দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র বরখাস্ত

অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ৭টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত

আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার ৭টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়। গত বুধবার গত সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ প্রদান করা হয়। একইসঙ্গে মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ইজারাদার কর্তৃক সময়মত ইজারা টাকা পরিশোধ না করায় এবং আদায় করতে না পরায় পৌরসভার হাট-বাজার ইজারার টাকা অনাদায় থাকলেও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পৌর মেয়র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে প্রশাসনিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা ছাড়াই ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৫ টাকার টেন্ডার করা এবং পরবর্তীতে ২০২০-২১ অর্থবছর পরবর্তী ৩ বছরের বরাদ্দ হতে তা সমন্বয় করার কারণে কোন টেন্ডার করা হয়নি, যা বিধিসম্মত হয়নি মর্মে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে পৌরসভার গরিব, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু তার মধ্যে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯০ টাকা দুস্থদের কাছে বিতরণ প্রক্রিয়ায় কোন প্রচলিত বিধি-বিধান প্রতিপালিত হয়নি। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার কর্মকালীন ১৯৩ জন মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগে কোন বিধি-বিধান অনুসরণ করেননি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ধার্যকৃত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি হতে আয় দিনাজপুরের সাবেক জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্রান্ত সভায় ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ, ইজিবাইক হলুদ, নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিতকরণ, ডাটাবেট তৈরি প্রভৃতি করার সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু তার কোন কিছুই করা হয়নি।

আদায়কৃত অর্থ বর্ণিত সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বেতন-ভাতা সম্মানী খাতে ব্যয় করা হয়েছে। দিনাজপুর পৗরসভার দাখিলকৃত ৬১টি বিলবোর্ডের ভাড়া বাবদ বর্তমানে ১১ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। টাকাগুলো আদায়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পৌরসভার জমি ভাড়ার টাকা দাবি করে ২৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে উন্নয়ন বরাদ্দ প্রাপ্তি হতে পৌরসভা বঞ্চিত হয়েছে। গত ২০১০ সালের ৩০ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭৯৮ নং স্মারকে পৌরভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৮ লাখ টাকা ভবন নির্মাণ না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা প্রদান করেছেন। যা আইন ও বিধিসম্মত হয়নি মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

এসব কারণে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে উল্লিখিত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২-এর উপধারা (১)(ঘ) মোতাবেক অসদাচারণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে একই আইনের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব বরাবরে প্রেরিতে অন্য একটি চিঠিতে বলা হয়, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমেরর (সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত) বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের ৭টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ২০১৫ সালে দুদক তদন্ত করে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০২২ সালেও অভিযোগ উত্থাপিত হলো। এবারও আমি অব্যাহতি পাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে আমাকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম চাল দিয়ে জেলে পাঠায়, সেখানে আর অভিযোগ। আমি বিএনপি করি দেখে এটা আমার অপরাধ। বিএনপি করাটা অপরাধ নয়। বিএনপির মেয়র দেখে! তবে আমি বিএনপি করবই। আমি সারাজীবন বিএনপি করব।

উল্লেখ্য, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ১৭ জিলকদ ১৪৪৩

দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র বরখাস্ত

অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ৭টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

image

আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার ৭টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়। গত বুধবার গত সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ প্রদান করা হয়। একইসঙ্গে মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ইজারাদার কর্তৃক সময়মত ইজারা টাকা পরিশোধ না করায় এবং আদায় করতে না পরায় পৌরসভার হাট-বাজার ইজারার টাকা অনাদায় থাকলেও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পৌর মেয়র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে প্রশাসনিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা ছাড়াই ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৫ টাকার টেন্ডার করা এবং পরবর্তীতে ২০২০-২১ অর্থবছর পরবর্তী ৩ বছরের বরাদ্দ হতে তা সমন্বয় করার কারণে কোন টেন্ডার করা হয়নি, যা বিধিসম্মত হয়নি মর্মে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে পৌরসভার গরিব, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু তার মধ্যে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯০ টাকা দুস্থদের কাছে বিতরণ প্রক্রিয়ায় কোন প্রচলিত বিধি-বিধান প্রতিপালিত হয়নি। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার কর্মকালীন ১৯৩ জন মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগে কোন বিধি-বিধান অনুসরণ করেননি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ধার্যকৃত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি হতে আয় দিনাজপুরের সাবেক জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্রান্ত সভায় ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ, ইজিবাইক হলুদ, নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিতকরণ, ডাটাবেট তৈরি প্রভৃতি করার সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু তার কোন কিছুই করা হয়নি।

আদায়কৃত অর্থ বর্ণিত সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বেতন-ভাতা সম্মানী খাতে ব্যয় করা হয়েছে। দিনাজপুর পৗরসভার দাখিলকৃত ৬১টি বিলবোর্ডের ভাড়া বাবদ বর্তমানে ১১ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। টাকাগুলো আদায়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পৌরসভার জমি ভাড়ার টাকা দাবি করে ২৪ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে উন্নয়ন বরাদ্দ প্রাপ্তি হতে পৌরসভা বঞ্চিত হয়েছে। গত ২০১০ সালের ৩০ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭৯৮ নং স্মারকে পৌরভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৮ লাখ টাকা ভবন নির্মাণ না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা প্রদান করেছেন। যা আইন ও বিধিসম্মত হয়নি মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

এসব কারণে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে উল্লিখিত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২-এর উপধারা (১)(ঘ) মোতাবেক অসদাচারণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে একই আইনের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব বরাবরে প্রেরিতে অন্য একটি চিঠিতে বলা হয়, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমেরর (সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত) বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের ৭টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ২০১৫ সালে দুদক তদন্ত করে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০২২ সালেও অভিযোগ উত্থাপিত হলো। এবারও আমি অব্যাহতি পাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে আমাকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম চাল দিয়ে জেলে পাঠায়, সেখানে আর অভিযোগ। আমি বিএনপি করি দেখে এটা আমার অপরাধ। বিএনপি করাটা অপরাধ নয়। বিএনপির মেয়র দেখে! তবে আমি বিএনপি করবই। আমি সারাজীবন বিএনপি করব।

উল্লেখ্য, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।