দেশে চলছে ৬৫ দিনের জন্য দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয়রা। এ অভিযোগ বরগুনার জেলেদের। যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা থেকে বিরত আছে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের জন্য দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞা মেনে বাংলাদেশের জেলেরা ঘরে বসে থাকলেও বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ভারতীয় জেলেরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিরোধ করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়ে আশানুরূপ মাছ পাবে না বরগুনার জেলেরা। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা কোন কাজেই আসবে না বলে দাবি জেলেদের।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের জেলেরা সমুদ্রে যাচ্ছেন না। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। তারা আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাল ও ট্রলার নিয়ে অনেকটা সাগর সেচে তোলার মতো মাছ ধরে নেয়।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামের জেলে হোসেন আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘সাগরে মাছ যাতে বাড়ে তাই দুই মাস ঘরে বইয়া থাকি, নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। এই দুই মাস আমাগো চুলায় আগুন জ্বলে না। ধার-দেনা কইরা বউ-বাচ্চা নিয়া কোন মতে দুই মাস পার করি। হেরপর ঋণ আর দাদনের বোঝা মাথায় লইয়া সাগরে যাই। কিন্তু সাগরে যাইয়া দেহি মাছ নাই। সব মাছ ভারতীয় জাইল্লারা ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা খালি আমাগো লইগ্গা, আমাগো সাগরে ডুইক্কা আমাগো মাছ ভারতীয়রা ধইরা লইয়া যায়, আমরা নিষেধাজ্ঞা পালন করি।’
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ভারতীয়দের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার রয়েছে, তাই তারা বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা দূর থেকে দেখেই দ্রুত পালিয়ে যায়। একই সাগরে দুই ধরনের নিয়ম, ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকার দাবি জানান। তিনি আরও জানান, ক’দিন আগে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কাজে। এ সময় তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের জেলে ব্রজেন দাসও জগোদিশের সঙ্গে কথা বলেন, তারা তাকে জানিয়েছেন, তাদের ওখানের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ১৫ জুন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এখন সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরতে। ভারতীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে তেমন ইলিশ মাছ নেই তাই মাছের জন্য বাংলাদেশের আওতায় মাছ শিকারের জন্য বঙ্গোপসাগরই একমাত্র ভরসা।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট হারুনর রশীদ বলেন, নিষেধাজ্ঞায় কোন দেশের জেলেরাই সাগরে যেতে পারবে না দেশের জলসীমায় আমাদের টহল অব্যাহত রয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে জেলেদের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ভারতীয় জেলেদের সাগরে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। কারণ ভারতেও চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এরপরও যাতে কেউ এদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে দেশের মৎস্যসম্পদ ধরে নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান।
রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক,বরগুনা
দেশে চলছে ৬৫ দিনের জন্য দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয়রা। এ অভিযোগ বরগুনার জেলেদের। যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা থেকে বিরত আছে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের জন্য দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞা মেনে বাংলাদেশের জেলেরা ঘরে বসে থাকলেও বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ভারতীয় জেলেরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিরোধ করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়ে আশানুরূপ মাছ পাবে না বরগুনার জেলেরা। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা কোন কাজেই আসবে না বলে দাবি জেলেদের।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের জেলেরা সমুদ্রে যাচ্ছেন না। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। তারা আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাল ও ট্রলার নিয়ে অনেকটা সাগর সেচে তোলার মতো মাছ ধরে নেয়।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামের জেলে হোসেন আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘সাগরে মাছ যাতে বাড়ে তাই দুই মাস ঘরে বইয়া থাকি, নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। এই দুই মাস আমাগো চুলায় আগুন জ্বলে না। ধার-দেনা কইরা বউ-বাচ্চা নিয়া কোন মতে দুই মাস পার করি। হেরপর ঋণ আর দাদনের বোঝা মাথায় লইয়া সাগরে যাই। কিন্তু সাগরে যাইয়া দেহি মাছ নাই। সব মাছ ভারতীয় জাইল্লারা ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা খালি আমাগো লইগ্গা, আমাগো সাগরে ডুইক্কা আমাগো মাছ ভারতীয়রা ধইরা লইয়া যায়, আমরা নিষেধাজ্ঞা পালন করি।’
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ভারতীয়দের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার রয়েছে, তাই তারা বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা দূর থেকে দেখেই দ্রুত পালিয়ে যায়। একই সাগরে দুই ধরনের নিয়ম, ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকার দাবি জানান। তিনি আরও জানান, ক’দিন আগে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কাজে। এ সময় তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের জেলে ব্রজেন দাসও জগোদিশের সঙ্গে কথা বলেন, তারা তাকে জানিয়েছেন, তাদের ওখানের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ১৫ জুন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এখন সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরতে। ভারতীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে তেমন ইলিশ মাছ নেই তাই মাছের জন্য বাংলাদেশের আওতায় মাছ শিকারের জন্য বঙ্গোপসাগরই একমাত্র ভরসা।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট হারুনর রশীদ বলেন, নিষেধাজ্ঞায় কোন দেশের জেলেরাই সাগরে যেতে পারবে না দেশের জলসীমায় আমাদের টহল অব্যাহত রয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে জেলেদের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ভারতীয় জেলেদের সাগরে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। কারণ ভারতেও চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এরপরও যাতে কেউ এদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে দেশের মৎস্যসম্পদ ধরে নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান।