ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হতে সমর্থন দিলেও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাস এলাকায় রুশ বাহিনীর বিপক্ষে লড়াই করতে ভারী অস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি। রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিন রাষ্ট্র জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির সঙ্গে রোমানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান একযোগে কিয়েভ সফর করলেন। এই সফর ঘিরে সারা বিশ্বের মাঝে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নতুন করে আলোচনা জন্ম দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সফর করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন দেশের নেতা- জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিস।
কিয়েভে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, ইউক্রেন ইউরোপীয় পরিবারেরই সদস্য- তবে ইইউয়ের সদস্য হওয়ার জন্য সব যোগ্যতা তাদের পূরণ করতে হবে। ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি বলেন, রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনের মানুষ সেইসব মূল্যবোধকেই রক্ষা করছেন, যার ওপর ভিত্তি করেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে।
ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা, গতকাল সদস্য পদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হওয়ার জন্য ইউক্রেনের আবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সুপারিশ ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার দেশের ওপর রাশিয়ার হামলা পুরো ইউরোপের ওপরই হামলার সামিল এবং শুধু ঐক্যবদ্ধভাবেই এটি থামানো সম্ভব। ইউরোপের নেতাদের একযোগে কিয়েভ সফরের উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানানো।
কিয়েভে গিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ বলেন, ‘এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা ইউক্রেনের জনগণের কাছে একটি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছি।’ যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার দখলে যাওয়া কোন ভূখ-ের দাবি ছেড়ে দেয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ইউক্রেনই নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাখোঁ।
ভূখ-সহ আর কী ছাড় ইউক্রেনের মেনে নেয়া উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইউক্রেনকে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক আইন ও আমাদের মূল্যবোধের ভিত্তিতে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।‘
পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই এখন যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে খানিকটা ভূখ- ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। জেলেনস্কি অনেকবারই বলেছেন, রাশিয়ার আক্রমণের কারণে কিছু অংশের দখল হাতছাড়া হলেও তার দেশ ভূখ-ের কোন রকম ছাড় মেনে নেবে না।
সেখানে তাদের সঙ্গে আরও যোগ দেন রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট কালিউস আয়োহানিস। ইউরোপের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যখন কিয়েভ সফর করছিলেন, তখনো কিয়েভে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজছিল। চার নেতা ইউক্রেনের ইরপিন শহর পরিদর্শন করেন, যেটি যুদ্ধের শুরুতেই মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়।
এসময় তারা একটি দেয়াল লিখন দেখতে পান, যাতে লেখা ছিল, ‘ইউরোপকে গড়ে তোলো, যুদ্ধ নয়। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ এটি দেখে মন্তব্য করেন, ‘এটি বেশ নাড়া দেয়ার মতো একটি স্লোগান, এটাই সঠিক বার্তা।’ এই সফরের আয়োজন করতে বেশ দীর্ঘ সময় লেগেছে, কারণ জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যে ধরনের অবস্থান নিয়েছিল, তার সমালোচনা করছিল ইউক্রেন।
ইউরোপীয় নেতাদের এই সফর ইউক্রেনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যদিও দেশটি তার দীর্ঘ-প্রত্যাশিত লক্ষ্য ইইউ প্রাথিতার মর্যাদার কাছাকাছি চলে গেছে, তবে পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাসে অঞ্চলের রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে দূরপাল্লার অস্ত্রের বড় কোন প্রতিশ্রতি পায়নি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা নতুন সরবরাহ আশা করি, বিশেষ করে ভারী অস্ত্র, আধুনিক রকেট আর্টিলারি এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের প্রতিটি চালান মানুষের জীবন রক্ষা করে। আর এর বিলম্ব বা স্থগিত মানেই প্রতিটি দিন রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য ইউক্রেনীয়দের হত্যা করার একটি সুযোগ।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেখানে এরই মধ্যে দুই বার কিয়েভ সফর করেছেন, সেখানে ওলাফ শলৎস বা ইমানুয়েল ম্যাখোঁর কেন আসতে এত দেরি হলো, সেই প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করছিলেন অনেকে। তবে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালি- এই তিন দেশের নেতাই বলছেন, তারা ইউক্রেনের জোরালো সমর্থক। তিনটি দেশই বলছে, তারা রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে অনেক বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
শনিবার, ১৮ জুন ২০২২ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ১৮ জিলকদ ১৪৪৩
ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হতে সমর্থন দিলেও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাস এলাকায় রুশ বাহিনীর বিপক্ষে লড়াই করতে ভারী অস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি। রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিন রাষ্ট্র জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির সঙ্গে রোমানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান একযোগে কিয়েভ সফর করলেন। এই সফর ঘিরে সারা বিশ্বের মাঝে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নতুন করে আলোচনা জন্ম দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সফর করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন দেশের নেতা- জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিস।
কিয়েভে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, ইউক্রেন ইউরোপীয় পরিবারেরই সদস্য- তবে ইইউয়ের সদস্য হওয়ার জন্য সব যোগ্যতা তাদের পূরণ করতে হবে। ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি বলেন, রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনের মানুষ সেইসব মূল্যবোধকেই রক্ষা করছেন, যার ওপর ভিত্তি করেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে।
ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা, গতকাল সদস্য পদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হওয়ার জন্য ইউক্রেনের আবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সুপারিশ ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার দেশের ওপর রাশিয়ার হামলা পুরো ইউরোপের ওপরই হামলার সামিল এবং শুধু ঐক্যবদ্ধভাবেই এটি থামানো সম্ভব। ইউরোপের নেতাদের একযোগে কিয়েভ সফরের উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানানো।
কিয়েভে গিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ বলেন, ‘এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা ইউক্রেনের জনগণের কাছে একটি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছি।’ যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার দখলে যাওয়া কোন ভূখ-ের দাবি ছেড়ে দেয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ইউক্রেনই নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাখোঁ।
ভূখ-সহ আর কী ছাড় ইউক্রেনের মেনে নেয়া উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইউক্রেনকে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক আইন ও আমাদের মূল্যবোধের ভিত্তিতে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।‘
পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই এখন যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে খানিকটা ভূখ- ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। জেলেনস্কি অনেকবারই বলেছেন, রাশিয়ার আক্রমণের কারণে কিছু অংশের দখল হাতছাড়া হলেও তার দেশ ভূখ-ের কোন রকম ছাড় মেনে নেবে না।
সেখানে তাদের সঙ্গে আরও যোগ দেন রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট কালিউস আয়োহানিস। ইউরোপের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যখন কিয়েভ সফর করছিলেন, তখনো কিয়েভে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজছিল। চার নেতা ইউক্রেনের ইরপিন শহর পরিদর্শন করেন, যেটি যুদ্ধের শুরুতেই মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়।
এসময় তারা একটি দেয়াল লিখন দেখতে পান, যাতে লেখা ছিল, ‘ইউরোপকে গড়ে তোলো, যুদ্ধ নয়। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ এটি দেখে মন্তব্য করেন, ‘এটি বেশ নাড়া দেয়ার মতো একটি স্লোগান, এটাই সঠিক বার্তা।’ এই সফরের আয়োজন করতে বেশ দীর্ঘ সময় লেগেছে, কারণ জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যে ধরনের অবস্থান নিয়েছিল, তার সমালোচনা করছিল ইউক্রেন।
ইউরোপীয় নেতাদের এই সফর ইউক্রেনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যদিও দেশটি তার দীর্ঘ-প্রত্যাশিত লক্ষ্য ইইউ প্রাথিতার মর্যাদার কাছাকাছি চলে গেছে, তবে পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাসে অঞ্চলের রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে দূরপাল্লার অস্ত্রের বড় কোন প্রতিশ্রতি পায়নি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা নতুন সরবরাহ আশা করি, বিশেষ করে ভারী অস্ত্র, আধুনিক রকেট আর্টিলারি এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের প্রতিটি চালান মানুষের জীবন রক্ষা করে। আর এর বিলম্ব বা স্থগিত মানেই প্রতিটি দিন রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য ইউক্রেনীয়দের হত্যা করার একটি সুযোগ।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেখানে এরই মধ্যে দুই বার কিয়েভ সফর করেছেন, সেখানে ওলাফ শলৎস বা ইমানুয়েল ম্যাখোঁর কেন আসতে এত দেরি হলো, সেই প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করছিলেন অনেকে। তবে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালি- এই তিন দেশের নেতাই বলছেন, তারা ইউক্রেনের জোরালো সমর্থক। তিনটি দেশই বলছে, তারা রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে অনেক বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেছে।