আঙুলের ছাপ না মেলায় ফিরে গেছেন ভোটাররা

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) আঙুলের ছাপ না মেলায় ফিরে গেছেন ভোটাররা। এদিকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ভোট দিতে না পেরে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা যায়।

আঙুলের ছাপে মিল না পেয়ে ভোট দিতে ব্যর্থ হওয়া অন্তত ১২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে বৃদ্ধ নারী-পুরুষের পাশাপাশি তরুণরাও রয়েছেন। ২২ বছর বয়সী তরুণ ভোটার আমিনুল ইসলাম ভোট দিতে না পেরে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘প্রথমবার ভোট দিতে আসছি। প্রথমবারই ইভিএমে। কিন্তু ভোট দিতে গিয়া দেখি ফিঙ্গার পায় না। কয়েকবার চেষ্টা করছি, পায় না।’

আমিনুলের পাশে দাঁড়ানো মধ্যবয়সী আবুল হোসেন বলেন, তার দুই আত্মীয়সহ পাঁচজনের এমন হয়েছে। তারাও ভোট দিতে গিয়ে দেখেন আঙুলের ছাপ মেলে না। পরে ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। পাঁচপীর দরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি ভৈরবদী গ্রামের ৫২ বছর বয়সী বৃদ্ধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বৃদ্ধা বিরক্তির স্বরে বলেন, ‘গরমের মইধ্যে লাইনে দাঁড়াইছি। এহন কয় ফিঙ্গার মেলে না। র্ধু ভোটই দিতাম না।’ এই বলে কেন্দ্র ছাড়েন ওই নারী।

আঙুলের ছাপ মেলেনি ৬২ বছর বয়সী কোহিনূরেরও। কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অপেক্ষা করতে বলায় ভোটকক্ষের ভেতরেই বসে ছিলেন তিনি। কোহিনূর বলেন, ‘বয়স দেইখা লাইন ছাড়াই ভোট দিতে আইছি। আগেও এই কেন্দ্রেই ভোট দিছি। এখন দেহি ফিঙ্গার মেলে না। কে মেলে নাই জানি না। তারাও কইতে পারে না।’

তবে কোন জটিলতা ছাড়াই একই কেন্দ্রে ভোট দিতে পেরেছেন ৭৭ বছর বয়সী সাহারা বেগম। চলাফেরায় সমস্যা হওয়ায় নাতনি বিউটি বেগম তাকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সাহারা বলেন, ‘ঠিকমতোই ভোট দিতে পেরেছেন তিনি।

শাহচিল্লারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক নম্বর বুথের প্রিজাইডিং অফিসার কামরুল হাসান বলেন, তার এই কক্ষে ১০-১২ জনের আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন। তবে এই কেন্দ্রের প্রার্থীর এজেন্টদের দাবি, আঙুলের ছাপ অমিলের কারণে ভোট দিতে না পারার সংখ্যা অন্তত অর্ধশত। আপেল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রাশেদ বলেন, তার কক্ষে অন্তত ২৫ জনের আঙুলের ছাপ মেলেনি। বাকি কক্ষগুলো মিলিয়ে তা হবে অন্তত ৫০ জন।

এদিকে কেন্দ্রগুলোর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা বলছেন, বয়স্কদের অনেকের চামড়ায় ভাজ পড়ে যাওয়ায় অনেকক্ষেত্রে মেলে না। তাছাড়া আঙুলে চুন, মেহেদী লাগানো থাকলেও এ সমস্যা হয়।

কাইকারটেক নবাব হাবিবউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘যাদের ফিঙ্গার মিলে না তাদের জন্য ডিজিটাল ব্যালট ইস্যু হয় না। ফলে স্মার্টকার্ড সঙ্গে আনলেও ভোট দিতে পারেননি তারা।’

এদিকে কেন্দ্রগুলোর ভোটকক্ষে আঙুলের ছাপ নেয়ার মেশিনের পাশেই পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ জেলিভর্তি (ভ্যাজলিন) কৌটা দেখা যায়। নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, যাদের প্রথম ধাপে আঙুলের ছাপ মেলে না তাদের আঙুলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা হয়। এরপরও কাজ না হলে তিনি আর ভোট দিতে পারেন না।

উল্লেখ্য, সন্ধ্যায় বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সোহাগ রনির চেয়ে তিনি ১১৩২ ভোট বেশি পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ , ২ আষাড় ১৪২৮ ১৬ জিলকদ ১৪৪৩

আঙুলের ছাপ না মেলায় ফিরে গেছেন ভোটাররা

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) আঙুলের ছাপ না মেলায় ফিরে গেছেন ভোটাররা। এদিকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ভোট দিতে না পেরে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউপি নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা যায়।

আঙুলের ছাপে মিল না পেয়ে ভোট দিতে ব্যর্থ হওয়া অন্তত ১২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে বৃদ্ধ নারী-পুরুষের পাশাপাশি তরুণরাও রয়েছেন। ২২ বছর বয়সী তরুণ ভোটার আমিনুল ইসলাম ভোট দিতে না পেরে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘প্রথমবার ভোট দিতে আসছি। প্রথমবারই ইভিএমে। কিন্তু ভোট দিতে গিয়া দেখি ফিঙ্গার পায় না। কয়েকবার চেষ্টা করছি, পায় না।’

আমিনুলের পাশে দাঁড়ানো মধ্যবয়সী আবুল হোসেন বলেন, তার দুই আত্মীয়সহ পাঁচজনের এমন হয়েছে। তারাও ভোট দিতে গিয়ে দেখেন আঙুলের ছাপ মেলে না। পরে ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। পাঁচপীর দরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি ভৈরবদী গ্রামের ৫২ বছর বয়সী বৃদ্ধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বৃদ্ধা বিরক্তির স্বরে বলেন, ‘গরমের মইধ্যে লাইনে দাঁড়াইছি। এহন কয় ফিঙ্গার মেলে না। র্ধু ভোটই দিতাম না।’ এই বলে কেন্দ্র ছাড়েন ওই নারী।

আঙুলের ছাপ মেলেনি ৬২ বছর বয়সী কোহিনূরেরও। কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অপেক্ষা করতে বলায় ভোটকক্ষের ভেতরেই বসে ছিলেন তিনি। কোহিনূর বলেন, ‘বয়স দেইখা লাইন ছাড়াই ভোট দিতে আইছি। আগেও এই কেন্দ্রেই ভোট দিছি। এখন দেহি ফিঙ্গার মেলে না। কে মেলে নাই জানি না। তারাও কইতে পারে না।’

তবে কোন জটিলতা ছাড়াই একই কেন্দ্রে ভোট দিতে পেরেছেন ৭৭ বছর বয়সী সাহারা বেগম। চলাফেরায় সমস্যা হওয়ায় নাতনি বিউটি বেগম তাকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সাহারা বলেন, ‘ঠিকমতোই ভোট দিতে পেরেছেন তিনি।

শাহচিল্লারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক নম্বর বুথের প্রিজাইডিং অফিসার কামরুল হাসান বলেন, তার এই কক্ষে ১০-১২ জনের আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন। তবে এই কেন্দ্রের প্রার্থীর এজেন্টদের দাবি, আঙুলের ছাপ অমিলের কারণে ভোট দিতে না পারার সংখ্যা অন্তত অর্ধশত। আপেল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রাশেদ বলেন, তার কক্ষে অন্তত ২৫ জনের আঙুলের ছাপ মেলেনি। বাকি কক্ষগুলো মিলিয়ে তা হবে অন্তত ৫০ জন।

এদিকে কেন্দ্রগুলোর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা বলছেন, বয়স্কদের অনেকের চামড়ায় ভাজ পড়ে যাওয়ায় অনেকক্ষেত্রে মেলে না। তাছাড়া আঙুলে চুন, মেহেদী লাগানো থাকলেও এ সমস্যা হয়।

কাইকারটেক নবাব হাবিবউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘যাদের ফিঙ্গার মিলে না তাদের জন্য ডিজিটাল ব্যালট ইস্যু হয় না। ফলে স্মার্টকার্ড সঙ্গে আনলেও ভোট দিতে পারেননি তারা।’

এদিকে কেন্দ্রগুলোর ভোটকক্ষে আঙুলের ছাপ নেয়ার মেশিনের পাশেই পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ জেলিভর্তি (ভ্যাজলিন) কৌটা দেখা যায়। নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, যাদের প্রথম ধাপে আঙুলের ছাপ মেলে না তাদের আঙুলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা হয়। এরপরও কাজ না হলে তিনি আর ভোট দিতে পারেন না।

উল্লেখ্য, সন্ধ্যায় বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সোহাগ রনির চেয়ে তিনি ১১৩২ ভোট বেশি পেয়েছেন।