পদ্মা সেতু : দেশের ‘আইকনিক স্থাপনা’

মুহাম্মদ ফারুক খান

জনগণের সম্পদ লুট নয়, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জনগণ যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা পালনে সর্বদা সচেষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের কোটি মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন ও আশা পূরণ হচ্ছে। পদ্মায় ঘুচাবে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট, আনবে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও কর্মসংস্থান। আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে শুরু করে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এই সড়ক ও রেল সেতু দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে যুক্ত করছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে। মাঝে বহু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। ছোট বড় ইঞ্জিনিয়ারিং বাধা এসেছে পদে পদে। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে কাজ থামিয়ে দেবার।

করোনার প্রকোপে যখন থেমে গেছে গোটা বিশ্ব, তখনো প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণেই পুরোদমে নির্মাণকাজ চলেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব ছড়িয়েছে মাঝেমধ্যেই। তবে সরকার দক্ষতার সঙ্গে সেই সব পরিস্থিতিও মোকাবিলা করেছে। শেষে সব বাধা, সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে, আজ গৌরবের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির উজ্জল সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের এক নতুন দার উন্মোচন করেছে এই পদ্মা সেতু। এ সেতু পাল্টে দিবে অর্থনৈতিক কাঠামো, ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে কৃষিখাতে। কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে। কৃষক পাবে তার নিজের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে অবশ্যই। উন্নত হবে মানুষের জীবন যাত্রার মান, দেশ হবে সমৃদ্ধ। পদ্মা যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। সেতুর কাছাকাছি বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠবে, উন্নয়ন হবে পর্যটন শিল্পের। সেতুর আশেপাশে গড়ে উঠা নানা পর্যটনকেন্দ্র আকর্ষিত করবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের। এর মাধ্যমে প্রসার পাবে বাঙালি সংস্কৃতি, উন্নত হবে লোকালয়। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে রেল সংযোগ করবে। মানুষ ঢাকা থেকে কম সময়ে স্বস্তির ভ্রমণ করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুধু যে আমরা পদ্মা সেতু পেয়েছি তা নয়। তার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার কারণে মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান টানেলের কাজও শেষের দিকে। এছাড়া কাজ এগিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ, পায়রা সমুদ্রবন্দর ইত্যাদির কাজ।

পদ্মা সেতু ছিল বাংলাদেশের জন্য এক মহা চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জটি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। তার সময়োপযোগী, সঠিক ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং জাতিগতভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস হয়েছে আকাশচুম্বী। বাংলাদেশকে আরও উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে পদ্মা সেতু আগামীতে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

“পদ্মা বহুমুখী সেতু” আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আমাদের মানচিত্রের এক উজ্জ্বলতম “আইকনিক স্থাপনা”।

[লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সাবেক মন্ত্রী, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়]

রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ , ৫ আষাড় ১৪২৮ ১৯ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু : দেশের ‘আইকনিক স্থাপনা’

মুহাম্মদ ফারুক খান

image

জনগণের সম্পদ লুট নয়, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জনগণ যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা পালনে সর্বদা সচেষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের কোটি মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন ও আশা পূরণ হচ্ছে। পদ্মায় ঘুচাবে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট, আনবে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও কর্মসংস্থান। আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে শুরু করে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এই সড়ক ও রেল সেতু দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে যুক্ত করছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে। মাঝে বহু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। ছোট বড় ইঞ্জিনিয়ারিং বাধা এসেছে পদে পদে। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে কাজ থামিয়ে দেবার।

করোনার প্রকোপে যখন থেমে গেছে গোটা বিশ্ব, তখনো প্রধানমন্ত্রীর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণেই পুরোদমে নির্মাণকাজ চলেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব ছড়িয়েছে মাঝেমধ্যেই। তবে সরকার দক্ষতার সঙ্গে সেই সব পরিস্থিতিও মোকাবিলা করেছে। শেষে সব বাধা, সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে, আজ গৌরবের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান।

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির উজ্জল সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের এক নতুন দার উন্মোচন করেছে এই পদ্মা সেতু। এ সেতু পাল্টে দিবে অর্থনৈতিক কাঠামো, ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে কৃষিখাতে। কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে। কৃষক পাবে তার নিজের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে অবশ্যই। উন্নত হবে মানুষের জীবন যাত্রার মান, দেশ হবে সমৃদ্ধ। পদ্মা যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। সেতুর কাছাকাছি বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠবে, উন্নয়ন হবে পর্যটন শিল্পের। সেতুর আশেপাশে গড়ে উঠা নানা পর্যটনকেন্দ্র আকর্ষিত করবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের। এর মাধ্যমে প্রসার পাবে বাঙালি সংস্কৃতি, উন্নত হবে লোকালয়। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে রেল সংযোগ করবে। মানুষ ঢাকা থেকে কম সময়ে স্বস্তির ভ্রমণ করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুধু যে আমরা পদ্মা সেতু পেয়েছি তা নয়। তার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার কারণে মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান টানেলের কাজও শেষের দিকে। এছাড়া কাজ এগিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ, পায়রা সমুদ্রবন্দর ইত্যাদির কাজ।

পদ্মা সেতু ছিল বাংলাদেশের জন্য এক মহা চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জটি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। তার সময়োপযোগী, সঠিক ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং জাতিগতভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস হয়েছে আকাশচুম্বী। বাংলাদেশকে আরও উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে পদ্মা সেতু আগামীতে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

“পদ্মা বহুমুখী সেতু” আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আমাদের মানচিত্রের এক উজ্জ্বলতম “আইকনিক স্থাপনা”।

[লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সাবেক মন্ত্রী, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়]