ম্যাঙ্গো ট্রেনে জমে উঠেছে রহনপুর আম বাজার

প্রতিদিন সারাদেশে যাচ্ছে সাড়ে তিন হাজার কেজি আম

জমে উঠেছে রহনপুর আম বাজার। সুমিষ্ট গোপালভোগ আম দিয়ে শুরু হয় আম বাজারের বেচাকেনা। তারপর একে একে গুটি, লক্ষণভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ বাহারি জাতের আমের বিপুল সমাহার হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর আম বাজারে। রহনপুর স্টেশন মাস্টার মির্জা কামরুল হক জানান, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি করে আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে রহনপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমের ফলন কম হওয়ার কারণে এর পরিমাণ বাড়বে বলে মনে হয় না।’

আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৮ মে বাজারে আম নামার কথা থাকলেও ২৫ মে থেকেই রহনপুর আমবাজারে আমের দেখা মিলে। গোপালভোগ আম বাজারে এখন নেই বললেই চলে। গোপালভোগ আম বাজারে উঠার সময় ২ হাজার থেকে শুরু সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। বর্তমান বাজারে হিমসাগর আম দেশীয় ভাষায় যাকে বলে খিরসাপাত তার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত চলছে। এছাড়াও বাজারে গুঠি জাতের আম ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে, লক্ষণভোগ ১৫শ’-১৮শ’ টাকার মধ্যে, কালিভোগ ২২শ -২৫শ টাকার মধ্যে, ল্যাংড়া ২২শ-২৫শ টাকার মধ্যে, আম্রপালি ২২শ-২৫শ টাকার মধ্যে, হাঁড়িভাঙ্গা ২৫শ-২৮শ টাকার মধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে ফজলি আমের দেখা মিলছে। দাম ধরা হচ্ছে ১২’শ-১৫’শ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন জাতের আমের ডালি, আম বোঝায় ক্যারেট দূর দূরান্ত থেকে ব্যাটারি চালিত ভ্যানযোগে খুব ভোরে এসে আম বাজারে সারিসারি করে রাখা হয়। সকাল ৭টায় আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর লোকজনের ভিড়, বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতায় বাজার ভর্তি। কেউ এসেছেন বাড়ির জন্য, কেউবা আতœীয়কে পাঠানোর জন্য, কেউবা কাওকে উপহার দেয়ার জন্য আম কিনতে এসেছে। এছাড়া ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা আম সিজন অব্দী রহনপুরে আস্তানা গেড়েছেন?। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন জাতের আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছে। তাদের ক্রয় করা আম নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩’শ ছোট-বড় ট্রাক যাতায়াত করছে। এছাড়া মৌসুমী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এলাকার ছাত্র, যুবক, তরুণেরা অনলাইনে আম কেনা-বেচা করছে। অনলাইন ব্যবসায়ীদের কারণে এখানকার কুরিয়ার সংস্থাগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। দেরিতে হলেও গত ১৩ জুন রহনপুর -ঢাকা চালু হয়েছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন। প্রতিদিন বিকেল ৪ টায় ছেড়ে ট্রেনটি আম নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায় রাত পৌনে ২ টায়।

আম আড়তদার আসিকুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে চাহিদা মোতাবেক সব ধরনের আম বাজারে রয়েছে। গতবারের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি হলেও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা এসে এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কেমিক্যাল মুক্ত আম ক্রয় করছে। আমরা আশাবাদী ফলন কম হলেও ব্যবসা ভালো হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলা আম চাষী ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, সমগ্র গোমস্তাপুর উপজেলায় সম্প্রতি কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ফলন প্রায় ৩৫% কমে যাবে বলে মনে করি। গতবারের চেয়ে আমের দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্ষতির কারণে অনেক আম ব্যবসায়ী এবার লোকসানের সম্মুখীন হবেন ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি এ উপজেলায় আম ব্যবসায়ীরা সারাদেশে কেমিক্যাল মুক্ত আম সরবরাহ করছে। পৌঁছায় রাত পৌনে ২ টায়।

রহনপুর স্টেশন মাস্টার মির্জা কামরুল হক জানান, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি করে আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে রহনপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমের ফলন কম হওয়ার কারণে এর পরিমাণ বাড়বে বলে মনে হয় না।’

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভির আহমেদ সরকার জানান, এবার ৪ হাজার ২শ ২০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। আমের গাছগুলোতে শুরুর দিকে মুকুল ভালো পরিমাণে আসলেও পরবর্তীতে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এখনো সময় আছে দেখা যাক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় কি না।

রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩

ম্যাঙ্গো ট্রেনে জমে উঠেছে রহনপুর আম বাজার

প্রতিদিন সারাদেশে যাচ্ছে সাড়ে তিন হাজার কেজি আম

প্রতিনিধি, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

image

প্রতিনিধি, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

জমে উঠেছে রহনপুর আম বাজার। সুমিষ্ট গোপালভোগ আম দিয়ে শুরু হয় আম বাজারের বেচাকেনা। তারপর একে একে গুটি, লক্ষণভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ বাহারি জাতের আমের বিপুল সমাহার হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর আম বাজারে। রহনপুর স্টেশন মাস্টার মির্জা কামরুল হক জানান, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি করে আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে রহনপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমের ফলন কম হওয়ার কারণে এর পরিমাণ বাড়বে বলে মনে হয় না।’

আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৮ মে বাজারে আম নামার কথা থাকলেও ২৫ মে থেকেই রহনপুর আমবাজারে আমের দেখা মিলে। গোপালভোগ আম বাজারে এখন নেই বললেই চলে। গোপালভোগ আম বাজারে উঠার সময় ২ হাজার থেকে শুরু সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। বর্তমান বাজারে হিমসাগর আম দেশীয় ভাষায় যাকে বলে খিরসাপাত তার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত চলছে। এছাড়াও বাজারে গুঠি জাতের আম ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে, লক্ষণভোগ ১৫শ’-১৮শ’ টাকার মধ্যে, কালিভোগ ২২শ -২৫শ টাকার মধ্যে, ল্যাংড়া ২২শ-২৫শ টাকার মধ্যে, আম্রপালি ২২শ-২৫শ টাকার মধ্যে, হাঁড়িভাঙ্গা ২৫শ-২৮শ টাকার মধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে ফজলি আমের দেখা মিলছে। দাম ধরা হচ্ছে ১২’শ-১৫’শ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন জাতের আমের ডালি, আম বোঝায় ক্যারেট দূর দূরান্ত থেকে ব্যাটারি চালিত ভ্যানযোগে খুব ভোরে এসে আম বাজারে সারিসারি করে রাখা হয়। সকাল ৭টায় আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর লোকজনের ভিড়, বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতায় বাজার ভর্তি। কেউ এসেছেন বাড়ির জন্য, কেউবা আতœীয়কে পাঠানোর জন্য, কেউবা কাওকে উপহার দেয়ার জন্য আম কিনতে এসেছে। এছাড়া ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা আম সিজন অব্দী রহনপুরে আস্তানা গেড়েছেন?। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন জাতের আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছে। তাদের ক্রয় করা আম নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩’শ ছোট-বড় ট্রাক যাতায়াত করছে। এছাড়া মৌসুমী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এলাকার ছাত্র, যুবক, তরুণেরা অনলাইনে আম কেনা-বেচা করছে। অনলাইন ব্যবসায়ীদের কারণে এখানকার কুরিয়ার সংস্থাগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। দেরিতে হলেও গত ১৩ জুন রহনপুর -ঢাকা চালু হয়েছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন। প্রতিদিন বিকেল ৪ টায় ছেড়ে ট্রেনটি আম নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায় রাত পৌনে ২ টায়।

আম আড়তদার আসিকুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে চাহিদা মোতাবেক সব ধরনের আম বাজারে রয়েছে। গতবারের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি হলেও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা এসে এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কেমিক্যাল মুক্ত আম ক্রয় করছে। আমরা আশাবাদী ফলন কম হলেও ব্যবসা ভালো হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলা আম চাষী ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, সমগ্র গোমস্তাপুর উপজেলায় সম্প্রতি কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ফলন প্রায় ৩৫% কমে যাবে বলে মনে করি। গতবারের চেয়ে আমের দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্ষতির কারণে অনেক আম ব্যবসায়ী এবার লোকসানের সম্মুখীন হবেন ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি এ উপজেলায় আম ব্যবসায়ীরা সারাদেশে কেমিক্যাল মুক্ত আম সরবরাহ করছে। পৌঁছায় রাত পৌনে ২ টায়।

রহনপুর স্টেশন মাস্টার মির্জা কামরুল হক জানান, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি করে আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে রহনপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমের ফলন কম হওয়ার কারণে এর পরিমাণ বাড়বে বলে মনে হয় না।’

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভির আহমেদ সরকার জানান, এবার ৪ হাজার ২শ ২০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। আমের গাছগুলোতে শুরুর দিকে মুকুল ভালো পরিমাণে আসলেও পরবর্তীতে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এখনো সময় আছে দেখা যাক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় কি না।