নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অবস্থা ভালো। কোভিড-১৯ মহামারী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে যখন ধীর করে দেয়, তখনই মূলত বৈশ্বিক রাজনৈতিক সংকটের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে এমন একটি পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের পটভূমিতে অন্য দেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, আটা এবং পেঁয়াজের মতো প্রধান পণ্য সরবরাহের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে ।

একটি দৃশ্যমান কঠোর সরকারি নজরদারি বাংলাদেশে এই পণ্যগুলোর বেশির ভাগের দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখতে পেরেছে, যদিও বিশেষজ্ঞ এবং আর্থিক বিশ্লেষকরা ইউক্রেন সংকটকে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ করার আশঙ্কা করেছিলেন।

এই অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখায় যে বাংলাদেশে এই পণ্যগুলো বেশিরভাগের দাম ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটানের তুলনায় কম রয়েছে।

সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১ টাকা ভারতের ০.৮৪ রুপি, পাকিস্তানের ২.২২ রুপি, শ্রীলঙ্কার ৩.৭৬ রুপি, নেপালের ১.৩৩ রুপি এবং ভুটানে ০.৮৪ গুলট্রামের সমান।

এই দেশগুলোতে চাল হলো প্রধান খাদ্য যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই পণ্যের গড় দাম পুরো অঞ্চলে বেড়েছে।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম গড়ে ৩৬.৪১ রুপিতে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশে প্রতি কেজি আমন ও বোরো মোটা চালের জন্য ৪৩ টাকা।

শ্রীলঙ্কায়, প্রতি কেজি চালের দাম এখন প্রায় ২৮০ রুপির কাছাকাছি, যা দুই মাস আগে প্রায় ৫০০ রুপিতে পৌঁছেছিল।

পাকিস্তানে, প্রতি কেজি চাল (ইরি) ৬৪.৮১ রুপিতে (রাওয়ালপিন্ডিতে ৬৪ রুপি এবং মুলতানে ৬৫.৬২ রুপি) বিক্রি হচ্ছে।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম এবং ময়দার ক্ষেত্রে, এই সমস্ত দেশের কিছু পরিমাণে সরবরাহ সংকটের মুখোমুখি পড়ে, কারণ এই দুটি দেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গমের প্রধান সরবরাহকারী।

প্রতি কেজি আটা (প্যাকেটজাত) বাংলাদেশে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ভারতে ৩৩.৮৫ রুপি এবং পাকিস্তানে ৬৪.৬৯ রুপি (মুলতানে ৬৩.৭৫ রুপি এবং ফয়সালাবাদে ৬৫.৬৩ রুপি)।

এই অঞ্চলে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে কারণ প্রধান পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে পাম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার সরাসরি প্রভাব ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় পড়েছে।

জাকার্তা অবশ্য তার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ স্থিতিশীল হলে মে মাসের শেষের দিকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

সর্বশেষ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের তুলনায় ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে রান্নার তেলের দাম বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের বর্তমান দাম ১৮২ টাকা, যা ভারতে ১৬৯.০৬ রুপি। তবে, শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহৃত নারিকেল তেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪১ রুপি।

সূর্যমুখী, চিনাবাদাম তেল এবং ক্যানোলাসহ অন্য রান্নার তেলের দাম কোভিড-পরবর্তী সময়ে ৫০-৭০ শতাংশ বেড়েছে, তবে ব্যবসায়ীরা চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে এই দাম বৃদ্ধিও জন্য দায়ী করেছেন।

পাকিস্তানে আকস্মিকভাবে ভোজ্যতেল ও ঘি-এর দাম অস্বাভাবিকভাবে ২০৮ রুপি ও ২১৩ রুপি বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৫৫৫ রুপি ও প্রতি লিটারে ৬০৫ রুপিতে পৌঁছেছে।

এদিকে, নেপালিদের এখন এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য প্রায় ১৯৭.১৫ থেকে ২১৪.৭৫ রুপি ব্যয় করতে হয়।

শ্রীলঙ্কায় সাধারণভাবে ব্যবহৃত চিনির দাম এখন কেজি প্রতি ৩২০ রুপি, যা পাকিস্তানে প্রায় ৮৩ রুপি, বাংলাদেশে ৮০ টাকা এবং ভারতে ৪১.৮৪ রুপি।

বাংলাদেশে আলুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম কারণ এটি প্রতি কেজি এখানে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ভারতে ২৫.০৮ রুপি, পাকিস্তানের লাহোরে ৪৮.৫০ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি এবং ভুটানি মুদ্রায় ৪৪.১৮ গুলট্রাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশেও টমেটো তুলনামূলক কম দামে প্রতি কেজি ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ভারতে ৫২.৪৯ রুপি, ভুটানে ৭৯.৭৫ গুলট্রাম, পাকিস্তানে ৭০.৫০ রুপি ও শ্রীলঙ্কায় ৫৫৫ থেকে ৮০০ রুপি।

শনিবার, ১৮ জুন ২০২২ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ১৮ জিলকদ ১৪৪৩

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো

বাসস

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অবস্থা ভালো। কোভিড-১৯ মহামারী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে যখন ধীর করে দেয়, তখনই মূলত বৈশ্বিক রাজনৈতিক সংকটের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে এমন একটি পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের পটভূমিতে অন্য দেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আলু, আটা এবং পেঁয়াজের মতো প্রধান পণ্য সরবরাহের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে ।

একটি দৃশ্যমান কঠোর সরকারি নজরদারি বাংলাদেশে এই পণ্যগুলোর বেশির ভাগের দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখতে পেরেছে, যদিও বিশেষজ্ঞ এবং আর্থিক বিশ্লেষকরা ইউক্রেন সংকটকে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ করার আশঙ্কা করেছিলেন।

এই অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখায় যে বাংলাদেশে এই পণ্যগুলো বেশিরভাগের দাম ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটানের তুলনায় কম রয়েছে।

সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১ টাকা ভারতের ০.৮৪ রুপি, পাকিস্তানের ২.২২ রুপি, শ্রীলঙ্কার ৩.৭৬ রুপি, নেপালের ১.৩৩ রুপি এবং ভুটানে ০.৮৪ গুলট্রামের সমান।

এই দেশগুলোতে চাল হলো প্রধান খাদ্য যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই পণ্যের গড় দাম পুরো অঞ্চলে বেড়েছে।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম গড়ে ৩৬.৪১ রুপিতে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশে প্রতি কেজি আমন ও বোরো মোটা চালের জন্য ৪৩ টাকা।

শ্রীলঙ্কায়, প্রতি কেজি চালের দাম এখন প্রায় ২৮০ রুপির কাছাকাছি, যা দুই মাস আগে প্রায় ৫০০ রুপিতে পৌঁছেছিল।

পাকিস্তানে, প্রতি কেজি চাল (ইরি) ৬৪.৮১ রুপিতে (রাওয়ালপিন্ডিতে ৬৪ রুপি এবং মুলতানে ৬৫.৬২ রুপি) বিক্রি হচ্ছে।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম এবং ময়দার ক্ষেত্রে, এই সমস্ত দেশের কিছু পরিমাণে সরবরাহ সংকটের মুখোমুখি পড়ে, কারণ এই দুটি দেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গমের প্রধান সরবরাহকারী।

প্রতি কেজি আটা (প্যাকেটজাত) বাংলাদেশে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ভারতে ৩৩.৮৫ রুপি এবং পাকিস্তানে ৬৪.৬৯ রুপি (মুলতানে ৬৩.৭৫ রুপি এবং ফয়সালাবাদে ৬৫.৬৩ রুপি)।

এই অঞ্চলে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে কারণ প্রধান পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে পাম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার সরাসরি প্রভাব ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় পড়েছে।

জাকার্তা অবশ্য তার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ স্থিতিশীল হলে মে মাসের শেষের দিকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

সর্বশেষ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের তুলনায় ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে রান্নার তেলের দাম বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের বর্তমান দাম ১৮২ টাকা, যা ভারতে ১৬৯.০৬ রুপি। তবে, শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহৃত নারিকেল তেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪১ রুপি।

সূর্যমুখী, চিনাবাদাম তেল এবং ক্যানোলাসহ অন্য রান্নার তেলের দাম কোভিড-পরবর্তী সময়ে ৫০-৭০ শতাংশ বেড়েছে, তবে ব্যবসায়ীরা চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে এই দাম বৃদ্ধিও জন্য দায়ী করেছেন।

পাকিস্তানে আকস্মিকভাবে ভোজ্যতেল ও ঘি-এর দাম অস্বাভাবিকভাবে ২০৮ রুপি ও ২১৩ রুপি বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৫৫৫ রুপি ও প্রতি লিটারে ৬০৫ রুপিতে পৌঁছেছে।

এদিকে, নেপালিদের এখন এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য প্রায় ১৯৭.১৫ থেকে ২১৪.৭৫ রুপি ব্যয় করতে হয়।

শ্রীলঙ্কায় সাধারণভাবে ব্যবহৃত চিনির দাম এখন কেজি প্রতি ৩২০ রুপি, যা পাকিস্তানে প্রায় ৮৩ রুপি, বাংলাদেশে ৮০ টাকা এবং ভারতে ৪১.৮৪ রুপি।

বাংলাদেশে আলুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম কারণ এটি প্রতি কেজি এখানে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ভারতে ২৫.০৮ রুপি, পাকিস্তানের লাহোরে ৪৮.৫০ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি এবং ভুটানি মুদ্রায় ৪৪.১৮ গুলট্রাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশেও টমেটো তুলনামূলক কম দামে প্রতি কেজি ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ভারতে ৫২.৪৯ রুপি, ভুটানে ৭৯.৭৫ গুলট্রাম, পাকিস্তানে ৭০.৫০ রুপি ও শ্রীলঙ্কায় ৫৫৫ থেকে ৮০০ রুপি।