত বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তারপরেও জাতীয় এই মহাসড়কটি বরিশাল,পটুয়াখালি ও বরগুনার জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা সদর, পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে নির্মিত হওয়ায় এসব এলাকায় এই বাসের বহরের সঙ্গে একই সড়ক দিয়ে চলবে রিকশা, ভ্যান, টেম্পুসহ ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহন। তারপরে রয়েছে এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ রুটের ধীরগতি সম্পন্ন বাস, ট্রাক।

অনেকেই মনে করছেন রাজধানী থেকে আসা দ্রুতগতির বাসকে চলতে হবে এসব ধীরগতি যানবাহনকে রক্ষা করে। তাই এসব সড়কপথে যে সমস্যা দেখা দেবে তা যতদিন না বিদ্যমান সড়কগুলোর প্রশস্ততা না বাড়ানো পর্যন্ত বা বাইপাস সড়ক নির্মিত হবার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পক্ষে পদ্মা সেতুর উপকারীতা বোঝা সহজ হবে না। অন্যদিকে কুয়াকাটায় কোন বাস টার্মিনাল নেই। এখনই বাস, মাইক্রো, কারসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়ায় সেখানে সৃষ্টি হবে অচলাবস্থার।

তবে এরপরেও ২৬ জুন থেকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাতানুকুল বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে গ্রীন লাইন পরিবহন। এর পরপরই সোহাগ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিরবহনসহ আরও কয়েকটি নামকরা বেসরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বরিশালে আসছে। ইতোমধ্যে গ্রীন লাইন ২৬ জুন থেকে বাস সার্ভিস চালুর সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।

ইতোপূর্বে সাকুরা পরিবহনসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সীমিত কিছু এসি বাস বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করলেও সেসব কোম্পানির গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও মানসম্মত সার্ভিস প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ অন্য রুটে যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ নির্বিকার রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। বরিশালে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির একমাত্র বাস ডিপোটির ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে ৪০টি চালু থাকলেও এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো। নতুন ও পুরনো এসব বাসের সাহায্যেই দক্ষিণে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরে রংপুর পর্যন্ত সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোযাত্রী পরিবহন করছে।

এমনকি প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা মুনাফার এ ডিপোটিতে দীর্ঘদিন ধরেই আরও এসি বাস দেয়ার দাবি থাকলেও সদর দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরিশালে এ ডিপোটির মাত্র ১৪টি এসি বাসের মধ্যে ১২টির সাহায্যে এতদিন বরিশাল থেকে মাওয়ায় পদ্মার পশ্চিম পাড়ের কাঠালবাড়ী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে এসব বাসেই ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে। ফলে বর্তমানে বরিশাল থেকে প্রতি আধঘণ্টা অন্তর বিআরটিসির যে বাস ছাড়ছে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণে তা এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে ছাড়বে বলে সংস্থাটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

এতে করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির যাত্রীসেবা আরও সংকুচিত হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। নতুন এসি বাস বরাদ্দ না পেলে বরিশালÑঢাকা রুটে যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে না বলে সব মহল মনে করলেও এ ব্যাপারে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের কোন মন্তব্য পাওয়া যয়নি।