সাইবার অপরাধ বাড়ছে, ৬ মাসে ৪ হাজার অভিযোগ

ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা। ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন (পিসিএসডব্লিউ) উইং প্রায় ৪ হাজার ৯৪টি সাইবার অপরাধের অভিযোগ পেয়েছে। তবে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই অভিযোগের সংখ্যা ছিল অন্তত ১২ হাজার ৬৪১। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাইবার লাইন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৯ শতাংশই সাইবার অপরাধের শিকার হন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মীর আবু তৌহিদ বলেন, পিসিএসডব্লিউ উইংয়ে এখন আমরা কেবল প্রকৃত অভিযোগ পাচ্ছি। এর আগে বেশকিছু ফলস অ্যালার্ম ছিল। এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতাও তৈরি করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম ও নির্ধারিত ইউনিট থাকা সত্ত্বেও সাইবার স্পেসে ব্ল্যাকমেইল ও নিপীড়নের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যেখানে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই নারী ও শিশু। তবে সাইবার অপরাধে শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও অভিযোগগুলো অমীমাংসিতই থেকে যায়। তাই অভিযোগ দিতেও নারাজ অনেকেই। সাইবার লাইনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাইবার অপরাধের শিকার প্রায় ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নারীর অভিযোগ এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। গত ২৫ মার্চ ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক হাজার ২৮০ জন ফেইসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়।

সাইবার লাইনের সার্ভে অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগের প্রধান শাহরিয়ার সিদ্দিক শাওন বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি ডেডিকেটেড ইউনিট রয়েছে। কিন্তু তারা প্রায়ই সমস্যাগুলো সমাধান করতে খুব বেশি সময় নেয়। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে সাধারণত ভুক্তভোগীদেরই দোষারোপ করা হয়। ফলে ভুক্তভোগীর পরিবারও অনেক সময় তাকে সমর্থন করে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত উদ্যোগ নিশ্চিত, সাইবার ক্রাইম ইউনিটগুলোতে সহজে প্রবেশাধিকার ও পরিবারের সচেতনতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন শাহরিয়ার সিদ্দিক শাওন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের সমর্থন দিতে থানায় প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল না থাকায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহ বোধ করেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ মনিটরিং ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন উইংয়ের ডেটাবেস অনুসারে, প্রায় ৫ হাজার ২৯৮ জন নারী ভুক্তভোগী কোন উদ্যোগ নেননি বা শুরুতে জানালেও পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য দেয়া বন্ধ করে দেন। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক মনিরা নাজমি জাহান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী নারীরা শুধু সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু তারা বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করতে চায় না। এমনকি কোন আইনি ব্যবস্থাও নিতে চায় না।

শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ১৭ জিলকদ ১৪৪৩

সাইবার অপরাধ বাড়ছে, ৬ মাসে ৪ হাজার অভিযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা। ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন (পিসিএসডব্লিউ) উইং প্রায় ৪ হাজার ৯৪টি সাইবার অপরাধের অভিযোগ পেয়েছে। তবে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই অভিযোগের সংখ্যা ছিল অন্তত ১২ হাজার ৬৪১। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাইবার লাইন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৯ শতাংশই সাইবার অপরাধের শিকার হন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মীর আবু তৌহিদ বলেন, পিসিএসডব্লিউ উইংয়ে এখন আমরা কেবল প্রকৃত অভিযোগ পাচ্ছি। এর আগে বেশকিছু ফলস অ্যালার্ম ছিল। এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতাও তৈরি করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম ও নির্ধারিত ইউনিট থাকা সত্ত্বেও সাইবার স্পেসে ব্ল্যাকমেইল ও নিপীড়নের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যেখানে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই নারী ও শিশু। তবে সাইবার অপরাধে শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও অভিযোগগুলো অমীমাংসিতই থেকে যায়। তাই অভিযোগ দিতেও নারাজ অনেকেই। সাইবার লাইনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাইবার অপরাধের শিকার প্রায় ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নারীর অভিযোগ এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। গত ২৫ মার্চ ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক হাজার ২৮০ জন ফেইসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়।

সাইবার লাইনের সার্ভে অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগের প্রধান শাহরিয়ার সিদ্দিক শাওন বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি ডেডিকেটেড ইউনিট রয়েছে। কিন্তু তারা প্রায়ই সমস্যাগুলো সমাধান করতে খুব বেশি সময় নেয়। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে সাধারণত ভুক্তভোগীদেরই দোষারোপ করা হয়। ফলে ভুক্তভোগীর পরিবারও অনেক সময় তাকে সমর্থন করে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত উদ্যোগ নিশ্চিত, সাইবার ক্রাইম ইউনিটগুলোতে সহজে প্রবেশাধিকার ও পরিবারের সচেতনতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন শাহরিয়ার সিদ্দিক শাওন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের সমর্থন দিতে থানায় প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল না থাকায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহ বোধ করেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ মনিটরিং ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন উইংয়ের ডেটাবেস অনুসারে, প্রায় ৫ হাজার ২৯৮ জন নারী ভুক্তভোগী কোন উদ্যোগ নেননি বা শুরুতে জানালেও পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য দেয়া বন্ধ করে দেন। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক মনিরা নাজমি জাহান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী নারীরা শুধু সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু তারা বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করতে চায় না। এমনকি কোন আইনি ব্যবস্থাও নিতে চায় না।