নবীকে নিয়ে বিজেপি নেতার কটূক্তি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুজন নেতা মুসলিম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সারা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন বিতর্কে নবী সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল একই বিষয়ে টুইটারে একটি পোস্ট দেন। ব্যাপক সমালোচনা এবং প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে দুই নেতা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, নূপুর শর্মাকে বিজেপি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং নভিন জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। নূপুর শর্মা নবীজীর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের সময়কালীন তার বয়স উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমি হিন্দি বুঝি না, বিভিন্ন জনের পোস্ট থেকে যা বুঝতে পেরেছি তা হলো, নবীজী যখন আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেন তখন আয়েশার (রা.) বয়স ছিল ৬ এবং যখন তিনি নবীজীর ঘরে আসেন তখন বয়স ছিল ৯ বছর। টকশোতে বক্তব্য প্রদানকালে তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা গেছে, মনে হয় তার বলা কথাগুলো শুধু তথ্য প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তথ্যগুলো পরিবেশনে শ্রুতিকটু ছিল।

কেউ মৃত্যুবরণ করলে সাধারণত তার সব ভুল, ত্রুটি ঢাকা পড়ে যায়, সবাই তার গুণ ও সৎ কর্মের প্রশংসা করে থাকে। মৃত ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত রাখার এমন প্রয়াস প্রায় সব সমাজে কমবেশী লক্ষ করা যায়। এই শুভ প্রয়াসের আরও একটি কারণ রয়েছে, কারণটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকে না; যার উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকে না তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করার মধ্যে হীন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠে। তবে কেউ পাবলিক ফিগার হলে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলে, ইতিহাসের অংশ হলে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু সেই আলোচনা-সমালোচনা খিস্তিখেওড়ে পর্যবসিত হলে তা কুরুচির পরিচায়ক। কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়; তবুও আমরা অনেক মানুষকে আদর্শ মনে করি, অনেক মানুষের ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবন অনুসরণ করতে অধিকাংশ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জাতির জনক রয়েছেন, জাতির জনকরা শতভাগ শুদ্ধ ছিলেন, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। তাদের ভুল-ত্রুটি তাদের ভালো কর্মকা-ের ব্যাপকতায় চাপা পড়ে যায়, তারা জাতির কাছে হয়ে উঠেন শ্রেষ্ঠ মানব।

প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন তাদের নবী, পয়গম্বর, অবতারের কোন ভুল-ত্রুটি নেই। নবী, পয়গম্বর বা অবতার সাধারণ মানুষ নন, তাদের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার বাণী মানব কল্যাণে প্রচারিত হয়েছে। নবী, পয়গম্বর, অবতারেরা নিষ্কলুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেই মানুষ তাদের প্রচারিত ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা যা করেছেন বা যা বলেছেন, তা কখনোই যুক্তির নিক্তিতে বিচার্য নয়, বিশ্বাসীরা বিনা তর্কে তাদের সব কিছু মেনে নিয়ে তাদের আদর্শে জীবন গঠনে ব্রতী হয়। তাদের নিয়ে বিশ্বাসীদের মনে যে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে সেখানে কোন সংশয় নেই, দ্বন্দ্ব নেই, বিতর্ক নেই। যুক্তি দিয়ে নয়, ভক্ত হৃদয়ের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দিয়ে এই ইমেজ তৈরি হয়েছে। মনের গভীরে তৈরি করা ইমেজের কোন প্রতিপক্ষকে কেউ সহ্য করে না, সহ্য করে না কোন কটূক্তি। শুধু নবী বা পয়গম্বর নয়, কোন একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে গড়া ইমেজের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাও অনেকে সহ্য করতে চায় না। মা বা বাবা অন্য মানুষের চোখে যত অপরাধীই হোক না কেন, সন্তানের কাছে তারা শ্রেষ্ঠ মানুষ। ভুল-ত্রুটি হলে নির্দিষ্ট রায় নিয়ে পর্যালোচনা করা গেলেও বিচারক ও বিচারালয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যথার্থ নয়, কারণ বিচারালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হলে বিচারের প্রতি আর আস্থা থাকে না।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় পাঁচশত বছরের মুসলিম শাসনে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না; কারণ তখনও ইতিহাস বিজয়ীদের কীর্তি দ্বারা তৈরি হতো। আলেকজা-ার, হালাকু খান, তৈমুর লঙ, সুলতান মাহমুদদের কাজই ছিল জোর করে অন্যের দেশ দখল করা, সম্পদ লুট করা আর নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা। এই জঘন্য শাসকরাই ইতিহাসে বীর-মহাবীর নামে খ্যাত। তবে এরা ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাত না, সম্পদ লুট বা মানুষ হত্যায় এরা ধর্ম বিচার করত না। মোঘলরা বিদেশি এবং বিজাতীয় হলেও এদের আমলে সম্পদ লুট হয়নি, এরা ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নেয়ার চিন্তাও করেনি। তবে কেউ কেউ নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য প্রজা নিপীড়ন করেছেন। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অভিপ্রায়ে ইংরেজরা ধর্মকে প্রথম ব্যবহার করা শুরু করে। ১৮৮৫ সনে ইংরেজ শাসকদের সম্মতিতে গড়ে উঠা কংগ্রেসকে পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ালে ১৯০৬ সনে কংগ্রেসের কিছু মুসলিম নেতাকে দিয়ে কংগ্রেসেরই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুসলিম লীগ গঠনের পরপরই ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বিভাজনের সৃষ্টি হতে থাকে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের শুধু প্রতিপক্ষ নয়, পরস্পর পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়। ১৯৪৬ সনে ‘দ্য ক্যালকাটা গ্রেট কিলিং’-এ শুধু ধর্ম পরিচয়ে মানুষের হাতে মানুষ কতল হয়েছে অগণিত।

ধর্ম মানুষকে প্রবল আবেগে যুক্তিহীন করে তোলে। জওহরলাল নেহেরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ কিছু নেতা ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ভারতবর্ষের মানবতা রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ইন্দিরা গান্ধীও ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবিদার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও ধার্মিক ছিলেন না, তিনিও চেয়েছিলেন পাকিস্তানকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধার্মিক হলেও সাম্প্রদায়িকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই তিনটি দেশ শাসকদের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন মদদে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ লোকদের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনায় পাকিস্তানের প্রায় প্রত্যেক শাসক বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক পাকিস্তানকে তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, এখন প্রায় প্রতিদিন আত্মঘাতী বোমার আঘাতে লোক মরছে, ব্লাসফেমি আইনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কতল করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি আসার পর ভারতও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

কোন দেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ লেখা থাকলেই সেই রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না বা সেই রাষ্ট্রের জনগণ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে উঠে না। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণের অঙ্গীকার নিয়ে এবং তদনুযায়ী সংবিধানে এই নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এরশাদ সাহেব কারও দাবি না থাকা সত্ত্বেও সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে এটা সত্য, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার আগে বা পরে রাষ্ট্রের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ জনগণের চিন্তা-চেতনা সংবিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বিএনপির চরিত্র পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের মতো, এরা ধর্ম পালনে একনিষ্ঠ না হলেও ধর্মের কথা বেশি বলে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ধর্মের কথা কম বললেও ধর্ম পালনে তাদের কর্মী ও সমর্থকরা অধিকতর নীতিনিষ্ঠ; ধর্ম পালনে নীতিনিষ্ঠ হওয়া উত্তম মুসলমানের পরিচায়ক, কিন্তু তাদের অনেকে আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে, ঠিক যেভাবে করে থাকে ভারতের নরেন্দ্র মোদির বিজেপির কিছু কর্মী ও সমর্থকরা। মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিছু হিন্দু রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে; এই স্বপ্ন দেখার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর সমর্থন নিয়ে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর সমর্থন পেতে ধর্মকে তিনি সফলভাবে ব্যবহার করতেও সমর্থ হয়েছেন।

বর্তমানে পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে হালাল সাবানের খুশবু ছড়িয়েছিল, এখন হালাল সুগন্ধীর বিজ্ঞপ্তিতে খেলোয়াড় মাশরাফিকে দেখতে পাই। কোন পণ্যের বাজার ধ্বংস করার জন্য মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য বা পণ্যের মোড়কের গায়ে ধর্মকে বিকৃত করে কোন চিহ্ন প্রদর্শন করা হয়। নবীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করার জন্য ফ্রান্সের পণ্য বর্জন শুরু হয়েছিল, কিন্তু ফ্রান্স খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হয়নি।

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যক্তিগত জীবনাচার নিয়ে কটূক্তি করে বিজেপি এবার মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। ৫৬টি মুসলিম দেশ রয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের বাস। আফ্রিকার কয়েকটি মুসলিম দেশে বার মাস দুর্ভিক্ষ লেগে থাকলেও অধিকাংশ মুসলিম দেশ ধনী, তারা বিলাসী জীবনযাপনে অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করে না। কোন কোন যুবরাজ পাশ্চাত্যে বেড়াতে গেলে পুরো হোটেল ভাড়া করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নিজস্ব উৎপাদন খুব কম, এই দেশগুলো ইউরোপ, আমেরিকা এবং ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ছাড়া প্রায় সব মুসলিম দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই সকল মুসলিম দেশে প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বাংলাদেশের প্রবাসীর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বাজার হারাতে ইউরোপ, আমেরিকা বা ভারত কখনো চাইবে না। আলেকজা-ারের যুগ শেষ, এখন ভূমি দখলের চেয়ে বাজার দখলের রাজনীতি মুখ্য, মুখ্য বলেই আমেরিকা এবং ইউরোপ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে তাদের শত্রু দেশকে বিশ্ববাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মোদির বিজেপি সরকার নতজানু হয়ে করজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করছে।

একজন নূপুর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে সারা ভারত প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। প্রায় প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এক ওয়াজি আলেম যেভাবে দেবী দুর্গাকে অশ্লীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন তা অশ্রাব্য ও শ্রুতিকটু; কিন্তু তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন আলেম বা ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতিবাদ করেছে বলে অন্তত আমি শুনিনি। অন্য ধর্মের কোন ধর্মীয় নেতাকে কটুকথা বলতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ কটুকথার প্রত্যুত্তর কটু কথা দিয়েই হয়। পশ্চিমের লোকজন আলাপ-আলোচনায় দুটি বিষয় পরিহার করে থাকে- এক ধর্ম, দুই রাজনীতি। ধর্মের কারণে পৃথিবীতে যত লোক মারা গেছে অন্য কোন একক কারণে তত লোক মারা যায়নি। ভারতে হিন্দু উগ্রপন্থীদের সৃষ্টি ব্রিটিশ আমলে, গান্ধীর মতো অহিংস নীতির লোকও হিন্দু উগ্রপন্থি নাথুরাম গডসের হাতে খুন হয়েছেন। ভারত আর পাকিস্তান সৃষ্টির পরপর ভারতে যে দাঙ্গা হয় সেই দাঙ্গা পুলিশ থামায়নি, কারণ পুলিশও কোন না কোন ধর্মের লোক ছিল, নির্লিপ্ত পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে প-িত জওহরলাল নেহেরু দাঙ্গাবাজদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের কিছু উগ্র লোক ভারত থেকে হিন্দু ছাড়া আর বাকি সব ধর্মাবলম্বীদের তাড়াতে পারলে খুশি হয়। ধর্মান্ধ এই লোকগুলোর কারণে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের সংঘাত লেগেই আছে, মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ক্রমান্বয়ে ওদের হাতে চলে যাচ্ছে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩

নবীকে নিয়ে বিজেপি নেতার কটূক্তি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুজন নেতা মুসলিম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সারা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন বিতর্কে নবী সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল একই বিষয়ে টুইটারে একটি পোস্ট দেন। ব্যাপক সমালোচনা এবং প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে দুই নেতা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, নূপুর শর্মাকে বিজেপি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং নভিন জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। নূপুর শর্মা নবীজীর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের সময়কালীন তার বয়স উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমি হিন্দি বুঝি না, বিভিন্ন জনের পোস্ট থেকে যা বুঝতে পেরেছি তা হলো, নবীজী যখন আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেন তখন আয়েশার (রা.) বয়স ছিল ৬ এবং যখন তিনি নবীজীর ঘরে আসেন তখন বয়স ছিল ৯ বছর। টকশোতে বক্তব্য প্রদানকালে তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা গেছে, মনে হয় তার বলা কথাগুলো শুধু তথ্য প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তথ্যগুলো পরিবেশনে শ্রুতিকটু ছিল।

কেউ মৃত্যুবরণ করলে সাধারণত তার সব ভুল, ত্রুটি ঢাকা পড়ে যায়, সবাই তার গুণ ও সৎ কর্মের প্রশংসা করে থাকে। মৃত ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত রাখার এমন প্রয়াস প্রায় সব সমাজে কমবেশী লক্ষ করা যায়। এই শুভ প্রয়াসের আরও একটি কারণ রয়েছে, কারণটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকে না; যার উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকে না তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করার মধ্যে হীন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠে। তবে কেউ পাবলিক ফিগার হলে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলে, ইতিহাসের অংশ হলে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু সেই আলোচনা-সমালোচনা খিস্তিখেওড়ে পর্যবসিত হলে তা কুরুচির পরিচায়ক। কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়; তবুও আমরা অনেক মানুষকে আদর্শ মনে করি, অনেক মানুষের ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবন অনুসরণ করতে অধিকাংশ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জাতির জনক রয়েছেন, জাতির জনকরা শতভাগ শুদ্ধ ছিলেন, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। তাদের ভুল-ত্রুটি তাদের ভালো কর্মকা-ের ব্যাপকতায় চাপা পড়ে যায়, তারা জাতির কাছে হয়ে উঠেন শ্রেষ্ঠ মানব।

প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন তাদের নবী, পয়গম্বর, অবতারের কোন ভুল-ত্রুটি নেই। নবী, পয়গম্বর বা অবতার সাধারণ মানুষ নন, তাদের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার বাণী মানব কল্যাণে প্রচারিত হয়েছে। নবী, পয়গম্বর, অবতারেরা নিষ্কলুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেই মানুষ তাদের প্রচারিত ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা যা করেছেন বা যা বলেছেন, তা কখনোই যুক্তির নিক্তিতে বিচার্য নয়, বিশ্বাসীরা বিনা তর্কে তাদের সব কিছু মেনে নিয়ে তাদের আদর্শে জীবন গঠনে ব্রতী হয়। তাদের নিয়ে বিশ্বাসীদের মনে যে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে সেখানে কোন সংশয় নেই, দ্বন্দ্ব নেই, বিতর্ক নেই। যুক্তি দিয়ে নয়, ভক্ত হৃদয়ের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দিয়ে এই ইমেজ তৈরি হয়েছে। মনের গভীরে তৈরি করা ইমেজের কোন প্রতিপক্ষকে কেউ সহ্য করে না, সহ্য করে না কোন কটূক্তি। শুধু নবী বা পয়গম্বর নয়, কোন একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে গড়া ইমেজের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাও অনেকে সহ্য করতে চায় না। মা বা বাবা অন্য মানুষের চোখে যত অপরাধীই হোক না কেন, সন্তানের কাছে তারা শ্রেষ্ঠ মানুষ। ভুল-ত্রুটি হলে নির্দিষ্ট রায় নিয়ে পর্যালোচনা করা গেলেও বিচারক ও বিচারালয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যথার্থ নয়, কারণ বিচারালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হলে বিচারের প্রতি আর আস্থা থাকে না।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় পাঁচশত বছরের মুসলিম শাসনে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না; কারণ তখনও ইতিহাস বিজয়ীদের কীর্তি দ্বারা তৈরি হতো। আলেকজা-ার, হালাকু খান, তৈমুর লঙ, সুলতান মাহমুদদের কাজই ছিল জোর করে অন্যের দেশ দখল করা, সম্পদ লুট করা আর নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা। এই জঘন্য শাসকরাই ইতিহাসে বীর-মহাবীর নামে খ্যাত। তবে এরা ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাত না, সম্পদ লুট বা মানুষ হত্যায় এরা ধর্ম বিচার করত না। মোঘলরা বিদেশি এবং বিজাতীয় হলেও এদের আমলে সম্পদ লুট হয়নি, এরা ভারতবর্ষের সম্পদ নিজ দেশে নেয়ার চিন্তাও করেনি। তবে কেউ কেউ নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য প্রজা নিপীড়ন করেছেন। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অভিপ্রায়ে ইংরেজরা ধর্মকে প্রথম ব্যবহার করা শুরু করে। ১৮৮৫ সনে ইংরেজ শাসকদের সম্মতিতে গড়ে উঠা কংগ্রেসকে পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ালে ১৯০৬ সনে কংগ্রেসের কিছু মুসলিম নেতাকে দিয়ে কংগ্রেসেরই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুসলিম লীগ গঠনের পরপরই ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বিভাজনের সৃষ্টি হতে থাকে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের শুধু প্রতিপক্ষ নয়, পরস্পর পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়। ১৯৪৬ সনে ‘দ্য ক্যালকাটা গ্রেট কিলিং’-এ শুধু ধর্ম পরিচয়ে মানুষের হাতে মানুষ কতল হয়েছে অগণিত।

ধর্ম মানুষকে প্রবল আবেগে যুক্তিহীন করে তোলে। জওহরলাল নেহেরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ কিছু নেতা ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ভারতবর্ষের মানবতা রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ইন্দিরা গান্ধীও ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবিদার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও ধার্মিক ছিলেন না, তিনিও চেয়েছিলেন পাকিস্তানকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধার্মিক হলেও সাম্প্রদায়িকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই তিনটি দেশ শাসকদের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন মদদে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ লোকদের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনায় পাকিস্তানের প্রায় প্রত্যেক শাসক বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক পাকিস্তানকে তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, এখন প্রায় প্রতিদিন আত্মঘাতী বোমার আঘাতে লোক মরছে, ব্লাসফেমি আইনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কতল করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি আসার পর ভারতও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

কোন দেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ লেখা থাকলেই সেই রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না বা সেই রাষ্ট্রের জনগণ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে উঠে না। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণের অঙ্গীকার নিয়ে এবং তদনুযায়ী সংবিধানে এই নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এরশাদ সাহেব কারও দাবি না থাকা সত্ত্বেও সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে এটা সত্য, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার আগে বা পরে রাষ্ট্রের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ জনগণের চিন্তা-চেতনা সংবিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বিএনপির চরিত্র পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের মতো, এরা ধর্ম পালনে একনিষ্ঠ না হলেও ধর্মের কথা বেশি বলে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ধর্মের কথা কম বললেও ধর্ম পালনে তাদের কর্মী ও সমর্থকরা অধিকতর নীতিনিষ্ঠ; ধর্ম পালনে নীতিনিষ্ঠ হওয়া উত্তম মুসলমানের পরিচায়ক, কিন্তু তাদের অনেকে আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে, ঠিক যেভাবে করে থাকে ভারতের নরেন্দ্র মোদির বিজেপির কিছু কর্মী ও সমর্থকরা। মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিছু হিন্দু রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে; এই স্বপ্ন দেখার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর সমর্থন নিয়ে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর সমর্থন পেতে ধর্মকে তিনি সফলভাবে ব্যবহার করতেও সমর্থ হয়েছেন।

বর্তমানে পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে হালাল সাবানের খুশবু ছড়িয়েছিল, এখন হালাল সুগন্ধীর বিজ্ঞপ্তিতে খেলোয়াড় মাশরাফিকে দেখতে পাই। কোন পণ্যের বাজার ধ্বংস করার জন্য মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য বা পণ্যের মোড়কের গায়ে ধর্মকে বিকৃত করে কোন চিহ্ন প্রদর্শন করা হয়। নবীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করার জন্য ফ্রান্সের পণ্য বর্জন শুরু হয়েছিল, কিন্তু ফ্রান্স খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হয়নি।

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যক্তিগত জীবনাচার নিয়ে কটূক্তি করে বিজেপি এবার মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। ৫৬টি মুসলিম দেশ রয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের বাস। আফ্রিকার কয়েকটি মুসলিম দেশে বার মাস দুর্ভিক্ষ লেগে থাকলেও অধিকাংশ মুসলিম দেশ ধনী, তারা বিলাসী জীবনযাপনে অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করে না। কোন কোন যুবরাজ পাশ্চাত্যে বেড়াতে গেলে পুরো হোটেল ভাড়া করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নিজস্ব উৎপাদন খুব কম, এই দেশগুলো ইউরোপ, আমেরিকা এবং ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ছাড়া প্রায় সব মুসলিম দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই সকল মুসলিম দেশে প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বাংলাদেশের প্রবাসীর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বাজার হারাতে ইউরোপ, আমেরিকা বা ভারত কখনো চাইবে না। আলেকজা-ারের যুগ শেষ, এখন ভূমি দখলের চেয়ে বাজার দখলের রাজনীতি মুখ্য, মুখ্য বলেই আমেরিকা এবং ইউরোপ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে তাদের শত্রু দেশকে বিশ্ববাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মোদির বিজেপি সরকার নতজানু হয়ে করজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করছে।

একজন নূপুর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে সারা ভারত প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। প্রায় প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এক ওয়াজি আলেম যেভাবে দেবী দুর্গাকে অশ্লীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন তা অশ্রাব্য ও শ্রুতিকটু; কিন্তু তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন আলেম বা ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতিবাদ করেছে বলে অন্তত আমি শুনিনি। অন্য ধর্মের কোন ধর্মীয় নেতাকে কটুকথা বলতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ কটুকথার প্রত্যুত্তর কটু কথা দিয়েই হয়। পশ্চিমের লোকজন আলাপ-আলোচনায় দুটি বিষয় পরিহার করে থাকে- এক ধর্ম, দুই রাজনীতি। ধর্মের কারণে পৃথিবীতে যত লোক মারা গেছে অন্য কোন একক কারণে তত লোক মারা যায়নি। ভারতে হিন্দু উগ্রপন্থীদের সৃষ্টি ব্রিটিশ আমলে, গান্ধীর মতো অহিংস নীতির লোকও হিন্দু উগ্রপন্থি নাথুরাম গডসের হাতে খুন হয়েছেন। ভারত আর পাকিস্তান সৃষ্টির পরপর ভারতে যে দাঙ্গা হয় সেই দাঙ্গা পুলিশ থামায়নি, কারণ পুলিশও কোন না কোন ধর্মের লোক ছিল, নির্লিপ্ত পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে প-িত জওহরলাল নেহেরু দাঙ্গাবাজদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের কিছু উগ্র লোক ভারত থেকে হিন্দু ছাড়া আর বাকি সব ধর্মাবলম্বীদের তাড়াতে পারলে খুশি হয়। ধর্মান্ধ এই লোকগুলোর কারণে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের সংঘাত লেগেই আছে, মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ক্রমান্বয়ে ওদের হাতে চলে যাচ্ছে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]