ফল নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটের সমীকরণ

ইভিএম পদ্ধতিতে ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও ৪ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের বিজয় নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির দুই প্রার্থীর ভোটের বিভাজনেই সুবিধা পেয়েছেন রিফাত।

তারপরও জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে। ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে এসে মাত্র ৪টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা নিয়ে ৪৫ মিনিট স্থগিত রাখা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর ওই সময়ে রিটার্নিং অফিসার মোবাইলে কেন কথা বললেন, কেনই বা মেয়র প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা না দিয়ে কাউন্সিলরদের ফল ঘোষণা দিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এমন আলোচনা এখন নগরীর সবার মুখে মুখে। ভোটের ফলাফল নিয়ে এমন চিত্র নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে নগরবাসীর মাঝে। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে বেরিয়ে আসে ৪টি কেন্দ্রের আদ্যপান্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। প্রয়োজনে প্রত্যেক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের শিট যাচাই করে দেখতে পারেন, তাহলেই বেরিয়ে আসবে ফলাফলের সার্বিক চিত্র। কে জয়ী হয়েছে।

জানা যায়, গত বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কন্ট্রোল রুম থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করছিলেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। একেক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পরপরই দেখা যায় কখনো সাক্কু বা কখনো রিফাত এগিয়ে থাকছেন। ফলাফলে যে কেন্দ্রে নৌকা বা ঘড়ির বেশি ভোট পায় ওই পক্ষের সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছেন। ফলাফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই থাকায় সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনাও ছিলে বেশ তুঙ্গে। রাতে ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর রিফাতের চেয়ে ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন সাক্কু। সে সময় মনিরুল হক সাক্কু পৌঁছান সেখানে।

এ সময় সাক্কু ভাই, সাক্কু ভাই বলে কন্ট্রোল রুম সরগরম করা হয়। একপর্যায়ে মেয়র প্রার্থীদের ফলাফল বন্ধ রেখে কেবল কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল ঘোষণা শুরু করেন। এ নিয়ে সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই হুলস্থুল শুরু হয়। এ সময় শাহেদুন্নবী মোবাইলে কথা বলেন। পরে সেখানে রিফাতের সমর্থকরা সমবেত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। রিফাত ও সাক্কু গ্রুপের কর্মীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী অবশিষ্ট চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত জয়ী হন ৩৪৩ ভোটে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু।

এ সময় সাক্কু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক তিনি এ ফলাফল প্রত্যাখান করেন। সাক্কুর প্রশ্ন কেন প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় ফলাফল ঘোষণার কার্যক্রম। ১০১ কেন্দ্রেই কেন ফলাফল ঘোষণা আটকে গেল? রহস্যময় ফোন কলটি কার ছিল? সাক্কু বলেন, ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফলে তো আমি এগিয়ে ছিলাম, যখন রিটার্নিং অফিসার ১০১ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর ফল ঘোষণা বন্ধ করে দেয়, তখন রিটার্নিং অফিসারের হাতে অবশিষ্ট ৪ কেন্দ্রের ফলাফল ছিল। এ সময় কারও ফোন কল পেয়েই রিটার্নিং অফিসার ফলাফল বন্ধ রেখে পরে ফল পাল্টে দেন। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেব। এদিকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পর সাক্কু গতকাল দিনভর নগরীর নানুয়ার দিঘীরপাড় বাসায় অবস্থান করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তিনি কোন কথা বলেননি। সূত্র জানায়, তিনি বাসায় বিএনপি’র সিনিয়র আইনজীবিদের সঙ্গে মামলার বিষয় নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।

যা ছিল ৪ কেন্দ্রের ফলাফলে :

চার কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে বেশ আলোচনা সমালোচনা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সেই ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে তৈরি করেছে বেশ বিতর্কও। গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল বিলম্বে এসে পৌঁছায়। যে কারণে মেয়র পদে ফল প্রকাশ সাময়িক স্থগিত রেখে কাউন্সিলরদের ফলাফল প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে ৪২, ৭৮, ৭৯ ও ৯৭নং ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ওইসময়ে প্রকাশ করা হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর রানীর দিঘীর পশ্চিমপাড় এলাকায় ৪২নং ভোটকেন্দ্র ভিক্টোরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় (উত্তর পাশের ত্রিতল ভবন)।

এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ৪৪০টি। এর মধ্যে ৮৫৩ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪০৮ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ১৫৭ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ১২ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ১০ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ৫ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৪৬.৮১ শতাংশ। এদিকে ৭৮নং ভোটকেন্দ্র নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নতুন ভবন ও পশ্চিম পাশের্^র পুরাতন ভবন)। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৪।

এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ১০২টি। এর মধ্যে ৪১৩ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩৭৪ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ২৫৬ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ১৭ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৪২ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৬৯.২৬ শতাংশ। এদিকে ৭৯নং ভোটকেন্দ্র দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (উত্তর পাশে^র ভবন)। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ২১২টি।

এর মধ্যে ৫২৫ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩৬৭ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ২৩৬ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ২৯ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৫৫ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৭৪.০৭ শতাংশ। এদিকে ৯৭নং ভোটকেন্দ্র শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পূর্ব ও উত্তর পাশে^র ভবন), সালমানপুর। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ১৫৩। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে ৬৫৬ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩২৬ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ৩০৮ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ৩৩ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৮২ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৬৫.৩৫ শতাংশ।

এদিকে ৪টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ২ হাজার ৪৪৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ১ হাজার ৪৭৫ ভোট। এক্ষেত্রে ৯৭৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সাক্কু। সার্বিক ফলাফলে ১০৫টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। জয়লাভ করেন ৩৪৩ ভোটে। এর আগে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফলে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট। সেখানে ৬২৯ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। পরবর্তীতে অন্য ৪টি কেন্দ্রের ফলাফলে জয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।

* ফলাফল ‘কারচুপির’ অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন রিটার্নিং কর্মকর্তা :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল কারচুপির অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেন, ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার পেছনে কারণে ছিল ঝড়-বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও দুই পক্ষের গোলযোগ। এসব কারণে চারটি কেন্দ্রের ফল আসতে দেরি হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারদের ফল তৈরিতে বিলম্ব হয়েছে। আধঘণ্টার বেশি কেন ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত ছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল না। পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল বিধায় সময় লেগেছে। দুই পক্ষই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ওই সময় বারবার কার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ফোনে কথা বলছিলাম সিইসি, ডিসি ও এসপির সঙ্গে।

অন্যকারও ফোন আসেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরাজিত প্রার্থী চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে নতুন করে ফলাফল দেয়া সম্ভব নয়। সার্বিক ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার থেকে প্রাপ্ত ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা করে থাকেন। এক্ষেত্রে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ১০৫টি কেন্দ্র মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে ভালোভাবে যোগফল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছিল।

এক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। যদি কারো সন্দেহ থাকে তাহলে প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রিজাইডিং অফিসার প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টকে ফলাফল শিট দিয়েছেন। সে ফলাফল যোগ করলেই কে জয়ী হয়েছেন, তা যে কেউই বুঝতে পারবে। সাধারণ ভোটাররা যে ভোট দিয়েছেন, আমরা সে ফলাফল প্রকাশ করেছি। এক্ষেত্রে কারচুপির কোন সুযোগ নেই। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় সব প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রিফাত :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত বৃহস্পতিবার বিকালে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগর উদ্যানের পাশে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে তিনি কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আমিনুল ইসলাম টুটুল, জাগ্রত মানবিকতার চেয়ারম্যান তাহসিন বাহার সূচনা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আরফানুল হক রিফাত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে মেয়র নির্বাচিত হলে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এর শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, পরাজিত হয়ে সাবেক মেয়র সাক্কু গত বুধবার রাতে কারচুপির যে কথা বলেছেন, তা রিটার্নিং অফিসারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তাই এখন এসব নালিশের কথা বলে লাভ নেই। রিফাত বলেন, শপথ নেয়ার পর প্রথম কাজটি হবে নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করার পরিকল্পনা নেয়া। নগর ভবন দুর্নীতি মুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছিলাম এতেও আশা করি সফল হবো। সাবেক মেয়র সাক্কুর দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ করবো।

শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ১৭ জিলকদ ১৪৪৩

ফল নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটের সমীকরণ

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

ইভিএম পদ্ধতিতে ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও ৪ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের বিজয় নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির দুই প্রার্থীর ভোটের বিভাজনেই সুবিধা পেয়েছেন রিফাত।

তারপরও জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে। ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে এসে মাত্র ৪টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা নিয়ে ৪৫ মিনিট স্থগিত রাখা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর ওই সময়ে রিটার্নিং অফিসার মোবাইলে কেন কথা বললেন, কেনই বা মেয়র প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা না দিয়ে কাউন্সিলরদের ফল ঘোষণা দিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এমন আলোচনা এখন নগরীর সবার মুখে মুখে। ভোটের ফলাফল নিয়ে এমন চিত্র নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে নগরবাসীর মাঝে। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে বেরিয়ে আসে ৪টি কেন্দ্রের আদ্যপান্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। প্রয়োজনে প্রত্যেক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের শিট যাচাই করে দেখতে পারেন, তাহলেই বেরিয়ে আসবে ফলাফলের সার্বিক চিত্র। কে জয়ী হয়েছে।

জানা যায়, গত বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কন্ট্রোল রুম থেকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করছিলেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। একেক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পরপরই দেখা যায় কখনো সাক্কু বা কখনো রিফাত এগিয়ে থাকছেন। ফলাফলে যে কেন্দ্রে নৌকা বা ঘড়ির বেশি ভোট পায় ওই পক্ষের সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছেন। ফলাফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই থাকায় সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনাও ছিলে বেশ তুঙ্গে। রাতে ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর রিফাতের চেয়ে ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন সাক্কু। সে সময় মনিরুল হক সাক্কু পৌঁছান সেখানে।

এ সময় সাক্কু ভাই, সাক্কু ভাই বলে কন্ট্রোল রুম সরগরম করা হয়। একপর্যায়ে মেয়র প্রার্থীদের ফলাফল বন্ধ রেখে কেবল কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল ঘোষণা শুরু করেন। এ নিয়ে সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই হুলস্থুল শুরু হয়। এ সময় শাহেদুন্নবী মোবাইলে কথা বলেন। পরে সেখানে রিফাতের সমর্থকরা সমবেত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। রিফাত ও সাক্কু গ্রুপের কর্মীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী অবশিষ্ট চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত জয়ী হন ৩৪৩ ভোটে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু।

এ সময় সাক্কু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তাকে হারানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক তিনি এ ফলাফল প্রত্যাখান করেন। সাক্কুর প্রশ্ন কেন প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় ফলাফল ঘোষণার কার্যক্রম। ১০১ কেন্দ্রেই কেন ফলাফল ঘোষণা আটকে গেল? রহস্যময় ফোন কলটি কার ছিল? সাক্কু বলেন, ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফলে তো আমি এগিয়ে ছিলাম, যখন রিটার্নিং অফিসার ১০১ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর ফল ঘোষণা বন্ধ করে দেয়, তখন রিটার্নিং অফিসারের হাতে অবশিষ্ট ৪ কেন্দ্রের ফলাফল ছিল। এ সময় কারও ফোন কল পেয়েই রিটার্নিং অফিসার ফলাফল বন্ধ রেখে পরে ফল পাল্টে দেন। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেব। এদিকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পর সাক্কু গতকাল দিনভর নগরীর নানুয়ার দিঘীরপাড় বাসায় অবস্থান করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তিনি কোন কথা বলেননি। সূত্র জানায়, তিনি বাসায় বিএনপি’র সিনিয়র আইনজীবিদের সঙ্গে মামলার বিষয় নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।

যা ছিল ৪ কেন্দ্রের ফলাফলে :

চার কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে বেশ আলোচনা সমালোচনা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সেই ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে তৈরি করেছে বেশ বিতর্কও। গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল বিলম্বে এসে পৌঁছায়। যে কারণে মেয়র পদে ফল প্রকাশ সাময়িক স্থগিত রেখে কাউন্সিলরদের ফলাফল প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে ৪২, ৭৮, ৭৯ ও ৯৭নং ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ওইসময়ে প্রকাশ করা হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর রানীর দিঘীর পশ্চিমপাড় এলাকায় ৪২নং ভোটকেন্দ্র ভিক্টোরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় (উত্তর পাশের ত্রিতল ভবন)।

এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ৪৪০টি। এর মধ্যে ৮৫৩ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪০৮ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ১৫৭ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ১২ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ১০ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ৫ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৪৬.৮১ শতাংশ। এদিকে ৭৮নং ভোটকেন্দ্র নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নতুন ভবন ও পশ্চিম পাশের্^র পুরাতন ভবন)। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৪।

এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ১০২টি। এর মধ্যে ৪১৩ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩৭৪ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ২৫৬ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ১৭ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৪২ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৬৯.২৬ শতাংশ। এদিকে ৭৯নং ভোটকেন্দ্র দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (উত্তর পাশে^র ভবন)। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ২১২টি।

এর মধ্যে ৫২৫ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩৬৭ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ২৩৬ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ২৯ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৫৫ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৭৪.০৭ শতাংশ। এদিকে ৯৭নং ভোটকেন্দ্র শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পূর্ব ও উত্তর পাশে^র ভবন), সালমানপুর। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ১৫৩। এখানে বৈধ ভোট ১ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে ৬৫৬ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৩২৬ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ৩০৮ ভোট, কামরুল আহসান বাবুল ৩৩ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৮২ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে বাতিল হয় ২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ৬৫.৩৫ শতাংশ।

এদিকে ৪টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ২ হাজার ৪৪৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ১ হাজার ৪৭৫ ভোট। এক্ষেত্রে ৯৭৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সাক্কু। সার্বিক ফলাফলে ১০৫টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। জয়লাভ করেন ৩৪৩ ভোটে। এর আগে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফলে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট। সেখানে ৬২৯ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। পরবর্তীতে অন্য ৪টি কেন্দ্রের ফলাফলে জয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।

* ফলাফল ‘কারচুপির’ অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন রিটার্নিং কর্মকর্তা :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল কারচুপির অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেন, ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার পেছনে কারণে ছিল ঝড়-বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও দুই পক্ষের গোলযোগ। এসব কারণে চারটি কেন্দ্রের ফল আসতে দেরি হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারদের ফল তৈরিতে বিলম্ব হয়েছে। আধঘণ্টার বেশি কেন ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত ছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল না। পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল বিধায় সময় লেগেছে। দুই পক্ষই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ওই সময় বারবার কার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ফোনে কথা বলছিলাম সিইসি, ডিসি ও এসপির সঙ্গে।

অন্যকারও ফোন আসেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরাজিত প্রার্থী চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে নতুন করে ফলাফল দেয়া সম্ভব নয়। সার্বিক ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার থেকে প্রাপ্ত ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা করে থাকেন। এক্ষেত্রে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ১০৫টি কেন্দ্র মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে ভালোভাবে যোগফল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছিল।

এক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। যদি কারো সন্দেহ থাকে তাহলে প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রিজাইডিং অফিসার প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টকে ফলাফল শিট দিয়েছেন। সে ফলাফল যোগ করলেই কে জয়ী হয়েছেন, তা যে কেউই বুঝতে পারবে। সাধারণ ভোটাররা যে ভোট দিয়েছেন, আমরা সে ফলাফল প্রকাশ করেছি। এক্ষেত্রে কারচুপির কোন সুযোগ নেই। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় সব প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রিফাত :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত বৃহস্পতিবার বিকালে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগর উদ্যানের পাশে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে তিনি কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আমিনুল ইসলাম টুটুল, জাগ্রত মানবিকতার চেয়ারম্যান তাহসিন বাহার সূচনা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আরফানুল হক রিফাত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে মেয়র নির্বাচিত হলে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এর শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, পরাজিত হয়ে সাবেক মেয়র সাক্কু গত বুধবার রাতে কারচুপির যে কথা বলেছেন, তা রিটার্নিং অফিসারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তাই এখন এসব নালিশের কথা বলে লাভ নেই। রিফাত বলেন, শপথ নেয়ার পর প্রথম কাজটি হবে নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করার পরিকল্পনা নেয়া। নগর ভবন দুর্নীতি মুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছিলাম এতেও আশা করি সফল হবো। সাবেক মেয়র সাক্কুর দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ করবো।