পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর উপকারিতা নিয়ে সারাদেশে উৎসব বইছে। এর সঙ্গে এই সেতুর নদী শাসন বাঁধ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে হাজার হাজার পরিবার। বাঁধ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের সঙ্গে নদী ভাঙনকবলিত হাজার হাজার পরিবার বসত গড়ছে ভাঙন থেকে মুক্তির আশায়। তাই বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় এখন ভাঙনকবলিতদের বিভিন্ন স্থাপনার সমারোহ। এই বাধের পাশে আশ্রয় নিয়ে তারা ভাঙন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিন জানা যায়, ফেরদৌসি বেগম, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন। বড় বংশ নিয়ে বসত অভিজাত বাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সব সুবিধা নিয়েই বসবাস করছিলেন পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে বাড়ি, স্কুলসহ সবই হারায় ফেরদৌসি বেগমসহ চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও মাদবরচর ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার। দুই বছর আগে নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়ে ফেরদৌসি বসত গড়েন পদ্মা সেতুর নদী শাসন বাঁধের মধ্যে। সেখানে গড়ে তোলেন ২তলা ভবন। এই ভবনে ২ ছেলে বৌ নিয়ে সংসার পেতেছেন। তার মতো শিবচর উপজেলার পদ্মা বেষ্টিত নদী ভাঙনকবলিত ৪ ইউনিয়ন ও শরীয়তপুরের জাজিরার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার নদী শাসন বাঁধের মধ্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে।
অনেকেই এ অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী শাসন বাঁধের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে স্বস্তি পাচ্ছেন ভাঙন থেকে মুক্তির আশায়। এই বাঁধটি আরও সম্প্রসারণের দাবি নদী পাড়ের মানুষের। কারণ হিসেবে তারা এই বাঁধকে ভরসার স্থল হিসেবে দেখছেন। বাঁধের এ সব এলাকায় গড়ে উঠেছে হাট বাজারসহ নানা স্থাপনা। উল্লেখ্য, গত এক যুগে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৮-১০ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নদী ভাঙনকবলিত ফেরদৌসি বেগম বলেন, প্রতি বছর পদ্মার ভাঙনে কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা, মাদবরচর এই চারটি ইউনিয়নেই ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমিসহ এই তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পদ্মা সেতুর বেড়ি বাঁধের মধ্যে এখন বাড়ি করেছি। এখন বসত বাড়ি নদী ভাঙনের ভয় আর নেই। তবে সরকারের কাছে একটাই দাবি বেড়িবাঁধ যেন আরও সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে এই চরাঞ্চলের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পাবে। ভাঙনকবলিত আজগর ফকির বলেন, পদ্মা নদী এ পর্যন্ত চারবার বসত বাড়ি কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। অস্থায়ী ঘর তুলে কোনমতে বসবাস করেছি। এখন পদ্মা সেতুর বেড়িবাঁধ হওয়ার কারণে বাঁধের পাশে পাকা ঘর তুলেছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো আছি। এখন আর ভাঙন আতঙ্কে থাকতে হয় না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আরেক ভাঙনকবলিত আলতাফ মাদবর বলেন, আমরা চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের মানুষের বড় আতঙ্ক পদ্মা নদীর ভাঙন। এই নদী ভাঙন আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার নদী শাসন বেড়িবাঁধ দিয়েছেন। আমরা কয়েক হাজার পরিবার এখন বেড়িবাঁধের পাড়ে ঘর-বাড়ি তুলে শান্তিতে বসবাস করছি। এই বেড়িবাঁধ যদি আরও কয়েক কিলোমিটার বাড়ানো যায় তাহলে চরাঞ্চলের আরও অনেক মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু রক্ষায় বেড়িবাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি খুবই সুরক্ষিত। এই সুরক্ষিত বাঁধের কারণেই এক্সপ্রেসওয়ের পাশে বড় বড় প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর পাড়ে যে সব মানুষ বসবাস করতো তারা কিন্তু বারবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাঁধের ওপর এই মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই তারা বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। স্থায়ীভাবে তারা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। এই বাঁধটি মাদবরচর থেকে বন্দরখোলা পর্যন্ত বিস্তৃত করার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এটি যদি বিস্তৃত করা হয় তাহলে শিবচর অংশে নদী আর ভাঙবে না বলে আমি মনে করি।
রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩
প্রতিনিধি, শিবচর (মাদারীপুর)
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর উপকারিতা নিয়ে সারাদেশে উৎসব বইছে। এর সঙ্গে এই সেতুর নদী শাসন বাঁধ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে হাজার হাজার পরিবার। বাঁধ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের সঙ্গে নদী ভাঙনকবলিত হাজার হাজার পরিবার বসত গড়ছে ভাঙন থেকে মুক্তির আশায়। তাই বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় এখন ভাঙনকবলিতদের বিভিন্ন স্থাপনার সমারোহ। এই বাধের পাশে আশ্রয় নিয়ে তারা ভাঙন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিন জানা যায়, ফেরদৌসি বেগম, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন। বড় বংশ নিয়ে বসত অভিজাত বাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সব সুবিধা নিয়েই বসবাস করছিলেন পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে বাড়ি, স্কুলসহ সবই হারায় ফেরদৌসি বেগমসহ চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও মাদবরচর ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার। দুই বছর আগে নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়ে ফেরদৌসি বসত গড়েন পদ্মা সেতুর নদী শাসন বাঁধের মধ্যে। সেখানে গড়ে তোলেন ২তলা ভবন। এই ভবনে ২ ছেলে বৌ নিয়ে সংসার পেতেছেন। তার মতো শিবচর উপজেলার পদ্মা বেষ্টিত নদী ভাঙনকবলিত ৪ ইউনিয়ন ও শরীয়তপুরের জাজিরার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার নদী শাসন বাঁধের মধ্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে।
অনেকেই এ অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী শাসন বাঁধের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে স্বস্তি পাচ্ছেন ভাঙন থেকে মুক্তির আশায়। এই বাঁধটি আরও সম্প্রসারণের দাবি নদী পাড়ের মানুষের। কারণ হিসেবে তারা এই বাঁধকে ভরসার স্থল হিসেবে দেখছেন। বাঁধের এ সব এলাকায় গড়ে উঠেছে হাট বাজারসহ নানা স্থাপনা। উল্লেখ্য, গত এক যুগে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৮-১০ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নদী ভাঙনকবলিত ফেরদৌসি বেগম বলেন, প্রতি বছর পদ্মার ভাঙনে কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা, মাদবরচর এই চারটি ইউনিয়নেই ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমিসহ এই তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পদ্মা সেতুর বেড়ি বাঁধের মধ্যে এখন বাড়ি করেছি। এখন বসত বাড়ি নদী ভাঙনের ভয় আর নেই। তবে সরকারের কাছে একটাই দাবি বেড়িবাঁধ যেন আরও সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে এই চরাঞ্চলের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পাবে। ভাঙনকবলিত আজগর ফকির বলেন, পদ্মা নদী এ পর্যন্ত চারবার বসত বাড়ি কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। অস্থায়ী ঘর তুলে কোনমতে বসবাস করেছি। এখন পদ্মা সেতুর বেড়িবাঁধ হওয়ার কারণে বাঁধের পাশে পাকা ঘর তুলেছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো আছি। এখন আর ভাঙন আতঙ্কে থাকতে হয় না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আরেক ভাঙনকবলিত আলতাফ মাদবর বলেন, আমরা চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের মানুষের বড় আতঙ্ক পদ্মা নদীর ভাঙন। এই নদী ভাঙন আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার নদী শাসন বেড়িবাঁধ দিয়েছেন। আমরা কয়েক হাজার পরিবার এখন বেড়িবাঁধের পাড়ে ঘর-বাড়ি তুলে শান্তিতে বসবাস করছি। এই বেড়িবাঁধ যদি আরও কয়েক কিলোমিটার বাড়ানো যায় তাহলে চরাঞ্চলের আরও অনেক মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু রক্ষায় বেড়িবাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি খুবই সুরক্ষিত। এই সুরক্ষিত বাঁধের কারণেই এক্সপ্রেসওয়ের পাশে বড় বড় প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর পাড়ে যে সব মানুষ বসবাস করতো তারা কিন্তু বারবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাঁধের ওপর এই মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই তারা বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। স্থায়ীভাবে তারা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। এই বাঁধটি মাদবরচর থেকে বন্দরখোলা পর্যন্ত বিস্তৃত করার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এটি যদি বিস্তৃত করা হয় তাহলে শিবচর অংশে নদী আর ভাঙবে না বলে আমি মনে করি।