বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ

দিন দিন অবনতি হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ কয়েক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। সেখানে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে বন্যা দুর্গত এ দুই জেলাতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। নিম্ন আয়ের মানুষ সরে যাবে অন্যত্র। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি। এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সোমেশ্বরী, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে রংপুর, নেত্রকোনা ও লারমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর পানি। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ডুবে গেছে। বিভিন্ন স্থানপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ইত্যাদি কারণে পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

সিলেট থেকে আকাশ চৌধুরী জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পিছিয়ে নেই নেত্রকোনাও। উজানের ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নি¤œ আয়ের অনেক মানুষ সিলেট ছাড়তে শুরু করেছে। রানওয়েতে পানি উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল। ক্যাম্পাসে পানি ঢুকে যাওয়ায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎব্যবস্থা। সড়কে পানি উঠায় সিলেটের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সার্বিক পরস্থিতির উন্নতিতে ও আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোতোয়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। এ দুই জেলার বিদ্যুৎব্যবস্থা সচল রাখতে সিলেটের কুমরাগাঁওয়ের প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেনে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলেও যেসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ছিল রাতের মধ্যে তা বেড়ে গলা সমান হয়ে গেছে। ফলে গতকাল সকালে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও তারা থাকতে পারছেন না। নৌকা না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না।

এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করলেও বিকেল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গতকাল সকাল ৬টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারি নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে বলে পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বানভাসি মানুষেরা বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। এছাড়া অনেক বন্যার্ত খাবার ও পানির সংকটে সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। ঘরে হাঁটু থেকে গলা সমান পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে ত্রাণও পাচ্ছেন না। এতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সংকটও তত বাড়ছে।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোরতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক রাস্তায় পানি থই থই করছে। বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। খাদ্যসংকট দূর করতে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।

বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ৮ উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট কাজ করছে। গতকাল দুপুর থেকে তারা নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দী মানুষ উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয় আসছেন।

সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হকক জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের ৩ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে।

সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি উঠায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্যগুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।

জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করা, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দী মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদা, স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্যসামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে, বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুতের গ্রিড লাইনের সাব স্টেশনে। এতে পুরো সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

গতকাল দুপুর থেকে মেজর মুক্তাদীরের নেতৃত্বে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চারপাশে বালুর বস্তা দিয়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে কুমারগাঁও সাবস্টেশন তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁঁকি দেখা দিয়েছে। এটি তলিয়ে গেলে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। এতে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই আমরা এই কেন্দ্রটি চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।

বন্ধ শাবি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্বাভাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে জরুরি ভিত্তিতে ২৫ জুন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল সকালে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানি আরও বাড়ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খোলা থাকবে। কোন শিক্ষার্থী হলে থাকতে চাইলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিজ দায়িত্ব নিয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে যা যা ব্যবস্থা করা দরকার সে ব্যবস্থা করে দিতে। কোন শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে চাইলে যদি কোন সমস্যায় পড়ে তারা যেন হল প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সুনামগঞ্জ : জেলার সদরসহ ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও শান্তিগঞ্জ এই ছয়টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ শহরেরর ৬০ ভাগ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন শহরবাসী। শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সুনামগঞ্জ শহরে ৩টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৩টি এবং ছাতকে ১৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে সহস্রাধিক বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

বন্যাকবলিত হওয়ায় জেলার ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তা-ঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় শহরের অনেক রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অন্তত ৩০টি আবাসিক এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ঘরবাড়ি দোকানপাটে পানি উঠে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

সুনামগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদ হাসান বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শহরের ৮০ ভাগ দোকানপাট পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত। দোকান ঘরে পানি ঢুকায় ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এমন অবস্থায় অনেকে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। এতে ক্রেতা সাধারণ পড়েছেন দুর্ভোগে।’

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়তে থাকায় যতই সময় যাচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। উপজেলার সব ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার রাতে বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে উপজেলার দোহালিয়া-বাজিতপুর সড়কের একটি পাকা সেতু। এদিকে নতহুন করে আমবাড়ী-কাটাখালী সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

নেত্রকোনা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও অব্যাহত বর্ষণে বাড়ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি। দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। দ্রুতগতিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল থেকে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। যদিও কয়েক ঘণ্টা পর আবার ওই এলাকার পানি নেমে যায়। এরপরও অতি বৃষ্টিতে উপজেলার নিচু সড়কসহ এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মসজিদ ও বাজারসহ বেশকিছু বাড়িঘর।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, দুপুর পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার উপরে হলেও কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর সুজন আহাম্মেদ গঙ্গাচড়া থেকে ফিরে জানান, অবিরাম বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ৩টার দিকে পানি কমে এখন বিপদসীমার দশমিক ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গঙ্গাচড়া পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল বেগে পানি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানে দুই থেকে আড়াই ফুট কোথাও কোথাও আরও বেশি পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বাড়িঘর ও টিউব ওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট এলাকায় শত শত বাড়ি ঘর ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ফসল ও রাস্তাঘাট। দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বাস করছি। অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে। অথচ সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাইনি আমরা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদি জানান, ইউনিয়নের বিনারচর আর জয়রাম ওঝা চরের কয়েকশ’ বাড়িঘর এখন ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে। পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

এদিকে গতকাল বিকেলে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরইছলী বাগেরহাট এলাকায় জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহ কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন, গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল হোসেন, ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকবর্তা মমিনুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী সারাবন তহুরাসহ ফায়ার সার্ভিস ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছে ৩৫ হাজার মানুষ। তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় পাউবোর বাঁধে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট জানান, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিকেল থেকে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলা পানি গতকাল বিকেল ৩টার পর থেকে শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তিস্তা ও ধরলা নদী পারের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে অন্তত ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গতকাল সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টার পর পানি কমে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জেলার হাতীবান্ধার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উজানে ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এবং বিকেল ৩টায় বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্ট পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সকালে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য নদী ও ডোবায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, তাঁতীপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজানের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রানীগঞ্জের ৭, ৮নং ওয়ার্ড, সিংঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

শনিবার, ১৮ জুন ২০২২ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ১৮ জিলকদ ১৪৪৩

বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ

সংবাদ ডেস্ক

image

বন্যার পানি বেড়েই চলেছে, মানুষ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, পরিবার নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন পরিবার। উপরের চিত্র সিলেটের, (নিচের) কুড়িগ্রামের -সংবাদ

দিন দিন অবনতি হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ কয়েক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। সেখানে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে বন্যা দুর্গত এ দুই জেলাতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। নিম্ন আয়ের মানুষ সরে যাবে অন্যত্র। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি। এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সোমেশ্বরী, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে রংপুর, নেত্রকোনা ও লারমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর পানি। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ডুবে গেছে। বিভিন্ন স্থানপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ইত্যাদি কারণে পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

সিলেট থেকে আকাশ চৌধুরী জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পিছিয়ে নেই নেত্রকোনাও। উজানের ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নি¤œ আয়ের অনেক মানুষ সিলেট ছাড়তে শুরু করেছে। রানওয়েতে পানি উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল। ক্যাম্পাসে পানি ঢুকে যাওয়ায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎব্যবস্থা। সড়কে পানি উঠায় সিলেটের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সার্বিক পরস্থিতির উন্নতিতে ও আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোতোয়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। এ দুই জেলার বিদ্যুৎব্যবস্থা সচল রাখতে সিলেটের কুমরাগাঁওয়ের প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেনে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলেও যেসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ছিল রাতের মধ্যে তা বেড়ে গলা সমান হয়ে গেছে। ফলে গতকাল সকালে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও তারা থাকতে পারছেন না। নৌকা না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না।

এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করলেও বিকেল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গতকাল সকাল ৬টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারি নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে বলে পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বানভাসি মানুষেরা বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। এছাড়া অনেক বন্যার্ত খাবার ও পানির সংকটে সবচেয়ে বেশি পড়েছেন। ঘরে হাঁটু থেকে গলা সমান পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে ত্রাণও পাচ্ছেন না। এতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সংকটও তত বাড়ছে।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোরতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর ও ঘাসিটুলা এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক রাস্তায় পানি থই থই করছে। বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। খাদ্যসংকট দূর করতে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।

বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ৮ উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৯টি ইউনিট কাজ করছে। গতকাল দুপুর থেকে তারা নৌকা দিয়ে বাড়িঘর থেকে পানিবন্দী মানুষ উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয় আসছেন।

সিলেট সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হকক জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের ৩ উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে।

সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেজর জেনারেল হামিদুল হক আরও জানান, সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি উঠায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্যগুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।

জিওসি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করা, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দী মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, বন্যা আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদা, স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমিত পরিসরে খাদ্যসামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে, বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুতের গ্রিড লাইনের সাব স্টেশনে। এতে পুরো সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

গতকাল দুপুর থেকে মেজর মুক্তাদীরের নেতৃত্বে কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চারপাশে বালুর বস্তা দিয়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে কুমারগাঁও সাবস্টেশন তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁঁকি দেখা দিয়েছে। এটি তলিয়ে গেলে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। এতে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই আমরা এই কেন্দ্রটি চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।

বন্ধ শাবি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্বাভাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে জরুরি ভিত্তিতে ২৫ জুন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল সকালে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানি আরও বাড়ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খোলা থাকবে। কোন শিক্ষার্থী হলে থাকতে চাইলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিজ দায়িত্ব নিয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে যা যা ব্যবস্থা করা দরকার সে ব্যবস্থা করে দিতে। কোন শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে চাইলে যদি কোন সমস্যায় পড়ে তারা যেন হল প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সুনামগঞ্জ : জেলার সদরসহ ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও শান্তিগঞ্জ এই ছয়টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ শহরেরর ৬০ ভাগ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন শহরবাসী। শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সুনামগঞ্জ শহরে ৩টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৩টি এবং ছাতকে ১৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে সহস্রাধিক বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

বন্যাকবলিত হওয়ায় জেলার ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তা-ঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় শহরের অনেক রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অন্তত ৩০টি আবাসিক এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ঘরবাড়ি দোকানপাটে পানি উঠে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

সুনামগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদ হাসান বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শহরের ৮০ ভাগ দোকানপাট পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত। দোকান ঘরে পানি ঢুকায় ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এমন অবস্থায় অনেকে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। এতে ক্রেতা সাধারণ পড়েছেন দুর্ভোগে।’

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়তে থাকায় যতই সময় যাচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। উপজেলার সব ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার রাতে বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে উপজেলার দোহালিয়া-বাজিতপুর সড়কের একটি পাকা সেতু। এদিকে নতহুন করে আমবাড়ী-কাটাখালী সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

নেত্রকোনা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও অব্যাহত বর্ষণে বাড়ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি। দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। দ্রুতগতিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল থেকে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। যদিও কয়েক ঘণ্টা পর আবার ওই এলাকার পানি নেমে যায়। এরপরও অতি বৃষ্টিতে উপজেলার নিচু সড়কসহ এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মসজিদ ও বাজারসহ বেশকিছু বাড়িঘর।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, দুপুর পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার উপরে হলেও কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর সুজন আহাম্মেদ গঙ্গাচড়া থেকে ফিরে জানান, অবিরাম বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ৩টার দিকে পানি কমে এখন বিপদসীমার দশমিক ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গঙ্গাচড়া পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল বেগে পানি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানে দুই থেকে আড়াই ফুট কোথাও কোথাও আরও বেশি পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বাড়িঘর ও টিউব ওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট এলাকায় শত শত বাড়ি ঘর ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ফসল ও রাস্তাঘাট। দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বাস করছি। অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে। অথচ সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাইনি আমরা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদি জানান, ইউনিয়নের বিনারচর আর জয়রাম ওঝা চরের কয়েকশ’ বাড়িঘর এখন ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে। পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

এদিকে গতকাল বিকেলে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরইছলী বাগেরহাট এলাকায় জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহ কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন, গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল হোসেন, ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকবর্তা মমিনুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী সারাবন তহুরাসহ ফায়ার সার্ভিস ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছে ৩৫ হাজার মানুষ। তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় পাউবোর বাঁধে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট জানান, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিকেল থেকে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলা পানি গতকাল বিকেল ৩টার পর থেকে শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তিস্তা ও ধরলা নদী পারের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে অন্তত ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গতকাল সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টার পর পানি কমে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জেলার হাতীবান্ধার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উজানে ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এবং বিকেল ৩টায় বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্ট পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সকালে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য নদী ও ডোবায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, তাঁতীপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজানের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রানীগঞ্জের ৭, ৮নং ওয়ার্ড, সিংঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।