ঠেকানো যাচ্ছে না পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতা

মৃত্যুর ঝুঁকিতে এখনও শত শত পরিবার

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর ঝুঁকিতে এখনও শত শত পরিবার বাস করছে। প্রতি বছর বর্ষায় মৃত্যুর মিছিলে নতুন নতুন নাম যোগ হলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো মৃত্যুকে সঙ্গী করে বসবাস করছেন পাহাড়ের পাদদেশে। বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে ধেয়ে আসে মৃত্যুদূত। চোখের সামনেই পাহাড় ধসে মৃত্যু ও জীবন হারানোর আশঙ্কার মধ্যেও পাহাড় ছাড়ছে না ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণের পর নগরীর আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় দুই ভাই-বোন এবং অন্যটিতে দুই সহোদর নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনা এবং রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় এ দুই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেনÑ শাহিনুর আক্তার (২৬) ও মাইনুল আক্তার (২৪), লিটন (২৩) ও ইমন (১৪)। তবে এদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।

এর আগে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। সে বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যায় ৩০ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বৃষ্টির সময় নগরের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে পাহাড় ধসে তিনজন নিহত হয়। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে মারা যায়। সর্বশেষ গতকাল রাতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।

জানা গেছে, গতকাল গভীর রাতে একটানা বর্ষণে আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় দুই ভাই-বোন এবং অন্যটিতে দুই সহোদর নিহত হয়েছে। রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনা এবং রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় এ দুই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১টার দিকে বরিশাল ঘোনা পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। ওই সময় পাহাড়ের পাদদেশে ফজলুল হকের বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যেরা চাপা পড়ে। এ ঘটনায় মাইনুর ও শাহেনুর আকতার নামের দুই ভাই-বোন নিহত হন। এ সময় আহত হন ফজলুল হক ও তার স্ত্রী মোশারা বেগমসহ আরও তিনজন। এছাড়া রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় আরেকটি পাহাড় ধসের ঘটনায় লিটন ও ওমর নামের দুই সহোদর নিহত হয়।

আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন জানান, পাহাড় ধসের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানালেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার প্লাবণ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমাদের ভলান্টিয়ার রয়েছে। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ দেখালে আমাদের ভলান্টিয়াররা তাদের সেখানে নিয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদের সরিয়ে আনতে।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে প্রচ- বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের খাড়া পাহাড়গুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। একদিকে মাটি কেটে পাহাড়খেকোদের আবাসন তৈরির ব্যবসা, অন্যদিকে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সরকারি নিয়মনীতি না থাকার কারণে বন্দর নগরী ও জেলাতে প্রতি বছরই ঘটছে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা। এখনও নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও টিলা রয়েছে। যেখানে প্রচুর লোকজন বসবাস করছেন। লালখান বাজার এলাকায় একে খান মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে, লেকসিটি এলাকায়, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে রয়েছে লোকজনের মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস। এছাড়া মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ এবং বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়, ফয়েজ লেক সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, আমিন জুট মিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঝুঁকি নিয়ে শত শত পরিবার তাদের বসতঘর তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেখান থেকে বেশকিছু পরিবারকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হলেও কিছু পরিবার থেকে যায়।

জানা গেছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো উচ্ছেদ করতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জেলা প্রশাসন। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়েই বসবাস করছে শত শত পরিবার। যার কারণে ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ নেই। এদিকে নগরে ৬৫ পাহাড়ের মধ্যে ৩৪ পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এর মধ্যে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ৭টি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি।

বসবাসকারীরা বলছেন, শুধু ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের নিয়ে যায়। পরে আর খবর থাকে না। তাদের অভিযোগ, পাহাড়ের পাদদেশে ঘর নির্মাণের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তারাই পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করে নিম্নআয়ের লোকজনকে কম ভাড়ার কথা বলে বসবাসের প্ররোচনা দেন। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। শুধু বর্ষা এলেই বসতি উচ্ছেদ করে।

চট্টগ্রাম মহানগরে দু’দিনের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল নগরের নিচু এলাকা মরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটুপানি মাড়িয়ে যাত্রা করতে হয়েছে কর্মস্থলে।

রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩

ঠেকানো যাচ্ছে না পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতা

মৃত্যুর ঝুঁকিতে এখনও শত শত পরিবার

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর ঝুঁকিতে এখনও শত শত পরিবার বাস করছে। প্রতি বছর বর্ষায় মৃত্যুর মিছিলে নতুন নতুন নাম যোগ হলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো মৃত্যুকে সঙ্গী করে বসবাস করছেন পাহাড়ের পাদদেশে। বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে ধেয়ে আসে মৃত্যুদূত। চোখের সামনেই পাহাড় ধসে মৃত্যু ও জীবন হারানোর আশঙ্কার মধ্যেও পাহাড় ছাড়ছে না ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণের পর নগরীর আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় দুই ভাই-বোন এবং অন্যটিতে দুই সহোদর নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনা এবং রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় এ দুই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেনÑ শাহিনুর আক্তার (২৬) ও মাইনুল আক্তার (২৪), লিটন (২৩) ও ইমন (১৪)। তবে এদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।

এর আগে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। সে বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যায় ৩০ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বৃষ্টির সময় নগরের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে পাহাড় ধসে তিনজন নিহত হয়। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে মারা যায়। সর্বশেষ গতকাল রাতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।

জানা গেছে, গতকাল গভীর রাতে একটানা বর্ষণে আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় ধসের পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় দুই ভাই-বোন এবং অন্যটিতে দুই সহোদর নিহত হয়েছে। রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনা এবং রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় এ দুই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১টার দিকে বরিশাল ঘোনা পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। ওই সময় পাহাড়ের পাদদেশে ফজলুল হকের বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যেরা চাপা পড়ে। এ ঘটনায় মাইনুর ও শাহেনুর আকতার নামের দুই ভাই-বোন নিহত হন। এ সময় আহত হন ফজলুল হক ও তার স্ত্রী মোশারা বেগমসহ আরও তিনজন। এছাড়া রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় আরেকটি পাহাড় ধসের ঘটনায় লিটন ও ওমর নামের দুই সহোদর নিহত হয়।

আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন জানান, পাহাড় ধসের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানালেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার প্লাবণ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমাদের ভলান্টিয়ার রয়েছে। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ দেখালে আমাদের ভলান্টিয়াররা তাদের সেখানে নিয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদের সরিয়ে আনতে।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে প্রচ- বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের খাড়া পাহাড়গুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। একদিকে মাটি কেটে পাহাড়খেকোদের আবাসন তৈরির ব্যবসা, অন্যদিকে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সরকারি নিয়মনীতি না থাকার কারণে বন্দর নগরী ও জেলাতে প্রতি বছরই ঘটছে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা। এখনও নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও টিলা রয়েছে। যেখানে প্রচুর লোকজন বসবাস করছেন। লালখান বাজার এলাকায় একে খান মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে, লেকসিটি এলাকায়, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে রয়েছে লোকজনের মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস। এছাড়া মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ এবং বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়, ফয়েজ লেক সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, আমিন জুট মিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঝুঁকি নিয়ে শত শত পরিবার তাদের বসতঘর তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেখান থেকে বেশকিছু পরিবারকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হলেও কিছু পরিবার থেকে যায়।

জানা গেছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো উচ্ছেদ করতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জেলা প্রশাসন। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়েই বসবাস করছে শত শত পরিবার। যার কারণে ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ নেই। এদিকে নগরে ৬৫ পাহাড়ের মধ্যে ৩৪ পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এর মধ্যে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ৭টি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি।

বসবাসকারীরা বলছেন, শুধু ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের নিয়ে যায়। পরে আর খবর থাকে না। তাদের অভিযোগ, পাহাড়ের পাদদেশে ঘর নির্মাণের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তারাই পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করে নিম্নআয়ের লোকজনকে কম ভাড়ার কথা বলে বসবাসের প্ররোচনা দেন। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। শুধু বর্ষা এলেই বসতি উচ্ছেদ করে।

চট্টগ্রাম মহানগরে দু’দিনের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল নগরের নিচু এলাকা মরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটুপানি মাড়িয়ে যাত্রা করতে হয়েছে কর্মস্থলে।